লেখক : সমীর মন্ডল
আজ ২০শে আশ্বিন দেখতে দেখতে পাঁচ বছরে পা দিয়েছে ছোট্ট বুবাই। আজ যে তার জন্মদিন। কথাটা মায়ের মুখে শোনার পর সে কিছুটা উদগ্ৰীব অথচ সজ্ঞানে মাকে প্রশ্ন করল,আচ্ছা মা জন্মদিন মানে কি? নতুন করে বুঝি জন্ম হয় ! ছোট্ট অবুঝ ছেলের কথা শুনে মায়ের কিছুটা হাসি পেল ঠিকই কিন্তু মনে মনে কষ্টও পেলেন বোধ করি। তাই না হেসেই উত্তর দিলেন ধুর পাগল তা কেন হবে। জন্মদিন মানে হলো আজকের দিনেই আমার কোল আলো করে তোর জন্ম হয়েছিল। ও তাই বুঝি; তোমারও বুঝি জন্মদিন আছে? ছেলের এহেন বোকা বোকা প্রশ্নের উত্তর দিতে নারাজ উর্মিলা দেবী মেলা কাজের অজুহাতে সরে গেলেন। মনে মনে ভাবতে থাকলেন যদি একটু পায়েস রান্না করতে পারতেন, বুবাই এর জন্যে। কিন্তু মাস গেলে বুবাইয়ের বাবা ছাত্র পড়িয়ে যেটুকু রোজগার করেন সেখানে ভালোমন্দ তো দূরের কথা কখনো দুইবেলা ভরপেট খাওয়া ও জোটে না। ঠোঙা বেচে তিনিও যেটুকু রোজগার করেন অভাবের সংসারে সেটুকুও তো বেশিক্ষনের জন্য নয়। তারমধ্যেই আবার এবারের বর্ষাতে ঘরের চাল সারাই করতে গিয়ে প্রায় সর্বশান্ত হয়েছেন। কিন্তু সন্তানের প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা যে সব কিছুরও উর্ধ্বে তারই যেন প্রমান দিলেন গিরিশবাবু। নিজের সামর্থের বাইরে গিয়ে তিনি ছেলের জন্য পায়েসের বাজার করে তবেই ফিরেছেন। পায়েসের বাটির সামনে মায়ের হাতে বোনা আসনে ছোট্ট বুবাই। প্রাণভরে আশির্বাদ করলেন দম্পতি; শুধু মানুষ নয় মানুষের মতো যে মানুষ হতে হবে।
আজ আরেকটা ২০ শে আশ্বিন সবকিছুই আগের মতই রয়েছে খালি চলে গেছেন গিরিশবাবু। ছেলের অভূতপূর্ব সাফল্য তাঁর আর দেখা হয়নি। আজও বাড়িতে পায়েস রান্না হয়েছে, কেকও এসেছে। আজ যেন আরো একবার নতুন করে জন্ম হলো উর্মিলা দেবীর তারও যে জন্মদিন ২০ শে আশ্বিন। সদ্য ষাটোর্ধ্ব উর্মিলা দেবী চোখের জল যেন ধরে রাখতে পারছেন না, আফশোষ শুধু একটাই বৃত্তটা যে সম্পূর্ণ হলো না।
লেখক পরিচিতি : সমীর মন্ডল
আমি সমীর মন্ডল, আমি আশুতোষ কলেজের প্রানীবিদ্যা বিভাগের একজন ছাত্র। আমি লিখতে খুবই ভালবাসি। আমি ছোটোগল্প ও কবিতা লিখি। আমার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে। আমার লেখা নিয়মিত "অল্পস্বল্পগল্প" ইনস্টাগ্ৰাম পেজে প্রকাশিত হয়। এখন আমি আপনাদের মাধ্যমে আমার লেখা তুলে ধরতে চাইছি। সত্যি যদি এরকম কিছু সম্ভব হয় তাহলে আমি আপনাদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকবো।