গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস

লেখক : অর্দ্ধেন্দু গায়েন

তুহিন বাবু মেদিনীপুরের একটি কলেজে পার্ট টাইম পড়াতেন। বেশ কয়েকদিন হলো তিনি বীরভূমের লাভপুরের কোনও একটি নতুন কলেজে পার্মানেন্ট অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বিধাতার একি পরিহাস! তাঁর স্ত্রীর ক্যান্সার ধরা পড়ায় তিনি কিছুটা বিমূঢ়, চিন্তিত। নতুন কলেজের এখনও মাইনে চালু হয়নি। তার উপর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে একবার এখানে তো আর একবার ওখানে যেতে হচ্ছে তাঁকে। ছোট্ট তিন বৎসরের একটা ফুটফুটে মেয়ে মা’কে ছেড়ে থাকতে না চাইলেও বাধ্য হয়ে রেখে যেতে হয় অন্যদের কাছে।তিন জনের সুখের সংসারে যেন হানা দিয়েছে দুঃশ্চিন্তার ভারী মেঘ।ওরা এখন সত্যি দিশেহারা।

মুম্বাই শহরের একটা নামী হাসপাতালে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের চিকিৎসা হয়।তাই সেখানেই রওনা হয়ে গেল বাবলু বাবু আর দীপান্বিতাকে নিয়ে।ওরা সম্পর্কে পেশেন্টের জামাইবাবু এবং বোন।দু’জনে মিলে সমস্ত কাজে সাহায্য করেছে তাকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, রান্না করে যত্ন করে খাওয়ানো,তাকে সেবা করা ইত্যাদি। যে কোনও উপায়ে ক্যান্সারকে হারিয়ে জীবন যুদ্ধে জিতিয়ে দিতে চান অসুস্থ কমলা দেবীকে।

তুহিন বাবুর নতুন কলেজ,তাই খুব বেশি ছুটি নিতে চাননি তিনি। কলেজে পড়াতে গেলেও তাঁর মন পড়ে থাকে স্ত্রী কমলা দেবীর সুস্থতার প্রার্থনার গভীরে।পাঁচ-ছয় বৎসর হলো তাঁরা একে অপরের সঙ্গী হয়েছেন।এখনই কি শেষ হয়ে গেল সম্পর্কের মেয়াদ?কত না সুখের স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে।এই নিয়ে তিন বার কেমো থেরাপি করা হয়েছে তাকে। ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী মাসেই অপারেশন করা হবে তাকে। হয়তো মুক্তি মিলবে কমলা দেবীর, মুক্তি মিলবে কি হাওড়া থেকে মুম্বাই গামী গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসের?


লেখক পরিচিতি : অর্দ্ধেন্দু গায়েন
জন্ম উত্তর চব্বিশ পরগনার যোগেশগঞ্জের মাধবকাটী গ্রামে।পেশায় সরকারী চাকুরী হলেও নেশা পড়াশোনা , ইচ্ছে হলেই লেখা-সে কবিতা, ছোটগল্প, অণুগল্প, প্রবন্ধ যা কিছু হতে পারে, অবসরে বাগান করা,ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা ইত্যাদি।তবে সব পরিচয়ের সমাপ্তি ঘটে সৃষ্টিতে --পাঠক যেভাবে চিনবেন আমি সেভাবেই থেকে যাবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।