লেখক : মো: আরিফুল হাসান রাহাত
শহরের বাইরে, পাহাড়ের গা ঘেঁষে একটি ছোট্ট গ্রাম ছিল। গ্রামের নাম ছিল ভাষা — একটি শান্ত, নির্জন গ্রাম, যেখানে আকাশে মেঘেরা মিষ্টি কথা বলত, আর নদী তার সঙ্গীত বাজাতো। কিন্তু এই শান্তির মাঝেও এক গভীর অস্থিরতা ছিল। গ্রামবাসীরা জানত, কোনো একদিন এই শান্তি চুরমার হবে। কারণ, তাদের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল।
গ্রামের কিশোর সজল সবসময় ভাবত — স্বাধীনতা কেবল একটি শব্দ না, এটি একটি অনুভূতি, একটি অধিকার যা কখনো খোয়া গেলে, তা কখনোই ফিরে পাওয়া যায় না। সজল ছিল এক পিতৃহীন ছেলে, যার বাবা ছিল গ্রামের প্রথম ব্যক্তি যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি মায়ানমারের সেনাদের হাতে মারা গিয়েছিলেন।
একদিন, সজল যখন পাহাড়ের পাদদেশে হাঁটছিল, সে এক অচেনা পাথর দেখতে পেল। পাথরটির আকার অস্বাভাবিক ছিল এবং এর মধ্যে কিছু লেখা ছিল। তবে তা ছিল পুরোনো ভাষায়। সজল পাথরটি তুলে আনে, আর ঘরে ফিরে বিশ্লেষণ করে দেখতে পায় যে, এটি একটি প্রাচীন ম্যাপ। ম্যাপটি কোনো এক গোপন স্থানের দিক নির্দেশ করছিল।
সজল চুপচাপ সিদ্ধান্ত নেয়, সে এই ম্যাপ অনুসরণ করবে। গ্রামের পুরোনো লোকেরা বলতো, “এ দেশে যদি স্বাধীনতা চাও তো সেই স্বাধীনতা তুমি নিজেই খুঁজে নিতে পারো।” আর সজল জানত, তার বাবার মত তাকেও কোনো বড় লড়াই করতে হবে, কিন্তু একা নয়। এই স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু তার নয়, তা পুরো গ্রামবাসীর।
সজল এবং তার বন্ধুরা, গোপনে ওই স্থানের দিকে যাত্রা শুরু করে। পাহাড়, জঙ্গল, ঝর্ণা — সব কিছু অতিক্রম করে তারা এক পুরোনো মন্দিরের কাছে পৌঁছায়। সেখানে তারা আবিষ্কার করে একটি অদ্ভুত বস্তু—একটি প্রাচীন তলোয়ার, যা তাদের পূর্বপুরুষরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে ব্যবহার করেছিল।
সে রাতেই সজল বুঝতে পারে, স্বাধীনতা শুধু অস্ত্র নয়, এটি একটি মনের শক্তি, একটি একত্রিত লড়াই। তাদের আত্মবিশ্বাস, তাদের মুল্যবোধ এবং একত্রিত উদ্দীপনা ছিল যে শক্তি, যা তাকে তার বাবার মতোই পুরো গ্রামকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে।
তারপর সজল ফিরে আসে গ্রামে, তার সঙ্গীদের সঙ্গে। সে জানত, এর পরের পদক্ষেপ, একটি বড় সংগ্রাম — স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু সে সঠিক ছিল, তাদের ঐক্য ছিল অপ্রতিরোধ্য।
এভাবেই, স্বাধীনতা কেবল একটি যুদ্ধের ফল নয়, এটি এক সংগ্রাম যা সময় ও স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহন হয়। সজল জানত, মুক্তি আসবে, কিন্তু তা ধৈর্য, বিশ্বাস, এবং একত্রিত হৃদয়ের শক্তিতে আসবে।
লেখক পরিচিতি : মো: আরিফুল হাসান রাহাত
মো: আরিফুল হাসান রাহাত