টিংটুকুর আবিস্কার

লেখক : জসিম উদ্দিন জয়

হাবলু, বাবলু, কিরণ, রমিজ সবাই দৌড়ে এলো টিংটুকুর কাছে। এদের মধ্যে হাবলু একটু মোটাসোটা আর মেজাজী। অল্পতেই রেগে যায়। সবাই হাঁপাতে হাঁপাতে এদিক সেদিক তাকিয়ে ক্রিকেট বল খুঁজছিল। তখন হাবলুটা এসেই ভ্রূকুঁচকে টিংটুকুর দিকে তাকালো।  তর্জনী উঁচিয়ে কড়া মেজাজে বলে, কী ব্যাপার, তুই বল কি করেছিস?  ওরা ছয় ছয়টা রান নিয়ে নিলো।  

বোকাসোকা বাবলু হিঃ হিঃ করে হেসে উঠে। একটু ভেংচি কেটে বলে ওঠে, টিংটুকু ভাবুক বিজ্ঞানী হবে। ক্রিকেট খেলতে এসে বল খুঁজে পাচ্ছে না। তাই ভাবছে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টান এর সুত্রের কোন প্রভাব আছে কিনা, বল খোঁজার ব্যাপারে।

টিংটুকু কারো কথায় কর্ণপাত না করে বলে, আমি তো বলটা ক্যাচ ধরেই ফেলেছিলাম, কিন্তু কালো কুচকুচে কাকটা আমার কপালে হাগু করে দিলো। টিংটুকুর কথা শুনে বোচা রমিজ হোঃ হোঃ করে নাকিয়ে নাকিয়ে হাসতে থাকে। সামনে নাকটা বোচা ও একটু বাঁকা। ছোটবেলায় তার বাবা-মা, এই বোচা নাকটা লম্বা করার জন্য আদর করে প্রায় নাক ধরে টান দিতো, তাই নাকটি লম্বা না হয়ে বোচা হয়ে গেছে, কথা বলার সময় সে নাকিয়ে নাকিয়ে কথা বলে। কিরণ আবার খুব গম্ভীর আর ভাবসাব নিয়ে চলে। কিরণের বাবা পুলিশের দারোগা বাবু। ভাবসাবটা সেখান থেকে পেয়েছে। তাই ভ্রূকুঁচকে রমিজ এর হাসি থামিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে, তোরা কি এখনও হাসাহাসি করবি? এদিকে ওরা এখনও রান নিচ্ছে। মাঠের লোকজন তোদের কান্ড দেখে হাসাহাসি করছে। বল কোথায় তাড়াতাড়ি বলে ফেল?

টিংটুকু ইদুরের গর্ত দেখিয়ে বলে “ইদুরের গর্তের ভেতর ঢুকেছে বলটা। এখন কিভাবে বের করবো!

কথাটা শুনে বাবলু ফোকলা দাঁতে আবার হিঃ হিঃ করে হেসে উঠে বলে, আমার মনে হয় টিংটুকুকে ‘স্কটিশ বিজ্ঞানী স্যার ডেভিড ব্রেসটার’- এর কাছে নিয়ে যেতে হবে।  তিনি তো বেঁচে নেই, বেঁচে থাকলে তার কাছে নিয়ে যেতাম। তিনি আলো এবং দৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার কালাইডস্কোপ যন্ত্র এখন ভীষণ দরকার টিংটুকু জন্য। বলেই আবারও হিঃ হিঃ করে হেসে ওঠে।

সবার মধ্যে হাবলু একটু মোটা। ওর শরীরে অনেক ভিটামিন ‘ডির শক্তি’ আছে। বাবলু একটু চিন্তা করেই হাবলুকে ধমক দিয়ে বলতে থাকে, হাবলু তুই তো মোটা, শক্তি বেশী শুনেছি। হরলিক্সের বোতল শুদ্ধ খেয়ে ফেলিস। তাড়াতাড়ি এক ঘুষি দিয়ে ইঁদুরের গর্তটা ভেঙ্গে ফেল।

টিংটুকু তাদের কথায় প্রতিবাদ করে বলল, শোন হাবলু তুই নির্বোধ পুলিশের মতো কাজ করিস না।  দেখিস না শীতের রাতে পুলিশ কিভাবে গরীব মানুষের বস্তি ভেঙ্গে ফেলে।  এখন ইঁদুরের গর্তটা ভেঙ্গে ফেললে ইঁদুরগুলো এই শীতকালের রাতে কোথায় থাকবে?

বাবলু আবারো হিঃ হিঃ করে হেসে বলে- ইঁদুরের প্রতি দরদ, টিংটুকু মনে হয় ‘মাদার তেরেসা’ হবে। টিংটুকু তুই তো বড় হয়ে রাজনীতিবিদ হবি. এখনই বড় বড় কথা শিখে গেছিস।

টিংটুকু বাবলুর কথায় পাল্টা জবাব দিলো, আর যাই হই হোক তোর বাপের মতো ভুয়া রাজনীতিবিদ হব না। তোর বাপের নির্দেশে সেদিন জসিমদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল।  জসিমরা গরীব তাই কোন প্রতিবাদ করতে পারে নি। দামী দামী লোকজনও আসেনি তাদের পক্ষে সুপারিশ করতে।  

কিরণ জসিম এর কথা শোনা মাত্রই খুব আফসোস করে বলল- ইস, জসিমকে আমার খুব ভালো লাগে। সব সময় সত্যি কথা বলে।  জানিস আমার স্কুলের অংক শিক্ষক আমাদের অংক করাতে গিয়ে প্রায় অংক ভুলে যায়। এক দৌড়ে লাইব্রেরিতে গিয়ে অংক মুখস্ত করে আসে। তাই সেদিন আমি অংক শিক্ষকের পেছন পকেট থেকে কলম চুরি করেছিলাম।  জসিম সেদিন স্যারকে সত্যি কথাটা বলে দিয়েছে। আমার কঠিন শাস্তি হয়েছিল। এক হাতে কান ধরে অন্য হাতে ১০ ইঞ্চি ইট ধরে একপায়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল অনেকক্ষণ। কষ্টে চোখ বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানিতে বুক ভিজে গিয়েছিল। সেই থেকে সব ধরনের চুরি বাদ দিয়েছি।  আগে বাবার পকেট থেকে প্রায় টাকা পয়সা চুরি করতাম, সেটা বাদ দিয়েছি। জসিম-এর জন্যই আমি আদর্শবান হয়েছি।

বন্ধুদের কাছ থেকে কথাগুলো শুনে বাবলু অপমানিত বোধ করল। তাই নিজের বাবার বদনাম ঘোঁচানোর জন্য মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বলে- জানিস, জসিমের দাদা রাজাকার ছিল।  ১৯৭১ সালে ১৪ই ডিসেম্বর রাতে জসিমের দাদাকে খান সেনারা হত্যা করে।

টিংটুকুর একটু ভাবুক হলেও তার সাধারণ জ্ঞান ছিল ভালো। তাই বাবলুর কথায় সে আবারও প্রতিবাদ করে হেসে উঠে, তুই জানিস ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর রাতে এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল নিমর্মভাবে। জসিমের দাদাও ছিল একজন বৃদ্ধিজীবী। আমি বাবার কাছ থেকে শুনেছি সেই সব বৃদ্ধিজীবীদের হত্যা করে রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে ফেলে রাখে। পাকিস্তানী খান সেনারা কি করতো জানিস? সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের মেরে, সেই লাশ মাটিতে পুতে রাখতো। আমি যাদুঘরে তাদের হাড়গোড় সব দেখেছি। খবরদার বাবলু, না জেনে কখনও কিছু বলতে যাবি না। এটা খুব অন্যায়।

বাবলুর চালাকি ধরা পড়ে গেছে। তাই বাবলু টিংটুকুর কথা শুনে খুব অসহায় দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তখন পড়ন্ত বিকেল। মাঠের সব ক্রিকেট খেলার বন্ধুরা ছুটে এলো তাদের কাছে। সবাই অবাক। তারা ক্রিকেট খেলার কথা ভুলে গেয়ে গল্প শুরু করলো। এরই মধ্যে হাবলু তড়িঘড়ি করে ইদুরের গর্তটি ভেঙ্গে ফেললো। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে গর্তের অনেকখানি ভেঙ্গে ফেললো। কিন্তু আশ্চার্যের বিষয় গর্তে বল নেই! আরো গভীরে গর্ত খুঁটতে গিয়ে দেখতে পেল একটা মরা মানুষের কংকাল। কংকালটা দেখামাত্রই বাবলুর চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। এই বুঝি কোন মুক্তিযোদ্ধার কংকাল।  

টিংটুকু বাবলুকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তার হাতে হাত রেখে বলল- শোন, ১৯৭৪ সালে এ দেশে একটানা দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।  সে সময় অনেক মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। হয়তো তাদের কারও কংকালও হতে পারে! বাবলু টিংটুকুর কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে, খেতে না পেয়ে মানুষ মারা যায় আমি জীবনেও দেখিনি।  কেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের আঁকা ছবিগুলো দেখিস নি? মানুষ কিভাবে মারা গেছে না খেয়ে!

বাবলু কথাটা বিশ্বাসই করতে পারলো না।  কত খাবার ফেলে দেওয়া হয়।  মানুষ আবার না খেতে পেয়ে মারা যায় কিভাবে!

হ্যা, না খেয়ে মানুষ মারা যায়।  কেন তুই টিভিতে দেখিস না, বসনিয়া, সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষ। সেইরকম দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশেও হয়েছিল।

বাবলু টিংটুকুর কথা শুনে প্রশ্ন করল -দুর্ভিক্ষ হয় কেন?

যুদ্ধ, অন্যায়, অত্যাচার, দুর্নীতি, কালোবাজারি এই সব কারণে দুর্ভিক্ষ হয়।

এদিকে সবাই সেই কংকালটাকে মাটির গর্ত থেকে উপরে টেনে তুলছে।  টিংটুকুও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে।  বাবলুটা আবারও হিঃ হিঃ করে বলে বসে- দাঁড়া, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সকেকে খবরটা দিই। তারা বড় বড় ক্রেন নিয়ে আসবে টেনে তোলার জন্য।

টিংটুকু একটু ভেংচি কেটে বলে, কত পারবে সেটা আমরা জানি। তুই জানিস না, তারা ছোট্ট শিশু জিহাদকে টেনে তুলতে পারেনি একটি কুপ থেকে।  তারা কচু পারবে। অবশেষে কংকালটি টেনে তোলা হলো।  কংকালটার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে সবাই। এটা তো মানুষের কংকালের মতো মনে হচ্ছে না!

সেদিন আর তাদের ক্রিকেট খেলা হলো না। মাঠের সবাই দৌড়ে এসে কংকালটিকে দেখছে।  টিংটুকু সবার কাছ থেকে কংকালটি পরীক্ষা করার জন্য চেয়ে নিলো। সন্ধ্যার পরে টিংটুকু কংকালটিকে নিয়ে বাসায় তার পড়ার রুমে টেবিলের পাশে রাখলো।  বাসার সবাই টিংকুর রুমে কংকালটি দেখে ভয় পেয়ে যায়।  টিংটুকুর ছোটবোন তুলি কংকাল দেখে ভূত ভূত বলে চিংকার করতে থাকে।  টিংটুকু কংকালটিকে আস্তে করে খুব যত্ন করে একটি কাপড় দিয়ে ডেকে দেয়।  

তখন প্রায় মাঝ রাত।  বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। টিংটুকুও তার বদরাগী দাদুর ভয়ে ঘরের বাতিটা নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে একটা উজ্জ্বল আলোর ঝলকানিতে জেগে ওঠে। পাশ ফিরে দেখে কংকালটার পাশে একটি অদ্ভুত এক প্রাণী। কংকালটার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রাণীটা অনেকট হীরের পাথরে সজ্জিত, চকচক্ করছে।  চেহারার আবরণে বিদঘুটে অস্পষ্ট মানুষের ছাপ।  টিংটুকু চোখ মুছতে মুছতে ভালো করে তাকিয়ে আৎকে ওঠে। ভীষণ ভয় পেয়ে যায় সে।  টিংটুকুর জোরে চিৎকার করতে চাইলেও শব্দ তার কন্ঠ থেকে বেরোয় না।

অদ্ভুত প্রাণীটা তার দিকে তাকালো। চেহারায় অস্পষ্ট মানুষের ছাপ হলেও চোখ দুটি বেশ সুন্দর।  টিংটুকু একটু সাহস পেলো।  টিংটুকু শুনেছে যাদের চোখ সুন্দর তাদের মন ভালো হয়। তারা হিংস্র হয় না। একটু হেসে টিংটুকুকে বলছে, কেমন আছো? টিংটুকুর ভয় তখনও কাটেনি তাই কাঁপতে কাঁপতে বলল- ভালো, কিন্তু তুমি কে?

আমি এক ভীনগ্রহের প্রাণী। আমাদের এই সৌরপরিবারে মোট ৮ টি গ্রহ আছে। সেই গ্রহদের মধ্যে গ্রহরাজ ‘বৃহস্পতি’ গ্রহের প্রাণী আমি। মাঝে মাঝে ঐ যে চাঁদ দেখতে পাচ্ছো সেখানেও থাকি। পৃথিবীর সবথেকে কাছের গ্রহ শুক্র, সেখানেও মাঝে মাঝে আসি। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ এবং পৃথিবী থেকে কাছে বলে এখানে মাঝে মাঝে সময় কাটাই। তুমি জানো এই চাঁদ কিভাবে হয়েছিল? আজ থেকে আনুমানিক ৪.৪৮বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গল আকৃতির এক গ্রহাণু পিন্ডের সংঘর্ষে সৃষ্টি হয়েছিলে চাঁদ।

টিংটুকু মুগ্ধবিস্ময়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, কিন্তু তুমি এখানে কিভাবে এসেছো?

– ১৯৭৩ সালে ডিসেম্বর মাসে স্পেস ক্রাফট পয়েনার ১০, প্রথমবারের মত যখন গ্রহরাজ বৃহস্পতিকে প্রদিক্ষণ করে, তখন আমি এই স্পেস ক্রাফট পয়েনার ১০ থেকে তোমাদের গ্রহের সন্ধান পাই।  শুনেছি তোমাদের এই পৃথিবীটা খুব সুন্দর। সুজলা, সুফলা শস্য শ্যামলা।  তাইতো দেখতে এসেছি তোমাদের গ্রহকে।

-আমাদের এই বাংলাদেশে কেন এসেছো?

টিংটুকুর এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভীনগ্রহের প্রাণীটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে থাকে- তোমাদের পৃথিবীর মানুষেরা বড়ই নিষ্ঠুর। যুদ্ধবাজ! কথায় কথায় যুদ্ধ বাধায়।  এই যুদ্ধই দেখবে তোমাদের পৃথিবীটাকে একদিন ধ্বংস করবে। ১৯৭৩ সালে ডিসেম্বর মাসে পৃথিবীতে এসেছিলাম। শুনেছি তোমাদের বাংলাদেশ খুব সুন্দর দেশ সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামল।  খুব সুন্দর সুন্দর পল্লী গান, ভাটিয়ালি গানের সুর, এ’ দেশের আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়ায়।  তাই ১৯৭৪ সালে যখন তোমাদের দেশে আসি তখন তোমাদের দেশে একটি মানুষের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়।  মানুষটি খুব ক্ষুধার্ত ছিল।  আমি বুঝতে পারি নি।  তখন তোমাদের দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছিল, সে মারা যায়।  আমাদের গ্রহে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে মানবজাতির বাস করা অসম্ভব। সেখানে মানুষের বাসযোগ্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নেই, খাবারও নেই।  সবগুলো গ্রহ মিলে যত ওজন হবে তার ২.৫ গুণ হচ্ছে আমাদের বৃহস্পতি গ্রহ।  সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ।  বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রচুর পৌরাণিক কাহিনি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসও আবর্তিত আমাদের গ্রহকে কেন্দ্র করে।  সেখানে আমরা অল্প কয়েকটা প্রাণী বাস করি। আমাদের মধ্যে কখনও যুদ্ধ হয় না। আমরা হাজার হাজার বছরের বেশী সময় ধরে বসবাস করছি। তোমরা বিজ্ঞান নিয়ে যতই মাতামাতি করো, সেটা একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে যাবে কিন্তু বিজ্ঞানের চেয়ে উর্ধ্বে যে তথ্য সেটা আমাদের কাছে আছে। আর সেই তথ্য তোমাদের দিলে তোমরা সেটার অপব্যবহার করবে। কেননা মানুষের বয়সসীমা অত্যন্ত সামান্য। তাই এই সামান্য বয়সে সে সবকিছুর সমাপ্ত করে যেতে পারবে না। আর তাছাড়া মানবজাতি এক সময় যুদ্ধ করতে করতে ধ্বংস করে ফেলবে পৃথিবীটাকে। ও ভালো কথা , তোমাদের পৃথিবীর বাইরে যে বায়ুমন্ডলেরস্তর রয়েছে সেই বায়ুমন্ডলের অবস্থা খুব করুণ। কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ খুব বেশী ও দিন দিন বেড়েই চলছে।

টিংটুকুখুব মনোযোগ সহকারে ভীনগ্রহের প্রাণীটার কথাগুলো শুনছিল। টিংটুকুর প্রশ্ন করল- তুমি আমার ঘরে কেন?

ভীনগ্রহের প্রাণীটা আঙ্গুল দেখিয়ে বলে, ঐ যে কংকালটা তুমি নিয়ে এসেছ ওটা আমার এক বন্ধুর কংকাল। আমরা এক সাথেই এই পৃথিবীতে এসেছিলাম কিন্তু তোমাদের পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর। আমার বন্ধুটিকে গুলি করে মেরে ফেলেছিল।  ওটা ঐ বন্ধুর কংকাল।  দেখতে পাচ্ছো না পুরো কংকালটাই পাথরের! সবচাইতে ব্যয়বহল হীরে পাথর। আমি আজ আমার এই বন্ধুর কংকালটি নিয়ে নিজ গ্রহে ফিরে যাবো। আর কোন দিন তোমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহে আসব না।

টিংটুকুর ভীনগ্রহের প্রাণীটার কথা শুনে খুব মায়া হলো।  সে ভীনগ্রহের প্রাণীটাকে অনুরোধ করলো এই কংকালটিকে না নেওয়ার জন্য। ভীনগ্রহের প্রাণীটা ছোট্ট টিংটুকুর কথা রাখলেও একটা শর্ত দিল, তুমি এই কংকালটিকে সরকারের হাতে তুলে দেবে।

টিংটুকু মাথা নেড়ে সায় দিল।

ভীনগ্রহের জীবটা এবার হাসতে হাসতে টিংটুকুকে হাত নেড়ে টা. . টা.. করতে করতে হাওয়ায় মিশে গেলো।  তখন টিংটুকুর খুব মায়া হলো। চিৎকার করে বলতে থাকল, তুমি যেয়ো না, একটু শোনো।  চিৎকার করতে করতে তার ঘুম  ভেঙ্গে গেল।  দেখল, পাশে কেউ নেই। শুধু কংকালটা ঝুলে আছে। কংকালটার চারপাশে আরোকরশ্মি ছড়াচ্ছে।  টিংটুকু বুঝে যায়, এটা নিশ্চয়ই কোন দামী পাথরের তৈরী কংকাল হবে। কাউকে কিছু না বলে পরের দিন ভোর হতেই ছুটে যায় জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণাগারে। সেখানে সবকিছু খুলে বলল।

বিজ্ঞানীরা কংকালটি পরীক্ষা করে দেখল একটা দুলর্ভ পাথরের তৈরী কংকাল। পরের দিন এই দুলর্ভ কংকালসহ টিংটুকু সমস্ত ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ পেল।  পত্রিকা, মিডিয়ায় এই ঘটনা পড়ে কংকালটি দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনেক লোকজন এল। টিংটুকুকে তার সততার জন্য সরকার পুরস্কৃত করলো। টিংটুকু সরকারকে অনুরোধ করলো কংকালটিকে জাতীয় যাদুঘরে রাখার জন্য এবং সেখানে সবার উদ্দেশ্যে বড় করে লিখি রাখার জন্য, পৃথিবীতে না জেনেশুনে কোন অজানা জীবকে হত্যা করা উচিত নয়।  এটা ভীনগ্রহের জীবও হতে পারে।

লেখক পরিচিতি : জসিম উদ্দিন জয়
স্বপ্নবাজ মুক্তচিন্তার মানুষ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জসিম উদ্দিন জয় তিনি ঢাকা জেলায় মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা আব্দুল ছাত্তার খান ও মাতা আমেনা বেগম, পৈত্তিকভিটা কুমিল্লা জেলায়। প্রযুক্তিবিদ, সাহিত্যিক এবং একজন দক্ষ সংগঠক হিসাবে বেশ পরিচিত তিনি | 1996 সালে নট্রামস থেকে কমপিউটার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা কোস শেষ করে ১৯৯৮ সালে স্নাতক শেষ করেন । ১৯৮৯ সালে রক্তঝরা ফাগুন ও শিশু কিশোর মেলা নামে দুটি প্রত্রিকা ও স্কুলে দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ এর মাধ্যমে তার লেখালিখি জীবন শুরু । নিয়মিত জাতীয় দৈনিকে লেখালিখির পাশাপাশি ৯০-এর স্বৈরাচারি আন্দোলন, পরবর্তি সময়ে আওয়ামীলীগ এর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন । বিভিন্ন ব্লগে সফল ব্লগার হিসাবে এখনও লিখছেন । কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার জয় ইনষ্টিটিউট এর 16 বছর চেয়ারম্যান ছিলেন (১৯৯৯-২০১৫) । তিনি গভ: রেজি:কৃত প্রযুক্তি ও প্রজন্ম ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলোপমেন্ট সোসাইটি ( BFDS ), বাংলাদেশ ডিজিটাল এডুকেশন সোসাইটি (BDES), জয় ফাউন্ডেশন, BCFDF ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ডিজিটাল স্কুল সোসাইটি (BDSS), মিরপুর কম্পিউটার সমিতির, FAB এর প্রতিষ্ঠাতা, ঝলক ফাউন্ডেশন এর সহ-সভাপতি । বর্তমান তিনি জয় কমপিউটারস লিমিটেড, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসাবে কর্মরত আছেন । তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা: 35 টি । প্রকাশনার পথে ১৫টি । জাতীয় পুরস্কার : ২০১৮ সালে বেসিস কর্তৃক জাতীয় আইসিটি পুরস্কার, শিশু সাহিত্যের উপর এমিরেটাস ড. আনিসুজ্জামান এর কাছ থেকে মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৩-১৫ । প্রযুক্তি ও প্রজন্ম ফাউন্ডেশন এর পক্ষে "জয় বাংলা" অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত । ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় এর ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ এর বঙ্গসভা সাহিত্য পুরুস্কার 2023, রংধনু সাহিত্য পুরস্কার, সহ ময়ূরপঙ্খী সাহিত্য পুরস্কার, বিসিএফডিএফ শিশু সাহিত্য পুরস্কার, নন্দন পুরস্কার, অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের শিশু সাহিত্য পুরুস্কার, আলী লিয়াকত শিশু সাহিত্য পুরুস্কার, মৃত্তিকা সাহিত্য পুরুস্কার, সুরমা সাহিত্য পুরুস্কার প্রাপ্ত শিশুদের প্রিয় এই মানুষটি শিশু-কিশোরদের জন্য অনেকগুলো বই লিখেছেন।, শিশু কিশোর প্রোগ্রামিং ও রোবট প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান মেলা, শিশুদের উদ্ভাবন মেলার আয়োজক, সহ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক ও বাণিজ্যিক সংগঠন তাকে বিভিন্ন ভাবে অ্যাওয়াড ও সম্মাননা প্রদান করেছেন ।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।