লেখক : শিবানী ভট্টাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়
তাঁর জন্ম হয়েছিল এক নৈষ্ঠিক ব্রাহ্মণ পরিবারে। তাই নিজেদের ছোটখাট জমিদারির দেখভালের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেবেলা থেকেই তিনি শাস্ত্র পাঠ করেছিলেন। সেই সূত্রেই পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন সংস্কৃত ভাষা এবং সাহিত্যে। পরবর্তী সময়ে তিনি ইংরেজি ভাষাতেও যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেন। ইংরেজি সাহিত্য পাঠেও তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল।
তিনি বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন শান্তিপুরের প্রখ্যাত জজ পণ্ডিত বাড়ির কন্যা নির্মলা দেবীর সঙ্গে। এই নির্মলা দেবীর অকালপ্রয়াণ ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনে নিয়ে আসে প্রথমে সাহিত্যচর্চা এবং পরে তন্ত্রচর্চার আবহ। স্ত্রীবিয়োগ এবং অমর কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য তাঁকে কাব্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করে। তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরেই শান্তিপুর জজ পণ্ডিত বাড়ির দুর্গাপুজো এবং কালীপুজোয় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আসেন বলে শোনা যায়। সিরাজগঞ্জে থাকাকালীন তিনি রচনা করেন শোকগাথা ‘অশ্রু’। এই গ্রন্থটি সেকালে যথেষ্ট প্রশংসা এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সাহিত্যচর্চার জন্য প্রভূত প্রেরণা দান করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক গ্রন্থে ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখ আছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সাহিত্যচর্চায় বিরতি দিয়ে তন্ত্রচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তন্ত্রের সুপ্রাচীন ‘সময়াচার’-এর প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ছিল। একসময় তিনি সন্ন্যাসগ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নেন। পরে অবশ্য তিনি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তন্ত্রমার্গে তাঁর গুরু কে ছিলেন, তা জানা যায় না। তবে যন্ত্র, মন্ত্র, মুদ্রা, ন্যাস ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। তন্ত্রে তিনি বহুবিধ সিদ্ধি অর্জন করেন বলে শোনা যায়। শোনা যায়, রীতিমত ‘মিডিয়াম’ নিয়ে তিনি প্রায়ই বসতেন প্রেত বৈঠকে। কথা বলতেন নাকি তাঁর মৃতা স্ত্রী নির্মলা দেবীর সঙ্গে! তন্ত্র বিষয়ে তিনি কাব্য এবং প্রবন্ধ রচনাতেও হাত দিয়েছিলেন। তবে সে পাণ্ডুলিপি কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তিনি নিজেই নষ্ট করে দেন।
১৯৪৭ সালে ৬৩ বছর বয়সে তিনি চির বিদায় নেন। শোনা যায়, নিজেই নিজের চিরবিদায়ের সেই দিন এবং সময়ের কথা তিনি নির্ভুলভাবে বলে গিয়েছিলেন তাঁর পুত্রবধূ শেফালী বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
সময়ের আস্তরণ তাঁর কাব্যগ্রন্থের ওপর ফেলেছে বিস্মৃতির ছায়া। সময় বদল এনেছে কাব্যের প্রকাশেও। কিন্তু আজও যখন পাঠকের সামনে আসে তাঁর ‘অশ্রু’-র সৃষ্টি –
” তৃপ্তি রূপা অশ্রু মম শিব শিরে গঙ্গা সম প্রেম নীরে ফুল্ল কোকনদ,
তোমাদের পদ স্মরি অশ্রুকে উৎসর্গ করি ধুয়ে দিতে তোমাদেরই পদ!”
– তখন প্রকাশের আন্তরিকতাটুকু পাঠকের হৃদয়কেও ছুঁয়ে যায়।
লেখক পরিচিতি : শিবানী ভট্টাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখিকার জন্ম হাওড়ার বালিতে। বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা। উচ্চশিক্ষা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। কর্মসূত্রে শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন এবং বিবাহ সূত্রে নদিয়ার রানাঘাটে আসা। সম্পাদিত পত্রিকা - কবিতা প্রয়াস। প্রতিমুহূর্তের সঙ্গী - শাস্ত্র চর্চা, কবিতা লেখা, গ্রন্থ পাঠ, সংগীত চর্চা এবং কিছুটা লেখা লিখির চেষ্টা।