অসমাপ্ত

লেখক : অর্পিতা

(১)

“চলে যাবেন!”
“যেতে তো হবেই।”
“আর কিছুটা সময় যদি থাকতেন, ভাল লাগত।”
কথাটুকু বলার সময় তন্ময় বোধহয় একটু জোরেই বলে ফেলেছিল। পৃথিকা জলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ঘুরে তাকাল। গঙ্গার বুক থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া ততক্ষণে উড়ে এসে পৃথিকার চুলগুলো ঘেঁটে দিয়ে গিয়েছে। ঝুরো চুলগুলো তার চোখে জালের মত এসে পড়েছে। নরম আলোয় কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে পৃথিকাকে। তন্ময় তাকিয়ে থাকে। পৃথিকার চোখ জ্বালা করছে, আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে হয়ত দুর্বল হয়ে পড়বে। তবুও আলতো হেসে বলে, “সারা জীবনের জন্য চলে আসতে চেয়েছিলাম। সেটাই যখন হ’ল না, কিছুক্ষণের জন্য বসে থেকে আর কী করব।”
তন্ময়ের চোয়াল শক্ত হয়। এর উত্তর সত্যিই ওর জানা নেই।
পৃথিকা উঠে দাঁড়ায়, তন্ময়ও। চুলে আঙুল চালিয়ে ক্লিপটা আঁট করে আটকায় পৃথিকা, “চলুন…।”
তন্ময় মাথা নাড়ে। প্রতিবারের মত বলতে পারে না, “চুলটা খোলা রাখুন না, ভাল লাগছে।”
কমলা রঙ আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে, মেঠে সিঁদুর যেন লেপে আছে আকাশে। সূর্য ডুবছে গঙ্গায়, সন্ধ্যের হাওয়া পৃথিকার কালচে হলুদ ওড়নাটাকে নিয়ে খেলতে খেলতে বারবার তন্ময়কে ডেকে যাচ্ছে যেন।
দু’জনে পায়ে পায়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রিন্সেপঘাট থেকে বেড়িয়ে আসে। আজ নিয়ে ওদের পঞ্চমবারের দেখা হওয়া। প্রথমবার দেখা করতে আসা আর আজকের মধ্যে কতটা তফাত। যে গল্পগুলো বুনে মালা বাঁধবে ভেবেছিল পৃথিকা, অগোছালো হয়ে ছড়িয়ে গেল চারপাশে। তন্ময়ের সঙ্গে সেই সম্পর্ক ওর নয়, যেখানে জোর চলে। তবুও এমনটা হবে সত্যিই পৃথিকা ভাবে নি। পাশাপাশি দু’জনে হাঁটতে থাকে, কোন কথা বলে না দুজনেই। পৃথিকার এখন নিজেকে বিশ্বের সবথেকে বোকা মানুষ বলে মনে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে, দু’হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে যদি পালিয়ে যেতে পারত ভাল হত, ভীষণ ভাল হত।

(২)

“কেন ভুল বােঝাবুঝির এত জটিল অরণ্য
বৃষ্টিতে দেখা যায় না পৃথিবী
বৃষ্টি গড়ে তােলে নিজস্ব দেওয়াল
মুহূর্তে নিয়ে আসে নদীর পারে…”

কলিংবেলের সুইচটা চেপে দরজার দিকে চেয়ে অপেক্ষা করে পৃথিকা। কবে থেকে ভাবছে সুজাতার বাড়ি যাবে, সময় হয়ে ওঠে না। আজ প্রিন্সেপঘাট থেকে ফেরার পথে ভাবল একবার ঢুঁ মেরে যাওয়া যাক। মনের কথাগুলো বললে একটু ভাল লাগবে হয়ত।

“বাব্বা, আজ কোন দিকে সূর্য উঠেছে!”
“ইয়ার্কি করিস না, আসব?”
“উফ, নাটক যত। আসবি না তো দাঁড়িয়ে থাকবি?”

পৃথিকা জুতো খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকতেই সুখী গৃহস্থালির একটা গন্ধ ওর নাকে ঝাপটা মারল। আগেও সুজাতাদের বাড়ি কতবার এসেছে, কিন্তু সেটা ওদের রাধামাধব দত্ত গার্ডেনের বাড়িতে। রঙচটা সবুজ চুণ খসে পড়া এক কামরার ঘর। আসবাব বলতে ইঁট দিয়ে উঁচু করে রাখা একটা চৌকি আর একটা পুরনো আলমারি। দেওয়ালে টাঙানো ঠাকুরের সিংহাসন। যতবারই পৃথিকা সুজাতাদের বাড়ি গিয়েছে, দু’টো জিনিসই ওকে অবাক করত – ঠাকুরের সিংহাসনে নকুলদানার থালায় শুয়ে জুলজুল করে চেয়ে থাকা মোটাসোটা টিকটিকি আর খাটের নিচে থাকা একটা গোটা সংসার! বাসনপত্র, র‍্যাশন, পুরনো জামাকাপড় – কী ছিল না সেখানে!
“কীরে, চা করি খাবি তো?”
“ভাল লাগছে না। একটু গল্প করতে এলাম, আর তুই চা নিয়ে পড়লি। বস না।”
সুজাতা চোখ পাকালো, “চুপ করে বস। তুই প্রথমবার আমার বাড়িতে এলি। যা দেব, চুপচাপ খাবি।”
সুজাতা রান্নাঘরে চলে যায়। পৃথিকার কানে লেগে থাকে শব্দটুকু “আমার বাড়ি”। পৃথিকা কাঁধ থেকে ব্যাগটা সোফায় রেখে বেসিনের কল খুলে চোখেমুখে জলের ঝাপটা দেয়। সুজাতা চায়ের কাপ-প্লেটটা নামিয়ে রেখে বলে, “কী রে, তোয়ালে দেব?”
পৃথিকা ওড়না দিয়েই মুখ মুছতে মুছতে বলে, “এত বড় গামছা নিয়ে ঘুরছি, আর কী লাগবে?”
সুজাতা হাসে৷
পৃথিকা চায়ের কাপটা হাতে তুলে নেয়। কী সুখী সুখী ঘর সুজাতার। মেরুন কুঁচিওয়ালা পর্দা জানলার দু’পাশে পরিপাটিভাবে আটকানো। সামনের ডাইনিং টেবিলে একটা পেতলের ফুলের মত বাটি, জলভরা সেই বাটিতে নকল পদ্মফুল। কী সুন্দর দেখতে। হাওয়ায় টুংটাং করে উইণ্ড চাইম সুর তুলে যাচ্ছে।
পৃথিকা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, “পর্দার রঙটা কী সুন্দর রে!”
সুজাতা পাশে এসে বসে, মুখে প্রসন্নতা। “বরুণ আর আমি বড়বাজার থেকে কিনে এনেছি। বলতে গেলে পুরো ফ্ল্যাটটাই আমার হাতে সাজানো। তুই চা-টা শেষ কর, দেখবি তারপর।”
পৃথিকা শেষ চুমুক দিয়ে কাপ-প্লেট হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। সুজাতা হৈ-হৈ করে উঠল, “কী করছিস! দে, আমাকে দে।”
“বাব্বা, মেয়ে দেখছি ঘোর সংসারী হয়েছে! আমি কি তোর কাছে নতুন যে, প্লেটটা তোকেই রাখতে হবে?”
“নাহ্, তুই নতুন নোস, তবে আমার নতুন বাড়িতে তুই আজ প্রথম এলি, তাই একটু ফর্মালিটি করছি। দে আমাকে।”
সুজাতা কাপ-প্লেট হাতে নিয়ে রান্নাঘরে গেল, পৃথিকাও এক-দু’ পা করে রান্নাঘরটায় ঢুকল। কী সুন্দর করে সব সাজানো, মডিউলার কিচেন, সবকিছুই নতুন, ঝকঝকে। সবকিছুতে সুজাতার হাতের স্পর্শ লেগে আছে।
“খুব গোছানো রে তোর রান্নাঘর।”
“বুঝতেই পারছিস, নতুন ফ্ল্যাটে সবটাই নতুন, তাই আরও ভাল লাগছে। থাকতে থাকতে এই ঝকঝকে তকতকে ভাবটা থাকবে না। চল তোকে বেডরুম দেখাই।”

(৩)

তন্ময় বাইকে স্ট্রার্ট দিল। মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়ে আছে। আরও কিছুক্ষণ গঙ্গার ধারে বসে থাকলে ভাল হত। কী জানি পৃথিকা কী ভাবছে ওর ব্যপারে। কাজটা ও উচিত করল কি? মাথাটা ধরে আসছে।
কতদিন কথা বলছে পৃথিকার সঙ্গে, প্রায় মাসখানেক। মেয়েটার উপর একটা মায়া জন্মে গিয়েছিল। প্রেম নয়, মায়াই হয়ত। মনের অনেক আপত্তির পর দেখা করা, কথা বলা শুরু করেছিল। একটা ভাল লাগা, একটা টান, কথা বলতে ইচ্ছে হওয়া, ব্যাস এইটুকুই। কিন্তু এইটুকুও হয়ত হওয়া উচিত ছিল না। মেয়েটাকে প্রথম দিনই নিজের সিদ্ধান্তের কথা বলতে পারত। বিয়ে তো করতে চায়নি কখনই। বাড়ি থেকে জোর করায় নেহাত বাধ্য হয়েই পৃথিকার সঙ্গে কথা বলা শুরু। তারপর দেখা হল, প্রথম দেখা। পৃথিকা সেদিন আকাশি রঙের একটা শাড়ি পরে এসেছিল।
তন্ময় বাইকটা রাস্তার ধার করে দাঁড় করায়, হেলমেটটা খুলে ফেলে, চুলগুলো ঘামে চিটচটে হয়ে আছে। পকেট থেকে রুমাল বার করে চোখে মুখে বুলিয়ে নেয়। চশমার কাচটা মুছে আবার পরে নেয়।
তন্ময় জানে ও ঠিকই করেছে। পৃথিকা একটা ভাল মেয়ে, ওর সঙ্গে বিয়ে হ’লে তন্ময়ের নিজস্ব সমস্যাগুলোয় পৃথিকাও জড়িয়ে পড়ত। তন্ময় জানে, ওর মা পৃথিকাকে ভাল থাকতে দেবেন না, যেমন করে তনুশ্রীকে ভাল থাকতে দেননি! তনুশ্রীর কথাটা চেপে গিয়ে তন্ময় কখনই আরেকটা সম্পর্কে জড়াতে পারবে না, কখনই না। তন্ময় হেলমেটটা পরে নিয়ে বাইক স্ট্রার্ট দেয়। হু-হু করে ছুটে চলছে বাইক, এক-এক করে স্মৃতির খোলস পাপড়ির মত ঝরে পড়ছে।
পৃথিকার ছবিটা তন্ময়কে দেখিয়ে ওর মা বলেছিলেন, “মেয়ে দেখতে শুনতে ভাল, কথা এগোলে আষাঢ়ে বিয়ের তারিখ ফেলা যাবে।”
তন্ময় ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়েছিল, “তুমি বলেছ মা আমি ডিভোর্সি?”
ঝাঁঝিয়ে উঠেছিলেন ভদ্রমহিলা, “অত কথা বলতে নেই। তুই কী ওই মেয়ের সঙ্গে ঘর করেছিস, যে বলছিস।”
তন্ময় বোঝাতে চায়, “ঘর না করলেও লিগ্যালি আমরা স্বামী-স্ত্রী ছিলাম! এতটা সময় একসঙ্গে ছিলাম, নতুন কাউকে জীবনে আনতে গেলে সেটা তো বলতেই হবে!”
“অত বলতে হয় না। ওই মেয়েকে কি আমি ঘরে তুলেছিলাম! কাগজের বিয়ে, ওটাকে মনে না রাখাই ভাল।”
“মা! একটা কাগজের বিয়েকে তুমি পরিণতি পেতে দাও নি। আমি আরেকটা বিয়ে করে তোমাকে আবার সুযোগ দেব নাকি!”
তন্ময়ের মা কপাল চাপড়ে উঠেছিলেন। নিজের পেটের ছেলে যখন এমন কথা বলে, আর কী বলবেন তিনি। বিয়ে ঠিক হ’লে বাড়ির বউকে কিছু নিয়মনীতি মানতেই হয়, তিনিও মেনেছেন। শাশুড়ি হিসেবে তিনি সেই প্রত্যাশাই করেন। অথচ উত্তরে সই করা বউ যখন ছেলেকে ডিভোর্সের নেটিশ পাঠায়, সেটা কার দোষ!

তনুশ্রীকে আটকাতে চেয়েছিল তন্ময়। অনেকগুলো মেসেজ, ফোন, তারপর শেষপর্যন্ত দেখা হ’ল। তনুশ্রী তো প্রেমিকা ছিল না, তনুশ্রী ছিল তন্ময়ের স্ত্রী। দেখাশোনা করে বিয়ে, সেই বিয়ে সামাজিকতার চৌকাঠ পার করার আগেই ভেঙে গেল। হলদে বিকেলের আলো ভেঙে তনুশ্রী এসে দাঁড়িয়েছিল তন্ময়ের মুখোমুখি।
“তুমি আলাদা থাকতে পারবে আমার সঙ্গে?”
তন্ময়ের কপালে বিজবিজে ঘাম, ”কী বলছ! আলাদা কীভাবে থাকব? মা…”
“মা! তোমার মা আমাকে তালিকা ধরিয়েছে – টু-ডু আর নট-টু ডু-র তালিকা। এসব কী তন্ময়!”
“তুমি ভাবছ কেন অত? ওসব কথার কথা, আমি তো আছি।”
“তুমি আছ? তাহলে এখনই কথা বল তোমার মায়ের সঙ্গে।”
“কী কথা বলব তনুশ্রী?”
“কী কথা মানে? আমি কী পরব, কী খাব, কোথায় যাব – সব তোমার মা ঠিক করে দেবেন, আর সেটা আমি মেনে চলব? আমি চাকরি ছাড়ব, আমি বাড়ির বাইরের কাজ করতে পারব না। এসব কী? মানে এতটা সেকেলে তোমরা?”
“তনু! বোঝার চেষ্টা কর, প্লিজ। আমি তো আছি।”
“সত্যি আছ তন্ময়? কথা বলো তাহলে ঘরে। একটা ভুলের বোঝা ঘাড়ে বয়ে বেড়াতে আমি রাজি নই।”
“তনু, বোঝার চেষ্টা কর। মায়ের বয়স হয়েছে, মা সেকেলে মানুষ। বলেছে বলে তোমাকে তেমন করতে হবে, কে বলেছে? আমি তো আছি!”
“তোমায় তো আমি চিনি না তন্ময়। দেখাশোনা করে বিয়ে আমাদের, কীভাবে বিশ্বাস করব বল তো তোমাকে!”
“আমাকে চেন না তুমি? আমি কী একটুও তোমার কাছে চেনা হয়ে উঠিনি?” আঁতকে উঠেছিল তন্ময়।
“চিনেছি তো! একটা মেরুদণ্ডহীন মানুষ তুমি!”
তন্ময় বসেছিল অনেকক্ষণ, তনুশ্রী চলে গিয়েছিল। কফি হাউসের গমগম আওয়াজ চিরে বেয়ারা এসে দাঁড়িয়েছিল, “স্যার আর কিছু লাগবে?”
জানা নেই, কে ঠিক ছিল, আর কে ভুল। তন্ময় আশ্বাস দিতে পারেনি, পারেনি তনুশ্রীর ছেড়ে যাওয়াটাকে মেনে নিতে। সামান্য মাইনের অফিসে চাকরি করা তন্ময় হাসির খোরাক হয়ে গিয়েছিল সকলের কাছে। নিজের গায়ে কালির ছিটেও দেখতে পায়। আবার একটা মেয়ের সঙ্গে নিজের জীবন জড়িয়ে দ্বিতীয়বার ভুল করতে চায় না।

ঘরের সামনে এসে বাইক থামায় তন্ময়। ভাল লাগছে না কিছুতেই। ভিতরে ঢুকতে একটা শূন্যতা ঘিরে ধরছে ওকে। ঘরে ঢুকে দ্রুত পায়ে ছাদে চলে যায়। ছাদে ওর চিলেকোঠা ঘর, ওর একলা যাপনের সঙ্গী। আকাশটা কালচে লাল হয়ে এসেছে। হাওয়ায় ভ্যাপসা গন্ধ, বৃষ্টি নামবে হয়ত। শরীরটাকে বিছানায় লেপ্টে নেয়, দু’হাতে মুখটাকে ঢেকে ফেলে তন্ময়। চোখ বুজে থাকলে যদি অদৃশ্য হয়ে যাওয়া যেত, বেশ হত।

“বৃষ্টিতে অদৃশ্য হয়ে যায় আকাশ
আমি হেঁটে যাচ্ছি, আর কেউ নেই
এ সময় আমি কান্না ঝরাতে পারি, কাঙালের মত…।”

(৪)

কী সুন্দর টানটান করে বিছানার চাদর বিছিয়ে রাখা, সুদৃশ্য ড্রেসিং টেবিল, সাজিয়ে রাখা মেকআপের জিনিসপত্র, বেঁটে টেবিলে নাইটল্যাম্প, দেওয়াল সেটিং আলমারি, কী ভীষণ ভাল লাগছে ঘরখানা। সুজাতা আলো নিভিয়ে রাতআলো জ্বালিয়ে দেখাল, নীল আলোয় ঘরখানা কেমন মোহময় লাগছে। পৃথিকার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে, সংসারে এত সুখ!
সুজাতা বিছানায় বসে, “বস না। দাঁড়িয়ে থাকিস না।”
পৃথিকা আলগাভাবে বিছানায় বসে, “বরুণ দা কখন ফেরে?”
সুজাতা ঘড়ির দিকে তাকায়, “ফিরবে রে সময় হয়ে এল।”
পৃথিকা উঠে দাঁড়ায়, “আমি আজ আসি রে, অন্যদিন আসব আবার।”
“এমা! চলে যাবি মানে? বরুণ আসুক, দেখা করবি তো।”
“ধুর, আমি খালি হাতে এসেছি। তোর সঙ্গে একটু দেখা করলাম, ব্যাস। পরে অন্যদিন আসব।”
“থাক না রে একটু, কত দিন পর এলি। কথাই তো হ’ল না।”
“কোথায়! কত কথা তো হ’ল, কত কী শুনলাম বল তো। তোর গল্প, বরুণ দা’র গল্প, তোদের নতুন জীবনের গল্প। আজ উঠি রে।”

পৃথিকা উঠে দাঁড়ায়, ব্যাগটা তুলে নিয়ে দরজার বাইরে বেরিয়ে আসে। সিঁড়ি থেকে নামতে থাকে দ্রুত। রাস্তায় এসে বুঝতে পারে ঝড় উঠছে আস্তে আস্তে। শুকনো পাতাগুলো হাওয়ার সঙ্গে গোল গোল ঘুরপাক খেয়ে এপ্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে। পৃথিকা হাঁটতে থাকে, বুকের ভিতর একটা কষ্ট দানা বাঁধছে, সুজাতার আলো আঁধারি বেডরুমে বরুণ দার সঙ্গে সুজাতাকে কল্পনা করে ওঠার মুহূর্তটা চোখের কোণায় জমে থাকে।
পৃথিকার কালচে হলুদ ওড়না অবাধ্য হয়ে ওঠে ঝড়ের হাওয়ায়। চুরি! শেষ পর্যন্ত চুরি করল পৃথিকা, তাও নিজের বন্ধুর বাড়িতে। কেন? নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হয় খুব। ব্যাগের মধ্যে থাকা ফোনটা কেঁপে ওঠে, তন্ময় হয়ত। প্রিন্সেপঘাট থেকে শতশত প্রশ্ন মাথায় নিয়ে সুজাতার বাড়ি গিয়েছিল, ভেবেছিল আগের মতই বলে ফেলতে পারবে সবটা।
ব্যাগের চেন খোলে পৃথিকা, ফোনটা তুলে নেয়। নাহ্, তন্ময় নয়! সুজাতার বাড়ি থেকে চুরি করে আনা সুখের স্পর্শটুকু পৃথিকার মনের তারগুলো দুমড়ে মুচড়ে ফেলে। হাঁটতে থাকে পৃথিকা, চোখের ভিতরটায় হলকা বইছে। ঝোড়ো হাওয়া শান্ত হওয়ার আগেই বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা আলপনা এঁকে দেয় রাস্তায়।


লেখক পরিচিতি : অর্পিতা
পরিচয়হীনতাই আমার পরিচয়৷

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।