রেফারেন্স দেওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

লেখক : হৃদয় হক

উদ্ধৃতি (Citations) শুধুমাত্র কুম্ভীলকবৃত্তি* (plagiarism) এড়াতেই ব্যাবহার করা হয় না; এদের অন্যত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রয়েছে।

রেফারেন্স আপনাকে, আপনার কাজে অন্যান্য লেখক এবং গবেষকদের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ করে দেয়৷ যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এসাইনমেন্টগুলিতে, যেখানে অন্যান্য লেখকদের আইডিয়া, কথা বা গবেষণার ধারস্ত হলে উদ্ধৃতি দেওয়া বাধ্যতামূলক।

রেফারেন্স দেওয়া, আপনি যেসব লেখকের কথা এবং আইডিয়া ধার করেছেন তাদের কৃতিত্ব (credit) স্বীকার করার একটি উপার। বিশেষ বিদ্বান (particular scholar) ব্যাক্তির কাজের উদ্ধৃতি দিয়ে আপনি সেই গবেষকের মেধা-সম্পদের অধিকারের (intellectual property rights) প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং সম্মান দেখান। ছাত্র কিংবা অধ্যয়নে আপনি অন্যান্য লেখক কর্তৃক প্রকাশিত লক্ষ লক্ষ আইডিয়া, অন্তর্দৃষ্টি (insights) এবং যুক্তিতর্কের ধারস্ত হতে পারেন, যারা লেখা ও গবেষণায় বছর পাড়ি দিয়েছেন। আপনাকে যা করতে হবে তা হল, আপনার এসাইনমেন্টে উনাদের অবদানকে স্বীকার করা।

রেফারেন্স আপনার এসাইনমেন্টের বিবৃতি এবং দাবি গুলোর সমর্থনে একটি প্রমাণ স্বরূপ। আপনার কর্মক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে, আপনি যে ক্ষেত্রটিতে কাজ করছেন সেটি নিয়ে আপনি সচেতন তার লক্ষণ প্রকাশ করেন৷ নাবিকরা যেভাবে তারা দেখে হাল ধরেন, ঠিক সেভাবেই আপনার উদ্ধৃতি আপনার নিয়মনিষ্ঠার মাঝে ম্যাপ করে দেয় এবং আপনার কাজের ক্ষেত্রটিতে সঠিক পথে পরিচালনা করে।

রেফারেন্স সর্বদা যথার্থ হতে হবে, পাঠককে আপনার ব্যাবহৃত তথ্যসূত্র সন্ধানের সুযোগ দিতে হবে। আপনার রেফারেন্সের যথার্থতা নিশ্চিত করার বেস্ট উপায় হলো, এসাইনমেন্টের জন্য পড়া এবং গবেষণার সময় সকল তথ্যসূত্র লেখে রাখা।

উদ্ধৃতি আপনার লেখাকে আরো বিশ্বস্ত করে তোলে।

কোন ধরনের তথ্যে আমাকে রেফারেন্স দিতে হবে?

শুধুমাত্র মুদ্রিত বই একমাত্র তথ্যসূত্র নয় যার স্বীকৃতির প্রয়োজন। যেকোনো সূত্র থেকে যেকোনো কথা, যেকোনো আইডিয়া অথবা যেকোনো তথ্যের রেফারেন্স দেওয়া প্রয়োজন।

রেফারেন্স দিন যদি আপনি নিচের বিষয় থেকে কথা কিংবা আইডিয়া নেন:

• বই এবং জার্নাল আর্টিকেল।
• পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন।
• প্রচারপত্র (pamphlets) এবং পুস্তিকা / ক্ষুদ্র পুস্তক (brochures)
• সিনেমা, ডকুমেন্টারি, টেলিভিশন পোগ্রাম অথবা বিজ্ঞাপন।
• ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক সূত্র।
• চিঠিপত্র, ইমেইল, অনলাইন আলোচনা ফোরাম।
• ব্যাক্তিগত ইন্টারভিউ।
• অধ্যাপক (সবসময় প্রয়োজন নয়, কিন্তু দেওয়ার আগে উনাদের অনুরক্তি (preferences) দেখে নিন।)

আপনি কোনো ডায়াগ্রাম, ইলাস্ট্রেশন, চার্ট অথবা ছবি পুনর্মুদ্রণ করলেও রেফারেন্স দিতে হবে।

রেফারেন্স লাগবেনা যখন আপনি:

• নিজের পর্যবেক্ষণ অথবা গবেষণার ফলাফল লিখবেন।
• নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিখবেন।
•  এসাইনমেন্টে নিজস্ব চিন্তা, মন্তব্য অথবা সিদ্ধান্ত লিখবেন।
• নিজস্ব বিশ্লেষণ মূল্যায়ন বা প্রদান করবেন
• সাধারণ জ্ঞান অথবা লোকাচারবিদ্যা (folklore) ব্যাবহার করলে (ফ্যাক্টস যেগুলো প্রচুর জাগায় পাওয়া যায় এবং অধিকাংশ মানুষই এগুলো জানে।)
• সার্বজনীনভাবে গৃহীত ফ্যাক্টস বা তথ্য ব্যাবহার করলে। বিভিন্ন অধ্যয়নে এটা ভিন্ন হয়। সন্দেহ থাকলে শিক্ষকে জিগ্যেস করেন।


[ লেখাটি অনুবাদ করেছি UNSW Sydney বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে। মূল লেখাটির লিংক: https://student.unsw.edu.au/why-referencing-important ]

টিকা: ১. কুম্ভীলকবৃত্তি – অন্যের লেখা বা রচনা নিজের বলে প্রচার করা।


লেখক পরিচিতি : হৃদয় হক
শিক্ষার্থী। সময়ে অসময়ে প্রধানত জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে লেখালেখি করি।

শেয়ার করে বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন

2 Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top
error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।