শন কোনারির জেমস বন্ড

লেখক: রুবাই শুভজিৎ ঘোষ

আমি প্রথম যে জেমস বন্ড দেখেছিলাম, সেটা ছিল পিয়ার্স ব্রসনান অভিনীত “দ্য ওয়ার্ল্ড ইস নট এনাফ”। তখন বন্ড কে বা কি সেটা জানতাম না। গোয়েন্দা চরিত্র বলতে শুধু ফেলুদা। ব্যোমকেশও দেখেছিলাম কিন্তু মন জুড়ে ছিল ফেলুদাই। বন্ডের ব্যাপারে জেনেছি অনেক পরে, শন কোনারির জেমস বন্ড দেখেছি তারও পরে। দেখেছি জেমস বন্ডের অন্যান্য সিনেমাগুলোও। ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট আটজন অভিনেতা বন্ডের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রতিটা বন্ডের নিজস্ব ঘরানা আছে। তবে আমার কাছে জেমস বন্ড হিসাবে শন কোনারি সবচেয়ে প্রিয়।

জেমস বন্ড হিসাবে শন কোনারির প্রথম আবির্ভাব হয় ডঃ নো সিনেমার মাধ্যমে। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা জেমস বন্ড সিরিজের মোট ৭টি বন্ড ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত জেমস বন্ডের সিনেমাগুলো সাল হিসাবে পরপর তুলে ধরলাম।

  • ১৯৬২ – ডঃ নো
  • ১৯৬৩ – ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ
  • ১৯৬৪ – গোল্ডফিঙ্গার
  • ১৯৬৫ – থাণ্ডারবল
  • ১৯৬৭ – ইউ অনলি লিভ টোয়াইস
  • ১৯৭১ – ডায়মণ্ডস আর ফরএভার
  • ১৯৮৩ – নেভার সে নেভার এগেইন

এর মধ্যে প্রথম সাতটি সিনেমা ইয়ন প্রোডাকশনের থেকে নির্মাণ করা হয়েছে। এই সিনেমাগুলোকেই অফিসিয়াল বন্ডের সিনেমা বলা হয় কারণ ইয়ান ফ্লেমিং-এর বন্ডের সমস্ত গল্পের (ক্যাসিনো রয়্যাল ছাড়া) সিনেমার কপিরাইট ইয়ন প্রোডাকশন কিনেছিল এবং তারাই বন্ডের সিনেমাগুলো বানিয়ে আসছে। তবে “থাণ্ডারবল” সিনেমাটি নিয়ে অন্য একটি আইনি ঝামেলা ছিল। একদা ইয়ান ফ্লেমিং, কেভিন ম্যাকক্লোরি এবং জ্যাক হুইটিংহাম তিনজনে মিলে সিনেমায় জেমস বন্ডকে আনবার জন্য একটি চিত্রনাট্য লিখেছিল, যা প্রথম জেমস বন্ড সিনেমা হতে পারত। কিন্তু পরে সেই চিত্রনাট্যের ওপর ভিত্তি করে ফ্লেমিং “থাণ্ডারবল” উপন্যাসটি লেখে। এই কারণে ম্যাকক্লোরি ফ্লেমিং-এর বিরুদ্ধে মামলা করে কারণ গল্পটি একা ফ্লেমিং-এর সম্পত্তি নয়। পরে যখন ইয়ন প্রোডাকশনের থেকে “থাণ্ডারবল” সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়, তখন তারা ম্যাকক্লোরিকে প্রযোজকের ক্রেডিট দেয়। ম্যাকক্লোরির কাছে ঐ গল্পের সিনেমার রাইট থাকার ফলে পরবর্তীকালে ঐ একই গল্প নিয়ে টালিয়াফিল্মের প্রযোজনায় “নেভার সে নেভার এগেইন” সিনেমাটি করা হয় এবং জেমস বন্ড হিসাবে অভিনয় করে শন কোনারি।

শন কোনারির পর অনেক অভিনেতা এই চরিত্রটি নিলেও শন কোনারি আলাদা যে চার্ম তৈরি করেছে, তা থেকে বেরনো মুশকিল। কোনারির বন্ড একজন আবেগহীন, বুদ্ধিদীপ্ত, প্রফেশনাল নির্মম খুনি। কোনারির বন্ড অদম্য, কঠিন। তার নিজের ওপর অগাধ বিশ্বাস এবং তার ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটা আকর্ষণীয় ব্যাপার রয়েছে, যা তাকে সকলের থেকে আলাদা করে। কোনারির বন্ড খুবই প্রফেশনাল এবং কাজের জায়গায় কোনও আবেগ নেই তার। এম এর সাথে তার বিভিন্ন সময়ের কথাবার্তাগুলো সেই দিকই নির্দেশ করে। অথচ যখন শন কোনারির চারটে বন্ডের পর জর্জ ল্যাজেনবি নতুন বন্ড হিসাবে আবির্ভূত হয় “অন হার ম্যাজেসটিস সিক্রেট সার্ভিস” সিনেমায়, তখন দেখি বন্ড তার বস এম-এর ওপর রাগ করে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে চাইছে, যে আবেগ কোনারির বন্ডে কখনই দেখা যায় না। এমনকি ল্যাজেনবির পর যখন আবার শন কোনারিকে বন্ড হিসাবে ফিরতে হয়, এবং তার স্ত্রীর মৃত্যুর বদলা নিতে দেখা যায় তাকে, তখনও সেই আবেগহীন প্রফেশনাল খুনিই ফিরে আসে, “অন হার ম্যাজেসটিস সিক্রেট সার্ভিস” -এর আবেগপ্রবণ বন্ড নয়।

এবার আমি আলাদা করে কোনারির বন্ডের সিনেমাগুলো নিয়ে কথা বলব। তবে শন কোনারির প্রথম চারটে সিনেমা (ডঃ নো , ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ, গোল্ডফিঙ্গার, থাণ্ডারবল) নিয়েই আলোচনা করব। কারণ এই সিনেমাগুলো বন্ড সিনেমা হিসাবে আমার খুব ভালো লেগেছে। কেন জানি না এতে আগের চারটে সিনেমার মত আকর্ষণ আমি পাইনি। একটা কারণ অবশ্যই ব্লোফেল্ডের গুরুত্ব। শুরুতে বন্ডের ভিলেন ব্লোফেল্ডের আলাদা গুরুত্ব তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ব্লোফেল্ডকে আমরা দেখতে পাইনা, শুধু তার হাত দেখি একটি ক্লাসিক পার্সিয়ান বিড়ালের মাথায় হাত বোলাতে। সেই বিড়ালের চোখ দিয়েই ব্লোফেল্ডকে বোঝা, পিছনে শুধু তার কণ্ঠস্বর। এটা অনেকটা চাঁদের পাহাড় সিনেমায় বুনিপকে না দেখার মত অনুভূতি। কিন্তু পরের সিনেমাদুটোতে (ইউ অনলি লিভ টোয়াইস, ডায়মণ্ডস আর ফরএভার) যখন ঐ বুনিপের মত ব্লোফেল্ডকে দেখা গেল, সেই বিশেষ ব্যাপারটা আর পেলাম না। “নেভার সে নেভার এগেইন” নিয়ে বলছি না কারণ ওটা “থাণ্ডারবল”-এর রিমেক।

ডঃ নো – বন্ড হিসাবে শন কোনারির প্রথম সিনেমা ডঃ নো। “বন্ড… (একটু থেমে) জেমস বন্ড” , একটা ক্যাসিনোতে এইভাবে নিজের পরিচয় দেয় সে এবং এইভাবেই বন্ডের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় হয়। এই ছোট্ট পরিচয়ের কি যাদু, তা আমি নিজের জীবনের একটা উদাহরণ না দিয়ে পারব না। আমার মনে আছে চাকরিজীবনের শুরুতে যখন ট্রেনিং-এর সময় আমরা উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিচ্ছিলাম, তখন আমি উঠে আগে নিজের পদবী বলে পরে নিজের নাম বলেছিলাম। এখন মনে পড়লে ভাবি কি করে বলেছিলাম সেটা!

শুধু বন্ডের পরিচয়পর্বই নয়, এই সিনেমাতেই আমাদের পরিচয় হয় বন্ডের থিম মিউজিকের সাথে। এই পরিচয় আর থিম মিউজিক দুটোই সিনেমার ইতিহাসে আলাদা জায়গা দখল করে আছে। বন্ডের রচয়িতা ফ্লেমিং প্রথম কোনারিকে দেখে পছন্দ করেনি। তবে ডঃ নো-এর সাফল্যের পর সে মত বদলেছিল। এখানে বন্ডের আবেগহীন, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চেহারাকে আমরা দেখতে পাই। দেখি প্রফেসর ডেন্টকে খুন করার পর তার মুখে কোনও অনুভূতি নেই। কি নির্মম প্রফেশনাল সে। এটা তার কাজ, তাই সে করে। সে তো লাইসেন্সপ্রাপ্ত একজন খুনি। আবার ডঃ নো যখন স্পেকটারের মাথাদের “গ্রেটেস্ট ব্রেন” বলে উল্লেখ করে, তখন স্টাইলের সাথে সিগারেট ধরিয়ে বন্ডের মুখে “কারেকশান! ক্রিমিনাল ব্রেইনস” শন কোনারির বন্ডকে বাকি বন্ডদের থেকে আলাদা করে।

এবার আসি সিনেমার চিত্রনাট্যে। গল্পের শুরু গোয়েন্দা গল্পের মত এবং গোয়েন্দা গল্পের মত এই সিনেমাতে অপরাধীকে ধরার যথেষ্ট সাসপেন্স আছে। গল্পের সাথে সাথে সেই সাসপেন্স ধরে রাখা হয়েছে, এবং উপযুক্ত আবহসঙ্গীত সেই কাজটা আরও সহজ করে তুলেছে। বিশেষ করে বন্ডের গায়ের ওপর টারান্টুলা মাকড়সা চলার দৃশ্য এবং মাকড়সাটাকে মারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিউজিক। আস্তে আস্তে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরোয় এবং ডঃ নো-এর সাথে পরিচয় হয় আমাদের। এই গল্প বন্ডের অন্য সিনেমার থেকে বেশ আলাদা। বন্ডের বাকি সিনেমায় আমরা আগে থেকেই অপরাধীকে জানি এবং সিনেমা চলে তাকে কিভাবে বন্ড কাবু করবে সেই পথে। এই সিনেমাটা ছুটির দুপুরে বই পড়ার মত, কেমন একটা বাস্তবমাখা কল্পনা যেটা দেখতে ভালো লাগে। বিশেষ করে ডঃ নো-এর দ্বীপটা সিনেমায় একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছে।

ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ – এই সিনেমাতে শুরু হয় বন্ডের একজন যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর পরিচয় পর্ব দিয়ে, রেড গ্রান্ট। তারপর দেখি একটি দাবার আসর, যার একদিকে স্পেকটারের একজন সদস্য। এই দাবাখেলার মাঝেই তার ডাক পড়ে। পেছনে ঘড়ির টিকটিক শব্দের মধ্যে দিয়েও কি সুন্দর সাসপেন্স তৈরি হয় এখানে দেখি। এরপর স্পেকটারের পরিচয় করানো হয়। ডঃ নো-তে শুধু এই সংস্থার নামই শোনা গেছিল। এখানে স্পেকটারের মাথা বা বন্ডের মূল ভিলেন ব্লোফেল্ডের সাথে পরিচয় করানো হয়। তাকে আমরা দেখতে পাইনা, শুধু একটি ক্লাসিক পার্সিয়ান বিড়ালের মাথায় তাকে হাত বোলাতে দেখি। সেই বিড়ালের চোখ দিয়েই ব্লোফেল্ডকে বোঝা, পিছনে শুধু তার কণ্ঠস্বর। প্রথম ২০ মিনিট ধরে বন্ডের ভিলেন, তাদের প্ল্যান চলতে থাকে। তারপর দেখি বন্ডকে এবং তার বস এম-কে। স্পেকটারের পাতা ফাঁদ বুঝেও এমআইসিক্স সেই ফাঁদে বন্ডকে পা দিতে বলে একটি মেশিনের জন্য। সেই ফাঁদ বন্ডের জন্য প্রেমের ফাঁদ। বন্ড তার শত্রুপক্ষের মেয়ে তাতিয়ানার সাথে প্রেমের অভিনয় শুরু করে। শুরু হয় অ্যাডভেঞ্চার। অ্যাডভেঞ্চারের শেষে মেয়েটি বন্ডের প্রেমে পড়ে যায় সত্যিকারের। সে বন্ডকে সাহায্য করে। বন্ডের এমনই ব্যক্তিত্ব। দেখানো হয় প্রেম করলেও নিজের কাজ বন্ড ভোলে না। তাই প্রেম করলেও করিমের মৃত্যুতে অপরাধী কে জানতে চেয়ে তাতিয়ানাকে জেরা করে।

অ্যাডভেঞ্চারের যাত্রাটা ট্রেনের সফরে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। গ্রান্টের সাথে তার যে যুদ্ধ, সেই সাসপেন্স সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অ্যাকশন দৃশ্যগুলো বাস্তবিক। আবার মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে গ্রান্টের থেকে সিগারেট চাওয়া বন্ডের আলাদা স্টাইলকে তুলে ধরে। এই সিনেমায় বন্ডের অ্যাডভেঞ্চার সিনেমাটিকে উপভোগ্য করে তুলেছে।

গোল্ডফিঙ্গার – এটি নিঃসন্দেহে কোনারির বন্ডের মধ্যে সেরা। তবে আমার মতে শুধু কোনারির বন্ড না, “নো টাইম টু ডাই” অবধি যতগুলো বন্ড হয়েছে তার মধ্যে সেরা “গোল্ডফিঙ্গার”। এই সিনেমাই বন্ডের সিনেমাগুলোর একটা ফরম্যাট বা টেম্পলেট বানিয়ে দিয়েছিল যা আজ অবধি সমস্ত বন্ড সিনেমায় অনুসরণ হয়ে আসছে। এই সিনেমাতেই প্রথম বন্ডের থিম গানের আগমন ঘটে যা পরবর্তী সমস্ত বন্ড সিনেমায় ফলো করা হয়। সবচেয়ে ভালো লাগে এই থিম গানের মিউজিকেও বন্ডের থিম মিউজিকের ব্যবহার করা হয়েছে, যেটা থান্ডারবল ছাড়া আর কোন বন্ডের থিম গানে হয়নি। তাই এই দুটো সিনেমার থিম গান আমার খুব পছন্দের। “গোল্ডফিঙ্গার” সিনেমায় প্রথম কিউ ব্রাঞ্চের সঠিকভাবে পরিচয় করানো হয়েছিল, আবার অ্যাস্টন মারটিন ডিবি ৫ এর আগমনও এই সিনেমাতেই।

কোনারির বন্ড কঠিন। যখন গোল্ডফিঙ্গারের কাছে হাত পা বাঁধা অবস্থাতে তার শরীরকে কেটে দুটুকরো করার জন্য লেজার চালানো হচ্ছে, তখন সে গোল্ডফিঙ্গারকে জিজ্ঞেস করে, “ইউ এক্সপেক্ট মি টু টক?”, প্রাণ বাঁচানোর আকুতি অথচ কি কাঠিন্যের সাথে বলা! গোল্ডফিঙ্গারেরও স্টাইল বন্ডের থেকে কম কিছু নয়। বন্ডের প্রশ্ন “ইউ এক্সপেক্ট মি টু টক?” এর উত্তরে যখন বলেছিল “আই এক্সপেক্ট ইউ টু ডাই”, তখনই সেটা বোঝা যায়। এই সিনেমাকে সেরা হিসাবে দেখানোর জন্য আরেকটি প্রধান কারণ অবশ্যই বন্ড ভিলেন হিসাবে অরিক গোল্ডফিঙ্গারের চরিত্র। বন্ডের সঙ্গে টক্কর দেওয়ায় তার জুরি মেলা ভার। পুরনো দুটো বন্ডে দেখানো হয়েছে কিভাবে বন্ড তার প্রবল পরাক্রমশালী শত্রুপক্ষকে মাত দিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বন্ড শুরুর দিকে গোল্ডফিঙ্গারকে মাত দেয় শুধু নিজের উৎকৃষ্টতা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু বন্ডের ভুল ভাঙ্গে এবং সিনেমার প্রথম কিছুক্ষণের মধ্যে সে শত্রুর কাছে বন্দী হয়ে যায়। তবে বন্ডের আত্মবিশ্বাস প্রচণ্ড এবং কিভাবে বন্দী থেকেও গোল্ডফিঙ্গারকে শেষ অবধি মাত দেবে সেটা নিয়েই এগোতে থাকে গল্প। আর এখানেই সাসপেন্স জমে ওঠে। গল্পের চিত্রনাট্য দারুণ। এখানে প্রথম দুটো সিনেমার গল্প বলার স্টাইল মিশে আছে এখানে। একদিকে অপরাধী কে সেটা আগে থেকেই জানা এবং কিভাবে বন্ড তার বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাবে সেই অ্যাডভেঞ্চারের গল্প, আবার অন্যদিকে ভিলেনের প্ল্যানটা সেটা জানার সাসপেন্স। গোল্ডফিঙ্গারের পাশাপাশি তার সহকারী অডজবের শক্তির কাছেও বন্ড পরাজিত হয়। কিন্তু তার ভাগ্য আর তার বুদ্ধিমত্তায় শেষ অবধি সে জয়ী হয়। এই গল্প পেশীর থেকে বেশি বুদ্ধির লড়াই । আর সেটাই এই চিত্রনাট্যকে আলাদা মাত্রা দেয়।

থান্ডারবল – এই সিনেমায় বন্ডের ভিলেন হিসাবে আবার স্পেকটার ফিরে আসে। বন্ড ভিলেন হিসাবে লার্গো এবং ফিয়োনার ব্যক্তিত্ব বন্ডের থেকে কম কিছু যায় না। ফিয়োনা তো বন্ডের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মেল ইগো নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করে। তবে বন্ডের উত্তরে সে একজন দেশপ্রেমিক এবং দেশের খাতিরে সবকিছু সে করে। এই গল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার জলের তলার দৃশ্যগুলো। অনুসন্ধানের অনেকটাই এই জলের তলায় এবং শেষের দিকে অ্যাকশন দৃশ্য আছে জলের তলায়। এই দৃশ্য়গুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আবহসঙ্গীত একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছে তাতে। এই সিনেমাতে বন্ডের ডার্ক হিউমারের দিক ফুটে উঠেছে। সেই নিয়ে এখানে একটা দৃশ্য না বললেই নয়। সেটা হল ফিয়োনাকে মারার পর তার প্রাণহীন দেহটা চেয়ারে রেখে পাশের জনকে বলে যাওয়া “সি ইজ জাস্ট ডেড”।

কোনারির বন্ডে নারীর আগমন প্রচুর। বন্ডের প্রতি আকর্ষিত হয় বহু নারী। এত অবধি ঠিক ছিল। কিন্তু জোর করে ঘনিষ্ঠ হওয়াটাকেও এমনভাবে গৌরবান্বিত করা হয়েছে যে কোনারির বন্ডে নারীদেরকে বেশ কিছু জায়গায় অসম্মান করা হয়েছে। কোনারির বন্ডে এই একটা বিশেষ খামতি রয়ে যায়। খামতি বলা ভুল, বরং দোষ বলা উচিত। কোনারির বন্ড একজন পুরুষ শ্যভিনিস্ট। তার বন্ডের আচরণে এটা স্পষ্ট। “গোল্ডফিঙ্গার”-এ বন্ড যখন ম্যাসেজ করাচ্ছিল এবং ফিলিক্স তার সাথে দেখা করতে আসে, তখন বন্ড মেয়েটির পিছনে থাপ্পড় মেরে “ম্যান টক” বলে তাকে চলে যেতে বলে। আবার একই সিনেমায় জোর করে পুসির সাথে অন্তরঙ্গ হয়। “ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ” সিনেমায় তাতিয়ানার গায়ে হাত তোলে। এই সিনেমা জুড়েই নারীদেরকে মনোরমের বস্তু হিসাবে দেখানো হয়েছে। আবার “থাণ্ডারবল” সিনেমায় একজন নার্সের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে সঙ্গমে বাধ্য করে। “থাণ্ডারবল” সিনেমার এই দৃশ্যটি প্রসঙ্গে “নো টাইম টু ডাই” এর পরিচালক একটি ইন্টারভিউতে কোনারির বন্ডকে ধর্ষক বলে উল্লেখ করে। কোনারির বন্ডের এই জায়গাটা তার বন্ডকে সত্যিই কলুষিত করেছে।

তবে যুগের সাথে বন্ড বদলেছে। শন কোনারির পর জর্জ ল্যাজেনবি, রজার মুর, টিমথি ডালটন, পিয়ার্স ব্রসনান হয়ে ড্যানিয়েল ক্র্যাগের জেমস বন্ড সিনেমায় আমরা অন্যরকম বন্ডকে দেখি।


শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।