লেখক : আলী ইব্রাহিম
তিন্নী আমার বন্ধু।
তিন্নী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা ভালোবাসতো।
‘কেউ কথা রাখেনি, আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি’
আবৃত্তি করে বলতো, আহা! সুনীল কী লিখেছে মাইরি!
তিন্নী আসাদ চৌধুরীর ‘বারবারা বিডলারকে’ পড়ার পর খুব কেঁদেছিল।
আর বলেছিল, এরকম কবিতাও মানুষ লিখতে পারে নাকি!
তিন্নী কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ পড়েছে।
যতবার পড়েছে ততোবারই চমকে উঠেছে। শিহরিত হয়েছে।
তিন্নী আবৃত্তি ভালো পারতো। ওর আবৃত্তি আমাকে বিমোহিত করতো।
তিন্নী এখন বিয়ে করেছে। ওর বর হাইকোর্টের একজন উকিল।
ওদের একটা মেয়ে আছে। ওরা ঢাকায় থাকে। ভালো আছে।
শুনেছি বিয়ের পর ঝামেলা হলেও তিন্নী কবিতা ছাড়েনি।
ওর মুখে কবিতা শুনলে যে কেউ এখনও ওকে বিয়ে করতে চাইবে।
সেই তিন্নীকে আমি যেদিন বললাম, এই তিন্নী!
আমি তোকে ভালোবাসি। আমি তোকেই ভালোবাসি।
তিন্নী অসহায়ের মতো বলেছে, খুব দেরি হয়ে গেছেরে আলী!
তারপর আমাকে ছাদে বসিয়ে রেখে সে ঘরে গিয়ে চোখ মুছে এসেছে।
তিন্নীর প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ। নির্মলেন্দু গুণ। রফিক আজাদ।
মহাদেব সাহা। হেলাল হাফিজ। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। আলী ইব্রাহিম।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘প্রিয়তমাসু’ পড়ে কতবার যে অশ্রু ফেলেছে হিসাব নেই।
আমি প্রায়ই ওর বাসায় যেতাম। কখনো ওর মুখে কবিতা শোনার জন্যে,
কখনো ওকে এক মুহূর্ত দেখার জন্যে, ওর পাশে বসার জন্যে,
কৌতূহলে ওর হাত স্পর্শ করার জন্যে আমি যেতাম।
যখন তখন যেতাম। ও না ডাকলেও ওর খাওয়ার সময় হাজির হতাম।
ওর প্লেট থেকে এঁটোভাত তুলে খেতাম।
ওর হাতে ভাতমাখা না খেলে ওর বাসা থেকে আসতাম না।
তিন্নীর মা তখন আড়াল থেকে সব দেখে মুখ টিপে হাসতো।
তিন্নী!
তোর জন্যে আর রাত জেগে কবিতা লিখি না।
তোর জন্যে তেনাচিড়া বিল থেকে আর লাল শাপলা তুলি না।
তবে তোর এঁটোভাত এখনও লেগে আছে আমার মুখে গালে।
তিন্নী!
তোর ভালোবাসায় মানুষ হতে গিয়ে আজ আমি রোদ হয়েছি।
তোকে খুঁজতে গিয়ে আজও আমি ভূমিরেখায় খুঁজছি মানবাধিকার!
লেখক পরিচিতি : আলী ইব্রাহিম
সহসম্পাদক, দৈনিক করতোয়া, চকযাদু রোড, বগুড়া, বাংলাদেশ।