সিদ্ধার্থ সিংহ-এর দুটি কবিতা

সিদ্ধার্থ সিংহ

আমার লোক

দুর্গতদের ত্রাণের মালপত্র মাঝপথে বেচে দিলেও
ছাড়া পেয়ে যাবেন
যদি আমার লোক হন।
যদি আমার লোক হন
দেড় বছরেই দ্বিগুণ টোপ দিয়ে
জনগণের কাছ থেকে
তুলুন না যত খুশি টাকা।
ফাঁকা বাড়ি পেয়ে দিনে-দুপুরে দল বেঁধে ঢুকে
মা এবং মেয়েকে একই খাটে…
হাতেনাতে ধরা পড়লেও
অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই
যদি আমার লোক হন।
খুন-টুন, রাহাজানি, আর্মস নিয়ে ঘোরা
কিংবা জমি দখল, তোলাবাজি, অপহরণ
যা ইচ্ছে করুন
চিন্তার কিছু নেই
যদি আমার লোক হন।

আর আমার লোক হতে গেলে?
না, শুধু ভোট দিলেই হবে না
শুধু মিছিলে হাঁটলেই হবে না
শুধু আমার তালে তাল মেলালেই হবে না।
এ সব তো সবাই করে,
আমার লোক হতে গেলে
যা লুঠ করবেন, তার অন্তত এইট্টি পার্সেন্ট
আমাকে দেবেন, ব্যস।

তা হলেই আপনি আমার লোক
আমার লোক
এবং আমার লোক…


কী লাভ

তা হলে থাক,
আমাকে বাতিলের খাতাতেই রাখুন।

আরও কত দিন যে লকডাউন চলবে, ঠিক নেই
এমনিতেই আপনার কাছে যেতে পারব না
বসতে পারব না শ্যামবাজারের সেই পর্দা ঢাকা কেবিনে
ফাঁকা ট্যাক্সিতেও খেতে পারব না
চকাস করে একটা চুমুও
তা হলে আর শুধু শুধু প্রেম করে কী লাভ!

তার ওপর আপনি বলছেন কিনা—
আমার সঙ্গে প্রেম করতে হলে
আমার কথা শুনেই চলতে হবে!

না না না, তা হলে থাক
আমাকে বাতিলের খাতাতেই রাখুন।
যখন লকডাউন উঠবে
তখন না হয় ভাবা যাবেখ’ন…


ছবি: প্রণবশ্রী হাজরা


লেখকের কথা: সিদ্ধার্থ সিংহ
২০২০ সালে ‘সাহিত্য সম্রাট’ উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে ‘বঙ্গ শিরোমণি’ সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে।  ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম ছড়া ‘শুকতারা’য়। প্রথম গদ্য ‘আনন্দবাজার’-এ। প্রথম গল্প ‘সানন্দা’য়। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়। মামলা হয় পাঁচ কোটি টাকার। ছোটদের জন্য যেমন মৌচাক, শিশুমেলা, সন্দেশ, শুকতারা, আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, চিরসবুজ লেখা, ঝালাপালা, রঙবেরং, শিশুমহল ছাড়াও বর্তমান, গণশক্তি, রবিবাসরীয় আনন্দমেলা-সহ সমস্ত দৈনিক পত্রিকার ছোটদের পাতায় লেখেন, তেমনি বড়দের জন্য লেখেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য। ‘রতিছন্দ’ নামে এক নতুন ছন্দের প্রবর্তন করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুশো পঁয়তাল্লিশটি। তার বেশিরভাগই অনুদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বেস্ট সেলারেও উঠেছে সে সব। ষোলোটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন এবং লিখতেও পারেন। এ ছাড়া যৌথ ভাবে সম্পাদনা করেছেন লীলা মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা দেবী, শংকর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে। তাঁর লেখা নাটক বেতারে তো হয়ই, মঞ্চস্থও হয় নিয়মিত। তাঁর কাহিনি নিয়ে ছায়াছবিও হয়েছে বেশ কয়েকটি। গান তো লেখেনই। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি বাংলা ছবিতে। তাঁর ইংরেজি এবং বাংলা কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কয়েকটি সিনেমায়। বানিয়েছেন দুটি তথ্যচিত্র। তাঁর লেখা পাঠ্য হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে একত্রিশ তারিখের মধ্যে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, মুক্তগদ্য, প্রচ্ছদকাহিনি মিলিয়ে মোট তিনশো এগারোটি লেখা প্রকাশিত হওয়ায় ‘এক মাসে সর্বাধিক লেখা প্রকাশের বিশ্বরেকর্ড’ তিনি অর্জন করেছেন। ইতিমধ্যে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, নতুন গতি পুরস্কার, ড্রিম লাইট অ্যাওয়ার্ড, কমলকুমার মজুমদার জন্মশতবর্ষ স্মারক সম্মান, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের ‘শ্রেষ্ঠ কবি’ এবং ১৪১৮ সালের ‘শ্রেষ্ঠ গল্পকার’-এর শিরোপা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

লেখা আহ্বান - বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন