ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা – জানা অজানা তথ্য (দ্বিতীয় পর্ব)

ভাওয়াল রাজকুমার এবং রাজকুমারীদের জন্ম ইতিহাস রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করেছিলেন বরিশাল জেলার বানারিপাড়ার জমিদার কন্যা রাণী বিলাসমণি দেবীকে। বিবাহিত জীবনে স্ত্রী বিলাসমণি দেবীর গর্ভে সর্বমোট তিন পুত্র ও তিন কন্যা জন্ম গ্রহণ করেন। প্রথম সন্তান- কন্যা ইন্দুময়ী দেবীর বিয়ে হয়েছিল গোবিন্দচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (এম. এ, বি. এল) এর সাথে। দ্বিতীয় সন্তান- কন্যা জ্যোতির্ময়ী দেবীর বিয়ে হয়েছিল জগদীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তৃতীয় সন্তান পুত্র বড়কুমার রণেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বিয়ে করেছিলেন সরযূবালা দেবীকে। এছাড়াও তিন কুমারের মধ্যে শুধুমা্ত্র এই রণেন্দ্র নারায়ণ রায়ই কিছুটা লেখা পড়া শিখেছিলেন। ফলে ব্রিটিশ রাজ পুরুষদের সাথে তিনি যোগাযোগ রক্ষা ও আলাপচারিতা করতে পারতেন। চতুর্থ সন্তান পুত্র কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী (জন্ম ২৮ জুলাই ১৮৮৪) কোনরূপ নাম সই করতে পারতেন। তিনি ছিলেন অমিতাচারী। খেলাধুলা আর শিকারের প্রতি তাঁর প্রবল ঝোঁক ছিল। একবার বৃটিশ সরকার কর্তৃক ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগীতায় তিনি নিজে জকি ছিলেন এবং বলা বাহুল্য তিনিই প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি ১৯০২ সালের মে মাসে হুগলীর বিষ্ণুপদ মুখার্জির মধ্যমা কন্যা অপূর্ব সুন্দরী দেবী বিভাবতীকে বিয়ে করেন। ভাওয়াল রাজ এস্টেটে কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ মূলত মেজোকুমার নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। পঞ্চম সন্তান পুত্র কুমার রবীন্দ্র নারায়ণ রায়ের সাথে বিয়ে হয়েছিল আনন্দ কুমারী দেবীর। এবং সর্বশেষ ষষ্ঠ সন্তান কন্যা তড়িন্ময়ী দেবীর বিয়ে হয়েছিল বাবু ব্রজলাল ব্যানার্জী (এম.এ, বি.এল) এর সাথে।

রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯০১ সালের ২৬ এপ্রিল মৃত্যু বরণ করেন। এই সময় তাঁর তিনপুত্র সন্তানই ছিলেন বেশ নাবালক। সে কারণে জমিদারিটি একবার ১৯০১ সালে এবং আর একবার ১৯০৪ সালে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে চলে যায়। রাজেন্দ্র নারায়ণের তিন পুত্র সন্তানকেই একজন ইউরোপীয় গৃহ-শিক্ষক লেখাপড়া শেখাতেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, তিন পুত্রই ছিলেন অজ্ঞ ও ইন্দ্রিয় পরায়ণ। লেখাপড়া ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি তারা ছিল অত্যন্ত অমনোযোগী। হিন্দু আইনানুসারে তাঁর মৃত্যুর পর ভাওয়াল রাজ্য বা এস্টেটের মালিক হন এই তিন পুত্র। কিন্তু কুমারগণ নাবালক থাকায় তাঁদের মা রাজ মাতা রাণী বিলাসমণি দেবী ট্রাস্টি হিসেবে এস্টেট পরিচালনার ভার নিজ হাতে গ্রহণ করেন। আর এ কারণে ভাওয়াল রাজ এস্টেট এক সময়ে রাণী বিলাসমণি এস্টেট নামেও পরিচিতি লাভ করেছিল।

রমেন্দ্র নারায়ণ ছিলেন রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণের মেজো পুত্র। রাজমাতা রানী বিলাসমণি ছিলেন তেজস্বিনী ও দূরদর্শী সম্পন্না একজন মা। রানীমাতা হিসেবে নিজ পরগনার প্রজাদের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ ভোগ-বিলাসে এতটাই মত্ত ছিলেন, যে স্বাভাবিক রাজ্য পরিচালনা তো দূরে থাক; নিজেকেই তিনি ঠিকমত গুছিয়ে রাখতে পারতেন না। তাই রাজমাতা বিলাসমণিই প্রকৃত অর্থে জমিদারির দেখভাল করতেন। এস্টেটের ম্যানেজার বিখ্যাত সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন ঘোষ নিজের বিত্ত-বৈভব বৃদ্ধিতে এতটাই লোভী হয়ে পড়েন যে, রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণকে নিজ স্বার্থে তিনি ভোগবাদের নোংরা নর্তকিদের দিকে ঠেলে দেন এবং এতে করে রাজকোষের অবস্থা দ্রুত আরো খারাপ হতে থাকে। কিন্তু নিজ সন্তানদের এসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে রাজমাতা রাণী বিলাসমনি শুধুমাতও একটাই উপায় খুঁজে বের করেন। আর সেটা হলো তাদেরকে শিক্ষিত করা। কারণ ইতিপূর্বে শিক্ষার গুরুত্ব তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, যার কারণে কুমারদেরকে লেখা পড়া শেখানোর জন্য তিনি মিস্টার হোয়াটন নামক একজন গৃহ শিক্ষক নিযুক্ত করেন। কিন্তু কুমারদের অবস্থা বিশেষ আশাব্যঞ্জক ছিল না। তারা লেখা পড়ার থেকে আনন্দ ফূর্তি করতেই মূলত বেশি মজা পেতো। মেজো কুমার রমেন্দ্র নারায়ণও এর কোন ব্যতিক্রম ছিলেন না। হাতে জমিদারির প্রচুর টাকা আসত। সুতরাং রাজা ও রাজমাতার কোনো কথাই তারা কানে তুলত না।

১৯০৭ সালের জানুয়ারি মাসে বার্ধক্যজনিত কারণে রাণী বিলাসমণি মৃত্যু বরণ করেন। অতঃপর তিন কুমার সমান হিস্যায় ভাওয়াল এস্টেটের মালিকানা প্রাপ্ত হন। রাজমাতা রানী বিলাসমণির মৃত্যু হলে ভাওয়াল রাজপরিবারের প্রাসাদ. ষড়যন্ত্রের স্বীকারে পরিণত হয়। মেজো কুমারের উল্লেখযোগ্য কোনো গুণাবলি ছিল না। তিনি শিকারে যেতেন, টমটম হাঁকাতেন। চেহারা রাজাদের মতো হলে কী হবে, চালচলন, পোশাক-আশাকে তাকে রাজপরিবারের সদস্য বলে মনেই হতো না। অন্য দুই কুমারের মতো বেহায়াপনার সঙ্গে বাড়তি যা বলার ছিল তা হলো মেজো কুমার একটা কুৎসিত ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন (তাঁর বেশ কয়েকজন রক্ষিতা ছিলো বলেও জানা যায়। ১৯০৫ সাল নাগাদ তিনি যৌন রোগ সিফিলিসে আক্রান্ত হন)। ধীরে ধীরে মেজো কুমারের দেহে রোগ বাড়তে থাকলে সবাই বুঝতে পারেন ঢাকার চিকিৎসকরা রোগের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারছেন না। সুতরাং কলকাতায় যাওয়া চাই।

  • বিভাবতীর ভাই সত্যেন্দ্রনাথের হঠাৎ আবির্ভাব এবং মেজো কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ রায়ের মৃত্যু রহস্যঃ- রাজমাতার মৃত্যুর পর পরই ১৯০৮ সালে রানী বিভাবতীর ভাই সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভাওয়াল রাজবাড়িতে প্রবেশ করেন। সত্যেন্দ্র রাজবাড়িতে এসেছিলেন মূলত শিলং এ ডেপুটির চাকরি নেবেন বলে। কিন্তু জমিদারি পরিচালনায় কুমারদের দুর্বলতা দেখে তিনি রাজবাড়িতে জেঁকে বসেন। এমনকি রাজবাড়িতে রানী বিভাবতীর চেয়েও বেশি প্রতাপে চলতেন তিনি। মেজো কুমারকে কলকাতায় চিকিৎসা করানোর জন্য যারা তার সঙ্গে গিয়েছিলেন. তাদের মাধ্যে বিভাবতীর ভাই সত্যেন্দ্রনাথও ছিলেন। যদিও তার মা তাকে জয়দেবপুর থেকে উত্তরপাড়ার বাড়িতে যেতেই তাগাদা দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি মায়ের কথা কানেই তোলেননি।

তাছাড়া ছোট কুমার পরে যাবেন বলে রয়ে গেলেন। তবে বড় কুমার ও তার স্ত্রী, মেজো কুমার ও বিভাবতীর সঙ্গে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯০৯ সালে মেজোকুমার রামেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর কথিত মৃত্যুর পর এস্টেটের এক তৃতীয়াংশের মালিকানা চলে যায় তাঁর কথিত বিধবা স্ত্রী বিভাবতী দেবীর হাতে। বিভাবতী তাঁর ভ্রাতা সত্যেন্দ্রনাথ এর হাতে এস্টেটের এক তৃতীয়াংশের ভার ছেড়ে দিয়ে কোলকাতায় গিয়ে বিধবা বেশে জীবন যাপন করতে থাকেন। বড় কুমার রণেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরি ১৯১২ সালে এবং ছোট কুমার রবীন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরি ১৯১৩ সালে উভয়ে নিঃসন্তান অবসস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। অবশ্য ছোট কুমারের স্ত্রী আনন্দ কুমারী দেবী পরবর্তীকালে কুমার রাম নারায়ণ রায় চৌধুরি নামক একজনকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

ভাওয়াল রাজ বংশের তিন কুমারের মৃত্যুর পর ১৯১৩ সালে ব্রিটিশ সরকার ভাওয়াল রাজ এস্টেট পরিচালনার ভার কোর্ট অব ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ১৮৭৯ এর ৬ ধারার ক্ষমতা বলে গ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন বলে ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘটলেও, আইনগত জটিলতার কারণে ভাওয়াল এস্টেটের কিছু কিছু সম্পত্তি এখনও কোর্ট অব ওয়ার্ডস ভাওয়াল রাজ এস্টেট নামে, বাংলাদেশ সরকার ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ভূমি সংস্কার বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করছেন।

  • চুড়ান্ত মৃত্যুর মুখোমুখি মেজো কুমার রমেন্দ্র নারায়ণঃ- ১৯০৯ সালের ১৮ এপ্রিল, চিকিৎসার প্রয়োজন এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য ২৪ বছরের মেজকুমার রাজা রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরি পারিবারিক সিদ্ধান্তে ভারতের দার্জিলিং-এ বেড়াতে যান। উক্ত সফরে তার সঙ্গী হন ২০ বছরের স্ত্রী (মেজরাণী) বিভাবতী দেবী, বিভাবতীর ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, পারিবারিক চিকিৎসক ডাঃ আশুতোষ দাস গুপ্ত এবং ব্যক্তিগত কর্মচারি সহ প্রায় ২৭ জনের একটি দল। এবং দলবল নিয়ে ১৯০৯ সালের ২৫ এপ্রিল মেজকুমার দার্জিলিং গিয়ে পৌঁছান।

দার্জিলিং যাওয়ার মাত্র ১৫ দিন আগে মেজকুমার সালনা কাছারির কাছে জোলারপাড় জঙ্গলে বাঘ (রয়েল বেঙ্গল টাইগার) শিকার করে একটি ছবি তুলেছিলেন। এ ছবিটিই টাইগার ফটো নামে পরিচিত। এবং এই ছবিটাই উনবিংশ শতাব্দীর একটি অন্যতম ছবি হিসেবে বাংলাদেশ আর্কাইভস প্রদর্শণীতে স্থান পায়। কিন্তু দার্জেলিং পৌঁছানোর কিছুদিনের মধ্যেই মে মাসের ৫ তারিখের দিকে মেজো কুমার হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

মেজো কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ অসুস্থ হয়ে পড়লে আশু ডাক্তার পেট ফাঁপার অজুহাতে তাকে এক পুরিয়া ওষুধ দিয়েছিলেন। কিন্তু ৬ মে ১৯০৯ সালে রাত ৩টার দিকে মেজো কুমার আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থা দেখে আশু ডাক্তার সে রাতে আর ওষুধ দেননি বরং পর দিন সিভিল সার্জনের কাছে আরও ভালো চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করেন। স্ত্রী বিভাবতী যথাসম্ভব স্বামীর কাছে থাকতে চাইলেও তার ভাই সত্যেন্দ্র চিকিৎসকদের পরামর্শ ক্রমে মেজো কুমারকে আলাদা ঘরে রাখেন। সিভিল সার্জন এক ধরনের তরল জাতীয় ওষধ মেজো কুমারকে খেতে দিয়েছিলেন। উক্ত চিকিৎসার পর থেকে মেজো কুমারের অবস্থা কখনো-সখনো ভালোর দিকে গেলেও, আসলে সেটা যে দিনকে দিন খারাপের দিকেই এগোচ্ছিল তা কেউই বুঝতে পারেনি।

৮ মে স্থানীয় ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের ডাক্তার ক্যালভার্ট মেজো কুমারের যন্ত্রণা দেখে মরফিয়া ইনজেকশন দিতে চাইলেন, কিন্তু মেজো কুমার ইনজেকশান নিতে রাজি হননি। অবশ্য বিকালের দিকে মেজো কুমার ইনজেকশন নেন এবং এতে করে পেটের ব্যথা কমে যায়। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি বেশ কয়েকবার বমি ও রক্তমিশ্রিত পায়খানা করার কারণে ভয়াবহ রকমের দুর্বল হয়ে পড়েন। মেজো কুমারের শারীরিক অবস্থা নিয়মিত দার্জিলিং থেকে টেলিগ্রাম করে রাজ বাড়িতে জানানো হচ্ছিল। রানী বিভাবতীর মামা, ‘বিবি সরকার’ নামে একজন ডাক্তার নিয়ে এসে মেজো কুমারের অবস্থা দেখে যান। তখন মেজো কুমারের অবস্থা বিশেষ ভালো নয়, গা শীতল হয়ে গেছে। ডাক্তার সরকার মেজো কুমারকে মৃত বলে ঘোষণা করে গিয়েছিলেন বলে জানা গেলেও, স্ত্রী বিভাবতী সেটা পরবর্তীতে অস্বীকার করেন।

এদিকে মেজো কুমারের এই অসুস্থতা আরো দিনকে দিন বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দার্জিলিং থেকে জয়দেবপুর রাজ বাড়িতে তার বার্তার মাধ্যমে রাজার (মেজ কুমার) স্বাস্থ্যের খবর পাঠানো হতো। প্রথম টেলিগ্রামে রাজার ৯৯ ডিগ্রি জ্বর, পরের টেলিগ্রামে জ্বর বৃদ্ধি, পেটে যন্ত্রণা, দার্জিলিং সিভিল সার্জন দেখে গেছেন ইত্যাদি খবর আসতে থাকে। ৭ মে সন্ধ্যা থেকে কুমারের অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকে। কারণ ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও বমি, রক্ত মিশ্রিত পায়খানা ইত্যাদী হতে থাকে। এবং ৮ মে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে কোনো এক সময় মোজো কুমার রাজা রমেন্দ্র নারায়ণের মৃত্যু হয়েছে, বলা হয়। কিন্তু রাজ কুমারের মৃত্যুর সাথে সাথে হঠাৎ করে এখানে একটি রহস্যের সৃষ্টি হয় যে, মেজো কুমার ঠিক কখন মারা গিয়েছিলেন? সন্ধ্যায়, নাকি মাঝরাতে? স্টপ অ্যাসাইড বাড়ির দারোয়ানসহ অনেকেই বলেছেন, মেজো কুমার সন্ধ্যায় মারা গিয়েছিলেন। অথচ মেজো রানী ও তার ভাই সত্যেন্দ্র সবসময় বলে এসেছেন মেজো কুমার মাঝরাতে মারা গিয়েছিলেন। তাছাড়া মোজো কুমারের মৃত্যুর সাথে সাথে আর বেশি দেরি না করে দার্জিলিংয়ের কোন এক শ্মশানে তড়িঘড়ি করে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। ১০ মে সকালে মেজো কুমারের মৃত্যুর খবর টেলিগ্রাম করে, সবাই দার্জিলিং ত্যাগ করে জয়দেবপুরের উদ্দেশে রওনা করেন। ১১ মে মধ্যরাতে মেজো রানী বিভাবতী সহ অন্যান্যরা জয়দেবপুরে ফিরে আসেন। এবং যথারিতী রাজবাড়িতে তখন শোকের ছায়া নেমে পড়ে।

  • রাজা রমেন্দ্র নারায়ণের মৃত্যু রহস্যের গুজব এবং পূনরায় মেজো কুমারের প্রাদূর্ভাবঃ- গতানুগতিকভাবে এ কাহিনী এখানেই শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু ভাওয়ালের এ রাজার জীবন-মৃত্যুর কাহিনীর এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটেনি, বরং পরবর্তিতে তা আরো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। কারণ বিধাতা বোধ হয় মেজো কুমারের ভাগ্যলিপিতে এটাই লিখে রেখে ছিলেন। শ্রাদ্ধর দিনই গুঞ্জন ওঠে, যে মেজকুমারের দেহের সৎকার নাকি ঠিক-ঠাক ভাবে হয়নি। তাছাড়া ওই দিন শ্মশান ঘাটে মেজকুমারের লাশ নেওয়ার পর শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টি। এর মধ্যে লাশ ফেলে লোকজন শ্মশান ঘাট থেকে অন্যত্র আশ্রয় গ্রহণ করেন। কিন্তু বৃষ্টির পর শ্মশানে গিয়ে তারা আর কোথাও লাশটি দেখতে পাননি। তারপরেও ঘটনার রহস্য বেশ কিছুদিন মাটি চাপা পড়ে ছিল। কেননা লাশ সৎকার করতে যারা এসেছিল, তাদের প্রায় প্রত্যেককেই মোটা অংকের টাকা খাইয়ে সমস্থ ঘটনাকে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। যার ফলে সেদিন রাতে আসলে ঠিক কি ঘটেছিল তা চাপা পড়ে গেল চির কালের মত। কেউ জানতে পারলো না তা আর!

কিন্তু কোনোমতে গুজব এড়িয়ে শ্রাদ্ধ করা হলেও, আস্তে আস্তে গুজবটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ল। এদিকে হিসাবের গোলমালে ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ম্যানেজার মিঃ সেনের চাকরি তখন যায় যায়। সত্যেন্দ্র তার বোনকে নিয়ে ম্যানেজার সেনের সঙ্গে পরামর্শ করে, মিস্টার সেনের পরিবর্তে মিস্টার নিডহাম নামক এক নতুন ম্যানেজার নিয়োগ দিলে ষড়যন্ত্র আরও গভীরে গিয়ে ঠেকে। অবশ্য ততদিনে ষড়যন্ত্র ছাড়াই সত্যেন্দ্র রাজবাড়ির কর্তৃত্ব নিয়ে নিয়েছিল। কারণ তিন বছরের ব্যবধানে ছোটকুমার ও বড় কুমার মারা গেলে রাজবাড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। রাজবাড়ির তিন রানীই ছিলেন সন্তানহীনা এবং তারা সবাই কলকাতায় পাড়ি জমান। ভাওয়াল রাজ এস্টেটের অবস্থা তখন খুবই করুণ, রাজকোষে যা ছিল ষড়যন্ত্রকারীরা তার সবই ইতোমধ্যে লুটে-পুটে নিয়েছে।

এদিকে ভাওয়াল এস্টেটের অবস্থা যতই দুর্বল হচ্ছিল, মেজো কুমার জীবিত আছেন এবং তিনি একদিন ফিরে আসবেন এ গুজব ততই শক্তিশালী হচ্ছিল। ঠিক তার চারমাস পরে হঠাৎ করে রাজবাড়ির ভেতরে মাধববাড়িতে একজন মৌনসন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। আর তখনই শুরু হয় নতুন উত্তেজনা। চারদিকে খবর রটে যায় ভাওয়াল রাজ মেজো কুমার ফিরে এসেছেন। জনসাধারণ, প্রজা, ভাওয়াল এস্টেটের কর্মচারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে সন্ন্যাসীকে দেখতে। এছাড়া ১৯২১ সালে ঢাকার বাকল্যান্ড বাঁধের কাছে এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাবের বক্তব্য পাওয়া যায়। জটাচুল, ঘন দাড়ি, সারা গা ভস্মাচ্ছাদিত সন্ন্যাসীর সামনে ধুনি জ্বলছে। রাস্তার লোকেরা তাকে ফিরে ফিরে দেখে যেত। লোকেরা তার সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলত। পরিচয় জানতে চাইলে সন্ন্যাসী বলতেন, আত্দ পরিচয় দিতে গুরুর নিষেধ আছে। তবে কেউ কেউ তখনই সন্ন্যাসীকে ভাওয়াল রাজা বলে সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন।

ঢাকার রুপলাল রায়ের বাড়িটা ছিল তৎকালিন সময়ের একটা দ্রষ্টব্য স্থান। সেই রুপ বাবুর বাড়ির সামনেই স্থান নিলেন সন্যাসী। রোদ বৃষ্টির মাঝে তিনি সব সময় সেখানে বসে থাকতেন। তার বেশ ভূষা এবং আচার ব্যবহারের জন্য তিনি খুব দ্রুত অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অনেকদিন পর আদালতে স্বাক্ষ্য দেওয়ার সময় একজন যেমন বললেন, ‘এমন সুন্দর সুশ্রী জটাধারী সন্যাসী ঢাকায় আগে কখনো দেখেছি বলে তো মনে হয় না।’ প্রয়শই এই সাধুকে ঘিরে একটা ছোট খাটো ভিড় জমে যেত। ওষধ চাইলে তিনি মাদুলি তাবিজের বদলে তার শরীর থেকে এক চিমটি ছাই তুলে দিতেন। সাধুর ঢাকায় আসার প্রায় চার মাস পরে ভাওয়াল রাজ পরিবার থেকে প্রথম তাকে দেখতে যায় কুমারদের বোন জ্যোতিমর্য়ীর ছেলে বুদ্ধু। জয়দেব পুরের পাশের গ্রাম কাশিমপুরের কয়েকজন ভদ্রলোককে সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধু সন্যাসীকে দেখে আসার পরেও কিন্তু নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারলো না। সন্যাসীর সঙ্গে মেজো কুমরের মিল ছিল ঠিকই, কিন্তু এই সাধুই যে তার মেজো মামা মৃত্যুর দ্বার থেকে জীবন্ত ফিরে এসেছে; এমন কথা বুদ্ধু জোর গলায় বলতে পারলো না।

কাশিমপুরের লোকজন তখন স্থির করলেন সন্যাসীকে একদিন স্ব-শরীরের ভাওয়ালে নিয়ে আসতে হবে। ১৯২১ সালের ৫ এপ্রিল কাশিমপুরের অতুল প্রসাদ রায় চৌধুরি সন্ন্যাসীকে রাজবাড়িতে নিয়ে আসেন। মাধববাড়িতে ছাইমাখা সন্ন্যাসীর আগমন সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে প্রজাদের মাঝে নতুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ঢাকা থেকে বাঁধিয়ে আনা অন্য কুমারদের ছবিগুলো সন্ন্যাসীকে দেখতে দেওয়া হলে, সেটা দেখে সন্ন্যাসী কাঁদতে আরম্ভ করেন। তার কান্না দেখে রাজ কন্যা জ্যোতির্ময়ী দেবীও কেঁদে ফেলেন। পরে অষ্টমী স্নান উপলক্ষে সন্ন্যাসী আবার ঢাকায় ফিরে যান। কিন্তু ৩০ শে এপ্রিল সন্ন্যাসী চন্দ্রনাথ আর সীতাকুণ্ড থেকে আবার জয়দেবপুরের রাজবাড়িতে ফিরে আসেন। তার দুদিন বাদে চিলাইখালে সন্ন্যাসী স্নান করতে গেলে জ্যোতির্ময়ী দেবী সন্ন্যাসীর গায়ে মেজো কুমারের বিশেষ দাগগুলো দেখতে পান।

মূলত সন্যাসীকে কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ হিসাবে মানুষের কাছে পরিচিত লাভ করানোর ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেন তার বোন জ্যোতির্ময়ী দেবী। তাছাড়া ইতোমধ্যে সন্ন্যাসীর আচরণ, কথন, চাহনি, গায়ের প্রকৃত রং, চেহারা ইত্যাদি মেজো কুমারের সঙ্গে বিশেষ মিল থাকায়, সন্ন্যাসীকে কথিত মৃত মেজো কুমার রমেন্দ্রনারায়ণ বলেই বেশি সন্দেহ করা হয়েছিল। তাছাড়া তার গায়ের কাঁটা দাগ ও কয়েকটি জন্মগত দাগ হুবহু মিলে যাওয়ায় জ্যোতির্ময়ী দেবী সরাসরি সন্ন্যাসীর পরিচয় প্রকাশ করতে ব্যাপক চাপ দেন। এবং তিনিই প্রথম মেনে নেনযে এই সন্যাসীই তার হারানো ভাই কথিত মৃত মেজো কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ। বোন জ্যোতির্ময়ী দেবীর এই সন্দেহ ক্রমে ক্রমে ভাওয়াল পরগনার হাজারো প্রজার মনের প্রশ্ন হয়ে সন্ন্যাসীর সামনে এসে দাঁড়ায়।

রাজপরিবারের সদস্য এবং প্রজারা সন্ন্যাসীর উত্তরের জন্য রাজবাড়িতে ভিড় করতে থাকে। তাছাড়া সারা জয়দেবপুরে রটে যায় এ খবর। সেদিন সকালেই হাজারো প্রজার সামনে জ্যোতির্ময়ী দেবী সন্ন্যাসীকে বলেন, “তোমার চেহারা আর শরীরের চিহ্নগুলো আমার মেজো ভাইয়ের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। তুমিই আমার নিরুদ্দিষ্ট মেজো কুমার। তোমার পরিচয় প্রকাশ কর।”

এছাড়াও তিনি এমন শর্তও প্রয়োগ করেন যে, উক্ত সন্যাসী যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে মেজো কুমার বলে স্বীকার না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি জল স্পর্শ করবেন না। উপস্থিত জনতাও তখন অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিল সন্ন্যাসী কী জবাব দেন সেটা জানার জন্য। কিন্তু সন্ন্যাসী তখনই কোনো জবাব দেননি। তারপর ইচ্ছাতেই হোক অথবা অনিশ্চাতেই হোক, শেষ বিকালের দিকে জনতার কৌতূহলের অবসান ঘটিয়ে সন্ন্যাসী বলতে শুরু করেন, ‘আমার নাম রমেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী।’

উৎসুক জনতার মাঝ থেকে প্রশ্ন আসে তোমার মায়ের নাম কী? সন্ন্যাসী জবাব দেন, রানী বিলাসমণি। আবারও প্রশ্ন আসে আপনাকে যে মানুষ করেছিল সেই দাইয়ের নাম কী? মৃদু কম্পমান গলায় সন্ন্যাসী উত্তর করেন, অলকা। তারপর ধাত্রী মায়ের নাম বলেই সন্ন্যাসী অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান।

ধাত্রী মায়ের নাম সঠিকভাবে উত্তর করার সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত জনতা উলুধ্বনি ও জয়ধ্বনি করে ওঠে। রাজবাড়ি মুহুর্মুহু কেঁপে ওঠে সমবেত জনতার জয়ধ্বনিতে। প্রজারা বলাবলি করতে শুরু করে, তিনিই প্রকৃত মেজো কুমার। এস্টেট যদি তাকে কুমার বলে গ্রহণ না করে তবুও প্রজারা তাকে মেজো কুমার বলেই গ্রহণ করবে। তার সঙ্গে কুমারের মতোই আচরণ করবে। অনেকে তখনই কুমারকে নজরানা দিতে শুরু করে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইংলিশম্যান কাগজে ৭ মে ‘ঢাকার সেনসেশন’ শিরোনামে সন্ন্যাসী নিজেকে ভাওয়াল রাজা মেজো কুমার বলে দাবি করেছেন বলে একটি খবর প্রচার করে। জ্যোতির্ময়ী দেবীর পাশাপাশি রানী সত্যভামা দেবীও যখন সন্ন্যাসীকে মেজো কুমার বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, স্ত্রী বিভাবতী তখন পর্যন্ত সন্ন্যাসীর কোনো খোঁজ-খবরই নেননি। জ্যোতির্ময়ী দেবী সন্ন্যাসীর কাছ থেকে তার গুরুর নাম জেনেছিলেন, ধরম দাস। পরবর্তিতে ধরম দাসকে খুঁজে সন্ন্যাসীর ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে, তারা সন্ন্যাসীর পক্ষেই কথা বলেছিলেন। কিন্তু পুলিশের ভয়ে ধরম দাস দ্রুতই ঢাকা ত্যাগ করে। তবে পরবর্তীতে ধরম দাস ও তার দলের অন্য সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে সবিস্তারে তাদের সাক্ষ্য পাওয়া গিয়েছিল।

তারপর ১৯২১ সালের ১৫ মে রাজবাড়ির সামনের খোলা ময়দানে এক বিশাল প্রজা সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জয়দেবপুর রাজবাড়ির সামনের ময়দানে সেদিন ভোরের দিক থেকে জয়দেবপুর গামী মানুষের ঢল নামতে শুরু করলো। ঢাকা আর ময়মনসিংহ জেলার হাজার হাজার লোক সেই সমাবেশে এসেছিল। সেদিন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক রেল কোম্পানির স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হলেও, নানা স্থান থেকে উৎসুক জনতা আরো বিভিন্ন মাধ্যমে করে জয়দেবপুরের দিকে রওয়ানা হতে থাকে। এবং দুপুরের মধ্যে লোক সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০,০০০ হাজারেরও বেশিতে গিয়ে উপনিত হয়। উক্ত প্রজা সমাবেশে স্থানীয় জমিদার আদিনাথ চক্রবর্তি কুমারের ফিরে আসা এবং সনাক্ত করণের ঘটনা গুলি স্ব-বিস্তার বর্ননা করেন। আদিনাথ চক্রবর্তি সমাবেশে উপস্থিত সবার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেন- ‘কে কে বিশ্বাস করেন, এই সন্যাসিই কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ?’

হাজার হাজার মানুষ হাত উঠিয়ে তাদের সম্মতি জানায়। আর অন্যদিকে বিপক্ষে একটাও হাত ওঠেনি। ওদিকে কুমার রমেন্দ্র নারায়নের নামে খবরের কাগজে বিভিন্ন ভুয়া প্রজ্ঞাপন জারি হতে থাকে। খবর জানা-জানি হলে প্রজারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গোলমালে ঝুমুরানী নামে এক প্রজাও মারা যায়। ব্যাপারটা তখন শুধু আর সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে রইলো না। গোলমালে প্রজারা ক্ষেপে যায় এবং এক পর্যায়ে ইংরেজ সরকারকে খাজনা দেওয়াও বন্ধ করে দেয়। আর এদিকে সন্যাসী তখন বোন জ্যোতিমর্য়ী দেবির বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। এরই মাঝে রাণী সত্যভামা দেবি কলকাতা থেকে ঢাকায় জ্যোতিমর্য়ীদেবির বাসায় এসে সন্যাসীকে দেখে মতামত দেন যে, সন্যাসীই কথিত মৃত মেজো কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ রায়। এমনকি সেই সময় রানী সত্যভামা দেবী মেজো কুমারের স্ত্রী বিভাবতীকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু রানী বিভাবতী সে চিঠি গ্রহণ করেননি এবং নিজে সন্ন্যাসীর ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহও দেখাননি।

ক্রমশ…

তথ্যসূত্র:
A Princely Impostor? The Strange and Universal History of the Kumar of Bhawal, Partha Chatterjee.
A Prince, Poison and Two Funerals: The Bhowal Sanyasi Case, Murad Fayezi.


লেখকের কথা: রানা চক্রবর্তী
রানা চক্রবর্তী পেশায় সরকারী কর্মচারী। নেশা ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা আর লেখালিখি। নিজেকে ইতিহাসের ফেরিওয়ালা বলতে ভালবাসেন।

আগের ও পরের পর্বের লিঙ্ক<< ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা – জানা অজানা তথ্য (প্রথম পর্ব)ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা – জানা অজানা তথ্য (শেষ পর্ব) >>
শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।