লেখক : শিখা চক্রবর্তী
আমরা হলাম জাত বাঙালি
সর্বশ্রেষ্ঠ সবার সেরা
তুলনায় তো নস্যি সবাই
এই সীমানার বাইরে যারা
হিন্দুস্থানী, খোটটা মেড়ো
ওরা হ’ল অশিক্ষিত
টক খেকো, আর কালো রঙের
দক্ষিণীরা অনার্য তো!
মঠ মন্দির আছে সেথায়
লোকেও দেখি যায় বেড়াতে
কি যুক্তিতে হোথায় যাওয়া
মন্দির নেই এ বাংলাতে?
কে মারাঠি, কে গুজরাটি
কি হবে তার খবর জেনে?
ব্যবসা করে নাম যে কামায়
মাথায় তাকে তুলবো টেনে?
পাঞ্জাবীদের চাঙ্গা শরীর
তাই তো তারা আর্মিতে যায়
বাঙালিরা বোদ্ধার জাত
যুদ্ধটা কি তাদের মানায়?
কাশ্মীরিদের আপেল খাসা
শালওলারাও নয় তো কালো
দেশটা দূরের, গন্ডগোলের
তাই তো ওদের ভোলাই ভালো
হিমা চলে যায় বাঙালি
অনেক নাকি পাহাড় আছে
রকম দেখে গা জ্বলে যায়
পাহাড় কি নেই মোদের কাছে?
ইউপি, এমপি, রাজস্থানি
একই রকম ধরন ধারণ
ছোলা, ম ট র আর ঘুগনি
মুখে শুধুই হিন্দি বচন
আসাম আর ওই উড়িষ্যাতে
কামাখ্যা আর পুরী আছে
তাছাড়া আর আছেটা কি
শিখবো বা কি ওদের কাছে?
নর্থ ইস্ট এর রাজ্যগুলো
শুনেছি তার রাস্তা ভীষণ
পাহাড় ঘেরা ঝোপ জঙ্গল
যাবার সেথায় কি প্রয়োজন?
এছাড়া আর আছে যারা
আনকালচার্ড অনুন্নত
না জানলেও তাদের চলে
থাক না তারা তাদের মতো
ভাবলাম তাই বাংলা যখন
সব ব্যাপারেই এগিয়ে আছে
নামটা ভারত রাখবো কেন
ভারত এবার বাংলা হবে
বিশ্বাস না হলে এটা
দেখো একটু টিভি খুলে
টিভির চ্যানেল বলবে তোমায়
বাংলা কতো আলোয় জ্বলে
আর এক খানা আছে কথা
বলতে হবে খুব গোপনে
শুনলে কিন্তু বাংলা আমায়
পাঠিয়ে দেবে নির্বাসনে
যাদের গালি দেয় বাঙালি
তারা মোদের কেমন ভাবে
সেই কথাটাও বলতে পারি
শুনলে তা কি হজম হবে?
“বঙ্গাল হ্যায় কাঙ্গালো কা
কাঙ্গাল হি হ্যায় ইয়ে বঙ্গালি
মুফত মে মাঙে, মুহ মে ভাষণ
পেটু হ্যায় অর্ সব কো গালি
খুদ কো সোচে সব সে চালাক
বাকি লোগ কৌন ক্ষেত কি মুলি”
প্রবাস কালের শোনা এসব
আজও যখন করি স্মরণ
ইচ্ছে করে প্রশ্ন করি
বাংলা কেন হলো এমন??
দয়া পাঠক আমায় ভুল বুঝবেন না। আমি কিন্তু বাঙালি বিদ্বেষ থেকে এসব বলিনি। আমি নিজে একজন গর্বিত বাঙালি, কিন্তু অনেক কষ্টের থেকে এই কথাগুলো বলেছি। যা লিখেছি তা অভিজ্ঞতার থেকেই লিখেছি। একশ্রেণীর মানুষের ভুল চিন্তাভাবনার থেকে আজ আমাদের নামে বাইরে কত রকম ধারণা তৈরি হয়েছে। এটা বড়ো পীড়া দায়ক
লেখক পরিচিতি : শিখা চক্রবর্তী
হাউস ওয়াইফ- নানা ধরনের লেখা পড়তে এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে দেখতে ভালো লাগে। প্রিয় বই তো অনেক। তার মধ্যে মহাভারত একনম্বরে। এছাড়া বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, কালকূট খুবই পছন্দের। নির্মল বুদ্ধি যুক্ত হাস্যরস খুব আকর্ষক লাগে তাই সুকুমার রায় খুব পছন্দের। উপেন্দ্রকিশোর এবং সত্যজিৎ রায় তো আছেনই। সত্যি বলতে আরো কত নাম যে ভালো লাগার লিস্টে আছে তা বলে শেষকরা যাবে না। কবিতার চেয়ে ছড়া একটু বেশিই টানে এবং তাই মাঝে মাঝে একটু চেষ্টা করা হয় আর কি।