ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা – জানা অজানা তথ্য (প্রথম পর্ব)

লেখক : রানা চক্রবর্তী

অধুনা বাংলাদেশের ভাওয়াল পরগনার (বর্তমানের গাজীপুর জেলা) মেজো কুমার রাজা রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরি কে ঘিরে যে চাঞ্চল্যকর মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল, সেটাই মূলত ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা নামে পরিচিত। যা শুরু হয়েছিল ১৯৩০ সালে এবং শেষ হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। ১৬ বছর যাবৎ এ মামলার ফলাফল জানার জন্য সারা দেশের মানুষ শেষ দিন পর্যন্তও উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষায় করছিল।

  • ভাওয়াল রাজবাড়ীর পরিচিতিঃ- ভাওয়াল রাজবাড়ী অবিভক্ত ভারতবর্ষের বাংলা প্রদেশের ভাওয়াল এস্টেটে, যা বর্তমানে বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত একটি রাজবাড়ী। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বহুকাল পূর্বে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীর হতে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা পার হয়ে সুসং পাহাড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগের মধ্যে ‘জয়ানশাহি’ নামে একটি গহীন অরণ্য অঞ্চল ছিল। এর উত্তরাংশকে বলা হতো ‘মধুুপুরের অরণ্য অঞ্চল’ এবং দক্ষিণাংশকে বলা হতো ‘ভাওয়ালের অরণ্য অঞ্চল’। ঐতিহাসিকগন মনে করেন, উত্তর-দক্ষিণে এই অরণ্য অঞ্চলের দৈর্ঘ্যে ছিল পঁয়তাল্লিশ মাইল এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রস্তে ছিল ছয় থেকে ষোল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্বাদশ শতাব্দির পরবর্তী কালে প্রায় ছয়’শ বছর পাঠান ও মুঘলরা এদেশ শাসন করে। তাঁদের আমলে এই আরণ্যকের মাঝখানে গড়ে উঠে এক প্রশাসনিক অঞ্চল, যেটা সেখানকার স্থানীয় মানুষের কাছে ‘ভাওয়াল পরগণা’ নামে পরিচিত। ভাওয়াল পরগণার উত্তরে আটিয়া ও আলেপসিং পরগণা, দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা, পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদী ও মহেশ্বরদি পরগণা এবং পশ্চিমে কাশিমপুর ও দুর্গাপুর পরগণা অবস্থিত। বর্তমান গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও ঢাকা জেলার কতেকাংশেও ছিল ভাওয়াল পরগণার অবস্থান।

বিংশ শতকের প্রারম্ভে এই ভাওয়াল রাজ এস্টেটকে নিয়ে একটি বিখ্যাত মামলা হয়েছিল, যা ভাওয়ালের জমিদার বংশের মেজো কুমার রাজা রমেন্দ্র নারায়ণ রায়কে ঘিরে। যে মামলাটি অনেকের কাছেই ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা’ নামে আজও বিখ্যাত হয়ে আছে। এছাড়া বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক ‘উত্তম কুমার’ অভিনীত ‘সন্ন্যাসী রাজা’ নামের বাংলা চলচ্চিত্রটিও তৎকালিন সময়ে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল, যার ঘটনা এই ভাওয়াল রাজবাড়িকেই কেন্দ্র করে। এই রাজবাড়ীর আওতাধীন ভাওয়াল এস্টেট প্রায় ৫৭৯ বর্গমাইল (১,৫০০ কিঃ মিঃ) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল, যেখানে প্রায় ৫ লক্ষেরও বেশি প্রজা বসবাস করতো। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির ঠিক আগ মূহুর্ত্বে ভাওয়ালের জমিদার বংশের রাজ কুমার মেজো রাজা রমেন্দ্র নারায়ণ রায় ও তার আরো দুই ভাই বড় কুমার রাজা রণেন্দ্র নারায়ণ রায় এবং ছোট কুমার রাজা রবীন্দ্র নারায়ণ রায় মিলে এই জমিদারীটি দেখাশোনা করতেন।

ভাওয়াল রাজ এস্টেট, পরিধি এবং আয়ের দিক থেকে পূর্ব বাংলায় নওয়াব এস্টেটের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারি হিসাবে বিবেচিত ছিল। ভাওয়াল জমিদার বংশের পূর্বপুরুষগণ মুন্সিগঞ্জের অন্তর্গত বজ্রযোগিনী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। এই বংশের জনৈক পুরুষ বলরাম সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে ভাওয়াল পরগনার জমিদার দৌলত গাজীর দেওয়ান হিসেবে কাজ করতেন। বলরাম এবং তার পুত্র শ্রীকৃষ্ণ তৎকালীন বাংলার দেওয়ান মুর্শিদকুলী খানের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন এবং কৌশলে গাজীদের বঞ্চিত করে জমিদারি হস্তগত করেন।

রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে মুর্শিদকুলী খান বহু মুসলমান জমিদারকে বিতাড়িত করে তদ্স্থলে হিন্দু জমিদার নিযুক্ত করেন। অনেকে ধারনা করেন যে, ভাওয়ালের গাজীগণ মুর্শিদকুলী খানের এই নীতির কারণেই মূলত তাদের জমিদারি স্বত্ব হারান। এবং ১৭০৪ সালে শ্রীকৃষ্ণকে ভাওয়ালের জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকে এই পরিবারটি ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে এই জমিদারির অধিকারী ছিলেন। শিকারী বেশে রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং এর পরবর্তী সময়ে ভাওয়াল পরিবার বহু ছোটো-খাটো জমিদারি বা জমি ক্রয় করেন। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তিতে এই পরিবার একটি বিরাট জমিদারির মালিক হন।

১৮৫১ সালে পরিবারটি নীলকর ‘জেমস ওয়াইজ’ এর জমিদারি ক্রয় করে। এবং এই ক্রয়ের মাধ্যমেই পরিবারটি সম্পূর্ণ ভাওয়াল পরগনার মালিক হয়ে যায়। সরকারি রাজস্ব নথিপত্র থেকে এটি জানা যায় যে, ভাওয়ালের জমিদার ৪,৪৬,০০০/- (চার লক্ষ ছেচল্লিশ হাজার) টাকা দিয়ে ওয়াইজের জমিদারি ক্রয় করেন, যা ছিল সে যুগের মূল্যমানের বিচারে বেশ বড় একটি অঙ্ক। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায়, শ্রীকৃষ্ণ ওরফে কৃষ্ণ নারয়ণের মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র জয়দেব নারায়ণ এই জমিদারিটি লাভ করেন। পরবর্তিতে জয়দেব নারায়ণের নামানুসারে স্থানীয় পীরবাড়ি মৌজার নাম বদলিয়ে নতুন নাম রাখা হয় জয়দেবপুর হিসাবে। জয়দেব নারায়ণের মৃত্যুর পর তার পুত্র ইন্দ্র নারায়ণ এবং তৎপুত্র কীর্তি নারায়ণ পরবর্তিতে এই এস্টেটের জমিদার নিযুক্ত হন। কীর্তি নারায়ণের পর তৎপুত্র লোক নারায়ণ এবং তাঁর মৃত্যুর পর তৎপুত্র গোলক নারায়ণ বংশানুক্রমে এই জমিদারিটি লাভ করেন। গোলক নারায়ণের মৃত্যুর পর তৎপুত্র কালি নারায়ণ জমিদার হন। এবং ব্রিটিশ শাসকদের প্রতি আনুগত্য পোষণ ও বিরল যোগ্যতার কারণে তিনি সেই সময়ে প্রচুর খ্যাতি লাভ করতে সক্ষম হন।

১৮৭৮ সালে ঢাকার ‘নর্থব্রুক’ হলে তৎকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিয়োজিত গভর্ণর বড়লাট লর্ড লিটনকে তিনি এক জাঁকজমক পূর্ণ সংবর্ধনা প্রদান করেন। বড়লাট কালি নারায়ণের প্রভু ভক্তিতে গদগদ হয়ে উক্ত অনুষ্টানেই তাকে বংশানুক্রমিক ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এবং তারপর থেকেই মূলত তিনি মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেন ভাওয়ালের রাজা কালি নারায়ণ রায় চৌধুরী হিসেবে। কালি নারায়ণ বিখ্যাত ছিলেন বিদ্যা শিক্ষা, সৃজনশীলতা, কর্মঠো এবং বাক্কালাপেও তিনি ছিলেন অ-প্রতিদ্বন্দী। তৎকালিন সময়ে তিনি জয়দেবপুরে একটি বিদ্যালয় এবং একটি দাতব্য চিকিৎসালয়ও প্রতিষ্টা করেন।

  • রাজা রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরির পূর্ব পুরুষদের ইতিহাসঃ- রাজা কালি নারায়ণ রায় চৌধুরীর তিন স্ত্রীর মধ্যে ছোট স্ত্রীর নাম ছিল রাণী সত্যভামা দেবী। অপর দুই স্ত্রী ছিলেন রাণী যামিনী দেবী এবং রাণী ব্রক্ষ্মময়ী দেবী। কিন্তু শেষক্ত এই দুই রাণী ছিলেন একদমই নিঃসন্তান। অপরদিকে রাণী সত্যভামা দেবীর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন পুত্র রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী এবং কন্যা রাণী কৃপাময়ী দেবী। পিতার মৃত্যুর পর রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বংশানুক্রমে ভাওয়ালের রাজা হন। তিনি বিয়ে করেছিলেন বরিশাল জেলার বানারিপাড়ার অত্যন্ত গুণবতী কন্যা ‘রাণী বিলাসমণি দেবী’কে। রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী পিতার ন্যায় যোগ্য ও কৌশলী ছিলেন। রাজা উপাধিতে ভূষিত রাজেন্দ্র নারায়ণ বিখ্যাত কবি ‘কালি প্রসন্ন ঘোষ, বিদ্যাসাগর এবং সি.আই.ই’ কে ভাওয়ালের ম্যানেজার পদে নিযুক্ত করেন। এবং এই মেধা এবং যোগ্যতা বলে অতি শীঘ্রই তিনি তার জমিদারির আরো বিস্তৃতি ঘটান। আর এই সময়েই ভাওয়ালের জমিদারি স্টেটটি ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও বাকেরগঞ্জ জেলায় বিস্তৃত হয়ে পড়ে এবং পূর্ব বঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারিতে পরিণত হয়।

উল্লেখ্য যে, যদিও ঢাকার নওয়াব এস্টেটটি পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলাসমূহে জমিদারি বিস্তৃত করেছিল এবং জমিদারির প্রশাসনিক কেন্দ্র ঢাকা শহরেই অবস্থিত ছিল। কিন্তু ঢাকা শহরের অংশবিশেষ ও আশপাশের প্রায় সকল জমির মালিকই ছিলেন ভাওয়াল রাজা কুমার রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরি। ১৯১৭ সালে ভূমি জরিপ ও বন্দোবস্ত রেকর্ড থেকে জানা যায় যে, ভাওয়াল পরিবারটি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ‘২২৭৪টি মৌজায় ৪,৫৯,১৬৩.৩ একর জমির’ মালিক ছিলেন। ১৯০৪ সালে জমিদারিটি সরকারকে বাৎসরিক ৮৩,০৫২/- টাকা রাজস্ব হিসেবে প্রদান করে এবং সকল খরচ-খরচা বাদ দিয়ে বছরে প্রায় ৪,৬২,০৯৬/- টাকা নিট আয় করে।

  • ভাওয়াল রাজ এস্টেটের নামকরণঃ- বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় ভাওয়াল অঞ্চলের নাম নিয়ে রয়েছে নানা মহলের নানা অভিমত। এসব অভিমতের পেছনে কোন দলিল-দস্তাবেজ, শিলালিপি, প্রাচীন স্তম্ভ কিংবা মৃৎলিপি বা গ্রহণযোগ্য তেমন কোন প্রামাণ নেই। তবে মজার ব্যাপার হলো, এই নামকরণের বিষয়টি মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত রয়েছে প্রায় যুগ হতে যুগান্তর পর্যন্ত। আর মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত সেই সমস্ত অভিমতের কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলোঃ-

১) রাজা ভবপাল বা ভদ্রপালের নাম হতে ভাওয়ালঃ- অনেক ঐতিহাসিকরা মনে করেন, পাল শাসনামলে এ অঞ্চল পাল বংশের রাজ্যভুক্ত ছিল। পাল রাজাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজা ভবপাল বা ভদ্রপাল। এই ভদ্র পালের এক অধঃস্তন পুরুষ মহারাজা শিশুপাল এক সময়ে এ অঞ্চল শাসন করতেন। অনেকে মনে করেন রাজা ভবপাল বা ভদ্রপালের নামানুসারে এবং তার সময়েই এই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে ভাওয়াল নামে।

২) ভগালয় হতে ভাওয়ালঃ- ভগ+আলয় হতে ভগালয় শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ভগ শব্দটির আবিধানিক অর্থ হলো- ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য। এই ছয়টি ভগ বা গুণের যিনি অধিকারী, তিনিই হলেন ভগবান। আলয় শব্দের অর্থ হলো- নীড়, ঘর, বাড়ি, আশ্রয়স্থল, নিকেতন বা ভবন ইত্যাদি। তাহলে ভগালয় শব্দের আবিধানিক অর্থ দাঁড়ায়- খ্যাতিমান, যশ্বসী, বিক্রমশালী বা সম্পদশালীর ভবন বা নিকেতন। আর এই অঞ্চলে সম্পদ বা ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য থাকার কারণে ভগালয় হতে ভাওয়াল শব্দের উৎপত্তি বলে অনেকে ধারণা করে থাকেন।

৩) রাজা ভগদত্তের নাম হতে ভাওয়ালঃ- পৌরাণিক তথা মহা ভারতের যুগে ভগদত্ত নামে এক বিক্রমশালী রাজা ছিলেন। তিনি এ এলাকা শাসন করতেন বিধায় তাঁর নামানুসারে ভাওয়াল শব্দটি এসেছে বলেও অনেকে মনে করে থাকেন।

৪) আঁতিভোয়াল থেকে ভাওয়ালঃ- অনেকে মনে করেন, প্রথম দিকে এই এলাকাকে আঁতিভোয়াল বা আঁতিভোল নামে ডাকা হতো। তারা প্রমাণ স্বরূপ উল্লেখ করেন যে, ভাওয়ালের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে আঁতিভোল নামে একটি প্রাচীন নগরী অবস্থিত ছিল। আটিয়া ও ভাওয়াল সন্নিহিত দুটি পরগণার নাম আঁতিভোল হতে এসেছে। আর তাদের ধারণা এই আঁতিভোয়াল শব্দ থেকেই মূলত ভাওয়াল নামের উৎপত্তি হয়েছে।

৫) হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে ভাওয়ালঃ- এছাড়াও হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এক সময় ভাওয়াল পরগনা শাষন করতেন শিশুপাল। তিনি দেবতা লক্ষ্মী নারায়ণের প্রতিমূর্তি ছিলেন। শিশুপাল ছিলেন স্বর্গের দ্বার রক্ষক। কিন্তু তিনি দেবতার প্রহরীদের দেখে বিভিন্ন সময় হাসি ঠাট্টা করতেন। দেবতা প্রচন্ড রেগে গিয়ে তাকে অভিশাপ দেন। এবং স্বর্গ থেকে তাড়িয়ে দেন। শিশুপাল তখন দানব কূলে জন্ম নিলেন। তারপর এক সময় দানবদের রাজাও হলেন। রাজা হয়েই তিনি প্রথমে কামরুপ কামাখ্যা এবং ভাওয়াল পরগনা দখল করে নিলেন। তারপর তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার দিঘি সিটে তার রাজ প্রসাদ নির্মান করেন। আজও দিঘির সিটে তার সেই রাজ প্রসাদের ধ্বংশাবশেষ পাওয়া যায়। শিশু পালের মৃত্যুর পর ঐ এলাকায় চন্ডাল রাজ বংশের প্রদূর্ভাব হয়। চন্ডালদের পর পাঠান শাসক গাজী পরিবাররের আওতাধীন চলে আসে। গাজী পরিবারের হাত থেকে পরবর্তিতে ঐ অঞ্চল চলে আসে রায় পরিবারের হাতে। তারা প্রায় দীর্ঘদিন ভাওয়াল অঞ্চল শাষন করেন। জমিদার প্রথার বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে এই পরিবার দুটিরও অবসান ঘটে বলে অনেক ঐতিহাসিকগন তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন।

ভাওয়াল নামকরণের পিছনে এরূপ আরো বহু মতামত রয়ে গেছে। তবে উল্লেখযোগ্য মতগুলো ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে ভাওয়াল গাজীর নামানুসারে ভাওয়াল পরগণার নামটিই মূলত সার্থক বলে মনে হয়।

ক্রমশ…

তথ্যসূত্র:
A Princely Impostor? The Strange and Universal History of the Kumar of Bhawal, Partha Chatterjee.
A Prince, Poison and Two Funerals: The Bhowal Sanyasi Case, Murad Fayezi.


আগের ও পরের পর্বের লিঙ্কভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা – জানা অজানা তথ্য (দ্বিতীয় পর্ব) >>

লেখক পরিচিতি : রানা চক্রবর্তী
রানা চক্রবর্তী পেশায় সরকারী কর্মচারী। নেশা ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা আর লেখালিখি। নিজেকে ইতিহাসের ফেরিওয়ালা বলতে ভালবাসেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

রুচিশীল ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ক্লিক করুন এখানে

sobbanglay forum