সিনেমা রিভিউ: নূপুর

লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ

  • সিনেমার নাম: নূপুর
  • পরিচালনা: রনদীপ সরকার
  • প্রযোজনা: অর্ক মিডিয়া ওয়ার্কস
  • অভিনয়: শুভজিত, তনুশ্রী, জ্যামি এবং অন্যান্য সাবলীল শিল্পীরা।
  • সময়: ১ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট

নূপুর রনদীপ সরকারের অন্য ঘরনারা ছবি। দুই মূক চরিত্রকে কেন্দ্র করে ভালোবাসার এক কাব্যিক যাত্রা নূপুর। ১৯৭০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে পুরুলিয়ায় গল্পটিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। গল্পের প্রধান চরিত্র নূপুর এবং বংশী বাল্যকাল থেকেই বোবা। কিন্তু ভাষা শুধু কি মুখেই ফোটে? নূপুর আর বংশীর ক্ষেত্রে তা একেবারেই নয়। এখানে তাদের না বলা কথাগুলোই সিনেমার ভাষা। বিশেষ করে শুভদীপের সিনেমাটোগ্রাফি। সঙ্গে সৌর ঘটকের দুর্দান্ত আবহসঙ্গিত। এই দুইয়ে মিলেই সিনেমার এক আলাদা ভাষা তৈরি হয়েছে। পুরুলিয়াকে যেভাবে দেখানো হয়েছে তা অনবদ্য। সঙ্গে উপযুক্ত আবহসঙ্গিত দর্শককে সিনেমার সাথে মিলিয়ে দেবে অবশ্যই। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে বলা কবিতাগুলো যথাযথভাবেই নূপুর বংশীর মধ্যে কাব্যিক প্রেমটাকে তুলে ধরে।

কিন্তু সিনেমার এই গুণগুলোই কিছুক্ষণ পর খোঁচা দিতে শুরু করে। পুরুলিয়া অবশ্যই ভালো লাগে, কিন্তু কতক্ষণ শুধু পুরুলিয়া ভালো লাগবে, এটা তো আর পুরুলিয়ার ওপর তথ্যচিত্র নয়। তাছাড়া সিনেমার পর্দায় রাতের দৃশ্যগুলো খুবই অন্ধকার লাগে। সিনেমার এডিটিং খুব সুন্দর কিন্তু রাতের দৃশ্য থেকে দিনের পরিবর্তন চোখে লেগেছে। এক্ষেত্রে সিনেমাটোগ্রাফারকে আরও যত্নবান হওয়া উচিত ছিল। আবার খুব বেশিক্ষণ কবিতাগুলোও দর্শকের কানে বিরক্তিকর লাগতে পারে, কারণ যতই হোক এটা কবিতার মিউজিক ভিডিও নয়, আসলে সিনেমাই। কোথাও কোথাও সিনেমায় যেন এই ব্যালান্সটা হারিয়ে যায়। কখনও সিনেমাটা কবিতা, কখনও বা পুরুলিয়ার ওপর দারুণ তথ্যচিত্র হয়ে ওঠে। আবার কখনও শুধুমাত্র বংশী নূপুরের প্রেম বিনা কারণেই দীর্ঘায়িত হতে থাকে। অবশ্যই সিনেমাটার কেন্দ্রবিন্দু বংশী-নূপুরের নিঃস্বার্থ প্লেটোনিক ভালবাসা। কিন্তু চিত্রনাট্যে সেই জায়গাটা গুরুত্ব দিতে গিয়ে বোধয় অন্য জায়গা-গুলো একটু কম গুরুত্ব পেয়েছে। নূপুরের বাবার হঠাৎ মারা যাওয়া বা নূপুরের হঠাৎ ব্যাধির পেছনের যৌক্তিকতা বুঝে উঠতে পারিনি।

তবে গল্পের যে চরিত্র এবং জায়গাটা খুব শক্তিশালী, তা হল রঘু। আলোর পাশাপাশি যেমন অন্ধকারের অবস্থান, তেমনই ভালোবাসার পাশাপাশিও অবস্থান রাগ-লোভ-লালসার। রঘু গল্পের সেই দিক। যেটুকু সময় সে ছিল তার সবটুকু নাড়া দেবে দর্শককে। কিন্তু খুব ছোট যেন তার পরিধি, গল্পে তার দরকার ছিল আরও। রঘুর চরিত্রে জ্যামি দারুণ অভিনয় করেছে। ভালো অভিনয় করেছে নূপুরের চরিত্রে তনুশ্রী। তবে কোথাও কোথাও তার অভিনয় অতিনাটকীয়তা সৃষ্টি করেছে। ভালো অভিনয় করেছে বংশীর চরিত্রে শুভজিতও। কিন্তু যে কাব্যিক ব্যাপ্তি তার চরিত্রে আশা করেছিলাম, সেটা যেন ফুটে ওঠেনি। তবে সেটা অভিনেতার দোষ না চিত্রনাট্যের সে নিয়ে এই লেখা দীর্ঘায়িত করছি না। সব মিলিয়ে এক অন্য ঘরানার ছবি করতে চেয়েছেন পরিচালক রনদীপ সরকার, তার এই চেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।