অদৃষ্ট

লেখক : তমাল মুখার্জি

ছাদের মাথায় বসে থাকতে দেখে মিমি বায়না ধরলো। ওকে নিয়ে এসো না মা। ও খুব ছোট্ট … ও তো পড়ে যাবে। আমিও ভাবলাম সত্যিই তো .. ও তো খুবই বাচ্চা … ওর মা কোথায় ? ওর বাবা কে ? ওর বাবা ও কি …
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে মিমি বলে ওমা যাও না ওকে ঘরে আনো না … আমি সাতপাঁচ না ভেবেই ওকে ঘরে এনেছিলাম। দেখতে দেখতে কতো দিন হয়ে গেল। পাতের ভাত মাছের কাঁটা আর বিস্কুট এই সব খেয়ে খেয়ে বেশ বড়ো হয়ে উঠেছে … মিমির পুশি।

প্রথম প্রথমে আমাকে খুব মুখ খেতে হতো ওর জন্য। ঘরের আশে পাশের কেউই ওকে পছন্দ করতো না। অনেক কথা শুনেছি ওর জন্য। কেউ বলেছে নিজের পেটে তো আর ধরতে পারবে না তাই পুশ্যি নিয়েছে মাগী। কেউ বলেছে মাগী বুঝবে জ্বালা … চরম মূহুর্তে যখন ম্যাও করে উঠবে .. তখন খদ্দেরের ….. কপালে জুটবে। সব কিছু কথা শুনেও মুখ বুজে ভালোবেসেছি ওকে। মিমির খুব প্রিয় এই বেড়ালটি। পাড়ার বিহারী লাল অবৈতানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ফিরে এসেই আগে খোঁজ মা পুশি কোথায়? আমি হয়ত বলি দেখ না এধার ওধার কোথাও আছে।
মিমি তখন‌ ওকে খুঁজতে খুঁজতে দেখে বিছানায় বালিশের পাশে চুপ করে শুয়ে আছে। খুব ন্যাওটা… সর্বদাই পায়ে পায়ে ঘোরে আর মিউ মিউ করে… গা ঘেঁসে দাড়ায় আর গা ঘষে আমার শরীরে। মিমি মাঝে মাঝে ই ওর খাওয়ার দুধ থেকে ওকে একটা ছোটো বাটিতে করে দুধ খেতে দেয়। মিমি না থাকলে, পুশি ওর পড়ার টেবিলের উপর উঠে বসে মিউ মিউ করে ডাকে। স্কুল থেকে ফিরলে ওর ও পায়ে পায়ে ঘোরে।
আজ বেশ কিছুদিন হলো মিমি কে ঘরে দেখতে পাচ্ছি না। সবাই বলতে লাগলো বাড়ীর সামনেই বড়ো রাস্তা …. বাস ট্যাক্সি যাচ্ছে… হয়তো চাপা পড়ে … ওর বাইরে যাওয়া আমার আর মিমির পছন্দের ছিলো না। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে সাড়া না দিয়ে কি থাকা যায় । একটা হুলো কোথা থেকে এলো কে জানে … রোজ দুপুরে সামনের পাঁচিলে উঠে ম্যাও ম্যাও করে ডাকতো … আর থাকতে পারে পুশি… আমি মনে মনে বলতাম যা না যা … মুখ পুড়বে যখন তখন বুঝবি… ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় তো হবেই ।

পুশির জন্য  খুব মন খারাপ আমার আর মিমির। কোথায় যে গেলো…. বিশ্বাসই হয় না ও মারা গেছে। একদিন মাসী এসে বললে কি লো তোর পুশ্যি গেলো কোথায় … সেও পালিয়ে গেল…হ্যালা তোর কপালে কি কিছুই থাকবে না …পোড়া কপালি … পোড়ারমুখী তুই কি কাউকেই আটকে রাখতে পারবি না লা… গজর গজর করতে চলে গেল।

আমি গতকাল রাতের লন্ডভন্ড করা বিছানা পরিস্কার করে, ভাঙা জানলার জং ধরা শিক ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ মিউ শব্দে চমকে উঠলাম… পুশির ডাক না… পিছন ফিরে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি পুশি আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে… আবার ডাকে মিউ…. আমি ছুটে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিই… ওর পেটে হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলি‌ মুখপুড়ি…


লেখক পরিচিতি : তমাল মুখার্জি
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। নাটক, গান, কবিতা গল্প লেখা ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মন্ঞ্চ ও শ্রুতি নাটকে অভিনয়।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

3 Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।