আবির খেলা

লেখক : সিদ্ধার্থ সিংহ

আমাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে চিলেকোঠার ঘরে খিল তুলেছিল তোনি। আমি তো তখন রংচং মেখে ভূত। ছুটে গিয়েছিলাম ওর পিছু পিছু।
 
দোলের সময় আমরা প্রতিবারই মাসির বাড়ি যেতাম। মাসির বাড়ির সামনেই, রাস্তার উপরে দোলের আগের রাতে কাঠকুটো খড়টড় দিয়ে একটা ঢিপি মতো করা হতো। লোকে বলত ‘বুড়ির ঘর’। আশপাশের লোকেরা পুজোও দিতে আসত সেখানে। অনেক রাত অবধি খোল-করতাল নিয়ে হিন্দুস্তানিরা গান করত স্যারা রা রা… স্যারা রা রা… তার পর একটা সময়ে ওটায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হতো। সারা রাত ধরে ওটা জ্বলত। আমরা ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম। আসতে ইচ্ছে করত না। তবু বড়রা প্রায় জোর করেই নামিয়ে নিয়ে আসত। ইচ্ছে করত চুপিচুপি পা টিপে টিপে ছাদে চলে যাই। কিন্তু ছাদের ছিটকিনি খুলে দেবে কে! আমরা কি অত উঁচুতে হাত পাই! বিছানায় শুয়ে শুয়েই কান খাড়া রাখতাম। আসলে মাসির বাড়ির এত কাছে ওই বুড়ির ঘরটা পোড়ানো হতো যে, কাঁচা বাঁশ ফাটার ফটাস ফটাস শব্দও ঘর থেকে স্পষ্ট শোনা যেত। কী ভাল যে লাগত!
কাউকে ডাকতে হতো না। দোলের দিন আমরা নিজেরাই সকাল সকাল উঠে পড়তাম। আমরা মানে, আমি আর আমার মাসতুতো ভাই ঋতপ্রভ আর ওর বোন স্রবন্তী। আমার নিজের কোনও বোন ছিল না, স্রবন্তীই ছিল আমার নিজের বোনের মতো। সকাল থেকেই রং গোলার ধুম পড়ে যেত। কোনও বালতিতে লাল রং তো প্লাস্টিকের বড় কোনও গামলায় নীল রং। আটটা বাজতে না বাজতেই আমরা নেমে পড়তাম। আমাদের যার যখন ইচ্ছে হতো পিচকারিতে রং ভরে ছুটে যেতাম। যত দুষ্টুমিই করি না কেন, ওই দিনটা আমাদের কেউ বকাঝকা করত না।
আমাদের সঙ্গে জুটে যেত স্রবন্তীর এক বন্ধু তোনি। আমার চেয়ে বছর দুই-তিনেকের ছোট। মাসিদের কয়েকটা বাড়ির পরেই ছিল ওদের বাড়ি। দোল ছাড়া এমনিতেও যখন যেতাম, ও ঠিক চলে আসত। আমারও খুব ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছিল ও। শুধু কি বন্ধু! শুধু বন্ধুর জন্য কি কারও মন এমন ছটফট করে! শুধু বন্ধুকে ছোঁয়ার জন্য কি কারও আঙুল এত নিশপিশ করে! রং দেওয়ার যে আনন্দ, তার চেয়েও যেন অনেক বেশি ছিল রং দিতে গিয়ে ওকে ছোঁয়ার আনন্দ। তাই ওকে দেখেই আমি ছুটে গিয়েছিলাম। ও-ও আমার হাত থেকে বাঁচার জন্য ছুট লাগিয়েছিল। তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গিয়েছিল ছাদে। চিলেকোঠায় ঢুকেই খিল তুলে দিয়েছিল।
আমি যতই দরজা ধাক্কাই আর বলি, রং নয় রে, দ্যাখ, শুধুই আবির। তবু কে শোনে কার কথা। তোনির সেই একই ভাঙা রেকর্ড— না না না না।
আমিও নাছোড়বান্দা। ওকে রং না দিয়ে আমি এক পা-ও নড়ব না। আমি ধুপধাপ পায়ের আওয়াজ করে কয়েকটা সিঁড়ি নেমে, ফের পা টিপে টিপে নিঃশব্দে উপরে উঠে এলাম। দরজার পাশে এমন ভাবে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলাম, যাতে ওর মনে হয় আমি চলে গেছি। কিন্তু না। অনেকক্ষণ কেটে গেলেও দরজা খুলল না ও। আমি বুঝতে পারলাম, ও-ও ঘাপটি মেরে বোঝার চেষ্টা করছে আমি সত্যিই চলে গেছি কি না।
এই রকম করে যখন অনেকটা সময় বেরিয়ে গেছে, ও বুঝতে পেরেছে আমি ছাড়ার পাত্র নই। তখন ও আমাকে দিব্যি কাটিয়ে নিয়েছিল। বলেছিল, ঠিক আছে, তা হলে একগাদা নয়, একদম একটুখানি দিবি। আগে কথা দে, তার পর দরজা খুলব।
আগে তো খুলুক। আমি ওর কথাতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। ও আস্তে আস্তে দরজার পাল্লা ফাঁক করে বেরিয়ে এসেছিল। তার পর চুপটি করে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। চোখ বন্ধ করে। আমিও মুঠো থেকে আলতো করে দু’আঙুলে তুলে ওর মাথায় দিয়েছিলাম লাল আবির। ও একদম হতবাক হয়ে গিয়েছিল। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। ও বোধহয় ভাবতেও পারেনি আমি এত ধীর স্থির ভাবে ওকে আবির দেব। অমন চাহনি দেখে আমি ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলেছিলাম, এটা কিন্তু আবির না, সিঁদুর।
হঠাৎ কী যেন ঘটে গেল। ওর চোখমুখ একেবারে পাল্টে গেল। ওর ও রকম চেহারা আমি আগে কখনও দেখিনি। নিমেষে আমাকে পাশ কাটিয়ে দুদ্দাড় বেগে নেমে গেল নীচে। ঘোর কাটিয়ে আমিও ওর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরতর করে ওর পিছু পিছু নামলাম। ততক্ষণে সদর দরজা পেরিয়ে ও চলে গেছে ওদের বাড়ির দিকে।
ওদের বাড়িটা একতলা। রাস্তার দিকে জানালা। আমি শিক ধরে উঠে সেই জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি, ফাঁকা ঘরে তোনি একা। বিছানায় উপুড় হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
আমি মাসির বাড়ি গেলেই, প্রথম প্রথম স্রবন্তীর সঙ্গে যেতাম ঠিকই, কিন্তু পরের দিকে ওদের বাড়ির সবার সঙ্গে আমার এমন একটা সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল যে, স্রবন্তী না গেলেও যখন তখন আমি ওদের বাড়িতে যেতাম। কিন্তু কেন জানি না, ঠিক সেই মুহূর্তে ওদের বাড়িতে ঢোকার আর সাহস হল না আমার। কে যেন পেছন থেকে আমাকে জাপটে ধরল। দু’পা আটকে গেল মাটির সঙ্গে। কোনও রকমে পা টেনে টেনে আমি ফিরে এলাম।
আমি আসতেই ঋতপ্রভ, স্রবন্তী থেকে শুরু করে বাড়ির বড়রা পর্যন্ত, সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগল তোনির কথা। তোনি কোথায় গেল! তোনি কোথায় গেল! বড়দের কেউ কেউ ভাবল, আমি বুঝি ওর সঙ্গে ঝগড়া করেছি। তাই কে যেন আমাকে দেখিয়ে বলল, নিশ্চয়ই ও কিছু বলেছে, তাই রেগে গেছে। জানিস তো ও ওই রকম। কথায় কথায় রেগে যায়। তবুও… তোরা না পারিস। কথায় কথায় ঝগড়া। বেচারি একা, তাই তোদের সঙ্গে একটু দোল খেলতে এসেছিল। আর তারা? একটা দিনও কারও সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারিস না?
আমি আর একটাও কথা বলিনি। ওরা কত টানাটানি করল, তবুও আমি আর সে দিন রং খেললাম না। শুধু ভাবতে লাগলাম তোনি ও ভাবে চলে গেল কেন!
 
পর দিন খুব ভোরে আমরা চলে এসেছিলাম। সব কিছুই আগের মতো চলতে লাগল। কেবল মাঝে মাঝে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল, দোলের দিন সকালের তোনির সেই হঠাৎ করে পাল্টে যাওয়া মুখ। আর যখনই সেই মুখটা ভেসে উঠত, নিজেকে বড় অপরাধী মনে হতো। ইচ্ছে করত একবার ওর সামনে গিয়ে সত্যি কথাটা বলে আসি।
 
তার পরেও মা কত বার কাজে-অকাজে মাসির বাড়ি গেছেন। আমাকেও নিয়ে যেতে চেয়েছেন। আর প্রতিবারই ওর মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে কোনও না কোনও দোহাই দিয়ে ‘না’ করে দিয়েছি। এমনকী দোলের দিন যে-মাসির বাড়ি যাওয়া আমাদের প্রায় নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, পরের বছর সেই মাসির বাড়িতেও আমি গেলাম না। তার পরের বছরও না।
আসলে দোল এলেই আমার তোনির কথা মনে পড়ে যেত। টুকরো টুকরো নানা স্মৃতি মাথার মধ্যে কিলবিল করত। সেই স্মৃতি একটু একটু করে ফিকে হতে লাগল। আমি স্কুলের গণ্ডি ছেড়ে কলেজে উঠলাম। কত বন্ধু-বান্ধব হল। স্রবন্তী, ঋতপ্রভারা আহত। ফোন করত। কথা হতো। কিন্তু যত কথাই হোক না কেন ভুল করেও আমি কখনও তোনির কথা তুলতাম না। ওরাও তুলত না। বছরের গোনাগুনতি যে ক’টা দিন মাসির বাড়ি যেতাম, ওই ভাইফোঁটায়, বিজয়া দশমীতে বা অন্য কোনও উপলক্ষে, যতক্ষণ থাকতাম, একজন অপরাধীর মতো থাকতাম। ভয়ে ভয়ে কাটাতাম, এই বুঝি ও চলে এল! সেই ভয়েই কাঁটা হয়ে থাকতাম। ভুল করেও রাতে থাকতাম না। ঠিক ফিরে আসতাম। সে যত রাতই হোক না কেন।
দেখতে দেখতে মায়ের বয়স বেড়েছে। এখন আর তেমন দৌড়ঝাঁপ করতে পারেন না। ঋতপ্রভ ব্যবসা শুরু করেছে। মাসি তো আগে কোথাও যেতেন না। ছেলে গাড়ি কেনার পর এখন বরং কালেভদ্রে বেরোন। আমাদের বাড়িতেও আসেন। মেসোমশাইও আসেন।
সে দিন আমি বাড়িতে। হঠাৎ মাসি-মেসো দু’জনেই একসঙ্গে এসে হাজির। সাধারণত ওঁরা দু’জন একসঙ্গে কখনও আসেন না। ওঁদের দেখেই তাই ওঁদের আসার কারণটা আমার মনের মধ্যে এক ঝলক উঁকি দিয়ে গেল। আসলে দিন কতক ধরেই শুনছিলাম ব্যাপারটা। তা হলে কি ঠিক হয়ে গেল!
ঠিক যে হয়ে গেছে সেটা নিশ্চিত হলাম যখন মেসোমশাই তাঁর ব্যাগ থেকে নেমন্তন্ন কার্ডটা বের করে বাবার হাতে দিলেন। স্রবন্তীর বিয়ে। বিয়ের অন্তত দিন কতক আগে থেকেই যেতে হবে। একমাত্র মেয়ে বলে কথা! প্রচুর লোকজনকে বলা হয়েছে। নিজেদের লোক না থাকলে হয়? কে সামলাবে এ সব?
মা কথা দিয়ে দিলেন। বাবাও। আর স্রবন্তীর বিয়ে, আমি যাব না, তা কখনও হয়! আমি তো যাবই। কিন্তু…
এই ‘কিন্তু’টা আমাকে তাড়া করে বেড়াতে লাগল। আবার সেই মাসির বাড়ি! আবার সেই তোনি! বুকটা ধড়াস ধড়াস করতে লাগল। তার পর আবার মনে হল, সেই কবেকার কথা, ওর কি আর ও সব মনে আছে! হয়তো আমিই এই সব সাত-পাঁচ ভাবছি। ও হয়তো কবেই ভুলে মেরে দিয়েছে। তার পরেই আবার মনে হল, ও যদি কোনও কিছুই ভুলে না থাকে! তখন? সামনাসামনি হলে আবার যদি ওর মুখ পাল্টে যায়! না, সে মুখ আমি কিছুতেই দেখতে পারব না।
তার পর কী মনে হল, ভাবলাম, স্রবন্তীকে একটা ফোন করি তো… মা তখন ভেতরের ঘরে ভাতঘুম দিচ্ছেন। বাবা বাড়ি নেই। আমি টপাটপ মোবাইলের বোতাম টিপতে লাগলাম।
দ্বিতীয় বার রিং হওয়ার আগেই ও ধরল। দীর্ঘক্ষণ কথা। এটা ওটা সেটা। কিন্তু আমি যার জন্য ফোন করেছি, সেটার ধারকাছ দিয়েও ও যাচ্ছে না। প্রসঙ্গ পাল্টে যাচ্ছে মুহুর্মুহু। আসলে আমরা যতই পিঠোপিঠি হই না কেন, এখনকার ছেলেমেয়েদের মতো এতটা খোলামেলা ছিলাম না। ফলে অসুবিধে হচ্ছিল। তাই আমি সরাসরি বিয়ের কথা তুললাম— তোদের বাড়িতে তো প্রথম বিয়ে, তোর সব বন্ধুদের বলেছিস? একেবারে লিস্ট করে নেমন্তন্ন করবি কিন্তু। আসলে কি হয় জানিস, অনেক সময় একদম কাছের লোকই বাদ পড়ে যায়। পরে এত খারাপ লাগে… সেটা খেয়াল রাখিস। তুই লাজলিদের বলেছিস? ও, তোর এক বন্ধু ছিল, তোদের বাড়ির পাশেই থাকত, মনে পড়ছে? ওই যে রে, দোলের সময় যে তোদের বাড়িতে আসত, আমরা একসঙ্গে দোল খেলতাম। কী যেন নাম মেয়েটার, কোনি না কি যেন…
— তুই নামটাও ভুলে গেছিস! কথাটা স্রবন্তী এমন কেটে কেটে বলল, যেন শব্দ নয়, তিরের ফলা ছুড়ে দিল আমার দিকে। আমি আমতা আমতা করে বললাম, না মানে… তা নয়। অনেক দিন হয়ে গেছে তো… হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, মনে পড়েছে, তোনি…
— এত কষ্ট করে ওর নামটা তোর মনে করতে হল!
— মানে? আমি চমকে উঠলাম।
— ও কিন্তু দেখা হলেই তোর কথা জিজ্ঞেস করে।
— তাই?
— তোর কিচ্ছু মনে নেই?
— কী বল তো?
— ও কিন্তু তোকে ছাড়া আর কারও কথাই ভাবে না। ওর বাড়ি থেকে কত বার ওকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ও বারবারই ‘না’ করে দিয়েছে। বলে দিয়েছে, ও আর বিয়ে করবে না।
— কেন?
— তোর মনে আছে, একবার দোলের সময় তুই ওকে আবিরের নাম করে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছিলি, তাই ও আর কারও সিঁদুর নাকি সিঁথিতে তুলবে না।
হঠাৎ আমার শরীরে এক শিহরন খেলে গেল। এ আমি কী করেছি! আমি তো ওকে মজা করে মিছিমিছি বলেছিলাম। আসলে তো ওটা আবিরই ছিল। আর ও কিনা…
ও প্রান্ত থেকে আরও কী কী সব বলে যাচ্ছে স্রবন্তী, আমার কানে কিছুই ঢুকছে না। আমি শুধু সামনের ক্যালেন্ডারটায় দেখছি দোল আসতে আর কত দিন বাকি। এ বার দোলে আবার আমি মাসির বাড়ি যাব। যাবই। আর শুধু আবির নয়, আবিরের সঙ্গে একটু সিঁদুরও নিয়ে যাব। কিন্তু সে দিনের মতো তোনি আবার দৌড়ে গিয়ে চিলেকোঠার ঘরে খিল তুলে দেবে না তো!

লেখক পরিচিতি : সিদ্ধার্থ সিংহ
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় 'দেশ' পত্রিকায়। প্রথম ছড়া 'শুকতারা'য়। প্রথম গদ্য 'আনন্দবাজার'-এ। প্রথম গল্প 'সানন্দা'য়। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়। মামলা হয় পাঁচ কোটি টাকার। ছোটদের জন্য যেমন মৌচাক, শিশুমেলা, সন্দেশ, শুকতারা, আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, চিরসবুজ লেখা, ঝালাপালা, রঙবেরং, শিশুমহল ছাড়াও বর্তমান, গণশক্তি, রবিবাসরীয় আনন্দমেলা-সহ সমস্ত দৈনিক পত্রিকার ছোটদের পাতায় লেখেন, তেমনি বড়দের জন্য লেখেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য। 'রতিছন্দ' নামে এক নতুন ছন্দের প্রবর্তন করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুশো পঁয়তাল্লিশটি। তার বেশিরভাগই অনুদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বেস্ট সেলারেও উঠেছে সে সব। ষোলোটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন এবং লিখতেও পারেন। এ ছাড়া যৌথ ভাবে সম্পাদনা করেছেন লীলা মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা দেবী, শংকর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে। তাঁর লেখা নাটক বেতারে তো হয়ই, মঞ্চস্থও হয় নিয়মিত। তাঁর কাহিনি নিয়ে ছায়াছবিও হয়েছে বেশ কয়েকটি। গান তো লেখেনই। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি বাংলা ছবিতে। তাঁর ইংরেজি এবং বাংলা কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কয়েকটি সিনেমায়। বানিয়েছেন দুটি তথ্যচিত্র। তাঁর লেখা পাঠ্য হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে একত্রিশ তারিখের মধ্যে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, মুক্তগদ্য, প্রচ্ছদকাহিনি মিলিয়ে মোট তিনশো এগারোটি লেখা প্রকাশিত হওয়ায় 'এক মাসে সর্বাধিক লেখা প্রকাশের বিশ্বরেকর্ড' তিনি অর্জন করেছেন। ইতিমধ্যে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, নতুন গতি পুরস্কার, ড্রিম লাইট অ্যাওয়ার্ড, কমলকুমার মজুমদার জন্মশতবর্ষ স্মারক সম্মান, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।