ড্যানিয়েল ক্র্যাগের জেমস বন্ড

লেখক : রুবাই শুভজিৎ ঘোষ

জেমস বন্ড বলতে আমার চোখে শন কোনারির স্যুট বুট পরা চেহারাটা ভেসে উঠত। আর যখন শন কোনারিকে চিনতাম না, তখন জেমস বন্ড বলতে বুঝতাম পিয়ারস ব্রসন্যান। ২০০৬ সালে যখন ড্যানিয়েল ক্র্যাগ চরিত্রটি নিয়েছিল, তখন ওকে কেন জানি না পছন্দ হয়নি। অবশ্য সেটা সিনেমাটা দেখার আগে। তারপর কেটে গেছে দেড় দশক। এই দেড় দশকে সে নিজেকে যেমন প্রতিষ্ঠা করেছে অন্যতম সেরা জেমস বন্ড হিসাবে, তেমনই এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় ড্যানিয়েল ক্র্যাগের জেমস বন্ডের সিরিজটি শ্রেষ্ঠ জেমস বন্ড সিরিজ। তবে এটার কৃতিত্ব শুধুমাত্র ড্যানিয়েল ক্র্যাগের নয়, এই সিরিজের নির্মাতা এবং সকল কলাকুশলীদের।

প্রথমেই বলি কেন সিরিজ হিসাবে ড্যানিয়েল ক্র্যাগের জেমস বন্ড সিনেমার সিরিজটিকে সেরা বললাম। আমার ব্যক্তিগত মতামতে যেকোনো সিরিজে যখন চরিত্রটিতে একজন অভিনেতা অভিনয় করে, তখন আমরা সেটাকে সিরিজ হিসাবে ভালভাবে বুঝতে পারি। একটাই সিরিজে অভিনেতা বারবার বদলে যাওয়ার ফলে অন্তত আমার কাছে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়। অন্যান্য সমস্ত জেমস বন্ডের সিনেমাগুলোতে তাই ছিল। অন্তত শন কোনারি, জর্জ ল্যাজেনবি এবং রজার মুরের সিনেমাগুলো যে একটাই বন্ড সিরিজের অন্তর্গত এটা স্পষ্ট ছিল। তাই আমরা দেখি ১৯৬৯ সালে জর্জ ল্যাজেনবি অভিনীত “অন হার ম্যাজেসটিস সিক্রেট সার্ভিস” সিনেমাটিতে বন্ড যখন চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে চেয়ে নিজের যে পুরনো গ্যাজেটগুলো দেখছিল, সেগুলো পূর্বের শন কোনারির বন্ডের সিনেমায় ব্যবহৃত গ্যাজেট। আবার ১৯৭১ সালে শন কোনারি অভিনীত “ডায়মন্ডস আর ফরেভার” সিনেমার শুরুতেই জেমস বন্ড তার স্ত্রীর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ব্লোফেল্ডকে খুঁজছে। তার স্ত্রীর মৃত্যু দেখানো হয়েছিল ১৯৬৯ সালে জর্জ ল্যাজেনবি অভিনীত “অন হার ম্যাজেসটিস সিক্রেট সার্ভিস” সিনেমায়। আবার ১৯৮১ সালের রজার মুর অভিনীত “ফর ইয়োর আইজ অনলি” সিনেমার শুরুতে দেখানো হচ্ছে বন্ড তার মৃত স্ত্রীর কবরে ফুল নিয়ে এসেছে। পরের দুজন টিমথি ডালটন এবং পিয়ারস ব্রসন্যান মিলে একটা সিরিজ হলেও হতে পারে। কারণ জেমস বন্ডের বন্ধু ফিলিক্স লেইটার টিমথি ডালটন অভিনীত “লাইসেন্স টু কিল” সিনেমায় আহত হওয়ার পর একবারের জন্যও পিয়ারস ব্রসন্যানের সিনেমায় দেখা যায়নি। এদিকে ডালটন পূর্ববর্তী ভিন্ন বন্ড অভিনেতাদের সিনেমায় কিন্তু ফিলিক্স লেইটারের উপস্থিতি ছিল। তাহলে কি ধরে নিতে পারি যে ডালটনের বন্ডে ফিলিক্স আহত হওয়ায় আর ফেরেনি। আবার এদিকে ফিলিক্স লেইটারের চরিত্রে অভিনেতাও অনেকজন ছিল। ড্যানিয়েল ক্র্যাগের ক্ষেত্রে ফিলিক্স লেইটারের  চরিত্রে কিন্তু একজনই অভিনয় করেছে। শুধু লেইটার কেন, অন্যান্য চরিত্রেও তাই। 

সেই হিসাবে দেখতে গেলে ড্যানিয়েল ক্র্যাগের আগের জেমস বন্ড সিনেমাগুলোতে এইভাবে সিরিজের ভাবনাটাই ছিল না। ড্যানিয়েল ক্র্যাগকে নিয়ে রিবুট হল জেমস বন্ড সিরিজ। আর তাই  ইয়ান ফ্লেমিং-এর প্রথম জেমস বন্ড উপন্যাস “ক্যাসিনো রয়্যাল” হল এই সিরিজের প্রথম সিনেমা। এই সিরিজের টাইমলাইন গুলো খুব সুন্দর, যেটা আগে ছিল না। আগের সিনেমাগুলোয় একটার সাথে আরেকটার সম্পর্ক ছিল না। এখানে সেটা নেই। যেহেতু এটা একটা সিরিজ হিসাবে চলেছে তাই একটার সাথে আরেকটা লিঙ্ক করে এগিয়েছে। শুধু তাইই নয়, যখন জেমস বন্ড মার খেয়েছে তার চোখেমুখে সেই দাগ কিছুদিন অবধি লেগে আছে, যেটা স্বাভাবিক। টাইমলাইনের এই খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো এই সিরিজে ভালো লেগেছে। সিরিজের সাথে জেমস বন্ডের জীবনের গল্পও এগিয়েছে এবং গল্পের একটা পরিণতি পেয়েছে। বন্ডের জীবনে প্রেম এসেছে, প্রেম হারিয়েছে, আবার বসন্ত এসেছে, এসেছে সন্তান, তারপর এসেছে মৃত্যু। এভাবে শেষ হয়েছে সিরিজটি। 

সিরিজের আরেকটি বিষয় যেটা আছে সেটা হল নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির বদল। বন্ডের নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি যে ভালো নয় সেটা সমস্ত বন্ডের সিনেমাতেই দেখানো হয়েছে। কিন্তু শন কোনারির জেমস বন্ডগুলোতে নারীদের অসম্মান করাটা যেখানে গৌরবান্বিত করা হয়েছিল, সেখানে এই সিরিজে কিন্তু বন্ডের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করা হয়েছে। প্রথম সিনেমাতেই ভেসপার লিন্ড বন্ডের নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে। “কোয়ান্টাম অফ সোলেস”-এ বন্ডের সাথে একরাত কাটানোর পর ফিল্ডসের করুনাদায়ক মৃত্যুর জন্য এম বন্ডকে দায়ী করেছে। এই সিরিজে মেয়েরা শুধু বন্ডের খেলনা বা পুরুষ ভিলেন দ্বারা পরিচালিত জীব নয়, তাদের নিজেদের আলাদা সত্তা আছে। এই সিরিজে বেশ কিছু শক্তিশালী নারীচরিত্র রাখা হয়েছে। এম, ভেসপার লিন্ড, ম্যাডেলিনের পাশাপাশি নতুন ০০৭-এর পদেও একটি নারীকে দেখানো হয়েছে।      

এবার আলাদা করে সিরিজের সিনেমা গুলো নিয়ে কথা বলব।

ক্যাসিনো রয়্যাল (২০০৬) – গল্পের টাইমলাইন হিসাবে এটা প্রথম গল্প। ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয় ইয়ান ফ্লেমিং-এর উপন্যাস ক্যাসিনো রয়্যাল। তারপর আমেরিকান টিভি শো’তে ১৯৫৭ সালে প্রথমবারের জন্য পর্দায় আসে এই গল্প, যদিও সেখানে চরিত্রটিকে রাখা হয়েছিল একজন আমেরিকান। তারপর ফ্লেমিং এই গল্পের সিনেমার রাইট বেচে দেন এবং তার ওপর ভিত্তি করে ১৯৬৭ সালে স্যাটায়ারধর্মী সিনেমা হয় ক্যাসিনো রয়্যাল নামে। পরে বন্ডের সমস্ত গল্পের সিনেয়ার কপিরাইট ইয়ন প্রোডাকশন কিনে নেয় এবং তারাই বন্ডের সিনেমাগুলো বানিয়ে আসছে। কিন্তু এই সিনেমাটির কপিরাইট তাদের কাছে না থাকায় এটা নিয়ে তারা বহুদিন অবধি সিনেমা বানাতে পারে নি। পরবর্তীকালে এই সমস্যা মিটে যাওয়ায় ২০০৬ সালে নতুন জেমস বন্ড রিবুট হিসাবে এই গল্পটিকে বেছে নেওয়া হয়।

সিনেয়ার শুরুর টাইটেল ক্রেডিটে গাওয়া “ইউ নো মাই নেম” এবং গ্রাফিক্স দুটোই অসাধারণ। ক্রিস কর্নেল গানটি লিখেছে এবং গেয়েছে। নতুন বন্ডের সিরিজের জন্য বন্ডের থিমের বদলে বন্ডের ইন্ট্রোডাকশান হিসাবে এই গানটি সত্যি সিরিজের সূচনা হিসাবে দারুণ। এটা এই সিনেমার প্রথম পাওয়া। এরপর আসি গল্পে। মূল গল্পের কাঠামো এক রেখে তাতে বর্তমান সময়ের আতঙ্কবাদের সমস্যা ভরে দেওয়া হয়েছে। জেমস বন্ডের বিখ্যাত ভদকা মারটিনির রেসিপি এই সিনেমায় প্রথমবারের মত বন্ডকে বলতে শোনা গেছে। বন্ড ফ্যান হিসাবে যেটা আলাদারকম পাওয়া। এই সিনেমায় স্টান্টগুলো দুর্দান্ত। আগের পিয়ারস ব্রসন্যানের সিনেমায় সিজিআই এর অত্যধিক ব্যবহার অনেকটা সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তাই এই সিনেমায় নির্মাতারা বন্ডকে একজন লাইন্সেসপ্রাপ্ত খুনি এবং গোয়েন্দা হিসাবে যতটা সম্ভব বাস্তবিক রাখার চেষ্টা করেছে। সেই কারণেই এই সিনেমায় বন্ডের গ্যাজেট নিয়ে কোনও কিছু দেখানো হয়নি, যেখানে বন্ড বলতেই আমরা অনেকেই গ্যাজেট গুলো বুঝি। গ্যাজেটের প্রবেশ পরের সিনেমাগুলোতে ধীরে ধীরে ঢুকেছে। এই সিনেমায় বন্ডের চরিত্র মূল গল্পের সাথে যায় এবং অভিনয়ে সেখানে  ড্যানিয়েল ক্র্যাগ ফুটিয়ে তুলেছেন। এখানে বন্ডের চরিত্রের অনেক খারাপ দিক আছে সেটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এবং সেইখানেই এই সিনেমার প্রাপ্তি।

এই সিনেমার অন্যতম প্রাপ্তি ভেসপার লিন্ড এবং বন্ডের সাথে ভেসপারের কেমিস্ট্রি। ইভা গ্রিন অভিনীত ভেসপার চরিত্রটি এতটাই জীবন্ত ছিল যে প্রথমবার দেখে এই চরিত্রের প্রেমে পড়েছিলাম এবং মনে আছে ভেসপারের মৃত্যুতে খুব কষ্ট হয়েছিল। এই সব মিলিয়ে ড্যানিয়েল ক্র্যাগের জেমস বন্ড সিরিজের প্রথম সিনেমাটাই এই সিরিজের সেরা সিনেমা।

কোয়ান্টাম অফ সোলেস (২০০৮) – ইয়ান ফ্লেমিং-এর একটি ছোটগল্পের নামে সিনেমার নামকরণ। যদিও  মূল গল্পের সাথে সিনেমার গল্পের কোন মিল নেই। হয়ত লেখককে সম্মান জানিয়ে নামটি ব্যবহার করা হয়েছে অথবা হয়ত ব্যবসায়িক স্বার্থে লেখকের এবং তার গল্পের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। 

টাইমলাইন অনুসারে পূর্বের সিনেমার সিকুয়েল এটি এবং ক্যাসিনো রয়্যাল গল্পের  ধারাবাহিকতা এই সিনেমায় বর্তমান। এই দুটো সিনেমা নিয়ে একটা সম্পূর্ণ গল্প বলা যায়। সিনেমার মূল গল্পে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট খুব সুন্দর। গল্পের কারণেই সিনেমাটি খুব ডার্ক এবং ভায়োলেন্ট। কিন্তু যে সম্ভাবনা গল্পের মধ্যে ছিল সেটা সিনেমায় নেই। সিনেমা নির্মাণের সময় বন্ডের প্রতিশোধের দিকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে জুড়েছে ক্যামিলির প্রতিশোধের গল্প। সিনেমায় অনেকটা “লাইসেন্স টু কিল”-এর ছায়া দেখতে পাই। সেটাও  ছিল ডার্ক এবং ভায়োলেন্ট। কিন্তু সেখানে গল্পটা বন্ডের প্রতিশোধের গল্পই ছিল। এখানে তো গল্পটা  আরও বড় কিছু হবার ছিল, কিন্তু ঐ প্রতিশোধকে মূল লক্ষ্য বানাতে গিয়েই সমস্যা হয়েছে।  

স্কাইফল (২০১২) – ক্যাসিনো রয়্যালের পরেই এই সিনেমাটিকে স্থান দেব আমি। ক্যাসিনো রয়্যালের মতই সিনেয়ার শুরুর টাইটেল ক্রেডিটের গানটি অসাধারণ। গানটি লিখেছে এবং গেয়েছে অ্যাডেল। গানটি  জেমস বন্ডের গান হিসাবেই না, আলাদাভাবেও আমার খুব সুন্দর লাগে। তাই গানটি যখন অস্কার জিতেছিল আশ্চর্য হইনি। 

এখানেও গল্পটা জেমস বন্ডের পূর্ববর্তী একজন এজেন্টের ব্যক্তিগত আক্রোশের দ্বারা চালিত হওয়ার গল্প হলেও সেটার প্রভাব দেশের এবং দশের ওপর পড়ছে, যা গল্পটিকে আর ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতায় আটকে রাখেনি। এখানে শত্রু আর দেশের বা সংগঠনের বাইরের লোক নয়, বরং সে বন্ডের সংগঠনের লোক। এখানে আভ্যন্তরীণ শত্রুকে দেখানো হয়েছে যে একজন পূর্ববর্তী এমআইসিক্স-এর এজেন্ট সিলভা। সিলভার চরিত্রে জেভিয়ারের দুর্দান্ত অভিনয় নিঃসন্দেহে এই সিনেমার অন্যতম পাওনা। এর আগে “নো কান্ট্রি ফর ওল্ড মেন” সিনেমায় তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছে দর্শক। 

এই সিনেমাতে প্রথম আমরা কিউ’কে দেখি যে বন্ডের গ্যাজেটগুলো তৈরি করে। প্রথমবার দেখি মানিপেনিকে, যাকে গত দুটো সিনেমায় দেখানো হয়নি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বন্ডের যে দক্ষতা কমছে, সেটা দেখানো হয়েছে। আবার বয়সের সাথে অভিজ্ঞতা যে বাড়ে এবং একগুঁয়েমি কমে সেটাও এখানে দেখানো হয়েছে। গল্পের মধ্যেই বন্ডের পূর্বজীবনের কিছু ছোঁয়া দেখালেও কখনই সেটা মূল গল্প হয়ে ওঠে নি। সিরিজের সিনেমার র‍্যাঙ্কিং-এ এটিকে দ্বিতীয় হিসাবে বলা যায় নিঃসন্দেহে।

স্পেকটার (২০১৫) – এই সিনেমার গল্প একদমই ভালো লাগে নি। সেই ১৯৬২ সাল থেকে স্পেকটার সংগঠনটিকে যেভাবে দেখানো হয়েছিল, তার যে গুরুত্ব ছিল এই গল্পটি এক নিমেষে সব শেষ করে দিল। এমনকি এই বন্ডের সিরিজেও কোয়ান্টাম সংগঠনটিকে দেখানো হয়েছে স্পেকটারের একটি শাখামাত্র হিসাবে, সেখানে স্পেকটারের মূল কর্তা ব্লোফেল্ডকে বন্ডের ভাই বানিয়ে দেখানো আসলেই গল্পের গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া। এই সিনেমায় পাওনা বলতে বন্ডের সাথে ম্যাডেলিনের কেমিস্ট্রি। 

নো টাইম টু ডাই (২০২১) স্পেকটারের পর ড্যানিয়েল ক্র্যাগের জেমস বন্ড শেষ হবে এমনটি শোনা গেছিল। যদি সেটা হত তাহলে সিরিজটি অসম্পূর্ণ রয়ে যেত। এই সিনেমাটি জেমস বন্ডের এই সিরিজটি সম্পূর্ণ করল। গল্প অসাধারণ না হলেও স্পেকটারে গল্পের যা ক্ষতি হয়েছিল, এখানে স্পেকটারের সব সদস্যকে মেরে ফেরে গল্পের একটা মেরামত করা গেছে। বন্ডের ম্যাডেলিনের ওপর বিশ্বাস হারানো, তাকে ফিরে পেয়ে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া, নিজের মেয়েকে দেখে চোখে পিতার আনন্দ, মেয়ের জন্য পিতা বন্ডের  ভিলেনের কাছে মাথা ঝোঁকানোর মধ্য দিয়ে বন্ডকে ধীরে ধীরে রক্তমাংসের মানুষ করে তুলেছে, এবং এই যে বন্ডের জার্নি সেটা দেখতে ভালো লাগে। কিন্তু গল্পের অনেক খুঁত রয়েই গেছে। স্যাফিনের মত ভিলেনকে ট্রেইলারে যেভাবে দেখানো হয়েছিল, সিনেমা দেখার পর হতাশ হতেই হয়। তবুও আগের স্পেকটার সিনেমার পর এই সিনেমা একটা রিলিফ বটে।

সিনেমাটায় পূর্বের সমস্ত বন্ডের সিনেমাগুলোর রেফারেন্সগুলো ভালো লাগবে। জর্জ ল্যাজেনবির বন্ডে তার স্ত্রী মারা গেছিল আর এখানে অল্টারনেট এন্ডিং হিসাবে বন্ডের মৃত্যু ঘটানো হয়েছে বা বলা ভালো বন্ড নিজে বেছে নিয়েছে মৃত্যু। স্যাফিনের লুক “ডক্টর নো” কে মনে করায় আর স্যাফিনের আইল্যান্ড মনে করায় “ইউ অনলি লিভ টোয়াইস” -এর ব্লোফেল্ড-এর আইল্যান্ড। ভিজিটর কার্ডটি মানিপেনির ডেস্কের পাশে রাখা ডাস্টবিনে ফেলার স্টাইল পুরনো বন্ড সিনেমাকে মনে করায়। তাছাড়া লেইটারের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার সময় তাকে নিজের ভাই দাবী করা “লাইসেন্স টু কিল” সিনেমায় দুজনের মধ্যের বন্ধুত্বকে মনে করায়। ভেসপারের কবরে দেখা করতে যাওয়া “ফর ইয়োর আইজ অনলি” সিনেমার দৃশ্য মনে করায়। আর সবচেয়ে বড় রেফারেন্স তো সিনেমার শেষ দৃশ্যে বন্ডের মুখে “ইউ হ্যাভ অল দি টাইম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড” যেটা “অন হার ম্যাজেসটিস সিক্রেট সার্ভিস” এর শেষ দৃশ্যকে মনে করায়। শুধু এক্ষেত্রে পরিস্থিতি আলাদা। আর সিনেমার শেষে সেই পুরনো লুই অ্যামস্ট্রং-এর গলায় “উই হ্যাভ অল দি টাইম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড” শুনতে শুনতে এই সিনেমাটা বা এই সিরিজের যা কিছু খুঁত ভুলে যাই।


লেখাটি লেখকের কণ্ঠে শুনুন এখানে

লেখক পরিচিতি : রুবাই শুভজিৎ ঘোষ
লেখকের জন্ম পশ্চিমবাংলায়। পেশায় একটি বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। নেশায় লেখক এবং পরিচালক। বাঙালির জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সববাংলায় এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চিত্রনাট্য সবকিছুই লিখতে ভালবাসেন। লিটিল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখেছেন। স্রোত থেকে প্রকাশিত তাঁর কবিতার সংকলন দৃষ্টি এবং বালিঘড়ি। এছাড়া তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম বা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পরিচালনা করেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান তাঁর প্রিয় বিষয়। ভ্রমণ তাঁর অন্যতম শখ। অন্যান্য শখের মধ্যে রয়েছে স্কেচ, ফটোগ্রাফি, ছবি ডিজাইন করা।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।