১৫ই আগস্ট

কবি: শান্তা মুখোপাধ্যায়

আজ টিকিট কেটেছে আমোদীবালা।
বহুবার পরা ও সদ্য কাচা শাড়ির আঁচলে
টিকিটটা বাঁধতে গিয়েও
থমকে দাঁড়িয়ে উলটে পালটে দেখছে।

সোদপুরে ওষুধকলে কাজ করে আমোদীবালা।
বোতল ধোয়ার কাজ।
ধুয়ে ধুয়ে হাতদুটো হাজা।
মজুরি ছিল তিনহাজার
গেল মাসে থেকে বেড়ে চারহাজার হয়েছে।
বাড়ি রানাঘাটে,
নিত্য যাতায়াত ট্রেনে, আর গঞ্জনা
বাহারে শাড়িপরা দিদিমনিদের-
“টিকিট তো কাটো না, সিটটা ছাড়ো না!”
আজ সেসব বালাই নেই,
তাই দৃপ্তভঙ্গিতে বসার জায়গায় বসল সে।
অবশ্য আজ ট্রেনে ভিড় নেই,
নিত্যযাত্রীর ব্যস্ততা নেই,
জানলার ধারে বসে বুকের মধ্যে যেন ঢেউ ওঠে আমোদীবালার।

কয়েকটা জোয়ান ছোকরা
ট্রেনে গান গায় ঢোল আর ক্যাসিও নিয়ে।
আমোদীবালার ভাষায়-
“ইলেকটিরির যন্তর।”
আজও উঠেছে ওরা
বাজাচ্ছে “চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত….”
তারপরই সাহায্যের জন্য হাত বাড়াবে।
আজ আমোদীবালা দুটাকা
দিতে পারে ওদের।
অবশ্য কথা শোনাতেও ছাড়ে না-
“আজকের দিনি কি গান বাজাচ্ছিস বাবা?”

দেখতে দেখতে সোদপুর এসে যায়।
নেমে পড়ে আমোদীবালা।
কারখানা আজও খোলা।
স্টেশনের গেট পার হতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ে সে।
ঘুরে টিকিটবাবুর হাতে টিকিটটা তুলে দেয়।
বাবু তো চেনাই, অন্যদিন মাথায় আঁচল দিয়ে
তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যায় আমোদীবালা।
যদিও জানে টিকিটবাবুর চোখে চোখ পড়ার ভয় নেই।
বাবু অন্যদিকে তাকিয়ে থাকবে।
দু একদিন কাউকে কাউকে ধরবে!
তখন…… উপায় জানা আছে।
আজ সেই আমোদীবালা সগৌরবে টিকিট দেখায়।
টিকিটবাবু বলে, “আজ তুই টিকিট কেটেছিস?”
“রোজ কাটতে পারিনি বাবু, বালবাচ্চার সোমসার,
তাবলে আজ কাটবুনি?”
স্টেশনের বাইরে পোঁতা তেরঙ্গার
পতপত করে ওড়া দেখতে দেখতে বলে সে।
আমোদীবালার কথায় টিকিট “বাবুর” খেয়াল পড়ে,
আজ পনেরোই আগস্ট।।


ছবি: কুন্তল


লেখকের কথা: শান্তা মুখোপাধ্যায়
জন্ম হুগলী শহরে। সেখানেই পড়াশোনা। পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সে গবেষণা। বিষয় রসায়ন। গবেষনার সূত্রে ইতালি ও জাপান যাওয়ার সুযোগ হয়। পেশা অধ্যাপনা। দুটি ছোটগল্প সংকলন, “সই” ও “আবর্ত”, একটি উপন্যাস “অবিনশ্বর” ও একটি কাব্যগ্রন্থ, “কিছু কথা হয়ত বা কবিতা” প্রকাশিত। সাময়িক পত্র পত্রিকায় এবং আনন্দবাজার রবিবাসরীয়তে লেখা প্রকাশিত। নেশা বই পড়া আর মনে মনে স্বপ্ন বোনা।

15 Comments

  1. অজ্ঞাতনামা কেউ একজন

    খুব সুন্দর ও অভিনব ভাবনার ফসল লেখাটি। এরকম একটি সৃষ্টির জন্য লেখিকাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও স্বাধীনতা দিবসের একরাশ শুভেচ্ছা।

  2. Sanjukta Sanyal Aich

    মন ছুঁয়ে যায়, আজকের দিনটা, ১৫ই আগষ্ট, আমোদীবালা এইভাবে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করছে, ভীষণ ভালো লাগল।

  3. দিলীপ মজুমদার

    কবিতাটি শেষের দিকে এসে রসোত্তীর্ণ। আমোদীবালা বোধের চৈতন্য শঙ্খে ফুঁ দিয়ে পাঠককে ভাবতে বাধ্য করায় স্বাধীনতার মর্ম। কবি তাঁর নিজস্ন মুন্সীয়ানায় পালকি চলে দুলকি চালের মতো দুলিয়ে দেয় পঠক মন। তাই কবি ও কবিতা এক সত্তায় বেঁধে ফেলে পাঠককে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

রুচিশীল ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ক্লিক করুন এখানে

sobbanglay forum