পতাকা

লেখক : ঋষা ভট্টাচার্য

রূপা ছোট, ক্লাস ফাইভে পড়ে। স্বাধীনতা দিবস মানেই ওর কাছে স্কুলের অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত, রঙিন পোশাক আর চকলেট। কিন্তু এই বছর কিছু আলাদা।

বুড়ো দাদু, মানে ওর বাবার দাদু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। প্রতিবছর সকাল থেকেই দাদু খোঁজ নেয় কখন পতাকা তোলা হবে। সবাই ধরাধরি করে দাদুকে বাগানে নিয়ে যায় আর দাদু কাঁপা কাঁপা হাতে পতাকার দড়ি ধরে টান দেয়। ধীরে ধীরে পতাকা উঠে যায় উপরে।

আজ সকাল থেকেই বুড়ো দাদু চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে। রূপা খেয়াল করেছে— বাগানে পতাকা তোলার ব্যাপারে কিছুই বলছে না দাদু।
রূপা কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “দাদু, আজ পতাকা তুলবে না?”
দাদু চোখ বন্ধ করেই মৃদু হাসলেন। অতি কষ্টে আস্তে আস্তে বললেন, “আজ তুমি তুলবে, আমি দেখব।”

রূপা ছুটে গেল বাগানে। অতি কষ্টে চোখ খুলে জরাগ্রস্থ স্বাধীনতা সংগ্রামী চেয়ে রইলেন বিছানার ডানদিকের জানলার দিকে।

রূপা ছোট্ট দুটো হাতে পতাকা তুলে যখন দাদুর কাছে এসে দাঁড়াল, মৃত্যু পথযাত্রীর চারপাশে যেন একটা অন্যরকম আলো ছড়িয়ে পড়ল।
দাদুর ঠোঁট দুটো কাঁপছে। সমস্ত শক্তি জড়ো করে বললেন, “এই পতাকাটা শুধু কাপড় নয়, এটা ইতিহাস, আত্মত্যাগ আর আশা।”
রূপা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। পতাকা উড়ছে, আকাশ ছুঁতে চাইছে। তখনই সে বুঝল, স্বাধীনতা মানে শুধু ছুটি নয়, সেটা একটা দায়িত্ব, একটা সম্মান।
চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে দাদু বিড়বিড় করে বললেন, “আজ তুমিই আমার ভারত।”


লেখক পরিচিতি : ঋষা ভট্টাচার্য
ঋষা — যিনি কবিতার ছন্দে খুঁজে পান জীবনের গভীরতম অনুভব। বাংলার ঐতিহ্য, নারীর সংগ্রাম, স্বাধীনতার ইতিহাস, আর কল্পনার রঙে ঋষার কবিতা হয়ে ওঠে এক অনন্য যাত্রা। তাঁর লেখায় হাসি আছে, কান্না আছে, আছে শূন্যতার গান আর পূর্ণতার প্রতিশ্রুতি। ছোটবেলা থেকেই গল্প আর ছন্দের প্রতি গভীর টান তাঁকে নিয়ে গেছে সৃষ্টির এক জাদুকরী জগতে। কখনো তিনি রহস্যময় চরিত্রের স্রষ্টা, কখনো সরলতায় ভরা চরিত্র গাঁথছেন। তাঁর কবিতায় বারবার ফিরে আসে বাংলার মাটি, নারীর আত্মকথা, আর এক অনন্ত খোঁজ—যেখানে শব্দেরা শুধু কথা বলে না, তারা বাঁচে। প্রতিটি গল্প যেন এক একটি দরজা, যা খুললে পাঠক প্রবেশ করেন ঋষার অন্তর্জগতে—যেখানে বাস্তব আর কল্পনা হাত ধরাধরি করে হাঁটে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।