বৃটিশ আমলের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে কি অবস্থা ছিল ঐ সময়। “১৮৫৩ তে কলকাতা শহরে ৪০৪৯ টি বেশ্যাগৃহ ছিল যাতে বাস করছিলেন ১২,৪১৯ জন যৌনকর্মী। ১৮৬৭ তে ছিল ৩০,০০০ জন। ১৯১১ সালের আদশুমারি অনুযায়ী ১৪২৭১ জন। ১৯২১ সালের আদম শুমারিতে অনুযায়ী ১০,৮১৪ জন যৌনকর্মী ছিল কলকাতায়। (তথ্যসুত্র: দেবাশিস বসু, ‘কলকাতার যৌনপল্লী’, সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত ,বার্ষিক সংকলন ৫,২০০১)। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরো বেশী হবে। কলকাতায় খুবই রমরমা ছিল বেশ্যাদের জগৎ। গৃহস্থের বাড়ির পাশে বেশ্যা, ছেলেদের পাঠশালার পাশে বেশ্যা, চিকিৎসালয়ের পাশে বেশ্যা, মন্দিরের পাশে বেশ্যা। (তথ্যসূত্র: বিনয় ঘোষ, কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত, ১৯৯৯, পৃ. ৩০২-০৩) বিশেষ করে রামবাগান, সোনাগাছি, মেছোবাজার, সিদ্ধেশ্বরীতলা, হাড়কাটা, চাঁপাতলা, ইমামবক্স এগুলো ছিল বেশ্যাদের আখড়া। (তথ্যসূত্র: বিশ্বনাথ জোয়ারদার, পুরনো কলকাতার অন্য সংস্কৃতি, ২০০৯, পৃ. ৩৪-৩৮)। এমনকি কিছু পতিতা শহরে প্রকাশ্য রাজপথে নৃত্য পর্যন্ত করতো। সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে আবেদন করা সত্ত্বেও এর কোনো প্রতিকার হয়নি। কারণ কলকাতার পুলিশ ধনীদের তৈরি বেশ্যালয় গুলোতে হস্তক্ষেপ করতে সাহস পেত না । শুধু মাত্র দ্বারকানাথ ঠাকুর কলকাতার একটি এলাকাতেই তেতাল্লিশটি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন। (তথ্যসূত্র: সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী, ১৯৬২, পৃ.৩৫৮-৬০)। আসলে ঐ সময় নৈতিকতা নিয়ম কানুন ছিল বলে মনে হয়না কিংবা এমনো হতো পারে ধর্মীয় কোন কারণ আছে। হিন্দুরা মনে করেন, বেশ্যারা এই সমাজ কে নির্মল রাখেন। আর সেই কারণেই দুর্গা পুজার সময় বেশ্যার দরজার মাটি অপরিহার্য। দূর্গা পুজার সময় দশ ধরনের মাটি প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে বেশ্যার দরজার মাটি অপরিহার্য। (তথ্যসুত্র: কালিকা পুরাণোক্ত দুর্গাপূজা পদ্ধতি, প্রবীর কুমার চট্টোপাধ্যায়,কলকাতা,পৃষ্ঠা ৭২,৮৬,১০৮,১২৭ এবং সানন্দা পত্রিকা ১৮ এপ্রিল ১৯৯১ পৃষ্ঠা ১৯) আসলে নারীদের সবসময় ভোগের পন্যই মনে করা হয়েছে, ইংরেজ আমলেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সমাজের নেতৃস্থানীয় খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ এই নৈতিক স্খলন থেকে মুক্ত ছিলেন না। বেশ্যাবাজি ছিল বাবু সমাজের সাধারণ ঘটনা। নারী আন্দোলনের ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়ের, রক্ষিতা ছিল। এমনকি ঐ রক্ষিতার গর্ভে তাঁর একটি পুত্রও জন্মে ছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর পতিতা সুকুমারী দত্তের প্রেমে মজেছিলেন। সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন নিয়মিত বেশ্যা পাড়ায় যেতেন তা তিনি নিজেই তার ডাইরিতে লিখে গেছেন। মরমি কবি হাসন রাজা, কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত পতিতালয়ে যেতেন। (তথ্যসূত্র: অবিদ্যার অন্তঃপুরে, নিষিদ্ধ পল্লীর অন্তরঙ্গ কথকতা; ড. আবুল আহসান চৌধুরী : শোভা প্রকাশ) শুধু তাই নয় সেই সময় ইংরেজ সৈন্যরা মাত্রাতিরিক্ত পতিতালয়ে যেতো। যার ফলে ১৮৬০ সালে ইংরেজ সৈন্যদের মধ্যে ৬০% এর বেশী যৌনরোগে আক্রান্ত হয়ে পরে। তাই ইংরেজ সরকার ১৮৬৪ সালে পাশ করালেন – Cantonment Act। সেনা ছাউনি গুলোতে ইংরেজ সৈন্যদের জন্য তৈরি হল আলাদা বেশ্যালয়, সেখানে যেসব বেশ্যারা আসতেন তাঁদের রেজিস্ট্রি ভুক্ত করে পরিচয় পত্র দেওয়া হত। যৌনরোগ থেকে তাঁদের মুক্ত রাখার জন্য ‘লক হসপিটাল’ নামে বিশেষ হাসপাতাল স্থাপন করা হয় প্রধান সেনা ছাউনিতে । (তথ্যসূত্র: Dr. Ashwini Tambe – “The Elusive Ingenue:A transnational Feminist Analysis of European Prostitution in Colonial Bombay; জেমস টেলরের, “A Sketch of the Topography & Statistics of Dacca”) “কোম্পানি আমলে ঢাকা” বইয়ের তথ্য মতে – অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধেও ঢাকা শহরে সংগঠিত আকারে পতিতা বৃত্তির অস্তিত্ব ছিল। উল্লেখ্য যে জেমস টেলর (১৮২৫ থেকে ১৮৩৫) ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে ঢাকায় সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ ছিলেন। ১৯০১ সালের, সরকারি হিসাব মতে, ঢাকায় পতিতার সংখ্যা ছিল ২১৬৪ (দৈনিক ডেসটিনি, ৪ জানুয়ারি ২০১০)। তবে বাংলাদেশের “যশোর শহরের পতিতা বৃত্তির ইতিহাস রয়েছে ৫শ’ বছরের। মোঘল সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকেই যশোর শহরে চলে আসছে পতিতাবৃত্তি। ব্রিটিশ যুগে যশোর শহরের তিনটি স্থানে পতিতালয় ছিল। কলকাতার জমিদার মন্মথ নাথ রায় ঘোড়া গাড়ি করে প্রতি শনিবার আসতেন ফুর্তি করতে। আর সে সময়ে তাকে মেয়ে সাপ্লাই দেওয়া হতো চাঁচড়া রায় পাড়ার ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে। (যশোর ইনফো এবং বেনজিন খানের লেখা বই ‘প্রকাশিত গদ্য’) পতিতাবৃত্তির ইতিহাস যথেচ্ছাই পায়চারী করলে একথা অনুধাবনযোগ্য যে সমাজের আদিম অবস্থায় আজকের মতো পরিবার প্রথা ছিল না। মানুষ দলবদ্ধভাবে বাস করতো। মর্গানের মতে, এক একটা গোষ্ঠীর মধ্যে অবাধ যৌন মিলন চলতো। সেখানে প্রত্যেক পুরুষেরই প্রত্যেক নারীর উপর সমান অধিকার ছিল, আবার প্রত্যেক নারীরও প্রত্যেক পুরুষের উপর সমান অধিকার ছিল। অবশ্য অবাধ যৌন মিলনের স্তর এতই সুদূর অতীত হয়ে গেছে যে বর্তমানে তার শেষ চিহ্নটিও আবিস্কার করে প্রত্যক্ষ প্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আজকের মানুষ সভ্যতার যে স্তরে পৌঁছেছে তাতে অবাধ যৌন মিলনের স্তর সম্পর্কে বলতে এখন লজ্জা পায়। যাই হোক তারপরেই মানুষ পদার্পণ করেছিল যৌথ বিবাহের যুগে। বাকোফেন এ বিষয়ে সর্বপ্রথম গুরুত্ব দিয়ে গবেষণা করেন এবং ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের মধ্যে থেকে এর প্রমাণও হাজির করেছেন। যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় নারীদের প্রাধান্য ছিল। কারণ উক্ত ব্যবস্থায় সন্তানের বাবা কে তা বুঝতে পারা অসম্ভব ছিল, কিন্তু মাকে চিনতে ভুল হত না। সে সময় অনেক দম্পতি তাদের সন্তান-সন্ততি নিয়ে একত্রে বসবাস করতো, সেখানে নারী যে ঘর-সংসার দেখাশোনার কাজ করতো তা পুরুষের খাদ্য সংগ্রহের কাজের সমান সামাজিক প্রয়োজন বলে বিবেচিত হত। তারপর মানব পরিবারের ক্রমবিকাশের পরবর্তী স্তরে আর যৌথ পরিবার প্রথা টিকলো না। যৌন সম্পর্কের আওতা থেকে প্রথমে নিকটতম লোকদের তারপর একটু দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের বাদ দিতে থাকায় যৌথ পরিবার প্রথা লোপ পেল। অবশেষে একজোড়া নর-নারীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল পরিবার। বিশ্বের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসমূহের পারিবারিক সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করলে এখনও এসব তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। বলা যেতে পারে যে একবিবাহ প্রথা প্রবর্তনের পিছনে নিয়ামক হিসেবে প্রধান ভূমিকা ছিল ব্যক্তিগত সম্পত্তির আবির্ভাব। পরিবর্তিত উৎপাদন ব্যবস্থার দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে অর্থাৎ সম্পত্তির উপর যৌথ অধিকারের স্থলে ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলেই একবিবাহমূলক পরিবার প্রথার উদ্ভব হয়েছে। সুতরাং অবাধ যৌন মিলনের যুগে এবং যৌথ পরিবারের যুগে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো লিঙ্গ বৈষম্য ছিল না। লিঙ্গ বৈষম্য শুরু হয়েছে পুরুষরা যখন থেকে একচেটিয়া সম্পত্তির মালিক হয়েছে এবং তখন থেকেই একবিবাহমূলক পরিবার প্রথার প্রচলনও ঘটেছে। উহাই ছিল নারী জাতির ঐতিহাসিক মহা পরাজয়। সে সময় থেকেই ঘর সংসারের কাজকে আর সামাজিক কাজ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না, সাংসারিক কাজকর্মগুলো তখন হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তিগত বিষয়। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও তা মূল্যায়িত হয় না । স্ত্রী হয়ে দাঁড়ায় পারিবারিক দাসী, বঞ্চিত হয় ধনসম্পদের মালিকানা থেকে। ঠিক ওই সময় থেকেই মেয়েদেরকে নামানো হয়েছে বেশ্যাবৃত্তিতে, যা সম্পূর্ণভাবে পুরুষ আধিপত্যের দ্বারা সৃষ্ট। পুরুষ যখন চেয়েছে উত্তরাধিকারী হিসেবে তার সম্পদ যেন নিজের নির্দিষ্ট সন্তান ছাড়া আর কেহ না পায়, তখনই তারা একবিবাহ প্রথার প্রবর্তন করেছে। কাজেই শুরু থেকেই একবিবাহ বাধ্যতামূলক শুধু নারীর জন্যে, মোটেই তা পুরুষের জন্যে নয়। দলগত বিবাহ প্রথার যৌন স্বাধীনতা শুধু নারীরাই হারালো, পুরুষদের বেলায় তা হলো না। ফলে তখন থেকেই পুরুষের জন্যে একাধিক স্ত্রীর রাখার বৈধতার পাশাপাশি গোপনে বা প্রকাশ্যে বহুপত্নী ব্যবহারে অথবা বেশ্যার ব্যবহারের প্রচলন চলে আসছে। ঘরের স্ত্রীর যৌনাঙ্গে লোহার বেড়ি পরিয়ে তালাবদ্ধ করে আটকিয়ে রেখে পুরুষের বিভিন্ন যায়গায় যৌনকর্ম করে বেড়ানোর ইতিহাস বেশি দিনের পুরোনো নয়। বাস্তবিক পক্ষে পুরুষদের ক্ষেত্রে আজও কিছুটা দলগত বিবাহ প্রথা বিদ্যমান, যা নারীর জন্য নয়। তাই একাধিক পুরুষের সাথে নারীর যৌনতাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয় এবং যার জন্য আইনের দৃষ্টিতে, ধর্মীয় রীতিতে এবং সমাজের কাছে তাদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয় অপরপক্ষে পুরুষের ক্ষেত্রে তাহলো সম্মানের কাজ, যদিও কোনো কোনো সময় উহা পুরুষের নৈতিক পদস্খলন হিসেবে দেখা হয় তবে হাসি মুখেই তা মেনে নেয়া হয়। একই কারণে অভিধানে ‘পতিতা’ শব্দটি থাকলেও ‘পতিত’ নামক কোনো শব্দ নেই এবং থাকার কথাও নয়। সুতরাং ঐতিহাসিকভাবে ইহাই প্রতিষ্ঠিত এবং বাস্তব সত্য এই যে, যখন থেকে একবিবাহ প্রথার উদ্ভব হয়েছে তখন থেকেই স্ত্রীর পাশাপাশি বেশ্যারও সৃষ্টি হয়েছে। এঙ্গেলস তাঁর ‘পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি’ নামক বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থে বলেছেন, “বেশ্যাদের থেকে সেই স্ত্রীর পার্থক্য কেবল এই যে, সে সাধারণ বেশ্যাদের মতো রোজই নিজের দেহকে দিন-মজুরের মতো ভাড়া খাটায় না, কিন্তু তার দেহকে সে একেবারেই চিরকালের দাসত্বে বিক্রি করে দেয়।” কিন্তু এত কিছুর পরেও সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায় যে, একবিবাহ প্রথার উদ্ভব ছিল সভ্যতার ক্রমবিকাশের পথে একধাপ অগ্রগতি। তাই এঙ্গেলসও মনে করতেন যে, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হবে প্রেমময় এবং মধুর, থাকবে না কোনো লিঙ্গ-বৈষম্য। যাইহোক পতিতাবৃত্তি চলে আসছে লক্ষাধিক বছর পূর্বে থেকে এবং ধর্মগুলি এসেছে মাত্র দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে। লক্ষ্য করার বিষয় এই যে যদিওবা কোন ধর্মই এই ব্যবস্থাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন না করে এসেছে তবুও সময়ের আবর্তে কখনো ক্রীতদাসীর সাথে যৌনকর্মের পক্ষে কিংবা নারীর দেহ বিক্রয় করার অর্থ মন্দিরের তহবিলে জমা হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। আর্মেনিয়ার আনাইতিস দেবতার মন্দিরের ক্রীতদাসীরা, করিন্থের আফ্রোদিতে দেবতার মন্দিরের ক্রীতদাসীরা, ভারতীয় মন্দিরসমূহের নর্তকীরা, পর্তুগীজ বায়াদের নর্তকীরা এক সময় ছিল দুনিয়ার সেরা বেশ্যা। এভাবে যুগের পর যুগ, শতাব্দির পর শতাব্দি, সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ ধরে চলে আসছে পতিতাবৃত্তি। এক কথায় বলা যেতে পারে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে নারী ও পুরুষের মাঝে বিরাজমান বৈষম্যের এক চরম শোচনীয় পরিণতির নাম হচ্ছে পতিতাবৃত্তি। বাংলাদেশেও সেই ধারাবাহিকতা যথারীতি চলে আসছে বহুবছর ধরে। এদেশে বহু পতিতালয় ছিল এবং এখনও বেশ কিছু রয়েছে। তবে শঙ্কার বিষয়, পতিতালয়ের সংখ্যা দিন দিন কমলেও পতিতার সংখ্যা কিন্তু বেড়েই চলছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ Dec 6, 2014 তারিখে ‘Forensic lab finds love cheats in 98% cases’ এই শিরোনামে একটা সংবাদ ছাপা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয় – গুজরাটে প্রতি বছর বহু সংখ্যক পুরুষ পিতৃত্ব নির্ণয়ের জন্য ডিএনএ টেস্ট করার আবেদন করেন। গান্ধী নগরের ডিরেক্টরেট অব ফরেন্সিক সায়েন্সের ডিএনএ পরীক্ষা বিভাগে বছরে প্রায় ২৫০টি এ ধরনের মামলা আসে। তার মধ্যে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, তার পরিবারের সন্তানটির আসল পিতা পুরুষটি নয়,অর্থাৎ সন্তানটি অবৈধ সম্পর্কের ফসল। তাহলে বুঝুন কি অবস্থা ঐখানে! অবৈধ সম্পর্কের স্বর্গ রাজ্য গুজরাট। আবার অনেক মুসলিম দেশে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ থাকলেও আরবের অনেক দেশের ধনীগনের রক্ষিতা রাখার ইতিহাস অনেক আছে। বর্তমানে আরবদের যৌনতার কাহিনী জানতে, Shereen El Feki এর লেখা ‘Sex and the Citadel’ নামের বইটা পড়ে দেখতে পারেন। প্রেমের অভিনয় করে অথবা চাকুরী দেওয়ার কথা বলে সহজ সরল মেয়েকে ঠান্ডা মাথায় ডেকে নিয়ে নিষিদ্ধ পল্লীতে বিক্রী করে দেওয়ার খবর পত্রিকার পাতায় মাঝে মাঝেই দেখা যায়। আবার অত্যাধিক দারিদ্রের তাড়নায় ক্ষুধার জ্বালা মেটাতেও এ পেশা বেছে নেয় কিছু সংখ্যক মেয়ে। তবে সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম, ‘Women who pay for sex’ শিরোনামে BBC তে একটা সংবাদ পড়ে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশে মেয়েরা Sex করার জন্য ছেলেদের টাকা দেয়! এমনকি অনেক হোটেল আছে যেখানে পুরুষ যৌনকর্মী পাওয়া যায় এবং মেয়েরা টাকা দিয়ে তাদের সাথে Sex করে। তবে কি এই ধারণা করতে পারি পতিতাবৃত্তির ধরন পাল্টে যাচ্ছে! হয়তো এমন একটা সময় আসবে যখন পতিতালয়ে মেয়েরা নয় ছেলেরা থাকবে। Havocscope Black Market ওয়েব সাইটের (May 31, 2014) তথ্যমতে পৃথিবীতে পতিতার সংখ্যা ‘১৩৮,২৮,৭০০’। বাস্তবে হয়তো এর চেয়ে আরো অনেক বেশী হবে। আর আমাদের দেশের কতগুলো হোটেলে বাড়িতে যে মধুচন্দ্রিমা চলে তার কোনো হিসেব নেই। আর এভাবে যুগের পর যুগ, শতাব্দির পর শতাব্দি, সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ ধরে চলে আসছে পতিতাবৃত্তি। এই সমাজ পতিতা তৈরির কারখানা আর আমরা হলাম তার কারিগর।
(তথ্যসূত্র:
১- Murphy Emmet (1983).Great Bordellos of the World. Quartet Books.
২- PK Sing, ‘Brothel Prostitution in India’ 2004.
৩- S.N Sinha and N.K. Basu: ‘History of Prostitution in India’,1994.
৪- Mc Ginn, ‘The Economy of Prostitution’.
৫- নগেন্দ্রনাথ বসু,বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, দ্বিতীয় খন্ড, কলকাতা।
৬- বিনয় ঘোষ, কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত,১৯৯৯।
৭- পৃথ্বীরাজ সেন, বাবু কোলকাতার বিবি বিলাস।
৮- দুর্গাপদ চট্টোপাধ্যায়, সংস্কৃত সাহিত্যে বারাঙ্গনা।)
লেখকের কথা: রানা চক্রবর্তী
রানা চক্রবর্তী পেশায় সরকারী কর্মচারী। নেশা ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা আর লেখালিখি। নিজেকে ইতিহাসের ফেরিওয়ালা বলতে ভালবাসেন।
আপনি লিখেছেন, “শুধু মাত্ৰ দ্বারকানাথ ঠাকুর কলকাতার একটি এলাকাতেই তেতাল্লিশটি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন। (তথ্যসূত্র: সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী, ১৯৬২, পৃ.৩৫৮-৬০)। ”
সত্যিই ঐ বইটিতে ঐ নির্দিষ্ট পৃষ্ঠায় এমন কথা লেখা আছে? আপনি দেখেছেন?
কারণ সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত ঐ বইটির যে সংস্করণের কথা আপনি উল্লেখ করেছেন সেটি ৪র্থ সংস্করণ যেটি বিশ্বভারতী গ্রন্থালয় কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছিল।
ঐ বইটির 358-60 পৃষ্ঠায় আছে “ঋণশোধ বিষয়ে দেবেন্দ্রনাথের সাধুতা” নামক অধ্যায়টি এবং সেখানে এমন কোনো তথ্যের সন্ধান আমি পেলাম না।
আপনি আরেকবার দেখে বলুন ঠিক কোন পৃষ্ঠায় এ তথ্য দেখেছেন?