প্রার্থনা

লেখক : সূর্য নারায়ন ধর

ব্যস্ত সমস্ত হয়ে অফিসের দিকে র‌ওনা দিচ্ছে আভাষ, সকালবেলা। এমনকি মায়ের বেরে দেওয়া খাবারটুকুও পুরো শেষ না করেই। দেরি হয়ে গেছে যে। আজকে আবার ভাইফোঁটার জন্য হাফ ডেতেই বেরনোর তাড়া। একটুও টাইম নষ্ট করা যাবে না।
বাড়ির গলিটা থেকে বেরোতে বেরোতেই আভাষ ভেবে নিল পাড়ার প্যান্ডেলের ভেতর দিয়ে বাস ষ্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার সময় বন্ধুরা ডাকলে না শোনার ভান করে টানটান করে হাঁটা লাগাবে। এমনকি এটাও ভেবে নিল ঠাকুরের দিকে পেছন দিকে ঘুরে না তাকিয়েই কপালে আঙুল ঠেকাতে ঠেকাতে দৌড় দেবে। গলি ছাড়িয়ে প্যান্ডেলে ঢুকতেই গবা ডেকে উঠলো। জানাই ছিল আভাষের। না শুনতে পাওয়ার ভান করে গতি বাড়ালো। সময় নেই তার কাছে।
হঠা‌‌ৎ একটা দুর্বল গলার স্বর কানে গেল আভাষের।
একটা কাতর, করুণ, মন থেকে বেরনো প্রার্থনা। দেরি হ‌ওয়া সত্ত্বেও থমকে দা‌ঁড়ালো। পাশের পাড়ার অশেষ কাকু, ওনার ছেলে তো ক্যান্সারে ভুগছে। লাষ্ট ষ্টেজ।
জল ভর্তি চোখে, হাত জড়ো করে দা‌ঁড়িয়ে প্রার্থনা করছে, “মা, সবাইকে ভালো রেখো, সুস্হ রেখো, শান্তি দাও মা।”
কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল, নিজেও জানে না আভাষ।
সন্ধ্যে বেলা, বোনের কাছ থেকে যখন ভাইফোটা নিচ্ছে, মনে মনে প্রার্থনা করলো, বোনকে ভালো রেখো, সুখে রেখো, শান্তিতে রেখো ঠাকুর।
হঠাৎ অশেষ কাকুর কথা মনে পড়তেই নিজেকে স্বার্থপর ভেবে চোখ দুটো চক্‌চক্‌ করে উঠলো।


লেখক পরিচিতি : সূর্য নারায়ন ধর
সূর্য

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।