লেখক: পর্ণা সেনগুপ্ত
স্বাধীনতা অর্থ স্ব -অধীন,
যার প্রকৃত মানে,
বোধোদয়ের বেলা ইস্তক
চলেছি খুঁজে।
এই যেমন বলি কিছু
সাধারণ মেয়েদের গল্প,
হতে পারে নাম তার
পৃথা, অরুণিমা, সুনিতা, রুবিনা, মালালা
কিংবা জেনিফার।….
তাদের জন্ম হয়তো
কোনো ছোট গ্রামে,
মফঃস্বল-এ বা কর্কশ -রুক্ষ বালি পাথরের দেশে অথবা
কংক্রিটের গম্বুজধারী- আকাশছোঁয়া আধুনিক শহরে।
……
এ সব তথ্য হোক বা কল্পনা .. কিছুই যায় আসে না।
……যা বিশেষ তাৎপর্যময়, তা হল ….
এদের সবার একটা স্বপ্ন আছে, একটা মুক্ত চিন্তা,
যা প্রচলিত ধ্যান ধারণার থেকে তফাতে, যা আপন খেয়ালেই নিজেই অংকুরিত হয়, স্বাধীন চিন্তাকে মুঠোবন্দি করে, সেই লাগাম নিজের হাতে ধরে রাখে ……
স্বাধীনতার অন্তরায়কে পার করে কেউ ……কেউ শুধু সীমানাটুকু।
“কেউ, অনন্যা হয়ে জ্বলতে চায়,
একটা গোটা পৃথিবী লিখতে চায়
এক গহন বনে থেকেও,
কিন্তু বেড়ি জালে সে আজও বন্দি।”
“কেউ, দেখেনি স্কুল কলেজের চৌকাঠ
টোল কিংবা পাঠশালা,
মেন্টর, ফ্রেন্ড-গাইড-ফিলোসফার
শুধু শব্দের জাদুগর।
শুধুই অপেক্ষা, হাতে নিয়ে বুলেটের তোপ
এক স্বপ্নময় স্বাধীনতা
মৌলবাদের অবসান।”
“কেউ মহাশূন্যে কাটায়
ভয়কে করে জয়
আর
কায়েম করে বলের প্রত্যয়।”
“গিরিশৃঙ্গ ছুঁয়ে কেউ
হয় বীরাঙ্গনা
পার করে চড়াই-উতরাই,
নিপাত যাক ফেক ভাবনা।”
“বিদ্যা শেখায় শৌর্য
আর, অকুতোভয় শক্তি
তাই তো কেউ
বুলেট হজম করেও দেখায়
পরাধীনতার মুক্তি।”
স্বাধীন চিন্তাশীল মন আজ শুধুই ব্যক্তি, শ্রেণী, স্থান -কাল কিংবা পুং- নারীতেই আবদ্ধ নয়, আজ তার উড়ান অনেকটাই গভীরে।
জর্জরিত, কখনও সংবেদনহীন শহুরে সভ্যতার ডামাডোলে, কখনও ব্রাত্য সে, তথাকথিত সংস্কৃতিবান সমাজে,
কখনও দেয়, নিজের হাসিকান্নার অনায়াস বলি,
কখনও বা পোড়ে দ্বিধাহীন মোমবাতি হয়ে।
“নেপোয় মারে দই ?
সে তো সর্বত্রই।
পেশার জগৎ কিংবা
সংস্কৃতির নেশার জগৎ
শো -বিজের চকমকি দুনিয়া
তোষামোদ – স্বজন- পূর্তি
সং-সার কিংবা জীবন- যাপন
সবখানেই
কি আর নতুন!
তবে কেন, আজ এতো কোলাহল?
শিল্পের উৎকৃষ্টতা!
নাকি, শুধুই শো -অফ,
একটু অঙ্গুলি হেলন
স্বাধীন শিল্পের
নিমেষ পতন।”
“তবু, আতসকাচে বারে বারে ধরা পড়ে
সদ্যজাত মুক্ত চিন্তা, শিল্পের
স্বাধীন খেলার আঙিনায়।”
“অসহায় গলওয়ান পরে থাকে
লোলুপ হাতছানির অন্ধকারে,
থাকে
হিমায়িত ঘুম
অন্তসারহীন, নিহত।”
“তবু কিসের যেন ঐকতানে
কালো কুয়াশা সরিয়ে
উজ্জ্বল আলোর মুখোমুখি হয়
অপেক্ষায়
এক স্বাধীন শান্তির আশ্রয়ে।”
“ওই দেখো, দলে দলে চলে সব
অসহায় কলেবর,
সমাজ-রাজনীতি
নিঠুর নিয়তি
জন্মভূমির ভিটেতেও
পরাধীন।”
“তবু, জাগে মৃদু আলো
প্রদীপের সলতেয়,
বুক বাঁধে চাষা
থমকে যাওয়া দিন
হবে আবার চলমান
আরশি দেখে আশা।”
স্বৈরাচার নয় স্বেচ্ছাচারও নয়, নয় কোনো আত্মকেন্দ্রিক ভাবাদর্শ।
স্বাধীনতার, বলা ভালো মুক্ত- নির্মল- অভিনব- স্বাধীন চিন্তার
বৈতরণী যেন শত বিপর্যয়েও হয় পথ চলার পাথেয়।
শুভ বুদ্ধির সাহচর্য থাকুক অনন্তকাল।
ঠিক যেমন, ক্ষণমিহ সজ্জনসঙ্গতিরেকা, ভবতি ভবার্ণব-তরণে নৌকা।
ছবি: কুন্তল
লেখকের কথা: পর্ণা সেনগুপ্ত
পর্ণা সেনগুপ্তের জন্ম পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খন্ড মধ্যবর্তী এক ছোট মফঃস্বল -এ। বর্তমানে তিনি পুনে নিবাসী। কর্মসূত্রে একটি স্কুলের শিক্ষিকা। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তার বড় হওয়া তাই সংস্কৃতি অনুরাগী পর্ণার কাছে সংস্কৃতির প্রতিটি রূপ-বিন্যাস সমানভাবে সমাদৃত। দেশীয়-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাংলা পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশ পায়। কাজের ব্যস্ততার মাঝে বিভিন্ন সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কখনও আবৃত্তিকার, গ্রন্থিক বা অনুষ্ঠান সঞ্চালিকা রূপে, কখনও গায়িকা বা নাট্য- জগতে শিল্পী হিসাবে অংশ গ্রহণ করেন।