আসল হীরা – প্রথম পর্ব

লেখক: রানা চক্রবর্তী

কোনো পাঁজি, কোনো চলচ্চিত্র ক্যালেন্ডার, কোনো সরকারি সিলমোহর, কোনো পাঠ্যপুস্তক এমনকি কোনো ফিল্ম অধ্যাপকের লেকচার নোটেও তিনি নেই, থাকেন না।

ইতিহাসের পাতা জুড়ে থাকা সব আখর কি বর্ণে বর্ণে সত্যি? এক জনের কৃতিত্বে অন্যজন কি ভাগীদার হয়নি? ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসের গোড়াতেই গন্ডগোল। এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জনক কে? হীরালাল সেন না কি দাদাসাহেব ফালকে? প্রভাব প্রতিপত্তি এবং তৎকালীন বম্বে মিডিয়ার আধিপত্যের জোরে নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় জনের নামেই বেশি ভোট পড়বে। কিন্তু ইতিহাসের পাতার ভাঁজে তো অনেক নামই হারিয়ে যায়। চলচ্চিত্র উৎসাহী ছাড়া ক’জনই বা হীরালাল সেনের নাম জানেন!

অথচ হীরালালকে বাদ দেওয়া মানে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের সূত্রপাতে খুঁত থেকে যাওয়া। বিশ্বাস-অবিশ্বাস তো চিরকালই ধাওয়া করে এসেছে তাঁকে। ভারতীয় সিনেমার পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বছরের পর বছর গড়িয়ে গিয়েছে।

১৮৬৮ (মতভেদে ৬৬) সালের ২ আগস্ট (১৯ শ্রাবণ ১২৭৫ বঙ্গাব্দ) শ্রাবণ পূর্ণিমার দিন, অখণ্ড ভারতবর্ষের ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ মহকুমার বগজুরি গ্রামে হীরালাল সেনের জন্ম। বাবা– চন্দ্রমোহন, মা– বিধুমুখী। ঠাকুরদা –গোকুলকৃষ্ণ সেন মুনশি। দাদু – শ্যামচাঁদ। দিদিমা – ব্রহ্মময়ী। ছোটোপিসি রূপলতার সঙ্গে বিয়ে হয় ঈশ্বরচন্দ্র সেনের আর তাঁদের সন্তানই হলেন আচার্য, লেখক ও সাহিত্যিক ড. দীনেশচন্দ্র সেন। দীনেশচন্দ্রের লেখা ঘরের কথা ও যুগ সাহিত্য–ই হল হীরালালের ছোটোবেলা সম্পর্কে আকর গ্রন্থ। দীনেশচন্দ্র সেন লিখেছেন, “বগজুরীর মাতুলালয় ছিল অতি প্রকাণ্ড, খুব বড় কোন রাজবাড়ীর মত। বাড়ীটি ৩০/৪০ বিঘা জমি লইয়া তন্মধ্যে প্রায় ৪/৫ বিঘা শুধু ফুলবাগানই ছিল।” (পৃ. ৮৪, প্রকাশক –জিজ্ঞাসা, দ্বিতীয় মুদ্রণ –জৈষ্ঠ্য ১৩৬৯, বানান অবিকৃত)।

২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত চিকিৎসক ও সমাজকর্মী বাসুদেব মণ্ডল গিয়েছিলেন হীরলালের জন্মভিটেতে। তাঁর বয়ান অনুযায়ী, “বাড়িটি খুবই নীচু জমির ওপর ছিল কেননা মূল রাস্তা থেকে নেমে বাঁধের মতো পথ ধরে পায়ে হেঁটে যেতে হয় সেখানে। দুধারে নীচু জমি। ইতস্তত কিছু হতদরিদ্র মানুষের বসতি দুপাশেই। পাটকাটি, হোগলা পাতা চ্যাঁচাড়ির ঘরবাড়ি। মূল ফটক যেখানে ছিল, সেখানে এখন কিছুই নেই। সরকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় করেছে সেখানে। সেটা চালুও আছে আর জমির পরিমাণ খুব বেশি হলে ১০ বিঘা মতো হবে। বাড়িটি যেখানে ছিল সেখানে একটু উঁচু চাতাল মতো আছে কিন্তু কোনো ইঁট কাঠের চিহ্ন নেই। ওই রাস্তার বাম দিকে গাছপালার আড়ালে জঙ্গলাকীর্ণ একটি মন্দির আছে। ব্যাস!”

প্রথমে কেউ বিশ্বাসই করেনি যে, ফোটোগ্রাফিতে প্রথাগত তালিম না থাকা সত্ত্বেও এক সদ্য যুবক বিদেশিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছবি তুলতে পারে!

ওই সময়ে বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ড কোম্পানির একটি ফোটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা হত। সেখানে হীরালালের তোলা ছবি প্রথম স্থান অধিকার করে। চিত্রগ্রাহকের নাম দেখে সাহেবরা বিশ্বাস করতে পারেনি একজন নেটিভ এমন ছবি তুলতে পারে। তাই হীরালালকে ওই ছবিটি ফের তুলে প্রমাণ দিতে হয়েছিল। তথ্য বলছে, ১৮৮৭-১৮৯৮ সালের মধ্যে ফোটোগ্রাফি চর্চায় শ্রেষ্ঠত্বের জন্য হীরালাল সাত বার স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। ভাই মতিলাল এবং দেবকীলালকে নিয়ে ঢাকা মানিকগঞ্জের আদিবাড়িতে স্টুডিয়ো খুলেছিলেন। সে যুগের বিচারে এই উদ্যোগ অবশ্যই চমকপ্রদ। হীরালাল তখন দেশের এক নম্বর স্টিল ফোটোগ্রাফার।

কিন্তু ফরমায়েশি ছবি তোলা আর কত দিন? অন্য স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করেছে। ফোটোগ্রাফি থেকে বায়োস্কোপের নেশায় মাতলেন হীরালাল। তত দিনে ঢাকা থেকে কলকাতায় চলে এসেছেন। স্টিল ফোটোগ্রাফির ব্যবসা ভুলে বায়োস্কোপ শিক্ষায় মাতলেন। তবে কাজটা সহজ ছিল না। বায়োস্কোপে তখন সাহেবদের একচেটিয়া আধিপত্য। খুঁটিনাটি জানার জন্য হীরালালকে ঘুরতে হয়েছে নানান দরজায়। তখন স্টার থিয়েটারে ‘স্টিফেন্স সাহেব’ বলে এক জন বায়োস্কোপ দেখাতেন। থিয়েটারের ফাঁকেই তা দেখানো হত। সেই প্রথম চলমান ছবি চাক্ষুষ করলেন হীরালাল। কেমন যেন ঘোর লেগে গেল! এত দিন যে ছবি তুলেছেন, সেই সব সৃষ্টি মিথ্যে মনে হতে লাগল। স্টিফেন্স সাহেবকেই ধরলেন বায়োস্কোপ তৈরি শিখিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সাহেব মোটেই আমল দিলেন না। একবগ্গা হীরালালকে এ সব দমিয়ে রাখতে পারেনি। যেমন ভাবে নিজের চেষ্টায় ফোটোগ্রাফি শিখেছিলেন, তেমন ভাবেই সিনেম্যাটোগ্রাফিও শিখে নিলেন।

হীরালালের রয়্যাল বায়োস্কোপ (১৮৯৮) তৈরির ঠিক দু’বছর আগে ১৮৯৬ সালের ৭ জুলাই সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। ‘দ্য মার্ভেল অব দ্য সেঞ্চুরি, দ্য ওয়ান্ডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড, লিভিং ফোটোগ্রাফিক পিকচার্স ইন লাইফ সাইজড রিপ্রোডাকশন বাই মেসার্স লুমিয়ের ব্রাদার্স সিনেমাটোগ্রাফ…’— ওটি ছিল লুমিয়ের ব্রাদার্সের চলমান চিত্রের প্রদর্শনী।

এ ভাবেই সিনেমার সঙ্গে ভারতবাসীর প্রথম পরিচয়। তার এক বছর আগেই বিশ্ববাসী জেনেছে লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়ের চলমান চিত্র আবিষ্কারের কাহিনি। বিনোদনের ঢেউ এসে লাগল বঙ্গদেশেও।

আই.এস.সি-র ছাত্র হীরালালের লেখাপড়ায় মোটেই ঝোঁক ছিল না। একদিন একটি পত্রিকায় সিনেম্যাটোগ্রাফ মেশিনের বিজ্ঞাপন দেখলেন। ব্যস, মা বিধুমুখী দেবীর কাছ আবদার জুড়লেন কিনে দেওয়ার জন্য। মায়ের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যন্ত্রের অর্ডার দিয়ে দিলেন! কিন্তু যন্ত্র পেলেই তো হল না, ছবি দেখানোর জন্য প্রয়োজন ইলেকট্রিকের। ১৮৯৭ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেন এবং হাওড়া স্টেশনেই এক মাত্র ইলেকট্রিসিটির ব্যবস্থা ছিল। তখন ইলেকট্রিক আর্কল্যাম্প বা লাইম লাইটের সাহায্যে সিনেমা দেখানো হত। সেই ব্যবস্থা করা চাট্টিখানি কথা নয়। লাইম লাইটের জন্য অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রয়োজন ছিল। রবারের ব্যাগে গ্যাসের জোগানের ব্যবস্থা করলেন। এক দিন আচমকাই সেই রবারের গ্যাসের ব্যাগটি গেল ফেটে। বিপাকে পড়ে হীরালাল হাজির হলেন সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের ফাদার লাফোঁর কাছে। ওই ব্যাপারে লাফোঁর জ্ঞান ছিল। ওই সময়ে তিনি চলমান চিত্র দেখিয়ে ছাত্রদের পড়াতেন। উৎসাহী যুবকটিকে তিনি অনেক পরামর্শও দেন। নানারকম জোগাড়যন্ত্র করে হীরালাল নেমে পড়লেন মাঠে। শুরু হল ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’র (১৮৯৮) যাত্রা। সঙ্গী দুই ভাই মতিলাল এবং দেবকীলাল আর ভাগ্নে কুমারশঙ্কর গুপ্ত। যদিও দেবকীলাল অল্প দিনই সেখানে যুক্ত ছিলেন।

যে সময়টায় হীরালাল বায়োস্কোপের কারবার শুরু করলেন, তখন কলকাতার একেবারে অন্য রূপ। সাহিত্য-সংস্কৃতি সব দিকেই শিখরে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার রাজধানী। রাস্তায় ট্রাম চলছে। পাশ দিয়ে হেঁকে যাচ্ছে জুড়িগাড়ি। ফিটন গাড়ি করে নাটক দেখতে আসছেন বাবু-বিবিরা। শহরের নানা দৃশ্য ক্যাপচার করতে লাগলেন হীরালাল। বাইরে গিয়েও ছবি তুলে আনতেন। দর্শক হাঁ করে গিলতে লাগলেন সেই সব চিত্র। নানা জায়গা থেকে ডাক পেতে লাগল রয়্যাল বায়োস্কোপ। বিভিন্ন রাজ পরিবার, এস্টেটে গিয়ে বায়োস্কোপ দেখাতে হত তাঁকে। বাড়তে লাগল পরিচিতি। আসতে লাগল অর্থ। কিন্তু হীরালাল ক্রমশ বুঝতে পারলেন, গতে বাঁধা ছবি দেখানোয় ক্রিয়েটিভিটি নেই। যদিও তিনি তত দিনে আলো, সম্পাদনা নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছেন। সিনেমার জন্য যে একটা গল্পের প্রয়োজন, তা বুঝতে পেরেছিলেন হীরালাল।

এই সময়েই থিয়েটারের অমরেন্দ্র দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ হয় হীরালালের। অমর দত্ত তাঁর হাতে ব্ল্যাঙ্ক চেক ধরিয়ে দেন। তখন থিয়েটারের উঠতি নক্ষত্র অমর। গিরীশ ঘোষ থাকা সত্ত্বেও তাঁর প্রতিপত্তি কোনও অংশে কম নয়। ১৮৯৬ সালে তিনি শুরু করলেন ক্লাসিক থিয়েটার। থিয়েটার জগতের যা কিছু ঐতিহ্য, সব ভেঙে নতুন আইডিয়ার জোয়ার নিয়ে এলেন। বদলে দিলেন মঞ্চ সজ্জার পুরনো স্টাইল। বাংলা থিয়েটারে মঞ্চের উপরে ঘোড়া নামিয়ে দিয়েছিলেন অমর দত্ত! তিনি এবং হীরালাল দুই প্রতিভা এক হয়ে বায়োস্কোপ এবং থিয়েটার দুই ক্ষেত্রেই নিয়ে এলেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

ওই সময়ে ক্লাসিকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘সীতারাম’ জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই নাটকের কিছু অংশ তুললেন হীরালাল। তার পরে ‘আলিবাবা’ নাটকের অংশও তুললেন তিনি। জানা যায়, ১৮৯৮ সালের ৪ এপ্রিল ক্লাসিকে প্রথম বায়োস্কোপ দেখান হীরালাল। এ ভাবে অনেক নাটকই ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন। ১৯০২-০৩ সালে বিদেশ থেকে আরও উন্নত ক্যামেরা ও যন্ত্রপাতি আনালেন। এ বার তুললেন প্রথম পূর্ণাঙ্গ নাটক ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’। ১৯০৪ সালের ২৩ জানুয়ারি ক্লাসিকে তা দেখানো হল। সিনেমার ইতিহাসে একটা অধ্যায় তৈরি হল সে দিন।

চলচ্চিত্র এবং ফটোগ্রাফির অনেক কিছুতেই হীরালাল ভারতে ও বঙ্গদেশে প্রথম। সেগুলির একটি তালিকা তৈরি করলে বিষয়টি নিম্নরূপ হয়।

  • ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের নাটক নিয়ে ছায়াছবি আলিবাবা মুক্তি পায় ২৩ জানুয়ারি ১৯০৩ সালে। প্রায় দু-ঘণ্টার ছবি। যদিও সিকোয়েলের মতো করে আলাদা আলাদা স্ক্রিনিং করা শুরু হয়েছিল ১৯০০ সালে। উল্লেখ থাকুক, দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি রিলিজ করে ১৯০৩ সালে এবং বিশ্বের প্রথম কাহিনিচিত্র হিসেবে খ্যাত। কলকাতার ক্লাসিক থিয়েটারে এটির প্রথম অভিনয় হয়েছিল ১৮৯৭ সালে। ভ্রমর হীরালালের প্রথম ছবি হলেও সেটির সন তারিখের নথি না-পাওয়ায় অনুল্লেখিত রইল
  • প্রথম বিজ্ঞাপন চিত্র (১৯০৩) (ভারতে, সম্ভবত বিশ্বে)
  • প্রথম রাজনৈতিক তথ্যচিত্র (১৯০৫) (ভারতে, সম্ভবত বিশ্বে)
  • প্রথম রাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ তথ্যচিত্র (১৯০৫) (ভারতে, সম্ভবত বিশ্বে)
  • প্রথম সবাক চলচ্চিত্র প্রক্ষেপণ প্রচেষ্টা (১৯০৫ , টাউন হল)
  • প্রথম তথ্যচিত্র (১৯০৫) (ভারতে, সম্ভবত বিশ্বে)
  • প্রথম রঙিন চলচ্চিত্রের স্রষ্টা (সেলুলয়েডে রঙ লাগিয়ে ১৯০০ সালে)
  • প্রথম বাঙালি চলচ্চিত্র প্রদর্শক (রয়্যাল বায়োস্কোপ কম্পানি, ১৮৯৮)
  • প্রথম বাঙালি ল্যাব টেকনিশায়ান (১৯০০)
  • প্রথম বাঙালি ফিল্ম ডেভেলপার (১৯০০)
  • প্রথম ভারতীয় স্বর্ণপদক জয়ী স্থিরচিত্রগ্রাহক (১৮৯৮)
  • প্রথম স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শক (ভারত শিল্প প্রদর্শনী, ১৯০০ সাল, রয়াল বায়োস্কোপ কম্পানি)।

হীরালাল যা-ই করেছেন, পাশে পেয়েছেন তাঁর পরিবারকে। বিত্তশালী পরিবারের সন্তান হওয়ার সুবাদে টাকাপয়সা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। বাবা চন্দ্রমোহন সেন ছিলেন ঢাকা শহরের নামজাদা উকিল। মা বিধুমখী পুত্রের ইচ্ছেয় সব সময়ে সায় দিয়েছেন। যখনই হীরালাল কিছু চেয়েছেন তাঁরা হাজির করেছেন সামনে। আর এক জন হীরালালের সব ইচ্ছেতেই মদত দিতেন। তিনি পিতামহ গোকুলকৃষ্ণ।

যদিও সিনেমার এই আদিপুরুষ সম্পর্কে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায়। তাঁর উত্তরসূরিরা এতটাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে, তেমন তথ্যও মেলে না।

ভারতীয় চলচ্চিত্রের পথিকৃৎকে নিয়ে সিনেমা তৈরির পরিকল্পনা ছিল পরিচালক শেখর দাসের। তাঁকে নিয়ে অনেক গবেষণাও করেছেন। গিয়েছিলেন বাংলাদেশেও। তাঁর বক্তব্যে, ‘‘বগজুরি গ্রামে হীরালালদের বিশাল জমি, বাড়ি, দালান, নাটমন্দিরের বর্ণনা পাওয়া যায়। যদিও আমি গিয়ে তার খুব বেশি অবশিষ্ট দেখিনি। কিন্তু ওই সময়ে মুন্সিদের বিশাল দাপট ছিল। চন্দ্রমোহন বাড়িতে বাইজি নাচ বসাতেন। বাইজিদের পায়ে ছুড়ে দেওয়া হত আবির। পায়ে পায়ে উড়ত সেই ফাগ। কিশোর হীরালাল আড়াল থেকে সে সব দেখতেন। হয়তো তাঁর স্বপ্নের উপরে এই সব ঘটনার প্রচ্ছন্ন ছাপ ছিল।’’

নামকরা পণ্ডিত এবং সাহিত্যিক দীনেশচন্দ্র সেন ছিলেন হীরালালের পিসতুতো দাদা। তাঁর লেখাতেই পাওয়া যায়, ছোটবেলায় কেমন ভাবে কাগজ কেটে পুতুল-নকশা তৈরি করতেন তাঁরা। লণ্ঠনের আলোয় ছায়াবাজির খেলায় মাততেন। এই সব করতে করতেই হীরালালের মাথায় ফোটোগ্রাফির ভূত চাপে। ঢাকা থেকে কলকাতায় চলে আসার ফলে তাঁর স্বপ্নও বাস্তবের কাছাকাছি আসে। চন্দ্রমোহন তাঁর পরিবার নিয়ে এসে ওঠেন কলকাতার ভবানীপুরে। সেখান থেকে পরে তাঁরা মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটে উঠে যান। সেখানেই হীরালালের সিনেমার হাতেখড়ি।

(চলবে)


লেখকের কথা: রানা চক্রবর্তী
রানা চক্রবর্তী পেশায় সরকারী কর্মচারী। নেশা ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা আর লেখালিখি। নিজেকে ইতিহাসের ফেরিওয়ালা বলতে ভালবাসেন।

One comment

  1. এরকম উঁচুদরের গবেষণাপ্রসূত রচনা অনেককাল পরে পড়বার সুযোগ পেয়ে ধন্য হয়ে গেলাম। এখন তো বাংলা পড়ার রেওয়াজ বিশেষ নেই, বলাই কমে গেছে–আর, সব বাঙালীই কবি। ফলে ভালো প্রবন্ধ এবং সুললিত গদ্য পড়তে পেলে সত্যিই আনন্দ হয়।
    পরবর্তী অংশের জন্যে উদগ্ৰীব প্রতীক্ষায় থাকবো।
    লেখকেকে এবং আপনাদের অভিনন্দন জানাই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

লেখা আহ্বান - বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন