লেখক : সঞ্চিতা সিকদার
নীতার সঙ্গে গুড্ডুর আলাপ ফেসবুকে হলেও এখন তাদের গাঢ় বন্ধুত্ব। নীতা খুব ছোট বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়েছে। তাই গুড্ডুর মুখে, তার বাবা-মায়ের কথা শুনে নীতার মন ভরে যায়। নীতা তার ঠাকুমা, পিসি, জ্যাঠা-জেঠি, কাকা-কাকিমার সাথেই থাকে। তবে একমাত্র তার ছোটকা ছাড়া তাকে কেউ মন থেকে ভালবাসে না। সেটাও মাঝেমধ্যে কম পড়ে যায় কাকিমার জন্য।
নীতা সকলের ফাইফরমাস খেটে বেড়ায়। সে কোনরকমে মাধ্যমিক পাশ করেছে, বয়স এখন পঁচিশের কোটায়। তবুও কেউই তার বিয়ে নিয়ে চিন্তিত নয়। কারণ বিনা পয়সার কাজের লোক চলে যাবে যে! তার ওপরে বিয়ের খরচ।
ছোটকার পুরনো মোবাইলটা নিয়ে নীতার দিন বেশ চলে যায়। অবশ্য মাঝে মধ্যে দু’-তিনশ টাকাও দেয়। নীতা বাজারের নাম করে প্রায়ই গুড্ডুর সাথে দেখা করতে যায়। সেদিন ওরা পার্কে বসে, নীতা দুষ্টুমি করে গুড্ডুকে বলে, “আচ্ছা, তোমার কোন ভাল নাম নেই?”
“শোনো, আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তাই আমাকে ওরা শুধু গুড্ডু বলেই ডাকে।”
“আচ্ছা, আমাকে কবে তোমার বাবা-মায়ের সাথে আলাপ করিয়ে দেবে?”
“এই তো সামনের আট তারিখে, বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকীতে।”
“সত্যি তো?”
“সত্যি।”
“কিন্তু সেই দিন তুমি তো খুব ব্যস্ত থাকবে। আমাকে তোমার ঠিকানাটা দাও, আমি নিজেই তোমাদের বাড়ি চলে যাব, আর কাকু-কাকিমার সঙ্গে আলাপ করে নেব।”
নির্দিষ্ট দিনে নীতা ঠিকানাটা নিয়ে গুড্ডুদের বাড়িতে যায়। আলোর রোশনাই, খাবার ব্যবস্থা, সবই রয়েছে। অনেক নিমন্ত্রিতও আছে। নীতা আস্তে আস্তে ঘরের ভিতরে যায়। গুড্ডু একটা সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে। নীতাকে দেখেই বলে, “আরে, কখন এলে? এস, এস।”
গুড্ডু নীতার হাত ধরে একটা ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে একটা শ্বেত পাথরের সিংহাসনের ওপর রাখা ছবির দিকে উদ্দেশ্য করে বলে , “আলাপ করিয়ে দিই; এই হ’ল আমার বাবা-মা।”
নীতা চমকে ওঠে। “তাহলে তুমি যে বললে, আজ ওনাদের বিবাহবার্ষিকী !”
“সত্যিই তো! দেখছ না, কত লোক এসেছে। আমিই তো নিমন্ত্রণ করেছি।”
“চুপ করো।”
গুড্ডু কান্নায় ভেঙে পড়ে , “আসলে আমার বাবা-মা, সেই কবেই, ছোট বয়সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে, কিন্তু আমি এইভাবে ওদের বাঁচিয়ে রেখেছি।”
নীতা গুড্ডুকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে, “আজ কিন্তু আমার খুব ভাল লেগেছে , কাকু-কাকিমার সাথে আলাপ করে।”
লেখক পরিচিতি : সঞ্চিতা সিকদার
সঞ্চিতা সিকদার একজন পরিচিত লেখিকা জন্ম ১৯৭৭ সালে পেশায় একজন শিক্ষিকা