লেখক : অমিতাভ প্রামাণিক
নব্বইয়ের দশকে যখন স্কুলপড়ুয়া ছিলাম, তখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে কিছু নাকে-মুখে গুঁজেই ছুট দিতাম মাঠের দিকে। সে এক দিন ছিল। ক্রিকেট-ফুটবল ছাড়াও কত রকম খেলা করতাম আমরা। সন্ধ্যা নামতেই বাড়ি ফিরে হাত-পা ধুয়ে পড়তে বসা, এ ছিল নিত্যদিনের রুটিন। পড়ার সময় বিদ্যাদেবীর সাথে নিদ্রাদেবীর যে গভীর সম্পর্ক আছে, সেটা রাত্রি আটটা বাজলেই বোঝা যেত। ন’টা বাজার অপেক্ষায় থাকতাম আমরা, ন’টা না বাজলে যে মা খেতে দেবেন। কোন কোন দিন বাবা এসে ঝুলপিতে টান দিয়ে বলতেন, ‘পড়তে বসলেই ঢোলা! স্কুলের অঙ্ক খাতাটা দে দেখি’ ধমক দিয়ে বলতেন। ওদিকে দিদির চোখদু’টি ক্রমে রক্তবর্ণ হয়ে উঠছে, কোনভাবেই পাতা দু’টিকে এক হতে দিচ্ছে না, অপেক্ষায় আছে বাবা কখন ঘরের বাইরে যাবেন। এদিকে বাবা ঘরের বাইরে যেতে না যেতেই দিদি ঘুমে আচ্ছন্ন, কতদিন রাত্রির খাবার না খেয়েই আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি পড়তে বসে।
বর্তমান দিনে কচিকাঁচাদের মধ্যে এই ‘পড়তে বসলেই ঢোলা’ ব্যাপারটা খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না। বর্তমান প্রজন্মের দিনের শুরুও হয় যেমন দেরিতে, শেষও হয় তেমন দেরিতে। দেখা যায়, যত রাত্রি বাড়ে, কচিকাঁচাগুলো ততই উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। কেনই বা হবে না, এখন আর পড়তে বসলেই ঢুলতে হয়না, হাতে যে ‘স্মার্ট ফোন’ রয়েছে!
লেখক পরিচিতি : অমিতাভ প্রামাণিক
Librarian, R.I.O. Medical College, Kolkata 700073