গলায় সংক্রমণের কারণ ও প্রতিকার

লেখক: মিজানুর রহমান সেখ

বর্ষার বৃষ্টিতে একটু ভিজলে কিংবা আবহাওয়া পরিবর্তনে আমাদের হাঁচি,কাশির সাথেই গলায় ব্যাথা একটা সাধারণ সমস্যা। হালকা গরম জলে গড়গড়া বা গরম চা খেয়ে গলায় ব্যাথা দূর করার চেষ্টা আমরা কমবেশি সকলেই করে থাকি। ঘন ঘন গলায় ব্যাথা কিন্তু গলার সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে। আজ আমরা জেনে নেব গলায় সংক্রমণের কারণ ও প্রতিকারের উপায়।

 গলায় থাকা গলবিল(pharynx) ও খাদ্যনালীর উপরের অংশে থাকা মিউকাস পর্দায় প্রদাহ,খাদ্য গিলতে গেলে ব্যাথা,গলা শুকিয়ে যাওয়া,জ্বালাভাব ও অস্বস্তি-এসব গুলোই কন্ঠনালী বা গলার সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ফ্যারিনজ্যাইটিস। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কিংবা ঠান্ডা লাগলে এই সমস্যা আসতে পারে। অনেক সময় এমনিতেই কয়েক দিনের মধ্যেই গলার সমস্যা মিটে যায়। তবু গলায় সংক্রমণ পুরোপুরি অবহেলা করা উচিত নয়।

 রাইনো ভাইরাস, করোনা ভাইরাস,প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ফ্যারিনজ্যাইটিস ধরণের গলার সংক্রমণ খুব দ্রুত ঘটায়। কোলডাডেনো ভাইরাস গলায় ব্যাথার সাথে ঠান্ডা লাগা ও চোখ লাল করে। সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ফ্লু একই ভাবে গলার সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই জীবাণুগুলো  অধিকাংশই খুব সংক্রামক । থুতু, হাঁচি,কাশিতে ভীষণভাবে ছড়ায়। সেই তুলনায় ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ শিশুদের বেশী হয়। ২০ থেকে ৪০% শিশুদের ফ্যারিনজ্যাইটিস এর কারণ গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া। এর সাথে যাদের এলার্জির ধাত আছে কিংবা সাইনাসের সমস্যা আছে,তাদের জন্য গলার সংক্রমণের সম্ভবনা অনেকটা বেড়ে যায়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপানকারীদের গলায় সংক্রমণ প্রায়শই হয়। এই জীবাণুগুলো নাক ও গলায় অবস্থান করায়, নাকে মুখে হাত দিলেই সংক্রামিত ব্যাক্তির হাতে ও অন্যান্য জিনিসে জীবাণু চলে আসে। তার থেকে বাকিদের সংক্রমণ ঘটায়। তাই ঘন ঘন হাত ধুতে হবে, হাত বারবার নাকে মুখে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ঠিক মতো ওষুধ খেলে ভাইরাস ঘটিত সাধারণ সর্দিজ্বর ৭ থেকে ১০ দিনে সেরে যায়। রোগের উন্মেষপর্বে(incubation period) অসুস্থতার লক্ষণ দেখা না গেলেও রুগী কিন্তু সংক্রামক হতেই পারে। ফ্যারিনজ্যাইটিসের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো-গলা ধরে যাওয়া,গলায় ব্যাথা, গলা খুসখুস করা। এর সাথে কাশি, মাথা যন্ত্রনা,সর্দি,জ্বর, ত্বক চুলকানো,মুখে আলসার,নাসাপথ বন্ধ হয়ে যাওয়া,খিদে কমে যাওয়া,বমি ভাব,দূর্বলতা,টনসিল ফুলে যাওয়া ইত্যাদি নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি একসপ্তাহ পরেও এই লক্ষণগুলো না কমে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই রকম সমস্যার শুরুতে বাড়িতে কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে । ঘন ঘন জল খেতে হবে যাতে গলা শুকিয়ে না যায় ও শরীরে পর্যাপ্ত জল থাকে। অযথা কথাবার্তা কমাতে হবে, জোরে বা চেঁচিয়ে কথা বলা যাবে না  এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। ঘরের বাতাসে আদ্রর্তা বাড়াতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। গলা খুসখুস কমায় সেরকম লজেন্স মুখে রাখা ভালো। হালকা গরম নুনজল নিয়ে গড়গড়া করলে উপকার পাওয়া যাবে। গরম পানীয় যেমন চা,কফি,মধু-লেবুর সাথে হালকা গরমজল পান করলে আরাম পাওয়া যায়।

যেহেতু এই জীবাণু ভীষণ সংক্রামক তাই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে গলায় সংক্রমণ থেকে বাঁচা যেতে পারে। ঘন ঘন ও খুব ভালো করে হাত ধুতে হবে। যারা সংক্রামিত আছেন তাদের থেকে যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ধুমপান ত্যাগ করতে হবে ও পরোক্ষভাবে ধূমপান,ধোঁয়া, ধুলো থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি মাঝে মধ্যেই গলায় সংক্রমণ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

তথ্য সূত্রঃ
1)https://www.medicalnewstoday.com/articles/324144
2)https://www.cdc.gov/features/rhinoviruses/index.html
3)https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4284158/


লেখকের কথা: মিজানুর রহমান সেখ
মিজানুর পেশায় শিক্ষক এবং একজন সমাজসেবক। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্যই মূলত লেখালিখি। লেখক পদার্থবিদ্যা ও শিক্ষাবিজ্ঞানে মাস্টার্স।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

রুচিশীল ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ক্লিক করুন এখানে

sobbanglay forum