লেখক: রেশমিন খাতুন
আদতে স্বাধীনভাবে সবকিছু করতে পারার অধিকার অর্জন করাটাই স্বাধীনতা। সত্যিকার অর্থে আমাদের যা মনে আসে, তাই করতে পারি না, অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা এসেই যায়, যেমন ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক রীতিনীতি, রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক নিয়মকানুন আমাদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অতএব আক্ষরিক অর্থে আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন নয় কিন্তু।
স্বাধীনতা বিষয়টা রাষ্ট্রের স্বাধীনতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, আর এই বিষয়টি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যর অন্যতম উপকরণ হলো জনগণের উপস্থিতি, এই জনগণের অর্থাৎ মানুষের কয়েকটি মৌলিক চাহিদার অধিকার সুনিশ্চিত করার মাধ্যমেই স্বাধীনতার সাফল্য বা মান নির্ধারণ করা যায়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ন্যায়বিচার ইত্যাদি মৌলিক অধিকারগুলো ভীষন গুরুত্ব রাখে। এই সবকিছুর মান সম্পন্নতায় নির্দেশ করবে, আমরা কতটা স্বাধীন। কয়েকশো বছর ব্রিটিশদের শাসনের পরে বহু রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অধ্যুষিত হয়। তারপর রীতি মতো সংবিধান রচিত হয়, জনগণের অধিকার সুনিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে। আলোচ্য বিষয় হলো, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেই অধিকার কতটা প্রতিষ্ঠিত হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাবলী উল্লেখ করে তার ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছি।
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে কাশ্মীর সমস্যা, স্বাধীন রাষ্ট্রেও পরাধীনতার স্বাদ, সর্বদা কারফু জারি। প্রতিনিয়ত ঘটে চলা ধর্ষনের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা। রাজনৈতিক ক্ষেত্র পরিসরে সমাজ বিরোধীদের আগমন। মাফিয়া রাজ, গুন্ডা রাজ, দালাল রাজ, সিন্ডিকেট রাজ, মেয়ে পাচার র্যাকেট ইত্যাদি বিষয়গুলি, পরোক্ষে সাধারণদের স্বাধীনতা হরণ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। স্বাধীনতার সাত দশক পরেও, দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি প্রায়। ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে, হাজার হাজার মোকদ্দমা ঝুলে, মোকদ্দমার রায়কে অচিরেই প্রভাবিত করার রীতি। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এখনও বেহাল দশা, বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। কর্মসংস্থানের এতই বেহাল দশা যা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষা ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখ যোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারেনি আমার দেশ। এখনও মিড ডে মিল প্রকল্প চালিয়ে যেতে হচ্ছে, অর্থাৎ রাষ্ট্র তার নাগরিকদের খাদ্য-স্বনির্ভর করতে ব্যর্থ। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রীয় ভাবে পুঁজিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, এতে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হয়ে যাচ্ছে সবকিছুই, যেমন রিলায়েন্স, টাটা, মিত্তল গোষ্ঠীর ফুলে ফেঁপে ওঠা। এতে প্রান্তিক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, মানুষ কাজ করে তার সঠিক পারিশ্রমিক পাবে না। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও স্বজনপ্রীতি লক্ষ্যনীয়, প্রীতিভাজন রাজ্যগুলোকে অতিরিক্ত সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, বিরোধী রাজ্যগুলোকে সুযোগ না দেওয়া, এতে আর্থিক বিকাশের বৈষম্য ফুটে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ের আরও একটা বিশেষ দিক হলো গণপিটুনি, ধর্মের দোহাই দিয়ে, রাজনৈতিক দলের দোহাই দিয়ে, খাদ্য রুচির বিষয় নিয়ে অহরহ গণপিটুনির ঘটনা। আমার এই দেশ বহু ধর্ম,বহু ভাষাভাষী, বহু সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র। এমনিতেই ফারাক আর বৈচিত্র্য লক্ষ্যনীয়।
এত কিছু সত্ত্বেও, দেশের মানুষ যেদিন প্রাণ খুলে বাঁচতে পারবে, দু’বেলা খাওয়ার সংস্থান করতে পারবে, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান হবে, বাক স্বাধীনতা থাকবে, ন্যায় বিচার আরও শক্তিশালী হবে, শিক্ষার মান বাড়বে, সম্প্রীতি সামাজিকতা পরস্পরের প্রতি উপচে পড়বে সত্যিকার অর্থে সেদিন আমার দেশ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পাবে। এ বিষয়ে দেশের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজন, দেশের আমলা মন্ত্রীগনের সদিচ্ছা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।
ছবি: কুন্তল
লেখকের কথা: রেশমিন খাতুন
আমি রেশমিন খাতুন, বি.এড. কমপ্লিট করার পরে এখন আমি প্রাইভেট স্কুলে পড়াই। আর লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। বই আমার নেশা; গল্পের বই পেলে সব ভুলে যাই। ক্লাশ ফাইভ থেকে লাইব্রেরী যাই। প্রিয় লেখিকা – সুচিত্রা ভট্টাচার্য। লেখক অনেক জন আছেন । বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়,নারায়ন স্যানাল। যখন ক্লাস ইলেভেনে পড়তাম তখন স্বরচিত গল্প লিখে একবার প্রাইজ পেয়েছিলাম, সেকেন্ড হয়ে “পথের পাঁচালি” বইটা পুরষ্কার পাই। ভীষণ আনন্দ হয়েছিল। মনে অনেকদিন রেশ ছিল, প্রথম প্রাইজ তো। এখন ফেসবুকে নিজস্ব একটা পেজ আছে “আলেয়ার আলো” নামে। আর “শুকতারা” – ওখানে আমি একটা গল্প লিখেছিলাম, “ভূত দাদু” নামে। তো ওখানেও আমি সেকেন্ড হয়েছিলাম, তো ওরা আমাকে বাইপোস্ট তিনশত টাকা আর কিছু বই গিফ্ট করেছিল। ভীষন আনন্দ হয়েছিল। আর এখন ফেসবুকে অনেক পেজে লিখি যেমন ‘মলাট’, ‘ইচ্ছে ডানা’, ‘অক্ষর’, ‘গল্পগুচ্ছ’, ‘বইপোকা’, ‘লতা’, ‘জনতার কণ্ঠ’, ‘সায়র পত্রিকা’ ইত্যাদি পেজগুলোতে।