লেখক : আহব
মেঘের কথা
অনেক টালবাহানার পর, অবশেষে বৃষ্টি রাজি হয়েছে মেঘের সাথে থাকতে। তবে বৃষ্টিকে রাজি করাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অনেকরকম শর্ত ছিল, মেঘ বিনাবাক্যে সব মেনে নিয়েছে। দেরাদুনের কাছে কানাতালে দু’জনে পছন্দ করে একটা পেণ্টহাউস দেখেছে। আপাতত সেখানেই উঠবে ওরা। যতদিন ইচ্ছে থাকবে, তারপর ভাবা যাবে। বিয়েতে বৃষ্টি একদমই বিশ্বাস করেনা। মেঘও চায়না বৃষ্টির বিশ্বাসে আঘাত দিয়ে জোর করে কিছু করতে। তাই আপাতত শুধু একসাথে থাকা। একতলা-দোতলা মিলিয়ে অনেকগুলো ঘর, দু’জনের দিব্যি চলে যাবে। দুই বাড়ির অমত ছিল। কিন্তু দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ স্বেচ্ছায় একসাথে থাকতে চাইলে কারও কিছু করবার নেই।
অতএব, ফ্লাইটের টিকিট কাটা, ব্যাগপত্তর গোছানো সব রেডি। কাল সকালে ফ্লাইট। প্রথমে জলি গ্রাণ্ট এয়ারপোর্ট, সেখান থেকে একটা গাড়ি। মেঘই সব ব্যবস্থা করেছে। বৃষ্টিও খুব খুশি। আজকের কথা তো নয়। গত বারো বছর ধরে বৃষ্টিকে বলে আসছে। হিমালয়ের কোলে একটা ছোট্ট থাকবার জায়গা হবে। সেখানে জীবনের বাকি সময়টুকু একসাথে থাকবে। বৃষ্টি প্রথমে কিছুতেই রাজি হয়নি। অনেকদিনের সাধ্যসাধনার পর বৃষ্টির মত পাওয়া গিয়েছে। মেঘ এখন প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায়। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। যার জন্য একদিন প্রচণ্ড পাগলামি ছিল, আজকে তার সাথে একসাথে থাকতে চলেছে, এটা ভেবেই মেঘের শান্তি।
পরের দিন সকালে একটু দেরি করেই ঘুম ভাঙে মেঘের, একটা অদ্ভুত ভাল লাগা নিয়ে। এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না। একটা ঘোরের মধ্যে আছে। গতকাল অনেক খাটাখাটনি গিয়েছে। একা হাতে সবটা করা। আজও কিছু বাকি আছে, শেষ মুহূর্তের কিছু কেনাকাটা, নিজেকে আরও একটু গুছিয়ে নেওয়া। বারবার ফিরে যাচ্ছিল বছর ১৪ আগে, যেদিন বৃষ্টিকে প্রথম দেখে। প্রথম দেখেই ভেসে যাওয়ার বয়স ততদিনে পেরিয়ে এসেছে মেঘ। জীবনের অনেকটাই দেখে ফেলেছে। জানে, প্রেমে পড়বার বয়স এটা নয়। তাও একটা অদ্ভুত টানে বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল বৃষ্টির দিকে। মেয়েটি খুব অদ্ভুত। নিজের মধ্যেই ডুবে থাকে। কানে অধিকাংশ সময়ই ইয়ারফোন গোঁজা। প্রায় কোন হুঁশই নেই চারিদিকে কে কি বলছে।
প্রাথমিক আলাপ পরিচয়ের পর আর বিশেষ এগোনো যায়নি। বৃষ্টি পরিষ্কার জানিয়েছিল, কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে ও নেই। হোয়াটসঅ্যাপও খুব একটা দেখে-টেখে না। যদি কিছু বলবার থাকে, ফোনে না বলে সামনাসামনি বলাই ভাল। এরপর মেঘ ভাব জমানোর আর কোন সুযোগ পায়নি। কিন্তু বৃষ্টির প্রতি আকর্ষণটা আরও বেড়েছিল। বিলক্ষণ জানত, এগোতে গেলে তাকেই এগোতে হবে। এই মেয়ে অন্য ধাতুতে গড়া। মাঝে মাঝে উপযাজক হয়ে কিছু পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টাও করত, যদি বরফ গলে। সুবিধা বিশেষ কিছু হত না।
সময় লেগেছিল। “আপনি” সম্বোধন থেকে “মেঘ দা”-তে নিয়ে যেতে। অনেকবার বিভিন্নভাবে বলবার পর রাজি হয়েছিল বৃষ্টি। হাঁফ ছেড়েছিল সে। যখন আস্তে আস্তে সহজ হচ্ছে সম্পর্কটা, তখনই শুনেছিল বৃষ্টির বিয়ে ঠিক হয়ে আছে অন্যজনের সাথে, হয়ত খুব শিগগিরই সেই দিন। অভিনন্দন জানানোর সময়ই পরিষ্কার বুঝতে পারল, যা বলছে আর যা ভাবছে, দু’টো এক নয়। কি চায় মেঘ? বৃষ্টিকে বিয়ে করতে? নিজেকেই প্রশ্ন করেছিল। কিন্তু সে তো সম্ভব নয়। তাহলে মনের মধ্যে এত মেঘ জমছে কেন? একধাক্কায় পিছিয়ে গিয়েছিল অনেকটা।
বৃষ্টির বিয়েতে গিয়েছিল মেঘ। নিজেই উদ্যোগ নিয়ে উপহার কেনা, গাড়ির ব্যবস্থা করা, সবটাই করেছিল। সবাইকে কিচ্ছু বুঝতে না দিয়ে বিয়েতে হৈচৈও করেছিল। কিন্তু বৃষ্টির চোখকে যে ফাঁকি দেওয়া যায়নি, সেটা বুঝেছিল অনেক পরে।
সময় বয়ে চলেছিল নিজস্ব গতিতে। আর ভিতরে ভিতরে ক্রমশ মনখারাপের এক ঘোরের মধ্যে ডুবে যাচ্ছিল মেঘ। যদিও জানত, এটা অস্বাভাবিক। যা চাইছে, সেটা হওয়ার নয়। হবে না কোনদিন। বৃষ্টি এখন অন্য কারও, তার তো ছিলই না কোনদিন। নিজেকে লুকোনোর আপ্রাণচেষ্টায় ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল সে।
কিন্তু ভালবাসা আর কবে উচিৎ-অনুচিতের বেড়াজালে আটকে থেকেছে? ভেসে গেল মেঘ, খড়কুটোর মতন, কাউকে বুঝতে না দিয়েই। বৃষ্টিকেও কিছু বুঝতে দেয়নি। অন্তত এমনটাই ধারণা ছিল তার। কিন্তু বৃষ্টিও যে তাকে কাঁটাছেড়া করছে, সেটা বুঝতে অনেক সময় লেগেছিল। খুব ধীরে ধীরে আবার শুরু হ’ল কাছাকাছি আসবার গল্প। অফিসের বাইরেও শুরু হ’ল যোগাযোগ রাখা। খুব ধীরে, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই মেঘ বুঝতে পারছিল, এই আকর্ষণ যাওয়ার নয়। কিন্তু বুঝতে পারছিল না, বৃষ্টির প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে। বন্ধুত্বের প্রস্তাব নাকচ হ’ল, যথারীতি। সহকর্মীর বাইরে সে ভাবতেই রাজি নয়, এমনটাই জানাল বৃষ্টি। যদি কখনও সময় আসে, ভেবে দেখবে, আদৌ বন্ধুত্ব করা যায় কি না, এমনটাই সরাসরি বলল বৃষ্টি।
বরফ গলতে শুরু করল, তারও বেশ কিছুদিন পর থেকে। হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছু অনুভূতি ভাগ করে নেওয়া দিয়ে শুরু হ’ল। শুরু হ’ল অপেক্ষা, মেসেজ পাঠিয়ে উত্তরের অপেক্ষা। অফিসে বিশেষ কথাবার্তা হত না। কিন্তু অফিস থেকে বেরনোর পরে দু’জনেই ডুবে যেত অন্য জগতে। অপেক্ষা বৃষ্টিও করত মেঘের মেসেজের, সেটা বৃষ্টি জানিয়েছিল অনেক পরে। ততদিনে বৃষ্টিরও কোথাও একটা অনুভূতি তৈরি হচ্ছিল মেঘের জন্য। বৃষ্টি নিশ্চিতভাবেই জানত, তার প্রতি মেঘের দুর্বলতার কথা। মেঘের বলা প্রতিটা কথা, প্রতিটা আচরণ, তাকে নিশ্চিতভাবেই বুঝিয়ে দিত, এ শুধু তার প্রতি তাৎক্ষণিক আকর্ষণ নয়, তার থেকে অনেক বেশি কিছু। সে ঘরে ঢুকলে মেঘের চোখের ঊজ্জ্বলতা চোখ এড়ায়নি বৃষ্টির। তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে গেলে মেঘের মুখে জমে ওঠা কালো মেঘ তারও চোখে পড়েছে। সারাদিন অফিসে হৈ-চৈয়ের মধ্যে, কাজের ফাঁকে মাঝেমাঝেই মেঘ তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, এও তার চোখ এড়ায়নি। তার জন্য মেঘের দুশ্চিন্তা, তার ছোটখাট ব্যাপারের খেয়াল রাখা, সবকিছুই তার মস্তিষ্কে সংকেত পাঠাচ্ছিল, মেঘ মানসিকভাবে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছে।
অপেক্ষা করছিল বৃষ্টি, মেঘের মুখ থেকে স্পষ্টভাবে শোনবার জন্য। সংযত রাখছিল নিজের আবেগ। ভয় ছিল, যদি সেও আবেগ প্রকাশ করে ফেলে, তাহলে হয়ত সুনামি আসবে। তাতে ভেসে যেতে পারে অনেককিছু। একদিন জিজ্ঞাসা করেই ফেলল, “কতবার প্রেমে পড়েছ মেঘ দা?” দেখল, মেঘ তার নামের ধারকাছ দিয়েও গেল না। আসলে মেঘও সময় নিচ্ছিল। বুঝতে পারছিল না, বললে বৃষ্টির প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে। কিন্তু বলল মেঘ। তার সমস্ত রক্ষণ ভেঙে, সংকোচ সরিয়ে জানাল তার বৃষ্টির প্রতি দুর্বলতার কথা। এবং অবাক হয়ে দেখল, বৃষ্টি কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাল না। শুধু বলে গেল, মেঘ কবে বৃষ্টিকে কী কী বলেছে গত দেড় বছরে। বৃষ্টি খুব শান্তভাবেই জানাল, সে জানত। অন্তত নিশ্চিত অনুমান ছিল, মেঘ কী ভাবছে বৃষ্টিকে নিয়ে।
তারপর আলাপ গাঢ় হতে সময় লাগেনি। সেই আলাপে কখন যে গোলাপি আভা লাগতে শুরু করেছে, কেউই টের পায়নি। কিন্তু টের পেয়েছিল অন্যরা। কানাঘুষো শুরু হতে সময় লাগেনি। সেই কানাঘুষোকে ঝড়ের বেগে উড়িয়ে দিয়ে মেঘ-বৃষ্টি ডুবে যাচ্ছিল অন্য জগতে।
অনেকগুলো বছর পরে, যখন একসঙ্গে থাকার পরিকল্পনা নিল, তখন মেঘ পেরিয়ে এসেছে আরও অনেকগুলো বসন্ত। পাহাড় বরাবরই প্রিয় তার। সেইজন্যই কানাতালে থাকবার সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে একজন নতুন সদস্যেরও আগমন ঘটেছে – কুট্টুস। সেও সারাক্ষণ লেজ নেড়ে তার আগ্রহ দেখিয়ে চলেছে, আর নিজস্ব ভাষায় অনেক কিছু বলবার চেষ্টা করছে।
এইসবই ভাবছিল মেঘ, আর গুছিয়ে নিচ্ছিল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অনেক কিছু গোছানোর এখনও বাকি। জায়গাটা ঠাণ্ডা হবে। এমনিতে ওখানে সবকিছুই আছে, সেভাবেই কথা হয়ে আছে। তাও বুড়ো হাড়ে যদি ঠাণ্ডা না সয়? কুট্টুসকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ অনুমতিপত্রে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর বৃষ্টিকে ফোন করবার জন্য নম্বর ডায়াল করল। মেয়েটা বরাবরই অগোছালো। শেষ মুহূর্তে সব গোছায় এবং যথারীতি অনেক কিছু ভুলে যায়। ওর সঙ্গে একবার কথা বলে নেওয়া দরকার, সবকিছু ঠিকঠাক নিয়েছে কি না। কিন্তু নাহ্। ফোন বন্ধ। এই হচ্ছে মুশকিল। প্রয়োজনের সময় কখনই পাওয়া যায় না। তার ওপর ভীষণ মুডি। কখন যে কি করবে, বোঝা মুশকিল। আবার রাত্রে চেষ্টা করা যাবে।
This is the last and Final Boarding Call for the Indigo Flight no 201 for Kolkata to Dehradun – কুট্টুসের ছটফটানিতে সম্বিৎ ফেরে মেঘের। ধীরপায়ে গেটের দিকে এগোয় মেঘ, একাই। না, বৃষ্টি আসেনি। এসেছিল বৃষ্টির একটা ভয়েস মেসেজ, কাল সন্ধ্যেবেলা।
বৃষ্টির কথা
মেঘ, তুমি তো জানো, আমি বরাবরই বিদেশের স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গবেষণার জন্য খুব আগ্রহী ছিলাম। এই পোড়া দেশে আমার বিষয় নিয়ে গবেষণার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। তাই অনেকদিন আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অ্যাপ্লাই করছিলাম। ভাবিনি কখনও সুযোগ পাব। গতকাল Yale University থেকে আমাকে ই-মেইলে জানিয়েছে, ওরা আমাকে Full Scholarship দিয়ে গবেষণার সুযোগ দিচ্ছে। এই সুযোগটা ছাড়তে ইচ্ছে করল না, মেঘ। বুঝতেই পারছ, খুবই সম্মানজনক একটা প্রস্তাব। ক’জন পায় বলো? আমি নিশ্চিত, তোমারও খুব গর্ব হবে। তুমি তো বরাবরই আমার ভালই চেয়ে এসেছ। প্রথম দিন থেকেই চেয়েছ, যাতে আমি জীবনে এমন একটা কিছু করি, যার জন্য তোমার গর্ব হয়। তাও তোমাকে অ্যাপ্লাই করবার কথা জানাতে পারিনি। যদি তুমি ভাব, একসাথে পাহাড়ে থাকবার পরিকল্পনাতে আমার মত নেই, যদি দুঃখ পাও? কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি তোমার পরিকল্পনাতে সবসময়ই ছিলাম, এখনও আছি। কিন্তু কাল রাত্রে আসা ই-মেইলটা সব গণ্ডগোল করে দিল। তোমার সঙ্গে কাল যেতে পারছি না বলে প্লিজ মন খারাপ করো না, কেমন? চার বছরের ফেলোশিপ, গবেষণার কাজ শেষ করেই সোজা কানাতাল, Aloraa Homes। তারপর অখণ্ড অবসর আর প্রকৃতি। তোমাকে ফোনে এসব আর বলতে ইচ্ছে করল না, তাই ভয়েস মেসেজ পাঠালাম। আপাতত পরশু দুবাই। ওখান থেকে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার স্বপ্নের উড়ান…
মেঘের কথা
Flight No. 201 Kolkata to Dehradun is ready to take off. সিটবেল্ট বেঁধে নেয় মেঘ। কোলে কুট্টুস তখনও কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে…
Aloraa Homes-এ ঢুকতে ঢুকতে বেশ বেলা হ’ল মেঘের। অঙ্কিত এগিয়ে আসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে। “আপনার সঙ্গে আরও একজনের আসবার কথা ছিল না?”
“এসেছে তো! এই তো, এর নাম কুট্টুস!” সপ্রতিভ হওয়ার চেষ্টা করে মেঘ।
“না, মানে আরও একজনের থাকবার কথা ছিল আপনার সঙ্গে। আপনি একাই থাকবেন এত বড় পেণ্টহাউসে?” অঙ্কিত নাছোড়বান্দা।
“আরও একজনও আসবে।” মেঘ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।
“কবে?” অঙ্কিতের প্রশ্ন আর থামছেই না।
“বোধহয় বছর চারেক পরে…আপাতত কিছু খেতে দাও, খুব খিদে পেয়েছে…” মেঘ এগোয়, কুট্টুসকে নিয়ে।
বৃষ্টির কথা
একমনে কাজ করছিল বৃষ্টি। এখানে এসছে বছর দুয়েক হ’ল। এদের ব্যবস্থা বেশ ভাল, গবেষণার অনেক সুযোগ। অন্যদিকে তাকানোর কোন সুযোগই নেই। মাঝে কয়েকবার মেঘকে ই-মেইল করেছিল, কোন উত্তর আসেনি। বৃষ্টিও আর অন্যদিকে তাকানোর সুযোগ পায়নি, কাজে ডুবে গিয়েছে। আরও বছর দু’য়েক। তারপর এখানেই কোথাও একটা সেটল করবে – এরকমই ভেবে রেখেছে। কানাতালে ফেরবার কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই। এখানকার এত সুযোগ সুবিধা ছেড়ে উত্তরাখণ্ডে ফিরে যাওয়ার কোন মানেই হয় না। দু’বছর পরে একবার গিয়ে মেঘকে এখানে নিয়ে আসবে। বৃষ্টি বললে মেঘ না এসে থাকতে পারবে না – এই বিশ্বাস বৃষ্টির আছে।
একটানা অনেকক্ষণ কাজ করেছে সে। আজ মার্চ মাসের ২৯ তারিখ, একটা ব্রেক নেওয়া খুব দরকার। রাতও অনেক হয়েছে। একটা ব্ল্যাক কফি বানিয়ে টিভিটা অন করল বৃষ্টি। এই চ্যানেল, সেই চ্যানেল সার্ফ করতে করতে BBC চ্যানেলে এসে চোখ আটকে গেল। সেখানে তখন ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে।
“গতকাল ভারতীয় সময় রাত ১২.০৩ মিনিটে উত্তরাখণ্ডের কানাতালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে, রিখটার স্কেলে যার তীব্রতা ছিল ৬.৮ mb। এখনও পর্যন্ত ১০৬ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। প্রচুর বাড়ি ভেঙে পড়েছে। প্রশাসন উদ্ধারকাজ শুরু করেছে…”
দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় বৃষ্টি। অফিসে একটা জরুরী ই-মেইল পাঠায়। তারপর ফ্লাইট অ্যাপ খুলে বসে। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে…
John F Kennedy airport থেকে প্রায় ২৪ ঘন্টা পর যখন সে দেরাদুনে নামল, তখন সে দৃশ্যতই বিধ্বস্ত। আরও তিনঘণ্টা পর যখন কানাতালে পৌঁছল, তখন চারিদিকে প্রায় ধ্বংসস্তুপ। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই উদ্ধারকাজ চলছে। তখনও একের পর এক মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। Aloraa Homes-এর কোন চিহ্নই নেই। সরকারি আধিকারিককে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাঘুরি করতে করতে একটা চেনা আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়ায় বৃষ্টি।
কুট্টুস তখনও কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে…সামনে দাঁড়ানো বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে।
লেখক পরিচিতি : আহব
অধ্যাপক, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরে কর্মরত। প্রিয় শখ অপরিচিত জায়গায় বেড়ানো এবং ছবি তোলা