লেখক : দেবরাজ মেহেতা
মিষ্টি নামে একটা ছোট মেয়ে ছিল। ছোটবেলাতেই তার মা-বাবা মারা গিয়েছিল। তখন থেকে সে দাদু আর ঠাকুমার কাছে থাকত। খুব গরিব ছিল তারা। ছোট্ট একটা টিনের ঘর, খাওয়ার জন্য কখনো ভাত, কখনো শুধু লবণ-মুড়ি জুটতো। তবুও তাদের মধ্যে ভালোবাসা ছিল অগাধ।
দাদু বই পড়তেন, ঠাকুমা রান্না করতেন, আর মিষ্টি খেলা করত। তারা তিনজনে খুব কষ্ট করে দিন কাটাত।
একদিন হঠাৎ ঠাকুমা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডাক্তার এল, ওষুধ দিল, কিন্তু ঠাকুমা আর ভালো হলেন না। ঠাকুমা চলে গেলেন চিরঘুমে। মিষ্টির ছোট্ট মনটা ভেঙে গেল।
সে একদিন ভাবল, “আমার কিছু নেই, টাকা নেই, ঠাকুমাও নেই,যে আমাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসত ,আমি আর কেন বাঁচব?” সে ঠিক করল ব্রিজে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেবে। চোখে জল, মনে কষ্ট নিয়ে সে হাঁটতে লাগল।
অনেকক্ষণ হাঁটার পর হঠাৎ সে একটা জায়গায় থেমে গেল। চোখ পড়ল একটা ছোট্ট গাছের চারায়। গাছটা উঠে এসেছে শক্ত পাথরের ফাটল থেকে। চারপাশে শুধু সিমেন্ট, কোনো মাটি নেই, তবুও সেই ছোট্ট গাছ জন্ম নিয়েছে আর বাঁচতে চেয়েছে।
মিষ্টি থমকে দাঁড়াল। ভাবল, “এই গাছটা যদি পারে, আমি কেন পারব না? আমি তো মানুষ, আমি তো জন্ম নিয়েছি, ভালোবাসা পেয়েছি! আমি তো হার মানতে পারি না!”
সে ফিরে গেল বাড়ি। দাদুর হাত ধরল, আর বই খুলে বসে গেল পড়তে। স্কুলে আবার যেত, পড়াশোনা করত, হাসত, গল্প করত। দাদুও খুশি ছিলেন।
বছর কেটে গেল। মিষ্টি বড় হল, ভালো রেজাল্ট করল, চাকরি পেল। তারপর বিয়েও করল। এখন তার নিজের পরিবার আছে, নিজের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে আনন্দে কাটৈ তার দিন।
একদিন, পুরোনো অ্যালবাম খুলে ছবি দেখছিল সে। সেখানে একটা ছবি ছিল—দাদু, ঠাকুমা আর ছোট্ট মিষ্টি। ছবিটা দেখে তার চোখ ভিজে গেল।
সে হাসল আর বলল, “যদি সেদিন আমি নিজেকে শেষ করে দিতাম, তাহলে এই সুন্দর জীবনটা দেখতাম না। ধন্যবাদ, ছোট্ট সেই গাছটিকে—তুই আমায় নতুন জীবন দিয়েছিলি।”
গাছটা তখন মিষ্টির মতোই ছোট ছিল। আজ মিষ্টি বড় হয়েছে, গাছটাও নিশ্চয়ই বড় হয়েছে কোথাও। মনের গাছটাও বড় হয়েছে।
মিষ্টি জানে, যতই কষ্ট আসুক, যতই অভাব থাকুক, জীবন থেমে থাকে না। ছোট্ট একটা গাছও সেটা শিখিয়েছিল তাকে। যদি একটা নতুন জন্ম নেওয়া গাছ সিমেন্ট, কংক্রিটের মধ্যে থেকে বাড়তে পারে , তাহলে সে কেন পারবে না !
লেখক পরিচিতি : দেবরাজ মেহেতা
I am a student of class-VIII, studying in Narayana School, Park circus branch.I am 12 years old.I love to write poetries and short stories.
দুর্দান্ত হয়েছে দেবরাজ 😊😊
প্রার্থনা করি, এইভাবেই লিখে যাও