কৃষ্ণগত প্রাণ: তৃতীয় পর্ব

লেখক: মিত্রা হাজরা

কৃষ্ণগত প্রাণ: দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

একবার দ্বারকা থেকে শ্রীকৃষ্ণের জ্ঞাতিভাই উদ্ধব এসেছেন শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন করতে। উদ্ধব ছিলেন বসুদেবের ভাই এর ছেলে। এনার দেহসৌষ্ঠব প্রায় শ্রীকৃষ্ণেরই মতো। ইনিও শ্যাম বর্ণ, পরতেন পীতবসন। দুজনে একই গুরুর কাছে বিদ্যা শিক্ষা করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে পেয়ে তো খুব খুশি, বললেন, “আজ সারারাত দুজনে গল্প করবো।”
বাল্যবয়সের নানা কাহিনীর স্মৃতিচারণ করে দুজনে মহা আনন্দ করলেন। শ্রীকৃষ্ণ এখন উদ্ধবকে বলছেন, “মিত্র আমার একটা কাজ তোমাকে করে দিতে হবে।”
উদ্ধব জিজ্ঞাসা করলেন, “কী কাজ, তোমার যেকোনো কার্য করতে পারলে আমি ধন্য হয়ে যাবো।”

শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে গোকুলে পাঠাতে চান, বললেন, “নন্দ মহারাজ, যশোদা মা, বৃন্দাবনের গোপ গোপিনীরা সব কেমন আছেন, তোমাকে দেখে আসতে হবে। আর আমার খবরও দিতে হবে ওনাদের।” আপাতদৃষ্টিতে দূরে অবস্থান করলেও শ্রীকৃষ্ণ যে বৃন্দাবনবাসীদের থেকে দূরে নেই সে খবরটা জানাতে চাইলেন তাঁদের। বললেন, “কৃষ্ণ বিরহে ব্রজাঙ্গনারা সব সময়ই বিভোর থাকেন, তাঁরা অতিশয় কাতর হয়ে আছেন। আমার বার্তা পেলে তাঁদের বেদনার আংশিক উপশম হবে। দেহ, মন, অভিলাষ, জীবন, প্রাণ সব কিছু তাঁরা আমাতে উৎসর্গ করেছেন। শুধু তাদের কথা নয়, যেকেহ নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, ভালোবাসা, সব কিছু যদি আমাতে সমর্পণ করে, আমিও সর্বদা তাদের সাথেই থাকি, তাদের রক্ষা করি।”

শ্রীকৃষ্ণের অনুরোধে উদ্ধব অচিরেই রথারোহণে মথুরা ত্যাগ করে গোকুলে বার্তা নিয়ে চললেন। সূর্য তখন দিগন্তে অস্তমিত। উদ্ধব বৃন্দাবনে পৌঁছলেন। গোচারণভূমি থেকে গাভীরা তখন গৃহে ফিরছে। উদ্ধব ও তার রথ গাভীদের ক্ষুরের ধূলায় রঞ্জিত হয়ে গেল। তিনি দেখলেন সমগ্র ব্রজভূমি গাভী বৎসাদি সহ গোধনে পরিপূর্ণ। দেবতা, ব্রাহ্মণ, গাভী ও অতিথিদের স্বাগত অভ্যর্থনা জানানোর উদ্দেশ্যে অগ্নি ও সূর্যদেবের উপাসনার জন্য বৃন্দাবনের প্রতি বাসগৃহ সুসজ্জিত করা হয়েছে। পবিত্রকরণের জন্য প্রতি গৃহে সুগন্ধী পুষ্প, ধূপ, দীপ দ্বারা আলোকিত করা হয়েছে। সমগ্র বৃন্দাবন অফুরন্ত ফুলমালা, পত্র-পুষ্প, উড়ন্ত পক্ষীকূল, ভ্রমরের গুঞ্জন ধ্বনিতে পরিপূর্ণ।

যখন নন্দমহারাজের প্রাসাদে উদ্ধব প্রবেশ করলেন তখন শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধিরূপে তাঁকে স্বাগত জানানো হলো। ধূপ, দীপ, পুষ্পমাল্যে অভ্যর্থনা করা হলো। নন্দমহারাজ তাঁকে গাঢ় আলিঙ্গন করলেন, নিজের কাছে আসনে বসালেন, মধু ও শীতল পানীয় দিয়ে তাঁর আদর সৎকার করলেন।
এখন তিনি উদ্ধবের কাছে শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম, ও মথুরাস্থিত পরিবারের সকলের কুশল মঙ্গল জানতে চাইলেন। নন্দমহারাজ জানতেন, উদ্ধব হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গ সুহৃদ। সে মঙ্গলপ্রদ বাণী নিয়ে উপস্থিত হয়েছে গোকুলে। বললেন, “বল উদ্ধব, আমার কৃষ্ণ কি তার পিতামাতা, সখা ও ব্রজের সঙ্গীদের স্মরণ করে? তার প্রিয় গাভী, গোচারণভূমি, গিরি গোবর্ধন এর কথা মনে করে? সে কি কখনো তার প্রিয় বৃন্দাবনকে দেখতে আর আসবে না!”


(চলবে)


লেখকের কথা: মিত্রা হাজরা
আমি মিত্রা, লেখালেখি করতে ভালোবাসি, কবিতা, ছোটগল্প লিখি মাঝে মাঝে। বই পড়তে ও গান শুনতে ভালোবাসি। পড়ি শংকর এর লেখা, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর লেখা, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প আমার খুব প্রিয়। জীবনানন্দ দাশ, রুদ্রমুহম্মদ শহিদুল্লা, সুনীল, বিষ্ণু দে এর কবিতা পড়তে ভালোবাসি। আমার লেখা পড়ে আপনাদের ভালো লাগলে বা খারাপ লাগলে অবশ্যই জানাবেন।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।