কবি: প্রীতম বসাক
(১)
দুঃখকে আমরা সর্বসম্মতিক্রমে বেড়ে নিলাম থালায়
একটা নদীতর জীবন বসালাম পিঠে
চলো পৃথিবীর দীর্ঘ অপমান নিয়ে কথা বলি
ফেলে আসা আশ্চর্য আর নীরবতা দিয়ে পিঁড়ি বানাই
গল্পের মাঝে মাঝে বাক্যের গঠন বিষয়ে আলোচনা হবে
জীবনের মলিকুল নিয়ে
দেখে নেওয়া যাবে গড়িয়ে পড়া জলের লাবণ্য
ঘর ফুরিয়ে এলে গাছ আছে ফল আছে
আর আছে পাখি দিয়ে জড়ো করা সংখ্যালঘু গান
(২)
অন্ধকার ক্রমশ সরল থেকে জটিল বাক্যে থিতু হয়
আর তোমার ফোকাস কেঁপে ওঠে জ্বরে
তুমি বুঝতে পারো না বাইরে বৃষ্টি বাজছে কিনা
মনে হয় কারো জীবনে জল পুড়ে যাওয়ার শব্দ হচ্ছে
শরীরে হঠাৎ করে পাখির অভাব বোধ করে
দু’একটা পাগল ঝাঁপ মারে বাচ্যার্থে
কার ছেলেবেলা ওভাবে পা কেটে ফেললো রোদে ধাক্কা খেয়ে
গাছভাব কেটে গেলে যেমন মাটির রুদ্র বেরিয়ে আসে
শোকান্নের মুখোমুখি হয়ে তোমারও যুধিষ্ঠির নড়ে যায় তদ্রূপ
(৩)
বনের ভিতর দিয়ে লোভ তার ভাইয়ের হাত ধরে চলে গেছে
সেখানে ধারালো জ্যোৎস্না পড়ে থাকতে দেখেছিলে তুমি
মানুষের ধন্যবাদ ফিরিয়ে দিচ্ছে পাখি
আর শুশ্রূষাকেন্দ্র থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছে ক্ষমাসুন্দর
কত মিছিল দূরে গাছেদের শুভদিন—আলোর দোকান
কোনদিন আমাদের ছিল ময়ূরের ছলছল— ঘাসের মৃদুস্বর
রোজা ভাঙার শব্দ দিয়ে আমরা একদা সুসাস্থ্য মেখে খেয়েছি
এখন তীব্র জ্বরে ফুটে যাচ্ছে চোখের সচিবালয়
মাথা থেকে নেমে আসছে ব্যথাতুর
আমাদের নদীমুহূর্ত থেকে ফিরে যাচ্ছে ভিতু বানানবিধি
(৪)
ক্ষুধা এবং রহস্যের মাঝে
চুপ করে বসে আছে হাওয়াদপ্তর
পাখি শুনে শুনে যাদের সন্তান কথা বলা শেখে
তারা কীভাবে উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রম দেয়
স্বয়ং মাটিও জানেনা সেই উপবাক্যের খোঁজ
দেখো পুকুরের জলে দুপুর করে আসছে
এখনই তো হাঁসের পালকে নির্জন এসে দাঁড়ায়
ওই যে দূরত্বকে না জানিয়ে কাঁদছে একটি মায়া
একটু আগে যার হাসি ভেঙে গেল
পিছনে এসে দাঁড়ালো একটি শিশু
ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ওকে ঈশ্বরের মতই বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে
(৫)
শস্যের অরূপ পান করে উড়ে গেছে বিহঙ্গ
বাবা বিহঙ্গ মানে কী
বিহঙ্গ মানে হল অক্ষরের এক পিঠ
অন্য পিঠে কী আছে
অন্য পিঠে আছে পুড়ে যাওয়া জলবায়ু
এমত সংলাপের পর টুপ ঝরে পড়ে ঘাসে
বাবা আর সন্তান নিজের নিজের
গাছের কাছে রেখে আসে রোঁয়া ওঠা অধ্যায়
এই গল্পে মায়ের পাশে কোন ইমেজ রাখে নি কেউ
সে ভাত ছড়িয়ে ডাক দেয় দূরে চলে যাওয়া
ছায়াদের— তার হাতে রচিত হয় ভাষার নিজস্ব সরল
লেখকের কথা: প্রীতম বসাক
জন্ম: ১লা নভেম্বর ১৯৮০। পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায়।
পেশা: শিক্ষকতা
লেখালেখি: সবার যেমন হয়। পদ্য দিয়ে শুরু। জল পড়ে পাতা নড়ে। কিন্তু পারিবারিক কোন জিন এর জন্য দায়ী নয়। কবে যেন কবিতা আর জীবন, জীবন আর কবিতা হাত বদল করে নিয়েছে। মন চাইলে গদ্য লিখি। নিজের সাথে নিজের কথা।
নেশা: কন্যা সন্তান । বই কেনা। পড়া ততোধিক নয়। চিন্তাবিদ নই কিন্তু চিন্তা করতে পারলে আর কিছু চাই না। তখন মাঠ ঘাট নদী পাহাড় ছেলেবেলা এক সারিতে বসে।
বই: দুটি কবিতার বই। তার মধ্যে প্রথমটি পুস্তিকা– উঠোন জুড়ে আক্ষেপ এবং শেষতম পিতা-পুরাণ।
দুরন্ত—
ধন্যবাদ দাদা
অপূর্ব, আপনার লেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে পারি অন্তত কাল
সবগুলোই দারুণ। ভীষণ ভালো লাগলো।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন। আপনি বললে মনটা ভালো হয়ে যাই
লেখাগুলির ভেতর চিন্তার যে খেলা তা ভীষণ আন্তরিক আর শান্ত।
শ্রদ্ধা নেবেন আমার।
আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন। আপনার এই প্রতিক্রিয়া আমাকে আনন্দ দিল খুব
মনে হয় কারো জীবনে জল পুড়ে যাওয়ার শব্দ হচ্ছে …
চমৎকার সব লেখা পড়লাম। এই লাইনটা আমাকে ভাবাচ্ছে বারেবারেই …
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন। এমন গভীর পাঠকের জন্য লেখারা অপেক্ষা করে থাকে
বাহ, প্রীতম আপনার এই লেখাগুলি ভিন্ন স্বাদ দিল। মানে আপনার আগের ডিকশন থেকে আলাদা, এই বৈচিত্র্য ভালো লাগছে। ভাষা নিয়ে, শব্দ নিয়ে, শব্দের সহাবস্থান নিয়ে এই প্রয়াস খুবই প্রয়োজন। আরও লিখুন
লেখাগুলো অপূর্ব ! খুব অন্য স্বাদের লেখা। আমার খুব ভালো লাগলো। বুকভরা ভালোবাসা জেনো।
দাদা আপনি পড়েছেন এই তো আমার পরম পাওয়া। আপনার ভালোলাগা আমাকে একটা অনিবার্য আনন্দ এনে দিল।