শ্রীমন্তবাবুর অবস্থা

লেখক : সুবীর মজুমদার

ভোরবেলায় মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছি। বেরোনোর সময়ে চারিদিকে অন্ধকার ছিল। বেরোনোর কোন ইচ্ছেও ছিল না। তবু ঘুম কামাই দিয়ে কষ্ট করে বের হলাম। কারণটা আর কিছুই নয়। ইদানিং ডাক্তারী রিপোর্টে আমার ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। ডাক্তারবাবু গুরুগম্ভীর গলায় বলেছেন, “খুব খারাপ রোগ। একবার যার বাধে, সহজে নিস্তার দেয় না। এখন আপনাকে খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল তো করতে হবেই; উপরন্তু নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে হবে। গায়ের চর্বি ঝরিয়ে ফেলুন। ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখার মূল মন্ত্রই হ’ল, নিজেকে ফিট রাখতে পারা।”
তো তিনি এক ফিরিস্তি পথ্য, এক্সারসাইজ আর ওষুধের চার্ট তৈরি করে দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হ’ল, এই মর্নিং ওয়াক। তাও আবার রোদ ওঠার আগেই সেরে ফেলতে হবে। তাই আমার এই সকাল-সকাল ওঠা।

ঘন্টা খানেক ঘাম ঝরিয়ে ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত দেহে গুটিগুটি পায়ে বাড়ি ফিরছি। পথে প্রতিবেশী শ্রীমন্ত বাবুর সাথে দেখা হ’ল। ভদ্রলোক বোধহয় আমার মতনই মর্নিং ওয়াক সেরে ঘরে ফিরছেন, কারণ ওনার গায়ের সাথে সেঁটে থাকা গেঞ্জিটা সেই ইঙ্গিতই করছে। বলতে নেই, ভদ্রলোকের যা নাদুসনুদুস চেহারা তাতে অনেক দিন আগেই মর্নিং ওয়াকের অভ্যাস করা উচিত ছিল। ওনাকে দেখে হাসি-হাসি মুখে বললাম, “নমস্কার দাদা, মর্নিং ওয়াকে?”
ওনাকে দেখে কিন্তু খুব একটা প্রসন্ন মনে হ’ল না। জোর করে মুখে হাসি এনে উনি বললেন, “হ্যাঁ, মর্নিং ওয়াকই। আপনি?”
-“আমিও তা-ই। এখন ফিরছি। সেই পাঁচটা পনেরোতে বেরিয়েছিলাম।”
-“তা বেশ-বেশ। এদিকে আমার যা অবস্থা!!”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “কেন, কী হয়েছে?!”
কথা বলতে-বলতে ভদ্রলোক ঈষৎ বায়ুত্যাগ করছিলেন। বুঝি, সকাল-সকাল পেট ক্লিয়ার না হওয়ায় তার এই অবস্থা! আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল।
উনি দুঃখী-দুঃখী ভাব করে বললেন, “সব ঐ নেটওয়ার্কের দোষ। কোন কথা ঠিক মতন শোনার জো নেই!”
-“হ্যাঁ, তা ঠিক। আজকালকার নেটওয়ার্কের যা অবস্থা! কথা বলার আগেই কল কেটে যাচ্ছে, ড্রপ হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময়ে কথা বলা যাচ্ছে, কিন্তু উল্টো দিকের লোক কিছু শুনতে পাচ্ছে না! যা-তা অবস্থা! প্রশাসন কানে তুলো গুঁজে, চোখে ঠুলি এঁটে বসে আছে!”
একটু থেমে বললাম, “তা আপনার প্রবলেমটা?!”
বুঝতে পারলাম, ভদ্রলোক খুবই অস্বস্তিতে আছেন, কারণ ওনার পিছন দিক থেকে সমানে বায়ুনির্গত হচ্ছে। তবু কষ্ট করে বললেন, “আর বলবেন না! ফোনে ডাক্তার বাবু রোগা হওয়ার ওষুধ হিসেবে সকাল-সন্ধ্যা ‘কোল্ড কফি’ খেতে বলেছিলেন। তা কল ড্রপের কারণে মনে হ’ল যেন শুনলাম, ‘ওল কপি’। তাই বাজার থেকে যত ওল কপি পেলাম, তুলে নিয়ে এলাম। প্রথম দিকে বাটি ভর্তি করে ওল কপি সিদ্ধ সকাল-সন্ধ্যা খেতাম। কাজ হচ্ছে না দেখে গিন্নী দিনে চারবার করে ওল কপি খাওয়াতে শুরু করল। সকালে ওল কপি, দুপুরে ওল কপি…খেতে-খেতে পেটে গ্যাসের কারখানা হয়ে গেল! পরে ভুল বুঝতে পারলাম। কিন্তু ততক্ষণে পেটের অবস্থা খারাপ!…এই!!”

প্রচন্ড একটা আওয়াজের সাথে ভদ্রলোক নিজের পিছনে হাত চাপতে-চাপতে বাড়ির দিকে প্রায় দৌড় লাগালেন। বুঝলাম, ওনার শব্দকারক বস্তু বুঝি বাইরে আসতে উদ্যত হয়েছে! যাইহোক, ওনার বাড়ি হাত দশেকের মধ্যেই। তাই কেলেঙ্কারির হাত থেকে ভদ্রলোক হয়তো বেঁচে যাবেন। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাবতে লাগলাম, ভুলভাল শোনার ফল কী মারাত্মক হতে পারে!


লেখক পরিচিতি : সুবীর মজুমদার
পেশায় ট্রেন ইন-চার্জ হলেও নেশায় আমি একজন লেখক। ইতোমধ্যে আমার লেখা বিভিন্ন পত্রিকা ও গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে একটি রম্যরচনা জমা করলুম।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।