লেখক : মিটু সর্দার
আহ্ প্রেম — আহ্ হৃদয়ের লেনদেন
তৃষ্ণা মেটায় মরু, জল ঝরে ফেটে ভ্রু।
কতো কথা হ’য়ে ছিলো দু’জনার মাঝে
সাজবে না বধূ সাঁঝে, তবে ক্যানো বিরহের বাঁশি বাজে?
কাক ডাকা স্নিগ্ধ ভোরে প্রাণ চঞ্চল ঝরঝরে হৃদয়ে
হাঁটি হাঁটি পায়ে এসেছিলাম অফিসে —
সিস্টেম অন করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে-ই —
ভেসে আসে হৃদয় পুড়া গন্ধ, নির্মম চিৎকার —
প্রবাস জীবন, হয়তো জীবন থেকে হারিয়েছে স্বজন
দৌড়ে গিয়ে সতেরো-আঠারো বছরের এক স্বদেশী
বিলাপের সুরে করছে রোদন —
রক্তমাখা চোখ, ভিজছে লোনা জলে বুক —
জিজ্ঞাসিত কণ্ঠে করেছিলুম জিজ্ঞাসা
কিসের বেদনায় কাঁদছো তুমি?
ছলছল চোখের জলে ভিজছে আরব্য ভূমি।
করুণ রোদন দেখে ভেবেছিলাম —
হয়তো মা-বাবা,ভাই-বোন পরপারে পাড়ি জমিয়েছে
মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম —
কারোর মা-বাবা,ভাই-বোন চিরকাল বেঁচে থাকে না
আমারও নেই, ছোট্ট বেলায় মা’কে হারিয়েছি —
ধৈর্য্য ধরো, আঁখি জল মুছে প্রার্থনা করো।
আরেক দেশী ভাই কানের কাছে ফিসফিসিয়ে ব’লে
হায় হায়, এ কি বলছেন ভাই?
ওর বাড়িতে কেউ পরপারে যায়নি তো।
অবাক হ’য়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম —
তাহলে ক্যানো কাঁদছে, তুমি কি জানো?
মাথাটা নাড়িয়ে বললো ‘হু’ —
আমাকে টেনেটুনে নিয়ে বসালো টি-রুমে–
কড়া একটি কফি বানিয়ে দিলো হাত বাড়িয়ে
চুমুক দিতে দিতে শুনেছিলাম বিবরণ
প্রেমের শরাব পিকে মরছে জিন্দা মরা ধুঁকে।
এক রুপোলী তারা ভরা রাতে —
দীর্ঘ রেললাইনের উপর পাশাপাশি বসে —
তার প্রিয়তমা নাকি কথা দিয়েছিলো তার সাথে
আসে যদি কালবৈশাখী ঝড়, করবে না তাকে পর
বাঁধবে দু’জনে সুখের একটি ছোট্ট ঘর।
নির্জনে বসে ফুটিয়েছে ভালোবাসার কতো ফুল –
ভাবনায় আসেনি কোনটি শুদ্ধ কোনটি ভুল
কথা ছিলো হিমালয়ের মতো ভারী
সাধ্য কার এমন কথার করবে ফেরি
শক্ত কথায় দিয়ে ভর, ছাড়ে প্রেয়সীর প্রিয় ঘর।
সংসারে দারিদ্র্যতার হানা —
অলসতায় বসে বাপের অন্ন ধ্বংস করা মানা
বেকারত্ব এক অভিশাপ, তার উপর প্রেয়সীর চাপ
তার মুখে আমৃত্যু অপেক্ষার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি শুনে
পাড়ি জমায় মরুর বুকে — দারিদ্র্যতা ঘুচিয়ে —
ফিরবে ঘরে কিছু গয়নাগাটি কিনে।
তিনমাস না যেতেই এলো খবর —
প্রেয়সীর পিতা খুঁজছে বর —
ফোন দিয়ে ব’লে তাকে, চিন্তা করো না মোর তরে
বাবা খুঁজছে বর আর আমি খুঁড়ছি কবর
উষ্ণ চুমু দিলাম ঠোঁটে, ঘুমিয়ে যাও পরম সুখে।
কিছুদিন পর নাকি বললো হেসে —
সরকারি চাকুরীজীবি ছেলে বাবা নিয়েছে বেছে
থেকো না তুমি আর আমার আশে —
আসছে শুক্রবার সাজতে যাচ্ছি নতুন সাজে —
পায়ে সোনার নুপুর, কানে দোল, নাকে নোলক
মেহেদী রাঙা হাত, বেনারসিতে সাজবো রাঙা পরী
তোমার মোবাইলে পাঠিয়ে দেবো —
দু’জনার একখানা জোড়া ছবি।
কাক ডাকা স্নিগ্ধ ভোরে করছিলো যখন কাজ
প্রেয়সীর মুখে এমন কথা শুনে ভেঙে পড়ে মাথায় বাজ।
ভেঙেছে হৃদয় — ভেঙেছে স্বপ্ন
কখনো দ্যাখিনি ব্যার্থ প্রেমিকের বিলাপিনী রোদন
চোখের কোনে জল দ্যাখেনি, রক্তধারা দ্যাখেছি
চিৎকার দ্যাখিনি, আকাশের কম্পন দ্যাখেছি
দীর্ঘশ্বাসের হাওয়া অনুভব করিনি —
সোমালিয়ার সাইক্লোন অনুভব করেছি।
ভালো থেকো সকল ব্যার্থ প্রেমিকের প্রেমিকারা
সুন্দর সুশৃঙ্খল জীবন গড়ো —
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সমুদ্র সফেন দ্যাখো —
স্নিগ্ধ ভোরে জানালার ফাঁকে সবুজ ঘাসের ‘পর পাতিহাঁসের খেলা দ্যাখো
হেমন্তের ফসল কাটা মাঠে বসে —
কতটি সন্তানের মা-বাবা হবে হিসাব কষো —
আর ব্যর্থ প্রেমিকেরা চন্দ্রমুখীর নগ্ন হাতের শরাব পিকো।
১৩/০৭/২০২১ সৌদি আরব
লেখক পরিচিতি : মিটু সর্দার
মোঃ আকাইদ-উল-ইসলাম (মিটু সর্দার)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত বড়মুড়া গ্রামে ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর, এক সম্ভান্ত্রশালী মুসলিম পরিবারে কবির জন্ম। কবির পিতার নাম নূরুল ইসলাম (মাষ্টার) আর পিতামহের নাম আলতাব আলী সর্দার। কবির চার ভাই এবং দুই বোন। কবি যখন ছোট তখন মা এবং বড় ভাইকে হারান। ভাইবোনের মধ্যে কবি তৃতীয় এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। কবির যৌথ কাব্যগ্রন্থ "অনুভবের সব রঙে তুমি, রমজান সংকলন, কাব্যের উঠোনে শব্দ নাচে, ইত্যাদি। কবির ছোট বেলা থেকেই কবিতা লিখা সখ । স্কুল জীবন থেকে মাঝেমধ্যে কবিতা লিখতেন। কবি গ্রামের অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন, জোরজুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী লিখা লিখতেন।