লেখক : সাত্যকী
-কদ্দিন হলো কিছু করেননি?
-প্রায় মাস দেড়েক।
-যা! কমই তো, সমস্যা নেই।বাকি ক’টা, মানে বলছি যে সময় নেবেন কতক্ষণ?
-অনেক দিন তো হলো, আগে রেট জানা দরকার তো, বদলেছে?
-না, আগের টাই আছে; এখন বলেন কেমন করবেন, কতো সময় নিবেন আপনি?
-বলেই পাশের রুমের দরজা খুলে দিলো সে, ‘এক ঘন্টা সময় চাই’ বললাম। তৈরী হয়ে আসবে, অপেক্ষা করতে বললো।
আজকে সকাল থেকেই দোটানায় ভুগছিলাম, যাব কি না!
প্রায় দুমাস হয়ে গেলো – একটা ছাইপাঁশও লিখতে পারছিনা। গল্প দেবার কথা, পারছি না কিছুই। এদিকে না লেখার কারণে উইথড্রওয়াল হচ্ছে প্রচুর- নেশার চেয়ে কম না লেখালেখি, অভাব ছিড়েখুঁড়ে খাবে এটা স্বাভাবিক।
‘যাব ওখানে?’ নিজেকে জিজ্ঞেস করে কোনো নিশ্চিত উত্তর না পেয়ে, চা ঢাললাম ফ্লাস্ক থেকে। সকাল থেকে দু ফ্লাস্ক শেষ।
দুপুরটাও এভাবে কাটতো, যদি না সাহস করে ওদিকে না যেতাম। কাবেরী লজে যেতে ইচ্ছে করে না বললে ভুল হবে, বোধহয় করে।
কিন্তু অনৈতিক লাগে মাঝে মাঝে। ইম্পস্টার সিন্ড্রোম একেবারে কুড়ে খায়। কিন্তু ক্ষরা আরো কষ্ট দেয়।
এই কাবেরী লজ নামটা আমাদের মতো মানুষদের কাছে বেশ পরিচিতই। সবারই প্রয়োজন পড়ে আসার, অনেকে না পেরে আসে, অনেকে শুধু শখে, অনেকে অভ্যাসে। আমি প্রথম গ্রুপের মানুষ। ঠেকায় পড়ে যাই।
এখন যেমন বসে আছি, কাবেরী লজের দ্বিতীয় তালার এক রুমে, যেটার বর্ণনা দিয়ে লাভ নেই। গতবার যেখানে জানালা দেখেছিলাম, আজকে সেখানে একটা পেইন্টিং ঝুলছে; স্টিলের বদলে কাঠের দরজা, দেয়ালের রং এতোটাই বদলেছে যে দেয়াল বলে মনে হচ্ছে না। গতবার বা তার আগের বার এই রুমেই এসেছিলাম? জানি না।
আবার, যদ্দুর জানি বা শোনা যায়, এখানে এই একটা রুমই চলে। শুনেছি কেউ কখনো এক রকম দেখে না, দ্বিতীয় বারও না। হতে পারে, ইন্সপিরেশন-অনুভূতি এইসব তো সব সময় আলাদা, সামান্য হলেও। আর আমি যার খদ্দের? সে এখানে একা নাকি আরো কেউ আছে, জানিনা; অন্যদের সাথে বর্ণনা মেলে না কারো। সবাই সব অন্যভাবে টের পায়, অনুভব করে।
যাহোক, এসব ব্যাপার শ্রডিঙারের বিড়াল, জানা-বোঝা সম্ভব নয়।
এসব ভাবতে ভাবতে সে চলে আসলো, পরিপাটি হয়ে।গতবারও এ-ই ছিলো নাকি? কেন জানি মনে পড়ছে না। ‘এই রুমের বাহিরে আপনি আমাকে চেনেন না, মনে রাখবেন কিন্তু’
বললাম যে মনে আছে এটা। এই কথা সবাই জানে যারা এখানে আসে।
এরপর কি হলো মনে নেই। একেবারে বোধহয় দুই-তিন ফ্লোর লাফ মেরে দেখলাম আমি কাবেরী লজের সামনের রাস্তায়, এক ঘন্টা পার হয়েছে বোধহয়। হাঁ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, অন্য সবাই যেমন দাঁড়িয়ে থাকে এই হালে- মাথায় গিজগিজ করছে আইডিয়া, প্লট, শব্দ কিংবা ছবি। আমার ক্ষেত্রে এখন যেমন মনে হচ্ছে খাতা কলম নিয়ে বসলেই উপন্যাস লেখে ফেলবো। আমরা ঠিক বোধহয় এই কারণেই এখানে ফিরে আসি, এদের সার্ভিস আর সবার থেকে ভালো। নারকোটিক্স কিংবা এসিডের মতো এরা ইন্সপিরেশন, আইডিয়া দেয়- কিভাবে?
কেউ জানেনা।
আসলেও কিভাবে দেয়? আমার সবই অক্ষত রয়েছে, সবারই তাই থাকে। শুধু আবছা আবছা মনে পড়ে, কেউ কানে বলছে – স্বপ্নই তো বেচছি, স্বপ্নের দাম কখনো বাড়ে না।
ওরা স্বপ্ন বেচে?
যাহোক, এসব নিয়ে ভাববার সময় নেই, গিয়ে আজকে গল্প দুটো শেষ করতে হবে। চা লাগবে, যাওয়ার পথে পরেশের দোকান আছে।
এক মিনিট, পরেশের কাছে যে চিনি চাইলো, তাকে কোথায় জানি দেখেছি বলে মনে হলো। কোথায়?
না বোধহয়, দেখিনি। চা নেই, লেখা শেষ করতে লাগবে না যদিও – সেটার রসদ যথেষ্ট পাওয়া গেছে।
লেখক পরিচিতি : সাত্যকী
বস্তুত বস্তুসারহীন একখান মানুষ। 'আমি লেখি' থেকে অহংটা বাদ দিলে শুধু 'লেখি' থাকে।ওটাই বরং সুন্দর পরিচয়।