লেখক: সৌম্যদীপ মৈত্র, শামসাদ বেগম
তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রানুসারে ∆U= Q-W যেখানে ডেল্টা U হলো আভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন বা ‘চেঞ্জ ইন ইন্টারনাল এনার্জি অফ দি সিস্টেম’, এবং Q হলো সিস্টেমের মোট তাপ আর W হলো কার্য, অর্থাৎ এই সূত্রটি বলে শক্তির সৃষ্টি বা ক্ষয় হয় না কেবল পরিবর্তন হয় এক প্রকার এনার্জি থেকে অপর প্রকার এনার্জিতে, আমাদের শরীরে ঠিক এই মেকানিজম্ সংগঠিত হয় অর্থাৎ আমরা যে খাবার খাই সেখান থেকে খাবারের মধ্যে সঞ্চিত ‘পোটেনশিয়াল এনার্জি’ বা স্থিতি শক্তি আমাদের দেহের বিভিন্ন কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, গ্লুকোজ এই প্রক্রিয়ায় মূল ভূমিকা নেয় কারণ গ্লুকোজের বিপাক থেকেই আমাদের দেহের কার্য শক্তি ও তাপের সৃষ্টি হয়। ডায়াবেটিস মেলিটাস হলো এমন একটি রোগ যেটিতে উপরিউক্ত প্রক্রিয়াটি বিনষ্ট হয় বা সঠিকভাবে সংগঠিত হতে পারে না।
ডায়াবেটিস মেলিটাস-এর একাধিক প্রকার হয় সেগুলো হলো — Type 1 Diabetes Mellitus (T1DM) এবং Type 2 Diabetes Mellitus (T2DM), (which classically result from defective insulin secretion (T1DM) and/or action (T2DM), T1DM মূলত বাচ্চাদের বা বয়োসন্ধিকালে হয়ে থাকে, কিন্তু T2DM মোটামুটি মাঝামাঝি বা একটু বয়স্ক লোকেদের হয়, টাইপ ১ এবং টাইপ ২ দুটোই ইনসুলিনের অভাবে হয়, প্রথম প্রকারটিতে বিটা সেল দ্বারা ইনসুলিন গঠন হয় না কারণ বিটা কোষ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় এবং রক্তে ইনসুলিন থাকে না বা খুবই কম থাকে এর টাইপ ২ হয় ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় না থাকার কারণে বা ইনসুলিন রেসিস্টেন্স তৈরি হওয়ার কারণে ইনসুলিন কাজ করতে অক্ষম হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, ইনসুলিন রেসিস্টেন্স হবার জন্য ওবেসিটি হয়ে থাকে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিকে বলে হাইপারগ্লাইসেমিয়া।
হাইপারগ্লাইসেমিয়ার ফলে ৯০ শতাংশ DM রোগীর ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি লক্ষণ দেখা যায়। এর ফলে আমাদের হাতে-পায়ের নার্ভগুলো থেকে সংকেত প্রেরণের ক্ষমতা থাকে না ফলে শিথিলতা, অনুভূতির অভাব ইত্যাদি দেখা যায় এবং পায়ে, হাতে ব্যথা হয় সেই ব্যথা কম বা বেশি হতে পারে। হাইপারগ্লাইসেমিয়ার ফলে লিভার কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ইন্টারলিউকিন, টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর প্রভৃতির ফলে এবং লিভার কোষ নষ্ট হয় ধীরে ধীরে। হাইপারগ্লাইসেমিয়ার ফলে কিডনি, চোখ, দাঁত ইত্যাদিও খারাপ হতে পারে তাই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভিটামিন-সি বেশি করে খাওয়া বা তেতো জাতীয় খাবার ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বেশি মাত্রায় পরিশ্রম করা যাতে খাবার থেকে যে শক্তি পাচ্ছি সেটার যেন ব্যবহার হয়, নইলে দেহের ইন্টারনাল এনার্জির মান বাড়বে যেটাকে ক্যালোরি সঞ্চয় বলা হয় ফলে রোগটা বৃদ্ধি পাবে, সারাদিন বাড়িতে থাকলে ছাদে ১ ঘন্টা বা ২ ঘন্টা একটু জোরে জোরে হাঁটতে হবে রোজ বা বাড়িতেও ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যাবে, যার ফলে ইনসুলিনের ব্যাবহার সঠিকভাবে হবে। প্রত্যেকের সঠিকভাবে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত রোগটার নিয়ন্ত্রণের জন্য।
তথ্যসুত্র:
1.https://www.diabetesdaily.com/forum/threads/1st-law-of-
thermodynamics.81531/
2. https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK551501/
3. http://hyperphysics.phy-astr.gsu.edu/hbase/thermo/firlaw.html
4. বাকি তথ্য নিজেদের দেখা বা জানাশোনা মানুষদের অভিজ্ঞতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
লেখকের কথা: সৌম্যদীপ মৈত্র ও শামসাদ বেগম
সৌম্যদীপ মৈত্র জঙ্গীপুর কলেজ (কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্তর্গত) পদার্থবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র; বাসস্থান – মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত জঙ্গীপুর।
শামসাদ বেগম জঙ্গীপুর কলেজ (কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্তর্গত) পদার্থবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী; বাসস্থান – মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত রঘুনাথগঞ্জ।
পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের বিশেষ আগ্রহ বিজ্ঞানকে আমাদের জীবনের নানান ক্ষেত্রে প্রয়োগ এবং সেই উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে ছোট ছোট পরীক্ষা নিরীক্ষা করা। এছাড়াও আমাদের ভালো লাগে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের জীবনী নিয়ে জানতে এবং বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে ও ধারণাগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজ করে তুলে ধরতে যাতে তাঁরা সেগুলোকে নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন।
বাহ বেশ ভালো লাগল।
ভালো উপদেশ