গণিকা

লেখক : সঞ্চিতা সিকদার

স্বপ্ননীড় আবাসনের দুই বাসিন্দা, উজান আর রিদিমা। আজও প্রতিরাতের মতই ঠিক সাড়ে ন’টায় ছাদে। উজানের বাবা সাব-ইন্সপেক্টর এবং মা গৃহবধূ। ওরা তিনজনই এখানে থাকে। কিন্তু রিদিমা একাই থাকে। রিদিমা ব্যাংক কর্মচারী। অবশ্য তার পরিচয় এখানে কারোর জানা নেই। উজানও যতবার রিদিমার বাবা-মায়ের কথা জানতে চেয়েছে , উত্তর “বাবা মারা গিয়েছে, মা অট্টালিকায় থাকে।” হাজার হাজার মানুষের সাথে।

রাত দশটা। পাশের কারখানায় সাইরেন বাজলো। উজানের হাত, রিদিমার হাতে। রিদিমা গুনগুন করে গান করছে , “প্রেমে পড়া বারণ…”
— কে বলল, আমি প্রেমে পড়েছি?
— তো মশাই ,এতো হাত ধরা কিসের !
— যাও ,ছেড়ে দিলাম।
— কালকে, মায়ের সাথে দেখা করতে যাবো।
— কখন? আমিও যাব।
— না, আমি একাই যাবো।
বলেই এক ঝটকায় হাত ছেড়ে দৌড়ে নিচে চলে গেল রিদিমা। এই প্রথম রিদিমা উজানকে, তার মায়ের সাথে দেখা করতে যাবে বলল ।
পরের দিন। উজান রিদিমার পিছু নিল। কিন্তু রিদিমা কোথায় যাচ্ছে ?এ’তো যৌনপল্লী! রিদিমার জন্য এই জায়গাটা সঠিক নয়। রিদিমা ভিতরে ঢুকে গেল। যৌনপল্লীর মেয়েরা উজানকে টানাটানি করল “আরে বাবু এসেছে।” কেউ বলল, “আমার সাথে আয়।” হাত ছাড়িয়ে উজান ভেতরে গেল। রিদিমা একজন বয়স্কা মহিলার সাথে কথা বলছে। উজান বাইরে এসে দাঁড়ালো। রিদিমা উজানকে দেখেই, “তাহলে, আজ আশাকরি বুঝে গিয়েছো। আমি কে? আমি একজন গণিকার মেয়ে।”
সেই রাতে আবার আগের মতোই ছাদে এসে, দাঁড়িয়ে আছে রিদিমা। কারখানার সাইরেনও বেজে গেছে। উজান এখনো আসেনি । চোখের জল মুছতে মুছতেই , ভাবতে লাগলো পরিচয় জানার পর হয়তো, উজান তার সাথে না মেশার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হঠাৎই পেছন থেকে আচমকা উজান তাকে জড়িয়ে ধরল , সামনে ঘুরতেই উজানকে দেখে রিদিমা এক্কেবারে উজানের বুকের মধ্যে।রিদিমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে উজান গুনগুনিয়ে উঠল , “প্রেমে পড়া বারণ।”

লেখক পরিচিতি : সঞ্চিতা সিকদার
সঞ্চিতা সিকদার শিক্ষিকা, চাকদহ নদীয়া। গল্প কবিতা লিখে থাকেন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

রুচিশীল ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ক্লিক করুন এখানে

sobbanglay forum