পাথর

লেখক : সুমন মন্ডল

কল্পের বয়স ষোল। অভাব অনটনের সংসারে বাপ মায়ের একমাত্র ভরসা কল্প। সমুদ্র তীরে ঝিনুক কুড়িয়ে অতিকষ্টে সংসার চালায় সে।
একদিন ঘর থেকে না বেরোলে চুলোয় হাঁড়ি চড়ে না তাদের। বিগত দুইদিন কল্পের ভীষণ জ্বর। তাই ঘরে আর কিচ্ছুটি অবশিষ্ট নেই। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে সেদিন হঠাৎ দুপুরবেলা এক সন্ন্যাসীর আগমন “আমাকে কিছু দেবে মা?”
কল্প মনে মনে ভাবে ঘরে যে কিছুই নেই! এই ভরদুপুরে সন্ন্যাসীকে কী দিয়ে সেবা করবে সে! লজ্জায় মাথা নিচু করে কল্প সন্ন্যাসীকে বলে – “বাবা,দেবার মত আমার কাছে কিছুই যে নেই, এই পাথরটি ছাড়া, এটা তুমি নেবে?”

পাথরটি কল্প সমুদ্র তীরে ঝিনুক কুড়াতে কুড়াতে পেয়েছিল আর এতদিন সেটা নিজের কাছেই রেখেছিল অতিযত্নে। অতিথি বিমুখ হয়ে ফিরবে ভেবে এই পাথরটি সে সন্ন্যাসীকে দিতে গেল। কিন্তু সন্ন্যাসী সেটি না নিয়ে বেরিয়ে গেল।

কল্প ভাবতে লাগলো হয়তো পাথরটি মূল্যহীন তাই সে গ্রহণ করলো না। খুব মন খারাপ হলো তার। পাথরটি আর সে রাখবে না বলে মন স্থির করে পাশের গাঁয়ের তারই এক বান্ধবী তরুকে দিল।

ঠিক কয়েকদিন পর সেই সন্ন্যাসী তরুর বাড়িতে। মধ্যবিত্ত ঘরের তরু তখন সবে রান্না শেষ করে উঠেছে। তরু সন্ন্যাসীকে বসতে দিয়ে জানতে চাইল-
“বাবা, আপনাকে কী দুটো অন্ন দিতে পারি?”
উত্তরে সন্ন্যাসী বললেন আমাকে দুমুঠো চাল দিলে সাদরে গ্রহণ করবো।
তরু সন্ন্যাসীকে বাটি ভর্তি চাল দিয়ে তার উপর সেই পাথরটিও দিল। সন্ন্যাসী পাথরটি রেখে চাল নিয়ে বেরিয়ে গেলো। তখন তরুও পাথরটিকে মূল্যহীন ভেবে ভিন গাঁয়ের তারই আরেক বান্ধবী লতাকে দিল। উচ্চবিত্ত ঘরের গর্বিত লতা পাথরটি পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত এবং মনে মনে তখই স্থির করে ফেললো যে সে এই পাথরটি এমন কাউকে দিবে যে এর মূল্য সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত এবং এটি রক্ষা করতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। আর এর ঠিক কয়েকদিন পরেই সেই সন্ন্যাসী লতার বাড়িতে।

লতা সন্ন্যাসীকে একবাটি চাল আর পাথরটি দিল। সন্ন্যাসী শুধু পাথরটি নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো – এ বাড়ির পাথর, নিশ্চয়ই অনেক মূল্যবান….নিশ্চয়ই অনেক মূল্যবান….

লেখক পরিচিতি : সুমন মন্ডল
স্বপ্নচারী

2 Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

রুচিশীল ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ক্লিক করুন এখানে

sobbanglay forum