লেখক: ঋক ঋকমন্ত্র
এক
রোগটা যে এরকম অতিমারির আকার ধারণ করবে ― সেটা ভাবতে পারেননি মন্ত্রীগোষ্ঠীর কোনো সদস্যই। তাই আজ তড়িঘড়ি বৈঠক বসেছে। প্যাসট্রি-ফিসফ্রাই-ফ্রুট স্যালাড সহযোগে আলোচনা হচ্ছে, কী করে দেশবাসীকে রক্ষা করা যায়? কিন্তু মনে-মনে সবাই ভাবছে, কী করে নিজে সুরক্ষিত থেকে পরবর্তী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া যায়?
দুই
সরকার ও পুলিশ লকডাউন নিয়ে যথেষ্ট কড়াকড়ি করলেও অত্যাবশ্যক সামগ্রীর পরিষেবা দিব্যি বহাল রাখা হয়েছে। খোলা রয়েছে মুদির দোকান-ও। মধ্য পঞ্চাশের বলিষ্ঠ চেহারার ব্যবসায়ী তাই স্ত্রীকে হাসিমুখে বারবার বলছেন, ‘চিন্তা কোরো না, জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছি! সব মিটতে-মিটতে আশা করছি, তোমার জড়োয়ার নেকলেসটা হয়ে যাবে…’
তিন
রাস্তার পাশে যুবকের মৃতদেহটা পড়ে আছে। পাশে বসে ছোট্ট দুধের শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে পাগলের মত কেঁদে চলেছে মৃত যুবকের স্ত্রী। কয়েকশো মাইল হেঁটে নিজ রাজ্যে ফেরার পথে যে তার স্বামী এই ভাবে প্রাণ হারাবে ― ভাবেনি পরিযায়ী শ্রমিকের তরুণী বউ। লাশ উদ্ধার করতে এসে অবশ্য প্রশাসন সান্ত্বনা দিয়েছে, সঙ্গে ছোট্ট কিছু প্রশ্নও ছুঁড়ে দিয়েছে, ‘নিজের রাজ্যে চা-চপের দোকান করে খেতে কী অসুবিধে ছিল? ভিনরাজ্যে কেউ যায় নাকি?’
চার
পাঁচ হাসপাতালে ঘুরেও বেড পায়নি কিশোর। যখন এক নার্সিংহোমে সে জায়গা পেলো, ততক্ষনে করোনা তার জীবন কেড়ে নিয়েছে। ফুটপাথে বসে হাউহাউ করে কাঁদতে-কাঁদতে বারবার কিশোরের মা একটাই প্রশ্ন করছে, ‘তাহলে কিসের জন্যে আপনাদের ভোট দিয়েছিলাম…’
পাঁচ
বাড়িওয়ালার কাপড়ের দোকান বন্ধ। রোজগারও বন্ধ। তাই আপাতত ভাড়ার টাকাতেই সংসার চালাতে হবে। কিন্তু ভাড়াটে কিছুতেই ভাড়া দিচ্ছে না। সক্কাল-সক্কাল বকেয়া আদায়ে যেতেই বাড়িওয়ালার পা চেপে ধরলো হকার যুবক ও তার স্ত্রী। ট্রেন বন্ধ, উপার্জনও বন্ধ! তার ওপর ভাড়াটের স্ত্রী আবার পোয়াতি! এবার তবে কী হবে? নিম্নবিত্ত হকার পরিবারটি না হয় ত্রাণ পেয়ে যাবে, কিন্তু বাড়িওয়ালাকে কি তাহলে বউ নিয়ে না খেয়েই মরতে হবে? মধ্যবিত্তের কি তাহলে কেউ-ই নেই?
ছয়
পাড়ার গলির শেষে যাদের বাড়িটা বাগান-দেওয়া, তাদের ছোট মেয়েটার করোনা হয়েছে শুনে পাড়ার লোক ওদের এক ঘরে করে দিয়েছে। শুরু হয়েছে নিদারুণ মানসিক অত্যাচার। অথচ, টিভিতে জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা কোভিড পজিটিভ শুনে সেই পাড়ার লোকেরাই আবার সুপারস্টারের আরোগ্য কামনায় পুজো এবং যাগ-যজ্ঞের আয়োজন করেছে!
সাত
পৃথিবীটা যে আর আগের মতো নেই ― বুঝে গেছে রোম্যান্টিক তরুণ কবি। তাই এখন তার কবিতায় প্রেম-অভিমান-চোখের জলের বদলে জায়গা করে নিয়েছে মাস্ক-স্যানিটাইজার-কোয়ারেন্টিন আর সোশ্যাল ডিস্ট্যানসিং…
লেখকের কথা: ঋক ঋকমন্ত্র
ঋক ঋকমন্ত্র একজন চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ লেখক। চিত্রনাট্য রচনার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত গল্প-কবিতা ইত্যাদি লেখালিখি করেন।
চরম সত্যি গুলো তুলে ধরলেন ভাই…😢
বাঃ বাঃ।এটি কি ছবিতে আসবে?
বে শ গোছালো চিত্রনাট্যের আঙ্গিকে। ভালো লাগলো বেশ।
অসাধারণ লাগলো।
নতুন আঙ্গিকে লেখা। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকেই ছুঁয়ে গেছে।
বাস্তব ঘটনা গুলো তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।