সিনেমা রিভিউ: অ্যাবি সেন

লেখক : রুবাই শুভজিৎ ঘোষ

  • সিনেমার নাম: অ্যাবি সেন
  • পরিচালনা: অতনু ঘোষ
  • প্রযোজনা: ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন
  • অভিনয়: আবীর চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেন, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী এবং অন্যান্য সাবলীল শিল্পীরা।
  • সময়: ২ ঘণ্টা ৭ মিনিট
অতনু ঘোষ পরিচালিত ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমা- অ্যাবি সেন। সিনেমার ভিত্তি কল্পবিজ্ঞান- যা নিয়ে বাংলায় খুব কমই কাজ হয়েছে। কারণটাও স্বাভাবিক। বাংলার কল্পবিজ্ঞানের দর্শক অনেক কম। তবে কল্পবিজ্ঞান বলতেই চোখের সামনে যেরকম ভেসে ওঠে গ্রাফিক্স, রোবট, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি- এখানে এসব কিছু নেই। নেই অত্যাধুনিক সাজে সজ্জিত এক নায়ক, যার শত্রু হয়তো অন্য মহাবিশ্বে, অথবা যে কোনও একটা কারণে চলে এসেছে অন্য জগতে। বরং সে আমার আপনার মতই এক সাধারণ বাঙালী, তার সমস্যাগুলোও আপনি চোখ খুললেই দেখতে পাবেন আপনার পাশের বাড়িতে, ফ্ল্যাটে অথবা বাস-ট্রামে আপনার পাশের সিটে বসা একজন মানুষের মধ্যে। কল্পবিজ্ঞান বলতে আরেকটা কথাও অনেকের মনে হতে পারে – বিজ্ঞানের বিশাল জ্ঞানের কচকচানি। এখানে সেটাও নেই। খুব সুন্দর সহজ ভাবে টাইম ট্রাভেল বিষয়টাকে দেখানো হয়েছে।
 
অ্যাবি সেন, ভাল নাম অভিরূপ, একজন টিভি প্রোডিউসার। খুব মেধাবী হলেও আর পাঁচজনের মত নিখাদ এন্টারটেনমেন্ট নিয়ে টিভি শো না করতে পারায় তার শো গুলো সেইভাবে চলে না। আর এভাবেই পরপর সে হারাতে থাকে তার চাকরি। প্রতিবারই চাকরি হারানোর পর ঘরে অশান্তি করে তার স্ত্রী। সে বাড়ির সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করে আর স্বামীকে বলে, ‘‘চিন্তা কোরো না। আমার মনে আছে কোন দোকান থেকে কোনটা কিনেছি। তুমি নতুন চাকরি পেলেই আমরা আবার সব কিনে নেব!’’ তার স্ত্রীর চরিত্রে অরুণিমা বেশ সাবলীল।
 
ঘটনাচক্রে একজন বিজ্ঞানী তখন বিজ্ঞানের একটি জটিল রহস্যভেদ করে ফেলেছেন। টাইম ট্রাভেল। মানুষ যেভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করতে পারে, সেভাবেই এক সময় বা এক যুগ থেকে অন্য যুগে যাতায়াত কে সম্ভব করে তুলেছেন সেই বিজ্ঞানী,যার ভূমিয়ায় চিরঞ্জীত সত্যিই অসাধারণ। চরিত্রটি সেইভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। এইখানে গল্পে একটি বিশেষ মৌলিকত্ব আছে। কোনো যন্ত্রে চেপে বা গাড়িতে চেপে টাইম ট্রাভেল করা হয়নি এখানে। বদলে ক্যাপসুল খেয়ে শুয়ে পড়তে হয়। ঘুম ভাঙে কাঙ্খিত অতীতে বা ভবিষ্যতে। অ্যাবি সেনও বিজ্ঞানীর থেকে অতীতে যাবার একটি ক্যাপসুল নিয়ে চলে আসে তেত্রিশ বছর আগের সময়ে। আর তারপরেই শুরু হয় আসল গল্প।
 
অ্যাবি পালাতে চাইত। বাস্তব থেকে পালাতে চেয়ে এই তেত্রিশ বছর আগের সময়টা যেন স্বপ্ন লাগে তার কাছে। তার ভালো লাগে সেই সময়টা। তার সাথে আলাপ হয় পরমার। পরমা তাকে গানের সুরে ভরিয়ে রাখে। তার মধ্যে এক রূপকথা খুঁজে পায় অ্যাবি। সেই সময়টা ছেড়ে আসতে চায়না সে। কিন্তু স্বপ্ন দেখলেও ঘুম যে ভাঙতেই হয়। অ্যাবি কেও ফিরে আসতে হয় তার আসল বাস্তবে, বর্তমানে তার স্ত্রীর কাছে।
 
অতীতের সময়টা দেখতে দেখতে আমরাও কেমন যেন নস্টালজিক হয়ে পড়ি। অতীতের সময় গুলো ধীরে চলতে থাকে। আমাদেরও অ্যাবির মত মনে হয় না ফিরলেই বোধয় ভালো হয়। কিন্তু অতীতের কি সবই ভালো? সেখানেও তো চাকরির জায়গায় অ্যাবির সাথে নোংরা রাজনীতি হয়।  সেখানেও তো কারখানা লক আউটে থেকে থেকে শ্রমিকের হরতাল হয়।
 
তেত্রিশ বছর আগের সময়টাকে বেশ ভালভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। রাইমা, প্রিয়াঙ্কা, ব্রাত্য, কাঞ্চন প্রত্যেকেই তাদের চরিত্রগুলো জীবন্ত করে তুলেছেন। অ্যাবি সেনের ভূমিকায় আবীরের অভিনয় অসামান্য। ক্যামেরার কাজ অবশ্যই প্রশংসনীয়। এডিটিং নিঁখুত। মিউজিকে জয় সরকার খুবই সুন্দর। সময় পাল্টানোর সাথে সাথে মিউজিককেও সেভাবেই পাল্টেছেন তিনি। বলা যেতে পারে মিউজিক এই ছবির অন্যতম স্তম্ভ।  সবকিছু মিলিয়ে বাংলা দর্শককে এক নতুন মাপের সিনেমা উপহার দিয়েছেন অতনু ঘোষ।

লেখক পরিচিতি : রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।