কবি: স্বপন নাগ
কেমন আছো বাউলডাঙা?
সন্ধে এত তাড়াতাড়ি
কাস্তেতে ঘাস নিড়িয়ে মাটি
শুকিয়ে ওঠার আগেই আঁধার
চুপিসারে আসছে নেমে
দল বেঁধে সব কিচিরমিচির
নাম না জানা হাজার পাখি
অস্থায়ী তার নরম বাসায়
দুধেল গাইটি গোয়ালমুখো
সঙ্গে বাছুর ছটপটে সে
খোঁটায় বাঁধা জীবন থেকে
এখনো সে অনেক দূরে
বাউলডাঙা, কেমন আছো?
ওদিকে ওই তোলা উনুন
ধোঁয়ার পাতলা চাদর বিছোয়
গাঁ ছাড়িয়ে সটান পাড়ি
হা-হা খোলা মাঠের পানে
বুড়ো বটের নিচেই জমাট
আড্ডা তখন ভরভরন্ত
কীর্তনে কে বাঁশি বাজায়
দখিনপাড়ার সাঁঝবাসরে
কান্নামাখা করুণ সুরে
আঁধার আরো জমাট বাঁধে
কেমন আছো বাউলডাঙা?
নিভে-আসা আলোর আভায়
কিশোরী এক উন্মনা সে
কী যেন এক মনখারাপের
হাওয়া দোলে চতুর্দিকে
এসব কথা গোপন কথা
কষ্ট এবং দীর্ঘশ্বাসে
লুকিয়ে রাখে সে মেয়েটি
অন্ধকারে ঝোপের মাঝে
জোনাক জ্বলে মিটিমিটি
সঙ্গে ঝিঁঝিঁর একটানা রব
জোনাকি আর তারায় এ রাত
রূপসী ও সালঙ্কারা
ডুরে শাড়ির কালো মেয়ের
ভুরুর মাঝে কাচপোকা রং
রাত্রি আরো গভীর হলে
কেন যে তার একলা লাগে
বুকেতে ঢেউ পলকে জল
তার কথা কি একটু ভাবো
উদাস আমার বাউলডাঙা?
নদীজল আর অবাধ্য ঢেউ
ক্ষেতের সবুজ — এসব নিয়ে
একলা আমায় দূরে ফেলে
কেমন আছো বাউলডাঙা?
লেখক পরিচিতি: স্বপন নাগ
১৯৫৭ সালের ১০ জুলাই হাওড়া জেলার এক গ্রামে জন্ম। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মসূত্রে দীর্ঘ কুড়ি বছর উত্তর প্রদেশের কানপুরে থাকার পর ২০০২ থেকে পশ্চিমবঙ্গে।
বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ১. ইচ্ছে আমার বনকাপাসী মাঠ ২. স্থির স্বপ্নে জেগে আছি ৩. বিষাদ এসে ঘর বেঁধেছে ৪. প্রিয় পঁচিশ। মৌলিক কবিতা লেখার পাশাপাশি হিন্দি কবিতার অনুবাদও করি। কবি কেদারনাথ সিং-এর কবিতার অনুবাদের আমার একটি বইও আছে। রম্যরচনার একটি সংকলনের প্রকাশ আসন্ন।
স্বপনদার লেখা মানেই এক মুঠো খোলা হাওয়ায় স্নিগ্ধ হওয়া।