লেখক : নাঈমুল হক
“উমম!”
চায়ে ভেজাতেই কুকিজটা এত মজার হয়ে উঠলো যে মনের অজান্তে, চোখ বন্ধ হয়ে এল। চোখ মেলে দেখি আর মাত্র দুটো কুকিজ বাকি।
“চকলেট কুকিজ খাচ্ছিস! আগে বলবি না? ” এই কথা বলে ভাইয়া হাঁটতে হাঁটতে একখান কুকিজ হাতে নিয়ে মুখে চালান করে দিলেন। মনে মনে বলি- “হারাধনের দুই ছেলে, বাকি রইল এক। ” শেষ ‘পুত্র’কে খুব ধীরে, আরাম করে চা দিয়ে খেলাম। অসাধারণ স্বাদটা মুখে লেগেই রইল। ইস! আরও কয়েক পিস যদি খাওয়া যেত।
দুদিন পর বাবা সন্ধ্যার আগেই অফিস থেকে ফিরলেন। মনটা আনন্দে ভরে গেল। ঠিক বাবা ভক্ত আমি নই , তবে বাবার হাতে বয়ামটা যে চকলেট কুকিসের, তাতেও কোন সন্দেহ নেই। রাতে চুপি চুপি ডাইনিং টেবিল থেকে বয়ামটা নিয়ে আমার পড়ার রুমে আসি।” ডিনার না খেয়ে কুকিজ ” – দেখলে মা বকবেন নিশ্চিত। তাই সাবধানতার মার নেই।
ফ্লাক্স থেকে গরম চা কাপে ঢেলে, শুরু করি দি গ্র্যান্ড কুকিস ভোজন! গোগ্রাসে দুটো কুকিজ শেষ করে ফেললাম । তিন নম্বরের বেলা, কেন যেন মনে হতে থাকলো, সেদিনের সেই টেস্ট, ভালোলাগাটা আর নেই। আশ্চর্য! যখন কম থাকে, তখন পাওয়ার কি ইচ্ছা! আর যখন থাকে – অঢেল পরিমাণ, তখন কি এক অনীহা! নিজেকে নিজে ভৎসনা করে রুম থেকে বের হতেই দেখি – বাবা সোফায় বসে ভাইয়ার পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন। মা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে পাশে। আনন্দের এক মিলন মেলা। এত খুশির কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে জানতে পারি – ভাইয়া অংকে এ প্লাস পেয়েছে। কোন রকমে পাশ করা আমার ভাই, এ প্লাস এনেছে , এ সত্যিই গর্বের বিষয়! আমারও মনে পড়ে , আজ লাস্ট ডেট। পড়ার টেবিল থেকে স্কুলের রেজাল্ট কার্ডটা নিয়ে বাবার হাতে দেয়। রেজাল্টে একবার চোখ বুলিয়ে, সাইন করে দিলেন বাবা। তারপর, আবার ভাইয়ার সাথে আড্ডায় মেতে ওঠেন।
আমি রুমে ফিরে আসি। কুকিজগুলোকে আগের জায়গায় রাখি। কুকিজের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে জানি। ঠিক যেমন কমে গেছে – রোল ওয়ান হিসেবে ক্লাসে, প্রতিবার আমার ‘প্রথম হওয়া’ উপলক্ষে, বাবা-মার আনন্দ উদযাপনে, উৎসাহ।
লেখক পরিচিতি : নাঈমুল হক
জন্ম : ২৯ অক্টোবর ২০০০, কুমিল্লা, বাংলাদেশ, শিক্ষা : বিএসসি সম্মান। বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবী। অবসরে লেখালেখি করি। লিখতে ভালোবাসি, ভালোবাসি শব্দ যা প্রকাশ করে অনুভূতি।