লেখক: সৌম্যদীপ মৈত্র ,শামসাদ বেগম
আলু হল একটি টিউবার যেটি মূলত সঞ্চয়ের কাজ করে। আলুর মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে উল্লেখ্য হল স্টার্চ যার জন্য আলুর স্বাদ মিষ্টি লাগে। আলুর বর্ণ মূলত হলুদ হয় কিন্তু anthocyanin উপস্থিত থাকলে বর্ণ বেগুনি বা লালও হতে পারে।
খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও আলুকে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারি। যেমন-
১) সাধারণত দুটো ভিন্ন গাঢ়ত্বের দ্রবণকে (solution) যদি অর্ধভেদ্য পর্দা দ্বারা পৃথক করা থাকে, তাহলে স্বল্প গাঢ়ত্বের দ্রবণ থেকে দ্রাবক (solvent) বেশি গাঢ়ত্বের দ্রবণের দিকে গমন করে এবং এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অভিস্রবণ (OSMOSIS)। প্রথমে একটি আলুর খোসা ছাড়িয়ে তাঁর গায়ে একটি ছোট বাটির মতো গর্ত করে তাতে লবন রাখা হয়। এরপর আলুটিকে একটি জলভরা পাত্রে অর্ধনিমজ্জিত করে দিলে দেখা যায় বাটির মধ্যে লবন ভিজে ওঠে ও কিছুসময় পর দ্রবণে পরিণত হয়। আলুর বাইরে থাকা জলীয় দ্রবণটি থেকে দ্রাবক আলুর মধ্যে থাকা লবনের দিকে গমন করার ফলে আলুর মধ্যে থাকা লবন ভিজে ওঠে। কারণ পাত্রের হাইপোটনিক জল আলুর মধ্যে থাকা লবনের সাপেক্ষে হাইপারটনিক দ্রবণ। ঠিক এই প্রক্রিয়াই ঘটে যখন আমরা গরম জলে কিছুটা লবন মিশিয়ে গার্গল করি। গলায় ব্যাথা হলে আমাদের গলার মধ্যে টিস্যুগুলোতে থাকা তরল যার মধ্যে সংক্রামক জীবাণুগুলি (infectious agents) থাকে সেগুলো লবন জলে চলে আসে। এর ফলে ব্যাথা থেকেও অনেকটা উপশম লাভ হয়। তাই গার্গল করার পর আমাদের সেই জল অবশ্যই ফেলে দেয়া উচিত।
২) কোনো স্থানে যদি ধুলো বা কোনো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদার্থ (যেমন ইঁট কুচি, লোহা গুঁড়ো প্রভৃতি) পড়ে থাকে তাহলে সেগুলি হাতে বা পায়ে ফুটে যাবার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই আমরা যদি সেগুলিকে অপসারিত করতে চাই, তাহলে হাতে কোনো গ্লাভস বা প্লাষ্টিক পরে একটি আলুর খোসা ছাড়িয়ে ঐগুলোর ওপরে রোল করতে পারি। তাহলে ঐসকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদার্থগুলি আলুর নরম অংশে আটকে যাবে তারপর সেই আলুটাকে ফেলে দিতে পারি। আবার একটি আলু নিয়ে সেটিকে অর্ধেক করে কেটে সেই অর্ধাংশ পাথর বা ধুলোবালিগুলোর ওপরে রেখে একটু চাপ প্রয়োগ করলে সেগুলো আলুর নরম অংশে আটকে যাবে। মেঝেতে বা কোনো কার্পেটের ওপরে কাঁচের ছোট ছোট টুকরো পড়ে থাকলেও এই আলু দ্বারা অপসারণ করতে পারি। আলুর রসের এডহেসিভ (adhesive) ধর্মের জন্য এটি হয়। এক্ষেত্রে আমরা যদি আলুর অর্ধাংশ বৃত্তাকার করি তাহলে অধিক পরিমানে আটকাবে কারণ বৃত্তাকার বস্তুর তলের মান অধিক হয়। আলু অর্ধেক করে কাটার সময় যদি উন্মুক্ত নরম অংশটি একটু উত্তল করে রাখতে পারি (আলুকে অর্ধেক করে কাটার পরে যদি উন্মুক্ত নরম অংশের চারপাশ একটু কেটে দিই তাহলে নরম অংশটির মাঝখানটি কিছুতে উঠে থাকবে চারপাশ অপেক্ষা) তাহলে উপরোক্ত প্রক্রিয়া আরো সুন্দরভাবে সংঘটিত করা যাবে। কারণ সেক্ষেত্রে অধিক পরিমানে পদার্থ আটকাবে।
লেখকের কথা: সৌম্যদীপ মৈত্র ও শামসাদ বেগম
সৌম্যদীপ মৈত্র জঙ্গীপুর কলেজ (কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্তর্গত) পদার্থবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র; বাসস্থান – মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত জঙ্গীপুর।
শামসাদ বেগম জঙ্গীপুর কলেজ (কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্তর্গত) পদার্থবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী; বাসস্থান – মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত রঘুনাথগঞ্জ।
পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের বিশেষ আগ্রহ বিজ্ঞানকে আমাদের জীবনের নানান ক্ষেত্রে প্রয়োগ এবং সেই উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে ছোট ছোট পরীক্ষা নিরীক্ষা করা। এছাড়াও আমাদের ভালো লাগে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের জীবনী নিয়ে জানতে এবং বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে ও ধারণাগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজ করে তুলে ধরতে যাতে তাঁরা সেগুলোকে নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন।
অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার কোন পরীক্ষা খুঁজতে গেলে শুধু কিশমিশের পরীক্ষাই পাই। আপনাদের এখান থেকে জেনে আলু দিয়ে পরীক্ষাটি করে বাচ্চাকে দেখালাম। অনেক ধন্যবাদ।