লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
ঈশ্বর নিয়ে আমার আগ্রহ সেই ছোট থেকেই। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী হলেও ঠিক যেভাবে ধর্মরক্ষকেরা ঈশ্বরকে ব্যাখা করে, তার সাথে সবসময় আমি সহমত নই। আমার মতে তিনি বিজ্ঞানেও আছেন, নির্বোধের মধ্যেও আছেন। তাঁকে যেমন আমি ব্যাখা করি নিজের মত করে, আমি তাঁকে খুঁজিও নিজের মত করে, আবার তাঁকে নিয়ে আমার অভিযোগগুলোও করি নিজের মত করে। তাঁকে নিয়ে আমার চিন্তাভাবনাগুলোই এখানে তুলে ধরছি “ঈশ্বরের ইতিবৃত্ত” লেখায়।
প্রথম প্রবন্ধে আমি ধর্ম কেন আমাদের সমস্যা নয় তা ব্যাখা করেছি। কিন্তু আমি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে ঈশ্বরকে যেভাবে পেয়েছি, তাতে আমার কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে। সেগুলোর উত্তরও নিজের মত করেই খুঁজেছি। সেগুলোই আগামী বেশ কিছু প্রবন্ধে আলোচনা করব। আজকের প্রবন্ধে যা আলোচনা করব, তা হল ঈশ্বর কি ব্ল্যাকহোলে থাকেন?
আমি ছোটবেলায় মায়ের কাছে গীতা শুনতাম এবং নিজেও পড়তাম। সেখানের একটা শ্লোক আমার বেশ মনে আছে। যদিও শ্লোক আকারে পড়িনি, পড়েছিলাম গদ্য আকারে। তারপর কেটেছে বহুবছর। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার দরুণ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিস বা থিওরির সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছি। তারপর ২০১৪ সালে ইন্টারস্টেলার সিনেমাটা দেখে আসার পর আমার মাথায় ওই শ্লোকটার একটা ব্যাখা আসে। ব্যাখার থেকে বলা ভালো প্রশ্ন আসে। সেটা হল ঈশ্বর কোথায় থাকেন ? ঈশ্বর কি ব্ল্যাকহোলে বা তার কাছাকাছি কোন গ্রহতে থাকেন? অবশ্য এর ব্যাখা আমি অন্য কারও কাছে জানতে যাইনি বা ভবিষ্যতেও যাব না। ঈশ্বর আর ধর্মের ব্যাপারে ভুল বোঝানোর লোকের তো অভাব নেই। তাই আমি নিজেই এর ব্যাখা দেব কেন এটা ভেবেছি! আপনাদের ভালো লাগলে লাইক আর শেয়ার করতে পারেন। আর খারাপ লাগলে তা কমেন্ট করতে পারেন।
প্রথমে আসি কী সেই শ্লোক? ইন্টারনেটের যুগে খুঁজে বার করা খুব একটা কষ্টসাধ্য হয়নি। গীতার অষ্টম অধ্যায়ের ১৭ নং শ্লোকটি নিম্নরূপ
सहस्रयुगपर्यन्तमहर्यद्ब्रह्मणो विदु: |
रात्रिं युगसहस्रान्तां तेऽहोरात्रविदो जना: ||
এর অর্থ হল আমাদের এক হাজার যুগের সমান ব্রহ্মার একদিন এবং একইভাবে আমাদের এক হাজার যুগের সমান ব্রহ্মার রাত। এখানে যুগ বলতে চতুর্যুগ বলা হচ্ছে। চতুর্যুগ চারটে যুগ নিয়ে হয়। সত্যযুগ, যা ১৭২৮০০০ বছর (আমাদের হিসাবে) স্থায়ী হয়। ত্রেতা যুগ, যা ১২৯৬০০০ বছর স্থায়ী হয়। দ্বাপর যুগ, যা ৮৬৪০০০ বছর স্থায়ী হয় এবং কলিযুগ যা ৪৩২০০০ বছর স্থায়ী হয়। তাহলে আমাদের অর্থাৎ মানুষের হিসাবে ৪৩২০০০০ বছর, অর্থাৎ প্রায় তেতাল্লিশ লক্ষ বছরে একটি চতুর্যুগ সম্পূর্ণ হয়। এইবার এরকম এক হাজার চতুর্যুগ সম্পূর্ণ হলে ব্রহ্মার একদিন সম্পূর্ণ হয়।
এবার আসি ব্ল্যাকহোল কী? খুব সংক্ষেপে বললে ব্ল্যাকহোল হল মহাবিশ্বের এমন এক স্থান যেখানে গ্র্যাভিটি এতটাই শক্তিশালী যে সেখানে কোনও কিছু প্রবেশ করলে আর বেরতে পারে না, এমনকি আলোও বেরতে পারে না। যদিও তাদের নামে গর্ত (হোল) বা শূন্যতার কথা বলা হচ্ছে, আসলে ব্ল্যাকহোল কিন্তু মহাবিশ্বের সর্বাধিক ঘন বস্তু। কারণ যা কিছুই তাদের মধ্যে এসে পড়ে, তা আর বেরোয় না। আর এই কারণে ব্ল্যাকহোলের গ্র্যাভিটিও মারাত্মক। গ্র্যাভিটি হল যে কোন দুটি বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ। যে আকর্ষণের কারণে আপেল আকাশে না উড়ে গিয়ে পৃথিবীর মাটিতে পড়ে, আবার পৃথিবীও যে আকর্ষণের কারণে সূর্যের চারদিকে ঘোরে। মহাকাশে যে কোন বস্তুরই গ্র্যাভিটি আছে। এবার বলি সময়ের কথা। সময় আমরা যেভাবে ভাবি, আধুনিক বিজ্ঞান ঠিক সেইভাবে ভাবে না। সময় আপেক্ষিক। অর্থাৎ দুজন ব্যক্তির কাছে সময় ভিন্ন হতে পারে। কারণ সময় গ্র্যাভিটি দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেখানে গ্র্যাভিটি বেশি, সেখানে সময় অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে চলে। তাই পৃথিবীতে সময় যেভাবে কাটবে, ব্ল্যাকহোলের কাছে বা সরাসরি ব্ল্যাকহোলে তার থেকে অনেক ধীরে সময় কাটবে। সেখানে কাটানো প্রতি মিনিট পৃথিবীতে হাজার হাজার বছরের সমান হতে পারে। ইন্টারস্টেলার সিনেমায় দেখানো ব্ল্যাকহোলের কাছের গ্রহতে এক ঘণ্টা পৃথিবীতে প্রায় সাত বছরের সমান ছিল।
এক্ষেত্রে ব্রহ্মার সময়কাল সেই তুলনায় অনেকটাই বেশি। হতেই পারে তিনি যে ব্ল্যাকহোলে থাকেন, মানে যদি থাকেন, তার গ্র্যাভিটি খুবই বেশি। ব্ল্যাকহোলের কাছের কোন গ্রহতেও থাকতে পারেন, কারণ সেখানেও ব্ল্যাকহোলের গ্র্যাভিটির কারণে সময় খুব ধীরেই চলবে। তবে ব্রহ্মার সময়কাল এতটাই বেশি, আমার মনে হয় সেক্ষেত্রে ব্ল্যাকহোলেই থাকেন, সেটা আমরা ধরে নিতে পারি। যদিও আদৌ থাকেন কিনা সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে গীতা থেকে পাওয়া ব্রহ্মার সময়কাল আর ব্ল্যাকহোলে সময়ের ধারণা যদি মেলাই, তাহলে ঈশ্বর কোথায় থাকেন তার ইঙ্গিত কিন্তু ব্ল্যাকহোলেই যাচ্ছে। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই, এই ধারণা অন্য ধর্মের ঈশ্বরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। ঈশ্বর কে তা নিয়ে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা আমি অন্য একটি প্রবন্ধে করব।
তথ্যসূত্র:
১. https://www.jagatgururampalji.org/
২. https://asitis.com/l
৩. https://www.nasa.gov/
৪. https://www.space.com/
৫. http://www.qrg.northwestern.edu/
৬. https://www.nationalgeographic.com/
৭. https://www.holy-bhagavad-gita.org/
লেখাটি লেখকের কণ্ঠে শুনুন এখানে
লেখকের কথা: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।
দারুন।
খুব ভালো লাগলো
কয়েকটি বিষয় নিয়ে যদি অন্য কোনও প্রবন্ধে আলোকপাত করেন, বাধিত হই। ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড তো সময়ের পরিমাপ। কোনও মহাজাগতিক বস্তু নিজের অক্ষের ওপর যতটা সময় নিয়ে পাক খায়, ততটা তার একদিন। ব্ল্যাক হোল কি নিজের অক্ষের উপর ঘুরছে? কাকে ঘিরে ঘুরছে?
দ্বিতীয়ত, গ্র্যাভিটির সাথে সময়ের সম্পর্কটা বেশ ইন্টারেস্টিং। চাঁদে গ্র্যাভিটি পৃথিবীর ১/৬ পড়েছি। চাঁদে পৃথিবীর ঘড়ি কি তবে দ্রুতগতিতে চলবে? না কি চাঁদে সময়ের পরিমাপটাই আলাদা, তাই ওখানে ঘড়িও আলাদা করে বানাতে হবে?
প্রশ্নের মধ্যে চিন্তার ত্রুটি থাকলে শুধরোতে সাহায্য করবেন। আর এই ধরনের লেখার আরও দাবি রাখলাম।
ভাল লেখা।
বাহ্!!👌👌