লেখক : বর্ণালী চন্দ
সুজয় আলমারিটা খুলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। কতো শাড়ি, থরে থরে সাজানো। দেখে তো একটাও পুরোনো মনে হচ্ছে না! কিছুতেই বুঝতে পারছিলো না কোনটা একদম আনকোরা!!! এটা রশ্মির তিন নম্বর শাড়ির আলমারি। এই এক নেশা রশ্মির ! শাড়ি কেনা। যেখানে যাবে সেখান থেকেই শাড়ি কিনবে, তারপর আছে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, বুটিক আর আছে কলকাতা থেকে আসা শাড়িওয়ালারা। উফফ, এতো বকা খায় শাড়ি কেনার জন্য, তবুও কিনবে। অদ্ভুত নেশা!!! একবার তো ছেলে বলেই ফেলল, মা যদি কোনোদিন বিনা পুঁজিতে ব্যবসা করতে হয়, তাহলে তোমার নতুন শাড়ি দিয়েই ব্যবসা শুরু করা যাবে। শাড়ি কেনে যেমন, তেমনি শাড়ি পরতেও ভালোবাসে। ওর শাড়ি দেখে ওর অবাঙালি বন্ধুরাও ওর মতো শাড়ি কেনে। বন্ধুদের বিভিন্ন রাজ্যের শাড়ির ইতিহাস শোনায় ও। তারাও বেশ হ্যান্ডলুম আর বালুচরি পরতে শিখেছে ফ্যান্সি শাড়ি ছেড়ে।
পুজোয় কটা ড্রেস কিনতে হবে জিনি?
জিনি হাসতে হাসতে উত্তর দেয়, বেশি নয় বাবা, চার-পাঁচটা কিনলেই হবে। আর মায়ের দু তিনটে নতুন শাড়ি পরবো। আমার পুজো শর্টেড।
অ্যাই খবরদার আমার নতুন শাড়ি পরবি না। একটাও শাড়ি দেবো না তোকে। বারোটা বাজিয়ে রাখো তুমি আমার শাড়িগুলোর- ঝাঁঝিয়ে ওঠে রশ্মি।
সুজয় জানে রশ্মি যতই চেঁচামেচি করুক, পুজোর সময় ঠিক নিজেই সবথেকে সুন্দর শাড়িটা মেয়েকে পরিয়ে দেবে।
জিনিও মায়ের মতো শাড়ি পরতে খুব ভালোবাসে। আসলে শাড়ির প্রতি ভালোবাসা টা ওদের বোধহয় বংশপরম্পরায় চলে আসছে। রশ্মির মায়েরও প্রচুর শাড়ি। বিভিন্ন প্রদেশের শাড়ি কেনা মিতাদেবীর প্যাশন ছিলো। রশ্মির বাবা ছিলেন সরকারি আমলা, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁকে যেতে হতো চাকরির স্বার্থে, যেখানে যেতেন সেখান থেকেই স্ত্রীর জন্য বিভিন্ন শাড়ি সংগ্রহ করতেন। রশ্মির ছিলো সেই শাড়ির প্রতি খুব লোভ! মিতাদেবীর শাড়ির প্রতি ছিল খুব যত্ন। মোটেও রশ্মিকে শাড়ি দিতেন না,পাছে ছিঁড়ে ফেলে ।
রশ্মির তাই আবদার ছিল অবিবাহিত মাসীর কাছে। মাসীও তাঁর সব শাড়ি রশ্মিকে পরিয়ে বড় আনন্দ পেতেন। রশ্মি ছিল মামা বাড়ির সকলের নয়নের মনি। তাই মাসীর শাড়ি পরেই দিব্যি রশ্মি ঘুরে বেড়াতো, কলেজেও যেতো। বড় হওয়ার পর অবশ্য মিতা দেবী মেয়েকে নিজের শাড়ি পরতে দিতেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর নিজের সব লাল আর রঙিন শাড়ি তিনি রশ্মিকেই দিয়ে দিয়েছিলেন।
রশ্মি শাড়ি দেখলেই পাগল হয়ে যেতো। মত দামই হোক, যে শাড়িটা পছন্দ হবে সেটা কিনতেই হবে। রশ্মির শাশুড়ি ঠাট্টা করে বলতেন, আগের জন্মে তুই নিশ্চয়ই শাড়ির ব্যবসায়ী ছিলি। সোনা গয়নার প্রতিও তার তেমন কোনোও আকর্ষণ ছিলো না। একটা শাড়িও সে প্রানেধরে কাউকে দিতো না।
সুজয় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বুঝতে পারছিলো না কোন শাড়িটা নেবে! এতো শাড়ি!!! তবে কী অন্য দুটো আলমারি দেখবে। সুজয়ের সবথেকে সুন্দর একটা নতুন শাড়ি চাই। পরপর আরোও দুটো আলমারি খুলে আরোও কনফিউজড হয়ে গেলো সুজয়!! সবই তো খুব সুন্দর আর দামী! তাহলে এবার কী হবে?? আর সময় নষ্ট করলে চলবে না, সময় নেই বেশি। আলমারিগুলো খোলা রেখেই দৌড়ে ড্রইংরুমে এলো সুজয়। রশ্মির হাত ধরে বলল, ওঠো প্লিজ, একবার বলে দাও কোন শাড়িটা পরে তুমি শেষযাত্রায় যেতে চাও??
লেখক পরিচিতি : বর্ণালী চন্দ
বর্ণালী চন্দ। অর্থনীতি এবং মাস কমিউনিকশন ও জার্নালিজমে মাস্টার্স। জার্নালিজমের পিএইচডি। পনেরো বছরের সাংবাদিকতার এবং শিক্ষকতার পর এখন কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকে কর্মরত।
আহা রে!
খুব ভাল্লাগলো।