লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
- ওয়েব সিরিজের বর্ণনা: ফেলুদা ফেরত সিজন ১ – ছিন্নমস্তার অভিশাপ
- পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
- প্রযোজনা: নিসপাল সিং রানে, রাজীব মেহেরা, শাহরিয়র শাকিল
- অভিনয়: টোটা রায় চৌধুরী, অনির্বাণ সেনগুপ্ত, কল্পন মিত্র, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, ঋষি কৌশিক এবং অন্যান্য সাবলীল শিল্পীরা।
- সময়: ছয়টি পর্ব বা এপিসোড। প্রতিটি পর্বের সময়সীমা ২৫ মিনিট
সত্যজিৎ রায়ের জনপ্রিয় চরিত্র ফেলুদার উপর সৃজিত মুখোপাধ্যায় নির্মিত ওয়েব সিরিজ ফেলুদা ফেরত । ফেলুদা চরিত্রে প্রথমবার অভিনয় করছেন টোটা রায় চৌধুরী। লালমোহন গাঙ্গুলি চরিত্রে অনির্বান সেনগুপ্ত এবং তোপসের চরিত্রে দেখা যাবে কল্পন মিত্রকে। প্রথম সিজনটি ফেলুদার কাহিনী “ছিন্নমস্তার অভিশাপ” অবলম্বনে নির্মিত। কাহিনী নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। ছবির গল্প মোটামুটি সব বাঙালিরই জানার কথা। সৃজিতও তাঁর চিত্রনাট্যে মূল গল্পকে মোটামুটি অক্ষতই রেখেছেন।
চিত্রনাট্য সুন্দরভাবেই লেখা। তবে একেবারে নিখুঁত নয়। আর বাঙালির আবেগ ফেলুদাকে নিয়ে যখন সিরিজ, তখন বাঙালি খুঁত খুঁজবেই। তাই অতশত খুঁত খুঁজছে যাচ্ছি না। তবে যেটা চোখে লেগেছে সেটা হল জটায়ু আর ফেলুদার বন্ধুত্বে এখানে যেন জটায়ু সবসময় ফেলুদাকে ভয় পান আর ফেলুদাও সুযোগ পেলেই জটায়ুকে নিয়ে টিপ্পনী কাটেন। ক্লাইম্যাক্স এর একটি দৃশ্যে ফেলুদা যেভাবে জটায়ুকে বকা দেয়, সেটা ব্যক্তিগতভাবে খুবই খারাপ লেগেছে আমার। তবে একইসাথে চিত্রনাট্যে বেশ কিছু ডায়লগ মনে করিয়ে দেবে এটা সৃজিতের চিত্রনাট্য। যা আমার ভালো লেগেছে।
সম্পাদনা সুন্দর। কোনো দৃশ্যকেই বাড়তি বলে মনে হয়নি বা জুলফিকরের মত দৃশ্যগুলো খুব কম দৈর্ঘ্যেরও মনে হয়নি। গল্প বলার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু করেছেন। সিনেমাটা যে সময়ের সেই সময়কে ফুটিয়ে তুলতে কালারটাও বেশ মানানসই। যখন ফেলুদা চরিত্রগুলোকে নিয়ে ভাবছিলেন, স্ক্রিনে তাদের ফুটে ওঠা অনেকটা দ্য ভিঞ্চি কোড সিনেমার পুরনো দৃশ্যগুলোর মত। যেটা দর্শকের জন্য খুব সুবিধার। প্রতিটা পর্ব একেবারে ঠিক জায়গাতেই শেষ হয়েছে, যাতে পরের পর্বের জন্য মুখিয়ে থাকে দর্শক। সিনেমাটোগ্রাফি অবশ্যই ভালো। গল্প বলার সাথে তাল মিলিয়েই সিনেমাটোগ্রাফি করা হয়েছে। ভি এফ এক্সে হতাশ হইনি কারণ আগে থেকেই এইরকম আশা করে রেখেছিলাম, এর থেকে বেশি ভালো হলে সেটা উপরিপাওনা হত।
জয় সরকারের আবহ সঙ্গীত সুন্দর। তবে ফেলুদার থিম মিউজিক অবশ্যই মিস করছি। আসলে ফেলুদাই হোক বা জেমস বন্ড, বই থেকে পর্দায় এলেই থিম মিউজিক সেখানে অনেকটা ভূমিকা পালন করে। তবে পুরনো ফেলুদা কিছুক্ষণ ভুলে থাকলে এই সময়ে ফেলুদার নতুন সূচনা হিসাবে এই আবহ সঙ্গীত ভালোই লাগবে। গল্প বলার সাথে তাল মিলিয়েই সেই আবহ সঙ্গীত এগিয়েছে।
এবার আসি চরিত্রগুলোর কথায়। চরিত্রগুলোর লুক বইয়ের পাতার সাথে বেশ মিলেছে। বিশেষ করে ফেলুদা আর জটায়ু। সেইটাই এই সিরিজের বড় পাওয়া। সেই দিক থেকে দেখলে নতুন ফেলুদা আমরা পেয়েছি বলা যায়। নাহলে সব্যসাচীর পর কাউকেই সেই অর্থে ফেলুদা মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সে আবীর হোক বা পরমব্রত। তবে ফেলুদার লুক টোটার সাথে মিললেও অভিনয়ে প্রথম কয়েকটা পর্বে তিনি খুব কষ্ট করেই নিজেকে ফেলুদা করে তুলছেন যেন। পরের পর্বগুলোতে সাবলীলতা ফিরে এলেও এখনও অনেকটা পথ বাকি। আগামী সিজনে আশা করব তিনি সেটা পুষিয়ে দেবেন। বরঞ্চ জটায়ুর চরিত্রে অনির্বাণ সত্যিই দারুণ অভিনয় করেছেন। নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে অত্যন্ত সাবলীলভাবে চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। সন্তোষ দত্তের পরেই নিঃসন্দেহে জটায়ু হিসাবে অনির্বাণ একটি বড় পাওনা। অন্যান্য চরিত্রদের মাঝে ধৃতিমান চ্যাটার্জির কথা আলাদা করে বলতেই হয়। খুব সুন্দর ভাবে গল্পের চরিত্রটিকে জীবিত করেছেন তিনি।
সবদিক থেকেই পরিচালক এবং সমস্ত কলাকুশলীরাই চেষ্টা করেছেন সমস্ত ডিটেলিং এর দিকে নজর রাখতে। লালমোহন বাবুর সবুজ অ্যাম্বাসেডর গাড়িটি নস্টালজিক করে তুলেছে। সবদিক থেকেই চেষ্টা করা হয়েছে যাতে বইয়ের আবেগটা এতে ধরে রাখা যায় এবং সেটা হয়েওছে। নিঃসন্দেহে ২০২০ সালে বড়দিনে এটা বাঙালির বড় পাওয়া।
লেখকের কথা: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।
ভালো লাগলো রিভিউ