সিনেমা রিভিউ: ইয়েতি অভিযান

লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ

  • সিনেমার নাম: ইয়েতি অভিযান
  • পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
  • প্রযোজনা: এসভিএফ এন্টারটেনমেন্ট
  • অভিনয়: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, আরিয়ান ভৌমিক এবং অন্যান্য সাবলীল শিল্পীরা।
  • সময়: ২ ঘণ্টা ৮ মিনিট

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক” গল্প অবলম্বনে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সিনেমা, ইয়েতি অভিযান। মিশর রহস্যের পর কাকাবাবু নিয়ে  এটি তার দ্বিতীয় ছবি। গত দুবছর তার দুটো গুরুগম্ভীর ছবির পর এবছর সপরিবারের দেখার মত একটি ছবি তিনি উপহার দিয়েছেন আমাদের। অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে এইসময়ে বাংলায় সে অর্থে ছবি কিন্তু অনেক কম। গোয়েন্দা গল্প নিয়েও ছবি যেমন ব্যোমকেশ বা ফেলুদা প্রতি যুগেই হচ্ছে, কিন্তু সেদিক থেকে দেখতে গেলে কাকাবাবু এই প্রজন্মের কাছে অনেকটাই অচেনা। এর আগে কাকাবাবু নিয়ে শেষ ছবি বছর সতেরো আগে। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে কাকাবাবুকে আবার বড়পর্দায় এনে সৃজিত বাঙালি একটি চরিত্রকে আবার বাঙালীর মনে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন।
প্রথমে আসি সিনেমার গল্পের ব্যাপারে। মূল গল্পটিকে প্রায় সেভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক আমাদের কাছে। কাকাবাবুর জন্য বাঙালীর যে আবেগ, সেই আবেগকে তিনি তার সিনেমার মাধ্যমে ছুঁয়ে গেছেন। সঙ্গে তার নিজস্ব কিছু পরিবর্তন যা অবশ্যই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এবং সিনেমার প্রয়োজনে। এবং পুজোয় কাকাবাবুকে দেখা অনেকটা সেই ছোটবেলায় পূজাবার্ষিকীতে কাকাবাবু পড়ার মত। কিন্তু সেই যে পুরনো নস্টালজিয়াকে আমাদের মনে প্রতিষ্ঠা করা, সেটা করা অতটাও সোজা নয়। কিন্তু পরিচালক এবং তার টিম যথার্থ ভাবে করতে পেরেছে সেটা। নিখুঁত অভিনয় এবং মেক-আপ, দুর্দান্ত এডিটিং এবং গ্রাফিক্স, মানানসই গান এবং আবহসঙ্গীত, সব মিলিয়ে সেই মিশর রহস্য থেকেই সেই নস্টালজিয়া ব্যাপারটা আমাদের মনে গেঁথে দিয়েছেন সিনেমার মধ্যে দিয়ে। বিশেষ করে নাম দেখানোর যে অ্যানিমেশন বানানো হয়েছে সেই মিশর রহস্য থেকে, সেটা আমার কাছে যেন পূজাবার্ষিকীর পাতা।
কারও অভিনয় নিয়ে কিছুই বলার নেই। বিশেষ করে বুম্বাদা এবং যীশু সেনগুপ্ত সৃজিতের সিনেমাতে প্রতিবারই অন্যরকম চরিত্রে দারুণ অভিনয় করে গেছে। এবারেও তার ভিন্ন নয়। সৃজিতের সিনেমার আরও একটা ব্যাপার থাকে সেটা হল গান।তবে সেই সিনেমায় অযথা গান দিয়ে সিনেমাটা দীর্ঘায়িত করেন নি তিনি, যেখানে যেখানে গান দেওয়া যেতে পারে শুধুমাত্র সেখানেই গানের ব্যাবহার করা হয়েছে। মিশর রহস্যের থেকে এই সিনেমাতে গানের সংখ্যা খুব কম এবং যে কটি গান আছে তা খুবই মানানসই। গ্রাফিক্স, এডিটিং এবং সিনেমাটোগ্রাফি আলাদা করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। গল্পের প্রয়োজনে যেরকম দরকার ঠিক সেইরকমই। বিদেশে শুটিং এর আগেও হয়েছে। প্রায় সব বাংলা নাচেই আজাকাল বিদেশে গিয়ে শুট হয়ে থাকে, যেটা না হলেও গল্পের কোনও ক্ষতি হয় না।  কিন্তু সত্যিকারের গল্পের স্বার্থে বিদেশ যাওয়া বোধয় খুব কম। এই সিনেমাটি তার ব্যতিক্রম। গল্পের প্রয়োজনে এখানে বাইরে শুটিং যেমন হয়েছে, তেমনই যখন কাকাবাবুকে দেখি সেই সারা তুষারে ঢাকা বরফের মধ্যে দিয়ে, তখন আমাদের সেই রোমাঞ্চকর ছেলেবেলা জেগে ওঠে।
তবে খুঁত অবশ্যই আছে। চিত্রনাট্যেই আছে অনেক খুঁত। বিশেষ করে কাকাবাবুর সাহস যেন অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে বারবার। পাঁচ দিন না খাওয়া এবং সন্তুর অত জ্বরের পরও অত ভিলেনের সাথে লড়ার যে শক্তি, তা শুধু সিনেমাতেই বোধয় সম্ভব। চাইলে আপনি আরো খুঁত বার করতে পারেন। কিন্তু সিনেমা যেহেতু এডভেঞ্চারের, তাই সব সময়েই যুক্তি সাজিয়ে দেখতে নাও যাওয়া যেতে পারে। সিনেমা নিয়ে যারা রিভিউ লেখেন, তারা অনায়াসে এখানে আরো খুঁত খুঁজে বার করতে পারেন। কিন্তু আমি জেমস বন্ডের সিনেমা দেখতে বসলেও এই যুক্তি খুঁজি না, কাকাবাবুতেও খুঁজতে যাই নি। পাঠক তার জন্য আমায় ক্ষমা করবেন।
সবশেষে আসি কাকাবাবুর মধ্যে দিয়ে ফোটানো বাঙালী হওয়ার যে গর্ব। কাকাবাবুর কথায়, ব্যক্তিত্বে পরিচালক সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই বাঙালী হিসাবে এই সিনেমাটা বাঙালীর সেই অহংকারকে তুলে ধরে।


শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।