কোথায় গেল নেতাজির তৈরি করা ব্যাংক

লেখক : রানা চক্রবর্তী

ব্যাংক গড়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র! কোথায় গেল সেই ব্যাংক আজ?

ব্রিটিশদের হাত থেকে পরাধীন ভারতকে মুক্ত করতে শুধু জাতীয় আন্দোলনই করেননি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি গড়ে তুলেছিলেন ব্যাংকও। সেই ব্যাংকের নাম রেখেছিলেন আজাদ হিন্দ ব্যাংক। জাপানের সহায়তায় ১৯৪৩-এর ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে প্রথম ‘স্বাধীন’ ভারতীয় সরকার গড়েছিলেন। সেই সরকারের জন্য তার কিছুদিন পরে রেঙ্গুনে তৈরি করেন এই ব্যাংকটি । মতান্তর থাকলেও ধরা হয় ১৯৪৪ সালের ৫ই এপ্রিল আজাদ হিন্দ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

এই ব্যাংক থেকে বের হওয়া টাকায় ছিল বিপ্লবী নেতা সুভাষচন্দ্রের ছবি। ওই ব্যাংকের নোটের বিশেষত্ব ছিল তা কাগজের এক দিকই ছাপানো হত। ওই নোটে লেখা থাকত ‘ব্যাংক অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স’, ‘আজাদ হিন্দ ব্যাংক’, ‘জয় হিন্দ’ ইত্যাদি । সুভাষচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকের শাখা সেই সময় জাপানের বহু জায়গাতে ছড়িয়েছিল। এই ব্যাংকের কারেন্সি নোট ইস্যু করা হয়েছিল প্রমিসরি নোট হিসেবে।

শোনা যায় ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের অর্থের জোগান দেওয়া ছিল এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য। বিদেশে থাকাকালীন বহু প্রবাসী ভারতীয়দের কাছ থেকে সুভাষচন্দ্র আর্থিক সাহায্য পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই অর্থ ও ধনসম্পত্তি যাতে কোনও ভাবেই অপব্যয় না হয় এবং সঠিক হিসাব থাকে সেই কথা ভেবেই আজাদ হিন্দ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়। সেই সব দান করা অর্থই ঐ ব্যাংকে সম্পদ হিসেবে গচ্ছিত ছিল বলে অনেকে মনে করেন। প্রাথমিক ভাবে এই ‘ব্যাংকের অথোরাইজ ক্যাপিটাল’ ছিল ৫০ লক্ষ টাকা এবং ‘পেড-আপ ক্যাপিটাল’ ছিল ২৫লক্ষ টাকা।

স্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকারে আয়ু অবশ্য বেশিদিনের হয়নি। একবছর দশ মাস অস্তিত্ব ছিল এই সরকারের। সেই সরকারে অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার এই ব্যাংকের উপরও প্রভাব পড়ে। মূলত জাপানি সাহায্য নিয়ে আজাদ হিন্দ সরকার গঠিত হয়েছিল। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা ১৯৪৫সালের ৬ ও ৯ আগস্ট পর পর অ্যাটম বোম ফেলায় জাপান আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। তখন জাপানের অবস্থার খারাপ হওয়ায় নেতাজির উদ্যোগও ধাক্কা খায়।

এরপরেই বির্তর্কিত বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয় বলে প্রচারিত হলেও যা আজও অনেকেই বিশ্বাস করে না। তারপর থেকে নেতাজির অন্তর্ধান আজও রহস্যই থেকে গিয়েছে। আর সুভাষচন্দ্রের অর্ন্তধানের পরে পরেই এই ব্যাংকের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয় বলে ধরা হয়। তবে নেতাজি অন্তর্ধানের রহস্যের মতোই এখনও রহস্য আজাদ হিন্দ ব্যাংকের গচ্ছিত সম্পদ কোথায় গেল তা নিয়ে। মাঝে মাঝেই এই নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।

(সূত্র: https://m.dailyhunt.in/news/india/bangla/kolkata+24×7-epaper-kolkat/byank+gadechilen+netaji+subhashachandr+kothay+gel+sei+byank+aaj-newsid-75187034)


লেখক পরিচিতি : রানা চক্রবর্তী
রানা চক্রবর্তী পেশায় সরকারী কর্মচারী। নেশা ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা আর লেখালিখি। নিজেকে ইতিহাসের ফেরিওয়ালা বলতে ভালবাসেন।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।