লেখক : অম্লান ভট্টাচার্য
আমার চোখের পিছনে সে দাঁড়িয়ে ছিল,
বুঝতে পারলাম না কেন সেই দিন আমায়
উল্টো করে দাঁড় করিয়ে পিছনে লাথি মারা হ’ল,
আমি কিছুমাত্র জিজ্ঞেস করতে পারিনি
কারণ আমি ছিলাম একটা মৃতদেহ
তাছাড়া আর কিছুই নয়,
যে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল
সেই আমাকে পিছন থেকে আঘাত করেছিল,
আর এমনই প্রচণ্ড বেগে আঘাত যা কিনা
মৃত্যুর পর আমাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল,
এখন আমার মৃতদেহ টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সৎকারের জন্য,
নিয়মতান্ত্রিক সমাজে সৎকারের আগে
একে একে সমাজের বিখ্যাত মানুষজনেরা লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ল
আমার সম্বন্ধে দু’-চার লাইন বলবে,
প্রথমে বলতে এল এক মহাজন
সুদের কারবারি,
খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল,
একজন অতিশয় ভদ্রলোক,
দ্বিতীয় বলতে এল এক বেশ্যা,
বলল, আমি তো একে চিনি না,
আমার সঙ্গে রাত কাটায়নি,
তৃতীয় বলতে এল এক বামপন্থী নেতা,
বলল, লেভী ঠিকঠাক দিত,
চতুর্থ বলতে এল আমার স্ত্রী,
বাবা, বেঁচেছি আমার সোনাগুলো ছাড়িয়ে দিয়ে গেছে,
পঞ্চমে এল আমার ছেলে,
বলল, বাবা এডুকেশন লোন ছাড়াই আমাকে বি.টেক করিয়েছে
এখন আমি এম.এন.সি তে চাকরি করি
আমার বউও করে,
যষ্ঠজন হ’ল, আমার স্কুলের বন্ধু
বলল, বেশি দাঁত কেলাতো, তাড়াতাড়ি গেছে ভাল হয়েছে,
সপ্তমে আমার বাবা-মা স্বর্গের জানলা থেকে আমাকে দেখে টা-টা করল,
এদিকে কালীঘাট শ্মশানে ট্রাফিক জ্যাম হয়ে গেল,
লোকাল থানা থেকে অফিসার এসে বলল,
বন্ধ করো বন্ধ করো,
দিদি-দাদা এখান থেকে পাস করবে,
জানতে পারলে বকাঝকা করতে পারে,
যা হোক অনুষ্ঠানটা শেষ হ’ল না
শুধু একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত,
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে,
গেয়ে আমাকে চুল্লিতে ঢোকানো হ’ল,
ঢোকানোর সময় কে যেন বলে উঠল,
অম্লানজী অমর রহে, অমর রহে,
ইনকিলাব জিন্দাবাদ,
দুনিয়ার মজদুর এক হও
আমার মৃতদেহের প্রতি স্যালুট জানাল কমরেডরা,
এর কিছু পরে
আমি ভিতরে পুড়ছি।
লেখক পরিচিতি : অম্লান ভট্টাচার্য
জন্ম ২৫ ডিসেম্বর ১৯৫৭, কলকাতা। স্কুল - ঢাকুরিয়া রামচন্দ্র হাইস্কুল, কলেজ - সেন্টপলস, বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক, কলা বিভাগে স্পেশাল স্নাতক, কারিগরি শিক্ষা, কম্পিউটার ডিপ্লোমা ও টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটে শিক্ষা গ্রহণ, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি অবশেষে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ অবসর। এযাবৎ তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত, মূলত কবিতা প্রাধান্য পেয়েছে লেখালেখিতে এবং এই সূত্রে চতুর্থ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ।


কবিতা নয় , যেন একটা ছবি দেখলাম। সত্যিকারের ছবি।
মূল থিম ভাল লেগেছে। সুন্দর হয়েছে।