লেখক: স্বাগতা আচার্য্য
আমরা যারা ছোট্টবেলায় খুব বড় বিয়েবাড়ি থেকে ফিরতাম একটি বা দুটি বোতল আঁকড়ে, তর সইতে না পেরে জল ভরে ফেলতুম পরের দিন স্কুলে যাবার জন্যে, আর coca cola এর গন্ধ যদি একটু থাকে তাহলে তো সোনায় সোহাগা, বারবার চেখে চেখে একটু একটু করে সেই অমৃত পান করা, তারাই বুঝি মাটির কলসীর জল গেলাস ডুবিয়ে খাবার মজা, আর তা যদি হয় ফুটিফাটা রোদে কয়েকটি পাক দৌড়ে আসার পর!
আদ্ধেক জল গড়িয়ে পড়ে গলা বেয়ে ! অবিশ্যি মা সামনে থাকলে ভালমানুষ হয়েই কলসী এলিয়ে গেলাস ঠেকিয়ে জল নিতাম। তারপর কয়েক ঘন্টা পুকুরে জলকেলি করে গোঁফের তলায় পাঁক জমিয়ে, চোখ লাল করে উঠে আসতে হত কাঁচা কঞ্চির দাপটে। আর এই বাঁশ ঝাড়গুলো বড্ড গায়ে পড়া! মা বাবাকে দেখলেই নুয়ে পড়ত, অনেকটা যেন এই যে কাকিমা আসুন, কঞ্চি নিয়ে যান গোছের। তাপ্পর দাঁতের ফাঁক থেকে আপ্রাণে আটকে থাকা আম বা টুপ করে পাঁক থেকে তোলা খেজুর, কুলের রোঁয়া জিভ দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে উঠে আসতাম। তাও কি রক্ষা ছিল! জুলপি গড়ানো জল মুছিয়ে দেবার অছিলায় ঘরশত্রু বিভীষণগণ চিত্রগুপ্তের খাতা খুলে বসতেন।গামছা দিয়ে ঘসার তালে তালে পিঠেও বসত উত্তম মধ্যম। ততক্ষণে মাথা শুকিয়ে কাঠ। সরষের তেল চাপড়ানো গা ভুরভুর করত পাঁকের গন্ধে!
এ কথা হঠাৎ মনে পড়ল প্রাণের কবির কথায়। আসলে আমার কাছে রবিঠাকুর মানেই সেই গলা বেয়ে গড়িয়ে পড়া ঠাণ্ডা জল, কিংবা পুকুরপাড়ে বসে আম জারিয়ে খাওয়া, বা গোঁফের নীচে জমা পাঁক। সারাদিনে একবার অন্তত চোখ বন্ধ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে পেলেই মনে হয় প্রাণের ঠাকুর নিয়তই আছেন, আমাদেরই প্রাণে !!
ছবি: প্রণবশ্রী হাজরা
লেখকের কথা: স্বাগতা আচার্য্য
নেশায় -আবোলতাবোল পাঠিকা। পেশায় -সেবিকা। নিবাস -পূর্ব মেদিনীপুর।
লেখকের ভাষায় – “যা ভাবি লেখা আসে তার সিকি; হইচই মার্কা মনন। এলোমেলো বুনন। গুণ খুব একটা নেই। কেউ লেখা চাইলে ধড়ফড় করে কেমন। ভুল ক্রুটি নিজগুনে ক্ষমা করে দেবেন। জানাবেন অকপটে। পরের বার শুধরে দেবার আশায় আছি।”
অসম্ভব সুন্দর এই স্মৃতিচারণ!
Dhonyobad
বাঃ! স্মৃতিকথার মতো উঠে আসছে সোনালী শৈশব।নিজেও ফিরে পাচ্ছি শৈশব স্মৃতি।আরও একটু জমাট হোক।