এক রাজকন্যার গল্প (পর্ব-২)

লেখক : শিখা চক্রবর্তী

সেখানে উপস্থিত সবাই সে সময় যখন রাজাকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে, সেই সুযোগে লোকটা হঠাৎ রাজকন্যার হাত খপাত করে নিজের মুঠিতে ধরে একটা জোরে টান দিয়ে বললো “চলো কন্যে।” বলেই নিমেষের মধ্যে রওনা দিল। রাজা বলে উঠলেন “আরে আরে, চললে কোথায়? তোমার নাম ঠিকানাটাই তো জানা হল না। কার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি কমপক্ষে সেটা তো জানব। একটু কোনও আয়োজন হল না কিছুনা এমনি করে মেয়েটা কে ধরে নিয়ে যাচ্ছ কেন?’ তক্ষুনি রাজার সেপাইরা লোকটাকে ধরার জন্যে সবাই.মিলে বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু তারা দেখল লোকটা রাজকন্যাকে নিয়ে সেই জঙ্গলের গভীরে উধাও হয়ে গেছে। কোনও খোঁজই তাদের আর পাওয়া গেলনা। রাজকন্যা ঘটনার আকস্মিকতায় একদম চুপ করে গেলেন। কিন্তু রাজার মেয়ে বলে কথা! বুকের মধ্যে অসীম সাহস নিয়ে নীরবে তিনি ওই লোকটার সঙ্গে চললেন। কোনও প্রতিবাদ , কান্নাকাটি কিছুই করলেন না। জঙ্গলের ভেতরে ঢোকার পর তাঁর গা টা ছম ছম করে উঠলো। দিনের বেলাতেও সেখানে যেন রাতের অন্ধকার। সূর্যের আলোর প্রকাশ নেই। আর সেই জঙ্গলের মাঝে কারা যেন তাঁর পেছনে ফিসফিস করে কথা বলছে। শুনতে পেলেন বিভিন্ন জন্তু জানোয়ারের আওয়াজ ছাড়া ও আরও কত রকম আওয়াজ। রাজকন্যা দাঁতে দাঁত চেপে মনের ভয়কে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করতে লাগলেন। একসময় সেই চলা শেষ হলে পর রাজকন্যাকে নিয়ে সেই লোকটা একটা ভাঙ্গা পোড়ো বাড়িতে প্রবেশ করলো। যে তাঁকে অভ্যর্থনা করতে এগিয়ে এলো রাজকন্যা তাকে দেখে আঁতকে উঠলেন। একটা কঙ্কাল। কিন্তু তার চলাফেরা হাবভাব সবই স্বাভাবিক মানুষের মতো। তাই দেখে রাজকন্যার ভয়টা আস্তে আস্তে কমে গেলো। ঢ্যাঙা টা কঙ্কাল কে বললো “এর দিকে এখন থেকে ভালো মতো খেয়াল রাখবি। পেট ভরে খেতে দিবি। খাবার যেন কম নাহয় মোটে। আমি এখন বেরোচ্ছি। আসতে দেরি হবে। দেখবি যেন পালাতে না পারে।” কঙ্কাল উত্তরে শুধু মাথা নাড়ল। লোকটা তারপর যেন বাতাসের বেগে বেরিয়ে গেল। রাজ কন্যার এইবার তাঁর বাড়ির জন্যে, বাবা মায়ের জন্যে মনটা হু হু করে উঠল। না জানি তাঁর বাবা মা এখন কতই না দুশ্চিন্তা করছেন তাঁদের একমাত্র সন্তানের জন্য। রাজকন্যা প্রাণপণে কান্না চাপবার চেষ্টা করতে লাগলেন কিন্তু পারলেন না। একটা পুরনো খাটের ওপর তিনি বসেছিলেন দুহাতে মুখ ঢেকে। এমন সময় কঙ্কালটা একটা বিশাল থালায় করে অনেক রকমের মাংস আর ভাত এনে তাঁর সামনে ধরলো। সেই খাবারের গন্ধে তাঁর গা টা গুলিয়ে উঠলো। রাজকন্যা মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলেন তিনি কিছুই খাবেন না। সেই কথা শুনে মনে হলো যেন কঙ্কালটা খুশি হলো। সে চাপা গলায় আস্তে আস্তে বললো “তোমার এসব খেয়ে কাজ নেই। এই খাবার গুলো খেলে তুমি দিন দিন মোটা আর জবুথবু হয়ে যাবে আর পিশাচ টা তখন তোমায় খাবে। এ আমি কিছুতেই হতে দেবনা। অনেক সহ্য করেছি।আর নয়। তোমায় আমি একটা বড়ি দিচ্ছি, এটা খেলে তোমার পেট ভরবে, ক্ষুধা তৃষ্ণা মিটবে আবার গায়ে জোর ও পাবে। কিন্তু মোটা হবে না। যেমন আছো তেমনি থাকবে।” এই বলে সে বড়ি টা রাজকন্যাকে দিল। তিনি খেয়ে নিলেন। খাবার পর দেখলেন সত্যি ই তাই।কোনও ক্ষুধা, তৃষ্ণা নেই তাঁর , আবার গায়ে জোর ও পাচ্ছেন।এই ভাবে পর পর দুটো দিন কেটে গেল। কঙ্কালের কান্ড কারখানা ওই পিশাচ টা কিছু জানতেই পারলো না। সে বেশির ভাগ সময়েই বাইরে থাকে। এতে রাজকন্যার ও একটু সুবিধে হলো। কিন্তু লোকটা যখনই আসে রাজকন্যার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।তিন দিনের দিন সে কঙ্কালটা কে বললো “তুই কি একে ঠিকমতো খেতে দিচ্ছিস না নাকি? দিনদিন দেখছি রোগা হয়ে যাচ্ছে।” কঙ্কাল বললো “সে কি কথা! আমি তো রোজই ঠিক মত খেতে দিচ্ছি। এই তো আজকের খাবার ও রেডী। আমি তো সামনে দাঁড়িয়ে খাওয়াই।” লোক টা কি বুঝলো কে জানে, নিজের মনে বললো “না, আর দেরি করা যাবে না।” এই বলে সে আবার হাওয়ার গতিতে বাইরে বেরিয়ে গেল। সে বেরিয়ে যেতে কঙ্কালটা এসে তখুনি রাজকন্যাকে বলল “এক্ষুনি তুমি বেরিয়ে পর। খিড়কির দোর খোলা আছে। ওই দরজা দিয়ে বেরিয়ে সোজা বনের ম ধ্যে ঢুকে যাবে। একদম সোজা যাবে। বন শেষ হলেই তোমার বাড়ি পেয়ে যাবে। কিন্তু খবরদার ওই জঙ্গলে ঢুকলেই তুমি অনেক রকম আওয়াজ শুনতে পাবে। তোমাকে অনেকে খুব ডাকবে।কখনো লোভ দেখাবে, কখনো ভীষণ ভয় দেখাবে। অনেক রকম অনেক কিছু করবে কিন্তু তুমি কিছুতেই যেন পেছন ফিরে চেও না।


আগের ও পরের পর্বের লিঙ্ক<< এক রাজকন্যার গল্প (পর্ব-১)এক রাজকন্যার গল্প ( শেষ পর্ব ) >>

লেখক পরিচিতি : শিখা চক্রবর্তী
গৃহবধূ, নিবাস কোন নগর শ্রীরামপুর কলেজের স্নাতক স্বামীর কর্মসূত্রে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে বসবাস করার সৌভাগ্য এবং তার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় বইপড়ার ভীষণ নেশা ছিল কিন্তু শারীরিক কারণে বর্তমানে তাতে ছেদ পড়েছে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই একটু ছড়া লেখার অভ্যাস ছিল তারপরে সব বন্ধ ছিল, এতদিন পর কন্যা ও জামাতার উৎসাহে,প্রেরণায় পুনরায় লেখার শুরু দেশকাল বলে একটা ম্যগাজিনে আমার একটা লেখা বেরিয়েছিল ১৯৯৫ এর সময়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

রুচিশীল ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ক্লিক করুন এখানে

sobbanglay forum